সরকার ছিটমহলবাসীদের ভাগ্য পরির্বতনে কাজ করছে
ছিটমহলসহ উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী সুবিধাবঞ্চিত ৮৬টি এলাকা ও নদী বিধৌত চরাঞ্চলের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করছে সরকার। এজন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে থেকে ২০২১ সালে প্রায় ১২৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রকল্প থেকে ছিটমহল সহ উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের বিভিন্ন রকমের সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এ প্রকল্পে সুফলভোগী পরিবারের সংখ্যা ৪৭ হাজার ৬৪৩টি।
রংপুর বিভাগের ৪টি জেলার ৯টি উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নের ৮৬টি বিলুপ্ত ছিটমহল এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগের ৯টি জেলার ৪০টি উপজেলার ১৭৫টি ইউনিয়নের ১হাজার ৪টি চর নিয়ে প্রকল্প এলাকা তৈরি করা হয়েছে।প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২২ হাজার ১৫৪জন খামারীর প্রত্যেকে বিনা মূল্যে ১৫ টি মুরগী ৩মাসের খাদ্য ও বাসস্থান বিতারণ করা হবে। এরই মধ্যে ১হাজার ৬৮৯ জন সুফল ভোগী পরিবারকে ২৫ হাজার ৩৩৫টি মুরগী দেয়া হয়েছে।
১০হাজার ৯০৬জন খামারির প্রত্যেকে ১৫টি করে হাঁস,৩মাসের খাদ্য ও বাসস্থান দেয় হবে। বর্তমানে ২হাজার ২৯ টি সুফলভোগী পরিবারকে ৪হাজার ৩৮ টি ছাগল বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায় ক্রমে আরো ১হাজার৫১২ জন খামারির প্রত্যেককে ২টি করে ছাগল, ছাগলের খাদ্য ও বাসস্থান বিতরণ করা হবে। ৪ হাজার ২২৫টি সুফলভোগী পরিবারকে ১২ হাজার ৬৭৫টি ভেড়া বিতারণ করা হয়েছে। বাকী ১হাজার ৩২৫ জন খামারির প্রত্যেককে ৩টি করে ভেড়া, ভেড়ার খাদ্য ও বাসস্থান বিতরণ করা হবে । ৬৭০টি সুফলভোগী পরিবারকে ৬৭০টি বকনা দেয়া হয়েছে। বাকী আরো ১হাজার ৩৪০টি বকনা ও তিন মাসের খাদ্য দেয়া হবে। ৫৫০জন খামারী প্রত্যোকে ইনপুট হিসেবে ১টি করে পাঁঠা, পাঁঠার খাদ্য ও বাসস্থান বিতরণ করা হবে। ২১৫ জন খামারির প্রত্যেককে ইনপুট হিসেবে ১টি করে উন্নত জাতের ঘাস চাষ প্রদর্শনী প্লট বিতরণ করা হবে। ইতোমধ্যে প্রকল্প থেকে প্রায় ৩১হাজার ৭৬জন সুফল ভোগীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আরো প্রায় ৬হাজারের মত সুফল ভোগীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রকল্পটি থেকে এরই মধ্যে ৭ হাজার ৯৪ জন সুফল ভোগীকে ৭হাজার ৯৪টি পশুপাখির শেড বিতারণ করা হয়েছে।
প্রকল্প এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জের তেঘুরিয়া গ্রামের আকবর আলী ফকির এ প্রকল্প থেকে ২০২২সালে ২টি ভেড়ী ও ১টি ভেড়া এবং এদের বাসস্থানের জন্য একটি সেড পায়। এখন তার খামারে ৭টি ভেড়া-ভেড়ী রয়েছে বলে জানা গেছে। এ রকমে অনেকেই এ প্রকল্প থেকে উপহার পেয়ে তাদের খামারকে ধীরে ধীরে বড় করছে।
লালমনিরহাটের সদর উপজেলার ববিতা গোকুন্ডা একই সালে প্রকল্প থেকে ১টি ভেড়া ও ২টি ভেড়ী দেয়া হয়। বর্তমানে তার খামারে ১২টি ভেড়া-ভেড়ী ও বাচ্চা রয়েছে। এ রকমের যারাই এ প্রকল্প থেকে উপহার পেয়েছে তারা সবাই এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন।
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার দইখাতা গ্রামের ফাতেমা বেগম প্রকল্প থেকে ১৫টি মুরগী নিয়ে তার খামার শুরু করে এখন তার মুরগীর খামের প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি মুড়গী রয়েছে এবং ৪ টি মুরগীতে আবার নতুন করে ডিম পাড়তে শুরু করছে।
এ বিষয় প্রকল্প পরিচালকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছিটমহল ও চরঞ্চলের মানুষের আত্মকর্মসংস্থান নিয়ে আমরাই প্রথম কাজ করেছি। এর আগে এসব অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করা হয়নি। তবে হা, সরকার তাদেরকে বিদ্যুৎয়িন করছেন এবং কিছু কিছু এলাকায় রাস্তাঘাঁট করে দিয়েছেন। আমাদের প্রকল্পটি ওই অঞ্চলের জন্য খুবই কার্যকর কারণ এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য সরকার এবারই প্রথম এমন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন,আমরা সাধানণত সুফলভোগীদের মাঝে উপকরণ বিতারণের সময় ওই এলাকার জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিত রাখার চেষ্ঠা করি। গত বছরের ২৪ মে পাবনা জেলার বেড়া উপজেলায় ‘ছাগল ও ভেড়া বিতরণ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত রাখা হয়েছিল সাবেক জাতীয় সংসদের মাননীয় ডেপুটি স্পিকার মোঃ শামসুল হক টুকু ও জাতীয় সংসদের হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনি। আমাদের প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বেকার সমস্যা দুর করা,আমিষের চাহিদা পূরণ করা, নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করা
এমএসএম / এমএসএম