সীতাকুণ্ডে যত্রতত্র নিবন্ধনহীন আবাসিক হোটেল নেই শৃঙ্খলা, সামাজিক অবক্ষয়ের শঙ্কা
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ব্যাঙের ছাতার মত যত্রতত্র গড়ে ওঠেছে নিবন্ধনহীন আবাসিক হোটেল। মাত্র দুই বছর সময়ে এখানে প্রায় দুই ডজন হোটেল চালু হয়েছে। যার কোনটারই নেই নিবন্ধন কিংবা লাইসেন্সও। এমনকি নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় কোন কাগজপত্রও নেই হোটেলগুলোর। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহেরও নেই কোন নজরদারি। ফলে বাড়ছে অপরাধ, দুর্ঘটনা ও সামাজিক অবক্ষয়ের শংঙ্কা।
কয়েক বছর আগেও সীতাকুণ্ড পৌরসদরে আবাসিক হোটেল ছিল হাতেগোনা কয়েকটি। বছরের পর বছর খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছিল হোটেলগুলো। কিন্তু ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি সীতাকুণ্ড গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকতকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণার পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। সীতাকুণ্ডে বাড়তে থাকে পর্যটকের ভিড়। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে গড়ে ওঠতে থাকে আবাসিক হোটেলও। কিন্তু যেনতেনভাবে গড়ে ওঠা এসব হোটেলগুলোতে নেই নিয়ম-নীতি শৃঙ্খলা এবং মানা হয় না হোটেল বিধিমালা।
বাংলাদেশ হোটেল ও রেস্তোরাঁ বিধিমালা অনুযায়ী প্রতিটি আবাসিক হোটেলকে জেলা প্রশাসন থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। নিবন্ধন নেয়ার পর বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক। আর এসবের জন্য হোটেল মালিক বা কর্মকর্তাকে সিভিল সার্জন এর কাছ থেকে স্বাস্থ্য সনদ, হোটেলের পরিবশ ছাড়পত্র ও ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স নিতে হবে।
এছাড়া হোটেলের কর্মচারীদের অন্তত ১০ থেকে ২০ ভাগ সরকার স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে। থাকতে হবে পার্কিং ব্যবস্থা। বাথরুমসহ প্রতিটি কক্ষ ১০৭ থেকে ১৯৩ বর্গফুট হতে হবে। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, কর্মচারীদের ইউনিফর্ম ও নেমপ্লেট, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও প্রতিবন্ধীসহ সর্বজন প্রবেশগম্যতা থাকতে হবে। সেবামূল্য তালিকা ও লাইসেন্স সর্বসাধারণের দৃষ্টিগোচর হয় এমন স্থানে প্রদর্শন বাধ্যতামূলক। এছাড়াও প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা ও চিকিৎসক অন কলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
নিবন্ধন প্রাপ্তির পর হোটেল চালু করলে নিবন্ধন রেজিস্টার রাখতে হবে। যেখানে অতিথিদের নাম, আগমন-প্রস্থানের সময়, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা লিপিবদ্ধ থাকবে। একই সাথে অতিথির জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি রাখা বাধ্যতামূলক।
কিন্তু সরজমিনে দেখা যায়, সীতাকুণ্ডের কোন আবাসিক হোটেলেরই নেই কোন নিবন্ধন ও লাইসেন্স। নেই পরিবেশের ছাড়পত্র। প্রায় প্রতিটি হোটেলের সরু গলি ও সিড়ি। ফায়ার লাইসেন্স নেই। এমনকি দু-একটি হোটেলে ফায়ার এক্সটিংগুইশার (অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র) থাকলেও বাকি হোটেলগুলোর নেই অগ্নি নির্বাপনের কোন ব্যবস্থা।
সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র কর্মকর্তা নুরুল আলম দুলাল বলেন, সীতাকুণ্ডের কোন হোটেলেরই ফায়ার লাইসেন্স নেই। এমনকি ফায়ার লাইসেন্স নেয়ার মত সেই অবস্থানও নেই হোটেলগুলোর। সবকটি হোটেলেরই গলি ও সিড়ি সংকীর্ণ এবং মাত্র একটি করে সিড়ি রয়েছে। অগ্নিকাণ্ড ঘটলে সীতাকুণ্ডের আবাসিক হোটেলগুলোর অবস্থা হবে অত্যন্ত ভয়াবহ।
এদিকে নিবন্ধন ও লাইসেন্স না থাকায় যত্রতত্র মানহীনভাবে চলছে আবাসিক হোটেলগুলো। ছোট ছোট কয়েকটি কক্ষতে সাইনবোর্ড লাগিয়ে হোটেল নামে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। এমনকি পৌর সদরের বাইরে গ্রামের আবাসিক ঘর বাড়িতে চলছে হোটেল ব্যবসা। আগত অতিথিদের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি কিংবা স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা রাখার বাধ্যবাধকতাও নেই হোটেলগুলোর।
আইনত প্রতিদিন হোটেলে আগত অতিথিদের তথ্য সীতাকুণ্ড থানায় জমা দেয়ার কথা থাকলেও কোন হোটেলই তা দেয় না। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েরা দলবদ্ধভাবে কক্ষ ভাড়া নিচ্ছে। আবার কয়েক ঘণ্টা পর চলেও যাচ্ছে। সুযোগের সদ্বব্যবহার করছে স্থানীয় ছেলেমেয়েরাও। পিছিয়ে নেই নানা অপরাধীরা। ফলে অপরাধ প্রবণতা ও সামাজিক অবক্ষয়ের আশঙ্কা বাড়ছে। ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর জলসা আবাসিক হোটেলে এক যুবতী মেয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলো। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে, প্রেমিক ও তার বন্ধুরা মিলে আবাসিক হোটেলে এনে টানা দু'দিন ধরে ধর্ষণ করেছে বলে ভুক্তভোগী তরুণী অভিযোগ করেন। অসুস্থ অবস্থায় সীতাকুণ্ড মডেল থানায় অভিযোগ করার পর পুলিশ প্রেমিক, তার সহযোগী ৫ জন বন্ধু ও হোটেল ম্যানেজারসহ ৬ জন ধর্ষককে আটক করে।
২০২২ সালে ২৬ অক্টোবর দুপুরে পাঁচ তলাবিশিষ্ট জলসা আবাসিক হোটেলে অগ্নিকাণ্ড ঘটে । এর আগে ২০১৮ সালের ১ মে পৌরসদরে অবস্থিত সৌদিয়া আবাসিক হোটেলে বিষাক্ত মদপানে মৃত্যু হয়েছিল উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল হোসেন রবি ও ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নাছিরের।
সীতাকুণ্ড আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি খায়রুল ইসলাম বলেন, দলবদ্ধভাবে আসা দু'একজন অতিথির জাতীয় পরিচয়পত্র আমরা নিয়ে থাকি। বাকিদের নেয়া সম্ভব হয় না। কারণ স্কুলের ছেলে মেয়েদের সাধারণত জাতীয় পরিচয়পত্র থাকে না।
গ্রীন ভিউ আবাসিক হোটেলের মালিক ও সীতাকুণ্ড পৌরসদর ব্যবসায়ী দোকান মালিক সমিতির সভাপতি রেজাউল করিম বাহার বলেন, হোটেলে আগত অতিথিদের তথ্য ও জাতীয় পরিচয়পত্র জমা নেয়া এবং থানায় জমা দেয়ার কথা থাকলেও সবাই তা করে না। আবার পৌর সদরের বাইরে গ্রামেও যত্রতত্র আবাসিক হোটেল গড়ে ওঠছে। স্কুলের ছেলে মেয়েদের দল বেঁধে হোটেলে ওঠার বিষয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের কয়েকটি ঘটনা শুনেছি।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল উদ্দিন বলেন , পর্যটকের নাম ভাঙিয়ে অনৈতিক কোন কিছু করার সুযোগ নেই। সামাজিক অবক্ষয় হয় কিংবা স্কুলের ছেলে মেয়েরা হোটেল কক্ষ ভাড়া নেই এমন তথ্য পেলে আমরা অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেব।
সীতাকুণ্ড উপজেলা সমাজ কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি মোঃ গিয়াস উদ্দিন বলেন, আবাসিক হোটেলগুলোকে অবশ্যই নিয়ম-নীতি এবং নজরদারির আওতায় আনতে হবে। মানসম্মত আবাসিক হোটেল না থাকায় অনেক পর্যটক চট্টগ্রাম শহরে হোটেল গুলোতে উঠে। আবাসিক হোটেলগুলোতে স্থানীয় ইস্কুল -কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতায়তের এমন অভিযোগও রয়েছে। এসব বন্ধে বাজার কমিটি, পুলিশ প্রশাসন ও হোটেল মালিকদের যৌথ উদ্যােগে কাজ করতে হবে।এখানে সামাজিক অবক্ষয় হয় এমন কিছু রোধ করা না গেলে অপার সম্ভাবনার এ পর্যটন শিল্প হুমকির মুখে পড়বে। সরকারি ও পিপিপি'র (পাবলিক পাইভেট পার্টনারশ) আওতায় এখানে মানসম্মত হোটেল-রিসোর্ট ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে দিন দিন আরো পর্যটক বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
সীতাকুণ্ড পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযুদ্ধা বদিউল আলম বলেন, সীতাকুণ্ডে পর্যটক বেড়েছে সাথে পাল্লা দিয়ে অনগুলো আবাসিক হোটেলও গড়ে উড়েছে। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য এসব গড়েতুলা হয়। নীয়ম-নীতি অনুসার করে আমরা পৌরসভার লায়সেন্স দিয়ে থাকি। আইন ভঙ্গ করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, সীতাকুণ্ডের আবাসিক হোটেলগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে এবং শৃঙ্খলায় ফেরাতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এমএসএম / এমএসএম
হাদি’র হত্যার প্রতিবাদে বেনাপোলে বিক্ষোভ মিছিল
শেরপুরে অবৈধ ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান: পাঁচ ভাটার কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ, জরিমানা ১৭ লাখ টাকা
চাঁদপুরে মাদকবিরোধী ক্রিকেট টুর্নামেন্ট শুরু
রাঙ্গামাটিতে বিএনপি প্রার্থী দীপেন দেওয়ানের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ
ওসমান হাদির মৃত্যুতে গোবিপ্রবি উপাচার্যের শোক
রাণীশংকৈলে সাংবাদিকদের সাথে নবাগত ওসির মতবিনিময়
টিকটক ভিডিওকে কেন্দ্র করে গৃহবধূকে হত্যা, স্বামী আটক
হান্নান মাসউদের ৩ সমর্থককে কুপিয়ে জখম, মামলা দায়ের
সাতগাঁও হাইওয়ে থানা বাৎসরিক পরিদর্শন করেন সিলেট রিজিয়ন পুলিশ সুপার মোঃ রেজাউল করিম
পটুয়াখালীর গলাচিপায় ভুয়া চিকিৎসক আটক
কুমিল্লায় তিন বাস টার্মিনালে কর্মবিরতি ৪০ সড়কে যাত্রীদের ভোগান্তি
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেন মাগুরা-২ আসনের সাবেক এমপির কাজী সালিমুল হক কামাল