সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শত শত চারাগাছ কাটছে মাদকসেবী

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ভাসমান মাদকসেবী ও যৌনকর্মীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। উদ্যানে শত শত চারাগাছ রাতের অন্ধকারে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতের অন্ধকারে পার্কে গাঁজা টোকাই আসে অনেক মাদকসেবী। তাদের মধ্যে পরীবাগ এলাকার বাদশা নামে এক মাদকসেবী প্রতিদিন রাতে এই চারাগাছ ভেঙে ফেলছে। অনেক মাদকসেবীরা তাকে রাতে আটকের পর উত্তম-মাধ্যমও দিয়েছেন। কিন্তু তার গাছ ভাঙা বন্ধ হচ্ছে না।
এর আগে উদ্যান জুড়ে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করতেই এই গাছ কাটা হয়। সেখানে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে। কোথাও ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য মাটিকেটে রাখা হয়েছে। নগরীতে সবুজ কমছে দিন দিন।নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটায় মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে নগরীর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।
জানা গেছে, উদ্যানের নিরাপত্তায় বিপুল সংখ্য আনসার সদস্য রয়েছে। তারপরও চারদিকে নিরাপত্তা বেষ্টনী বেদ করে অপরাধীরা প্রবেশ করে মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধ চালিয়ে আসছে। প্রতিদিন সকালে শত শত মানুষ শরীরচর্চা করতে আসেন। আবার দিনে নানান বয়সের মানুষ আসেন ঘুরতে। উদ্যানের ভেতরে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, শিখা চিরন্তন, মুক্তমঞ্চ, রমনা কালী মন্দিরসহ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এসব দেখতে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকার মানুষ প্রতিদিন বিনোদনের জন্য আসেন। প্রতিদিন ছুটির দিন ছাড়াও সন্ধ্যা পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। অপরদিকে সন্ধ্যা নামলেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদক ব্যবসা, ভাসমান যৌনকর্মীদের আনাগোনা, ছিনতাইসহ পরিণত হয় অপরাধের স্বর্গরাজ্যে।
জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৬ জুন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ঐতিহাসিক এসব স্থাপনাসমূহ সংরক্ষণের জন্য আদালতের নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল শফিউলল্লাহ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন এ রিট আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ঐতিহাসিক এই স্থাপনা সংরক্ষণের জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা পুরোপুরি এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি। আবার ঐতিহাসিক এই উদ্যানের ৭টি স্থান সংরক্ষণ ও অন্যান্য স্থাপনা সরিয়ে ফেলার নির্দেশনারও বাস্তবায়ন নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন সন্ধ্যা নামলেই মুক্তমঞ্চে (শিল্পকলা একাডেমির নির্মিত উন্মুক্ত নাট্যমঞ্চ) বসে গাঁজার আসর। এখানে যারা গাঁজা সেবন করতে আসেন তাদের অধিকাংশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী। এছাড়া শাহবাগ ও আশপাশের এলাকার কিছু বিপদগামী তরুণ, যুবক ও রিকশাওয়ালা এখানকার নিয়মিত গাঁজা সেবক। এ ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মাদকসেবীরাও মুক্তমঞ্চে গাঁজার আড্ডা বসান। তবে শুধু মুক্তমঞ্চই না, সারা উদ্যান ঘুরেফিরে দেখা যায় একই দৃশ্য। কিছু শিক্ষার্থীর গাঁজা সেবনের বিষয়টি এখন এক প্রকার ওপেন সিক্রেট, সবাই জানে কিন্তু যেন কেউই জানে না।
উদ্যানে সাধারণত যারা গাঁজা বিক্রি করেন, তাদের বেশির ভাগই নারী। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত একজনের নাম পারুল। কখনো বোরকা, কখনো শাড়ির আঁচলের নিচে পোঁটলায় করে এ দিকে সে দিক ঘুরে লোকভেদে ৫০ থেকে ১০০ টাকায় গাঁজা বিক্রি করেন। এই পারুল সম্পর্কে উদ্যানের লোকজন বলে থাকে, পারুল মাসে অন্তত ১০ দিন পুলিশের কাছে গ্রেফতার হয়ে থানায় থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে ঠিকই কিন্তু এক দুই দিনের বেশি সে থানায় থাকে না। গ্রেফতারের পর আবার তাকে ছেড়েও দেওয়া হয়। তার অনুপস্থিতিতে গাঁজা বিক্রির ভার পড়ে অন্যদের ওপর। আর এসব ‘মাদক নবী’ নামের এক মাদক কারবারি কুমিল্লা থেকে এনে বিক্রি করেন। তিনি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার মিরহাজিরবাগে ভাড়ায় থাকেন। সেখানেই শাহবাগ থানার একাধিক পুলিশ সদস্য গিয়ে হপ্তা নিয়ে আসে।
সকালে প্রাতঃভ্রমণকারীরা জানান, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী এখানে গাঁজা সেবন করতে আসেন, তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সদস্য। তাদের বেশির ভাগই বাইরে থেকে আসা লোকজন মাদক ক্রয় কেনেন। তাদের কাছ থেকে জোর-জবরদস্তি করে ছিনিয়ে নেয়। গাঁজার পাশাপাশি ইয়াবা সেবনকারী শিক্ষার্থীরা স্থানীয় মাদকসেবী ও ছিনতাইকারী চক্রের সাথে জড়িয়ে পড়েন নানান অপকর্মে।
পুলিশের এক সূত্র জানায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশের এলাকার অর্ধশতাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্টতা থাকায় সঠিক তদন্ত ও বিচার হয় না। আর ছিনতাইকারীদের নাম প্রকাশ করতে চায় না। সম্প্রতি সন্ধ্যার দিকে এক নারী তার স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে আসেন। পরে ওই নারীর গলা থেকে গহনা ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনার পরও ওই ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ছিনতাইকারী ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। ছিনতাই ও মাদকসেবীর পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আরেক আতঙ্কের নাম ভাসমান যৌনকর্মী। সন্ধ্যার পরই ঘুরতে আসা লোকজনকে বের করে দেন আনসার সদস্যরা। তবে কালিমন্দির গেট দিয়ে পার্কে ঢুকে পড়েন যৌনকর্মীরা। তাছাড়া টিএসসি মোড় সংলগ্ন গেট অন্ধকার থাকায় সেখান দিয়েও ঢোকে তারা। পাশাপাশি আশ্রয়হীন যারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রাতে ঘুমান তাদেরও অধিকাংশই এই যৌন পেশায় জড়িত।
অভিযোগ আছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা সামান্য টাকার বিনিময়ে ভাসমান যৌনকর্মীদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেন। যৌনকর্মীদের কাস্টমার পূর্বের চরিত্রের লোকজনই। তবে যৌনকর্মীর একটা বড় অংশ উদ্যানে বসবাসকারী ভাসমান লোকজন।শাহবাগ থানা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সাত থেকে আটটা গেট রয়েছে। এগুলো দিয়ে মাঝে মধ্যে মানুষ ঢুকে পড়ে। রাতের অন্ধকারে, চিপায়, জঙ্গলে বসে মাদক সেবন করে। যারা এই ধরনের কাজ করে তাদের ধরে এনে চালান করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজরিত ঐতিহাসিক সোহরাওয়াদী উদ্যান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখানেই ৭ মার্চের ভাষণ প্রদান করেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বার পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই উদ্যানেই আত্মসমর্পণ করে মিত্রবাহিনীর কাছে। ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দীতে অনুষ্ঠিত জনসভায় বঙ্গবন্ধু এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বক্তব্য রাখেন। তবে সেই সব ঐতিহাসিক স্থান চিহ্নিত করা হয়নি।
এর আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিভিন্ন স্থাপনার নির্মাণে গাছ কাটা শুরু হয়। তখন পরিবেশ আন্দোলনসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদীরা প্রতিবাদ করেন। তখন নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব গণমাধ্যমে বলেছিলেন, নগরীর ফুসফুসে যারা করোনার মতো আঘাত করে চলেছেন, ১৫-৪০ বছর পুরানো গাছগুলো যারা নির্বিচারে কাটছেন তারা অবশ্যই দুর্বৃত্তসুলভ আচরণের জন্য দায়ী। তাদের কঠোরভাবে অনুশাসনে আনা প্রয়োজন। সৌন্দর্যবর্ধন বৃক্ষরোপনের মধ্যে নিহিত, নিধনের মধ্যে নয়। রাজধানীবাসীর বুকভরে শ্বাস নেওয়ার জন্য নির্মল পরিবেশের যে অভাব, তার কিছুটা হলেও পূরণ করে এই উদ্যানটি। তাই উদ্যানের গাছ কেটে স্থাপনা নির্মাণ করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন নগরবাসী।
এমএসএম / এমএসএম

এসেনসিয়াল ড্রাগসের এমডির আত্মীয়দের বদলি বাণিজ্য

ট্যাক্স ল'ইয়ার্স সোসাইটি ২০১৭ এর নির্বাচিত নতুন কমিটির অভিষেক দোয়া ও ইফতার অনুষ্ঠিত

উদ্যোমী নারীদের সম্মাননা জানাল ‘উইমেন’স ফাউন্ডেশন’

উত্তরা সেক্টর-১২ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

রোজাদার পথচারীদের পাশে ইফতার নিয়ে হাজির আজমল হুদা মিঠু

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ৮ জন নারী উদ্যোক্তা পেলেন সাহসিকা সম্মাননা

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

ছাত্র দলের আয়োজনে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

বিআরটি’র ফ্যাসিস্ট আওয়ামীর দোসর এডি আলী আহসান বহাল তবিয়তে

ধর্ষণও হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে

ছুরিকাঘাতে রাজধানীতে যুবক নিহত

আলোচনা সমালোচনার শেষ নেই আওয়ামী লীগ নেত্রী তাহমিনার
