শীতের শুরুতেই বারহাট্টায় পিঠা বিক্রির ধুম
ঋতু বৈচিত্রের গণনায় হেমন্তের শুরুতে ভোর আর সন্ধ্যায় ঘন কুয়াশা সাথে হালকা হিম ভাব নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার প্রকৃতির বুকে জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। শীত মানেই মন কাড়ে শীতের হরেক রকম মুখরোচক পিঠার স্বাদ। শীত আর পিঠার যেন অন্যরকম মিতালি।
উপজেলা জুড়ে হালকা শীতেই জমে উঠেছে হরেক রকম পিঠার বেচা-কেনা। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে হিমেল হাওয়ার প্রভাবে বেড়ে যায় শীতের তীব্রতা। শীতের শুরুতে গোধূলী বেলায় হালকা কুয়াশা নেমে আসতে না আসতেই উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় শীতে পিঠা বানানো আর বেচা-কেনায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন পিঠা ব্যবসায়ীরা। আর সেসব দোকানে পিঠার স্বাদ নিতে ভিড় করছেন ক্রেতারা।
সরেজমিনে উপজেলা সদরের গরুহাট্টা, স্টেশন রোড, থানার মোড়, স্টেশনের প্লাটফর্ম, মধ্য বাজার মডেল স্কুল মোড়, গোপালপুর বটগাছতলাসহ বিভিন্ন গ্রাম্য বাজারের মোড়ে মোড়ে ভ্রাম্যমাণ পিঠা ব্যবসায়ীরা মাটির চুলায় তৈরি করছেন নানা ধরনের পিঠা। বেশির ভাগই চোখে পড়ে ভাপা ও চিতই পিঠা। শীত আসলেই এসব দোকান বসে।
উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকার পিঠা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেলে তারা সকালের সময়কে জানান, শীতের সময় মৌসুমি এসব পিঠার অন্য রকম কদর ক্রেতাদের কাছে। তবে এবার শীতের শুরুতেই পুরোদমে জমে উঠেছে পিঠার বেচা-কেনা। এ ব্যবসায় তেমন বেশি পুঁজি লাগে না। জ্বালানি হিসেবে লাকড়ি বা খড়ি লাগে, এ ছাড়া কিছু গুড়, নারকেল, চালের গুঁড়া ও অন্যান্য কিছু উপকরণ দিয়েই শুরু করা যায় ব্যবসা।
তারা আরও বলেন, চিতই পিঠার সঙ্গে ধনে পাতা, মরিচ, সরষে, শুঁটকি বাটা দিয়েও পিঠা বিক্রি করেন তারা। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন এসব পিঠার এক একটির দাম নেওয়া হয় ১০ টাকা এবং গুড়, নারকেল ও চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি ভাপা পিঠার দাম নেওয়া হয় ১৫ টাকা। বিকেল থেকে শুরু হয় বিক্রি রাত বাড়ার সাথে সাথে ভিড় বাড়তে থাকে পিঠার দোকানগুলোতে। সন্ধ্যার পর দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় থাকে অনেক বেশি। কেউ টুলে বসে কেউ বা দাঁড়িয়ে পিঠা খান। অনেকে আবার বাড়ির জন্য কাগজে করেও নিয়ে যান এসব পিঠা।
উপজেলা সদরের গরুহাট্টা মেইন রোডে ভাপা পিঠা খেতে আসা নূর হোসেন বলেন, চালের গুঁড়ার সঙ্গে গুড় এবং নারিকেল মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ভাপা পিঠা। গরম গরম ভাপা পিঠার মজাই আলাদা। ভাপা পিঠা আমাদের দেশের গ্রামীণ বাংলার দেশীয় সংস্কৃতি লালন করছে। অন্যদিকে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বেকারত্ব দূরীকরণ ও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। আমি দুইটা পিঠা খেয়ে বাসার অন্যান্য সদস্যদের জন্য পাঁচটা নিয়ে যাচ্ছি।
সদরসহ বিভিন্ন এলাকার পিঠা বিক্রেতারা জানান, বেচা-বিক্রি বেশ ভালোই। সন্ধ্যায় ক্রেতাদের আগমন ঘটে অনেক, ফলে ক্রেতাদের চাহিদানুযায়ী পিঠা বানানো হয়ে থাকে। গরমে তারা বিভিন্ন ধরনের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করলেও শীত মৌসুমে ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা ও সিদ্ধ ডিম বিক্রি করে সংসার চালান তারা।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সজলেন্দু বিশ্বাস বলেন, হেমন্তের ধান কাটা শুরু হলেই আমার মনে ভেসে ওঠে নবান্ন উৎসবের আমেজ। কিন্তু বর্তমানে সেটা আর গ্রাম বাংলায় দেখা যায় না। আমরা ছোট বেলায় দল বেধে একে অপরের বাসায় খেতাম এবং নবান্ন উৎসবকে নতুনভাবেই বরণ করে নিতাম। কিন্তু এখনকার ছেলে মেয়েরা শুধু নামেই জানে নবান্ন উৎসব। আগের মতো তারা আর নবান্ন উৎসবে আনন্দ করতে পারে না। নবান্ন উৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে এখন আমি বাজারের মোড়ে পিঠার দোকানে পিঠা খেতে যাই।
বারহাট্টা সিকেপি সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র টুটুল সকালের সময়কে বলেন, বাবা-মার কাছে নবান্ন উৎসবের কথা শুনেছি। অগ্রহায়ণের শুরুতে নবান্নর দিনে একে অপরের বাসায় খেতে যেত কিন্তু বর্তমানে আমাদের গ্রামে সেটা আর দেখি না। নবান্নে পিঠার স্বাদ মিটাতে এখন আমাদের একমাত্র ভরসা বাজারের পিঠার দোকান।
এ বিষয়ে বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্হ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পিঠা ব্যবসায়ী ও ক্রতাদের নির্দেশনা দিয়ে বলেন, পথে ঘাটে অনেক পিঠার দোকান বসে। দোকানদার অবশ্যই দুহাত ধুয়ে পিঠা তৈরি করবেন। রাস্তার পাশের দোকান ঢেকে রাখা প্রয়োজন। অপরদিকে, ক্রেতারা হাত ধুয়ে পিঠা খাবেন। কখনোই বাসি ও পচা পিঠা খাওয়া উচিত নয়। এতে গ্যাস্ট্রিকসহ ডায়রিয়া হতে পারে।
T.A.S / T.A.S