সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর দোলাচলে কিশোরী

১৫ বছরের কিশোরীকে হাজির করা হয় গ্রামের সালিশে। তখনও তার দুই পা বেয়ে দরদর করে ঝরছে রক্ত। ঘটনা এক দিন আগের। একই এলাকার একদল লোক মদ খেয়ে এই কিশোরীকে ধর্ষণ করেছে। এলাকার সবাই এমন বীভৎস ঘটনার সাক্ষী হলেন। মোক্তার (৫৪) ও শ্যামল (৪২) নামে দুই ধর্ষক চিহ্নিত হলেও সমাধান ছাড়াই শেষ হয় সালিশ। অসুস্থ হয়ে পড়ায় দ্রুত কিশোরীকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। সেখানেই ভুক্তভোগী ওই গরিব কিশোরী গুনছে মৃত্যুর প্রহর।
এদিকে, এক কান দুই কান করে এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার পুরো এওচিয়া ইউনিয়ন এলাকায়। এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয় বেশ চাঞ্চল্য। তবে দুই কারণে মুখ খুলছেন না কেউ। প্রথমত ভুক্তভোগী কিশোরী এই এলাকার স্থানীয় কেউ নয়। তাদের বাড়ি পার্শ্ববর্তী বাঁশখালী উপজেলায়। দ্বিতীয়ত অভিযুক্তরা বেশ প্রভাবশালী।
ধর্ষণের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে প্রদান করা মেডিকেল সনদে। এই সনদ জমা দেয়া হয় সাতকানিয়া থানায়। সঙ্গে ঘটনার বিবরণ দিয়ে ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে একটি এজাহারও জমা দেন। তবে প্রায় এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো আসামি গ্রেফতার হয়নি, উল্টো অভিযুক্তদের ত্রিমুখী হামলার ভয়ে রয়েছে ভুক্তভোগীর পরিবার।
মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) ধর্ষণের ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগীর পরিবার এবং এলাকার বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে বিস্তারিত খবরাখবর নেয়া হয়। তারা সবাই এই বীভৎস ঘটনার বিষয়ে জানেন। তবে কেউ ভয়ে মুখ খুলছেন না। এদিকে এদিন ভুক্তভোগীর বাড়ির এক কোণে এখনও কিশোরীর রক্ত মাখা প্যান্ট পড়ে থাকতে দেখা যায়। তার পাশে রয়েছে ঘটনাস্থল থেকে আনা একটি মদের বোতলও। ঘটনার বিষয়ে জানতেই চোখের পানি ছেড়ে দেন ভুক্তভোগী মা-সহ পরিবারের সবাই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ভিটেমাটি হারিয়ে এওচিয়া ইউনিয়নের চূড়ামনির সিকদার পাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে আসছেন ভুক্তভোগীর পরিবার। যদিও তাদের বাড়িটি বিচ্ছিন্ন একটি জমির ওপর করা হয়েছে। একাকী বসবাস করা এই পরিবারে নিয়মিত যাতায়াত ছিল অভিযুক্ত মোক্তারের। একপর্যায়ে মোক্তারের কুনজর পড়ে পরিবারের কিশোরীর ওপর। মোক্তার প্রায় সময় লাকড়ি দিবে বলে কিশরীকে পাহাড়ের ভেতরে নিয়ে যায়। ভুক্তভোগীর মা বিষয়টি বুঝতে পেরে কিশোরীকে সাবধান করে। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয় মোক্তার। সবশেষ ২৬ অক্টোবর ভুক্তভোগীর ঘরে এসে বেড়া ফুটো করে ভেতরে ঢুকার চেষ্টা করে মোক্তার। বিষয়টি পরিবারের অন্যান্যরা দেখে ফেললে এদিন মোক্তার পালিয়ে যায়।
এই ঘটনার পরদিন দুপুরে চূড়ামনির আব্দুল্লাহ খোলা এলাকার মোক্তারের আরেক প্রেমিকা আনুকে(৪৫) কিশোরীর বাড়িতে পাঠিয়ে লোভে ফেলে সু- কৌশলে কিশোরী সাবিনাকে( ছদ্মনাম) বাড়ি থেকে বের করে বাড়ির দক্ষিনে পাহাড়ে পূর্ব থেকে লুকিয়ে থাকা মোক্তার(৬০)এবং কান্চনার পাল পাড়ার টমটম চালক শ্যামল(৪৬)সহ মোট পাঁচজনে মিলে ধর্ষন করেন।
ধর্ষণের পর আনু সেই মোক্তার আর শ্যামলের পরামর্শক্রমে ভুক্তভোগী কিশোরীকে চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গাতে নিয়ে গিয়ে সারারাত আনুমানিক পাঁচ থেকে সাতজনের একটি দল কিশোরীকে মদ খেয়ে ধর্ষণ করে।
পরের ২৮তারিখ ভোর আনুমানিক ৫টার নাগাদ হুঁশ ফিরলে কিশোরী শ্যামল আর পূর্বপরিচিত মোক্তারকে চিনলেও অন্যদের চিনতে পারেননি বলে ভুক্তভোগীর বরাত দিয়ে তার মা গনমাধ্যকে জানান। পরে চট্টগ্রামে একাধিক লোকের অমানবিক ধর্ষণের ফলে কিশোরীর অবস্থা আশংকাজনক হয়ে পড়ে। মোক্তারের প্রেমিকা সেই আনু আবার চট্টগ্রাম থেকে কিশোরীকে নিয়ে এওচিয়ার চূড়ামনিতে নিয়ে আসলে আনু কৌশলে সেই মেয়েকে বাড়ির পাশে একটি পেপেঁ বাগানে রেখে চলে যান। পরে ধর্ষণের শিকার কিশোরী তার পরিবারকে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন।
এরপর ২৮ অক্টোবর ভুক্তভোগীর অসহায় পরিবার টাকার অভাবে থানা আসতে না পেরে বিচার দেন স্থানীয় মেম্বার মোজাফ্ফরকে।অনেক মানুষ উপস্থিত হয় গ্রামের সেই সালিশে। তবে উপস্থিত বিচারেও রক্তপাতের কারণে কিশোরীর পরিহিত প্যান্ট ভিজে যাচ্ছিল বলেই আর বিচার করেননি মেম্বার মোজাফ্ফরও স্থানীয় ব্যক্তিবর্গরা।
পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ওই কিশোরীকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই থেকে হাসপাতালে আশংকাজনক অবস্থায় আছেন বলে জানান কিশোরীর বড় ভাই আক্তারুজ্জামান বাবু স্থানীয়রা জানান, মোক্তার, ছাবের, টমটম চালক শ্যামলরা বান্দরবান থেকে আনা বাংলা মদ খেয়ে কিশোরীকে বাড়ির দক্ষিনে পাহাড়ের ভেতরে জোর করে ধর্ষণ করে। আনু নামক এক মহিলাও আনুর আরেক বান্ধবী মহেশখালীর আমেনার উপস্থিতিতেই একটি সংঘবদ্ধ দল কিশোরীর বাড়ির দক্ষিন পাশে পাহাড়ে ধর্ষণ করে বলে জানান সৈয়দ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। ঘটনাস্থল থেকে ধর্ষন কর্মকান্ডে ব্যবহৃত একটি মদের বোতলও উদ্ধার করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে আরো দেখা যায়-ধর্ষন শেষে সেই আনুর সাথে আসা কিশোরীর কাপড়চোঁপড়ে যে রক্তের ছোঁপ তারও যথেষ্ট প্রমাণ হাতে আসে এই অনুসন্ধানী টীমের কাছে। এদিকে এলাকায় ধর্ষনের বিষয়টি জানাজানি হলেও ঘটনার ৫দিন পেরিয়ে- ধর্ষকরা বহাল তবিয়তে থাকায় এলাকার লোকজন বিষয়টি ভালো ভাবে নিচ্ছেননা বলে জানান এলাকাবাসী।
সেই একই সুরে কথা বলেন, মোক্তারের প্রেমিকা ও ধর্ষনের অন্যতম সহযোগী অভিযুক্ত আনুর বাড়ির পাশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী।তিনি আরো বলেন আনুসহ তার এক বান্ধবীর নাম আমেনা তারা উভয়েই এলাকায় চিহ্নিত কয়েকজন লোককে মেয়ে যোগাড় করার দায়িত্ব পান।এবং এই ঘটনায় আনুর সাথে আমেনাও আছেন বলে জানান। ধর্ষণে উপস্থিত থেকে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করা আমেনার বাড়ি কক্সবাজারের মহেশখালী হলেও আনুর বাড়ি এওচিয়ার চূড়ামনির লেদু কোম্পানীর ইটভাটার উত্তর পার্শ্বে আব্দুল্লা খোলা নামক এলাকায়। আব্দুল্লাহ খোলা নামক এলাকায় আনুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় খুব নিম্নমানের একটি বাড়ি উপরে লতপাতা গাছে মোড়ানো একটি ঝুঁপড়িঘর।
ঝুঁপড়ি ঘরে একজন ৮০বছর বয়স্ক আনুর স্বামী পরিচয়ে বৃদ্ধাকে পেলেও আনুকে না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয়রা জানান আনু পেশাদার একজন দেহ ব্যবসায়ি এবং তার আপন কন্যাদের দিয়েও এমন কাজ করাতো বলে একাধিক স্থানীয়রা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই অনুসন্ধানী টীমকে জানান।
এদিকে স্থানীয়রা জোর দিয়ে বলেন- ওই ধর্ষন চক্রে জড়িত সংঘবদ্ধ দলের একজন ছাবের আহমদ। ছাবের আহমদ অভিযুক্ত মোক্তার আহমদের খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু তাই মোক্তারের সাথে ছাবেরও এই কাজ করেন বলে তাদের ধারনা।এতে স্থানীয় বাসিন্দারা আরো বলেন- মোক্তারের আরেক বন্ধু রফিকও জড়িত থাকতে পারেন এই ঘটনায় যেহেতু ধর্ষিত মেয়েটি বলেছেন ৫/৭জন হতে পারে। তবে ছাবের আহমদকে অভিযুক্ত উল্লেখ করে বক্তব্য দিতে নারাজ প্রকাশ করলেও ধর্ষিতার মা মোক্তারও শ্যামলসহ আনুমানিক ৫জনে এই কাজ করেছেন বলে জানান যা এই অনুসন্ধানী টীমের কাছে ভিডিও এবং অডিও রেকর্ড আছেন।ঘটনার বিষয়ে জানতে ছাবেরের মোবাইলে কল করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে তার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার স্ত্রীর সঙ্গে। তিনি ধর্ষণের বিষয়টি পুরো এলাকায় জানাজানি হয়েছেন বলে স্বীকার করেন। একই সঙ্গে এই ঘটনায় তার স্বামী জড়িত নয় বলে জানান।
সবার বাড়িঘরে যাওয়া গেলেও সংঘবদ্ধ ধর্ষনের অন্যতম মূলহোতা মোক্তারের সঙ্গী এবং ধর্ষিতা কিশোরির বক্তব্যমতে জোটপুকুরিয়ার উত্তর পাশের পাল পাড়ার অটোরিক্সা চালক শ্যামলকে পায়নি এই অনুসন্ধানী টীম।
তবে শ্যামলকে ধর্ষিতার মাতা চেনেন এবং বয়স তার ৪০এর মত হবেন এবং তিনি টমটম রিক্সা চালান বলেও এই টীমকে জানান।এদিকে ধর্ষনের বিষয়ে ১ই নভেম্বর সোমবার রাত ৮টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে আনা ধর্ষনের যাবতীয় কাগজপত্র সাতকানিয়া থানায় জমা দিয়েছেন বলেও জানান ধর্ষিতা কিশোরীর বড় ভাই আক্তারুজ্জামান বাবুও তার এক বোন জামাই। তবে গণধর্ষনের বিষয়ে স্থানীয় ভাবে মিমাংসার কেন উদ্যোগ নেয়া হল?সেই বিষয়ে জানার জন্য মোজাফ্ফর মেম্বারকে একাধিকবার কল করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
ধর্ষনের অভিযোগের বিষয়ে সাতকানিয়া থানার এসআই রাজু বলেন- ঘটনাটি সঠিক তবে বিষয়টা এখন আমার হাতে নেই। আপনার হাতে নেই কেন?এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই আমার হাতে নেই। ওটা সরাসরি ওসি স্যারও তদন্ত (ওসি) স্যারের হাতে আছেন।
এই বিষয়ে সাতকানিয়া থানার ওসি তদন্ত শফিকুল ইসলাম জানান-বিষয়টি তার নলেজে নেই।
এমএসএম / জামান

জয়পুরহাট জেলা বিএনপির সেকাল-একাল বই এর মোড়ক উন্মোচন

বড়লেখায় ইজ্জত বাঁচাতে চলন্ত অটোরিকশা থেকে লাফ দিয়ে কলেজছাত্রী আহত, চালক আটক

মানবিক সাহায্যের আবেদন-‘বাঁচতে চায় শিশু ফরহাদ আলী’

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় রাজশাহীতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি

কমলগঞ্জে দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য প্রকল্প পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত

শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ

মানিকগঞ্জে ব্যবসায়ীকে দাড়ি ধরে টানা হেঁচড়াসহ মারধরের অভিযোগ

বাঘা থানার অভিযানে ওয়ারেন্টভুক্ত ও নিয়মিত মামলার ৬ আসামি গ্রেফতার

নবীনগরে কাঁঠালের ছড়াছড়ি: বাম্পার ফলনে খুশি কৃষক ও ভোক্তা

চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় স্টপেজের দাবিতে ট্রেন থামিয়ে অবরোধ

সন্দ্বীপ থানার অভিযানে ১২ মামলার আসামী গাঁজা ব্যবসায়ী আটক

নোয়াখালীতে আগ্নেয়াস্ত্র-গুলিসহ যুবদল সভাপতি গ্রেফতার
