পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কে জন্ম নেয়া মৃত শিশুর পরিচয় শনাক্তে সহায়তা চায় পুলিশ

হায়রে পরকীয়া ! অবৈধ প্রেমসহ অনৈতিক সম্পর্কে জন্ম নেওয়া নবজাতকদের করুণ মৃত্যু বরণ করতে হয়। আবার অপরহরণ, মুক্তিপণ ছাড়াও পারিবারিক বিরোধের কারণেও নবজাতক শিশুদের হত্যার ঘটনা ঘটছে। আর এসব শিশুদের হত্যার পর ঝোপঝাড়, ডাস্টবিন ফুটপাথে জীবিত কিংবা মৃত শিশুদের ফেলে দেওয়া হচ্ছে। 

সমাজবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. তৌহিদুল হক সকালের সময়কে বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে নবজাতক শিশু উদ্ধারের সংখ্যা বাড়ছে। এসব শিশুদের অনেকটাই অবৈধ সম্পর্কে জন্ম নেয়। এর দায় নেওয়ার জন্য যখন দায়িত্বের প্রশ্ন আসে। তখনই তাকে মেরে ফেলা হয়। আবার হাসাপাতাল থেকে শিশু চুরির ঘটনা ঘটে। তার মুক্তিপণ বা উদ্ধারের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপর হয়। তখন ওই শিশুকে মেরে ফেলা হয়,  আবার জীবিত অবস্থায় রাস্তায় ফেলা হয়ে থাকে। এর জন্য প্রযাপ্ত ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা ছাড়াও জনগণের দায় বদ্ধতার প্রয়োজন। আর পুরুষ ও নারীদের দায়বদ্ধতা মূলক হলে এটা হ্রাস পাবে। এর সংঙ্গে জড়িতরা দায় না নেওয়ার কারণেও বাড়ছে। আইনগত পদক্ষেপ যথাযথ না নেওয়ায় এসব ঘটনা বাড়ছে। হাসপাতাল থেকে শিশু চুরির সঙ্গে জড়িতের কঠোর শাস্তি দিলে এই ঘটনাগুলো কমবে বলে জানান তিনি।

অপর দিকে অনেক শিশু সৃস্টিকর্তার মহান কৃপায় অনেক শিশু কাক, পঙ্খির ঠুকরানো অবস্থায় উদ্ধার হচ্ছে। আর উদ্ধারের পর অনেক শিশুর আশ্রস্থল হচ্ছে, শিশু সদন, আবার নিঃসন্তান দম্পতির আশ্রয়ে বড় হচ্ছেন। কিন্তু বড় হয়ে তাদের পরিচয়, কে তার বাবা কে তার মা ? তার পরিচয় প্রয়োজন হয়। এসব প্রশ্নের উত্তর ছাড়াও আইনগত কারণে এসব মৃত বা জীবিত শিশুদের পরিচয় নিশ্চিত করতে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকেও প্রচার প্রচারনা চালানো হচ্ছে।
রাজধানীতে অজ্ঞাত পরিচয়ের নবজাতক জীবিত কিংবা মৃতদের উদ্ধারের ঘটনা মাঝে মধ্যেই ঘটছে। ঝোপছাড়া, ময়লার ভাগাড়ে, ফুটপাথ, কখনও বা শৌচাগার বা নালা-নর্দমা, এমনকি ডাস্টবিনেও মিলছে সদ্য ভূমিষ্ঠ নবজাতক। ব্যাগে বন্দী অবস্থায় রাস্তার পাশে, যানবাহন, খোলা মাঠ থেকে উদ্ধার হচ্ছে নবজাতক ও নবজাতকের লাশ। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৬ ডিসেম্বর রাজধানীর পল্লবী থানা এলাকা থেকে একটি শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার পরে পুলিশ। তার বয়স আনুমানিক চার মাস হবে। দেখতে যেন, কোন ধনাঢ্য পরিবারে জন্ম নেওয়া নবজাতক। উক্ত মৃত শিশুর পরিচয় শনাক্তে সহায়তার আহবান করেছে পল্লবী থানা পুলিশ।
পল্লবী থানা সূত্র জানায়,  গত শুক্রবার দুপুরে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে সংবাদ পাওয়া যায় পল্লবী থানা এলাকার মিরপুর ১২ থেকে দিয়াবাড়ি যাওয়ার মেট্রোরেল লাইনের ১২৪ নাম্বার পিলারের কাছে লেকের পাড়ে অচেতন অবস্থায় এক মেয়ে শিশু পড়ে আছে। সংবাদ পেয়ে পুলিশের একটি টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে এবং শিশুটিকে মৃত ও জখমপ্রাপ্ত অবস্থায় বাজারের ব্যাগ থেকে উদ্ধার করে। উপস্থিত লোকজনকে পুলিশ জিজ্ঞাসা করলেও শিশু বাচ্চাটির কোন পরিচয় উদ্ধার করতে পারেনি। সিআইডি ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। শিশু উদ্ধার সংক্রান্তে পল্লবী থানায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আবার তার পরিচয় নিশ্চিত হতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে শিশুটির ছবি ও তথ্য সংবাদ মাধ্যমে প্রেরণ করেছে। কিন্তু তার হত্যার রহস্য ও তার পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি জানান তিনি। 

পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম সকালের সময়কে জানান, এখন পর্যন্ত শিশুটির কোন পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আর তার মৃত্যুর কারন জানা যায়নি। তবে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য সংবাদ মাধ্যমে প্রচারের জন্য লেখালেখি করার জন্য বলেন ওসি। 
অপরদিকে গত ৩০ নভেম্বর রাজধানীর শাহবাগ থানা পুলিশ এক নবজাতকের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। তার বয়স ১ (এক) দিন। উক্ত মৃত নবজাতকের পরিচয় শনাক্তে সহায়তার আহবান করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ।
শাহবাগ থানা সূত্র জানায়, গত ৩০ নভেম্বর দুপুরে জাতীয় জরুরী সেবা -৯৯৯ মাধ্যমে সংবাদ পাওয়া যায় শাহবাগের জগন্নাথ হল ক্রসিং এলাকায় কমলা রঙের কাপড়ে পেচানো কাগজের কার্টনে অচেতন অবস্থায় এক মেয়ে নবজাতক পড়ে থাকার সংবাদ পায়। উক্ত সংবাদ পেয়ে শাহবাগ থানার একটি টিম দ্রুত নবজাতককে উদ্ধার করে। পরে নবজাতকটি উদ্ধারের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিসৎক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়েছে। যার নম্বর ১৫০/২৪। 
এ ব্যাপারে শাহবাগ থানার অপমৃত্যুর মামলার তদন্তকারী অফিসার মো. মাহমুদ হাসান সকালের সময়কে জানান, সংবাদ মাধ্যমে মোবাল নম্বর দিয়ে শিশুটির পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত শিশুটির পরিচয় সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি। 
এর আগে গত ১ ডিসেম্বর একজন অজ্ঞাতনামা মৃত নারীর পরিচয় শনাক্তে সহায়তার আহ্বান করেছে ডিএমপির শাহআলী থানা পুলিশ। মৃত নারীর বয়স (৩৫) বছর হবে।
শাহআলী থানা সূত্র জানায়, গত ১ ডিসেম্বর রবিবার ডিসেম্বর সকালের শাহআলী থানার ১নং রোডের উত্তর বিশিল কুসুমবাগ এলাকার একটি বাড়ীর সামনে তোষকে মোড়ানো হাত-পা বাধা অবস্থায় একজন অজ্ঞাতানামা নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ছবিতে প্রদর্শিত মৃত নারীর চেহারা দেখে কেউ শনাক্ত করতে পারলে শাহআলী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ও ডিউটি অফিসার এবং অফিসার ইনচার্জ এর ফোন নম্বররে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়। শাহআলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সকালের সময়কে বলেন, কাল বা পরশুর মধ্যে একটি ভাল আপডেট খবর পাব। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত অনেক অগ্রগতি হয়েছে বলে জানান তিনি। 
এছাড়া, অজ্ঞাতনামা এক মৃত মেয়ে শিশুর পরিচয় শনাক্তে সহায়তার আহ্বান করেছে ডিএমপির তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ। মৃত মেয়ে শিশুর আনুমানিক বয়স ৫ থেকে ৬ বছর হবে। 
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা সূত্র জানায়, গত ৩০ জুন সকাল সাড়ে আটটার দিকে শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণির নির্মানাধীন ডিপিডিসি বিল্ডিংয়ের বাউন্ডারীর টিনের বেড়ার কাছে একজন অজ্ঞাতনামা মেয়ে শিশুর মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে। এ সংক্রান্তে ওইদিন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল  থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরে পুুলিশের পক্ষ থেকে ছবি প্রদর্শিত কে রমৃত মেয়ে শিশুর চেহারা দেখে কেউ শনাক্ত করতে পারলে তদন্তকারী কর্মকর্তা বা ওসির মোবাইলে যোগাযোগের অনুরোধ জানানো হয়।
আবার গত ১৮ নভেম্বর রাজধানীর শাহবাগ থানা পুলিশ অজ্ঞাতনামা মেয়ে শিশুর পরিচয় শনাক্তে সহায়তার আহ্বান করেছে। মৃত মেয়ে শিশুর বয়স আনুমানিক ১ দিন।
শাহবাগ থানা পুলিশ জানায, গত ১৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে সাত টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চার নং গেইটের দক্ষিণ পাশে ফুটপাতের উপর একজন অজ্ঞাতনামা মেয়ে শিশুর মরদেহ দেখতে পায় শাহবাগ থানার টহল পুলিশ। এ সংক্রান্তে ১৮ নভেম্বর শাহবাগ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়েছে যার নং-২০০। ছবিতে প্রদর্শিত মৃত মেয়ে শিশুর চেহারা দেখে কেউ শনাক্ত করতে পারলে শাহবাগ থানার ডিউটি অফিসার অথবা অফিসার ইনচার্জ এর নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
আবার নৃশংস হত্যাকাণ্ডর শিকার অজ্ঞাত নারীর পরিচয় শনাক্তে সহায়তার আহ্বান জানায়।
তাছাড়া, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের একটি ক্যান্টিনের পাশ থেকে এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক বলেন, ২৪ নভে¥বর সন্ধ্যায় ঢামেকের তৃতীয় শ্রেণির ক্যান্টিনের পাশ থেকে একদিন বয়সি এক ছেলে নবজাতককে উদ্ধার করা হয়।  প্রিন্টের কাপড়ে দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় পড়েছিল। সেখান থেকে উদ্ধার করে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে নবজাতকটিকে মৃত ঘোষণা করেন। 
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মামুন সকালের সময়কে জানান, এসব নবজাত শিশুদের উদ্ধারের ঘটনা ও হত্যাকান্ডের বিষয়ে পবিত্র কোরানে স্পষ্ট বলা আছে, কিয়ামনের দিন ওই সব শিশুদের জবান খুলে দেবেন। আর তাদের কাছে আল্লাহ তায়ালা জানতে চাইবেন, তোমাদের কারা কেন হত্যা করেছে। তখন তাদের ঘাতকদের হাজির করা হবে এবং কঠিন শাস্তি দেবেন। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক বলেছেন, অনৈতিক সম্পর্ক থেকে বা অনাকাক্সিক্ষতভাবে যেসব সন্তানের জন্ম হয় তাদেরও বাঁচার অধিকার রয়েছে। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতিতে সন্তান দত্তক দেয়ার প্রতিষ্ঠান আছে। নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা করা যাবে না। ধর্মীয় ও সামাজিক কারণে এসব ঘটনায় অমানবিক সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। তাই জড়িতদের খুজে বের করে আইনের কাছে সোপর্দ করতে হবে। তাহলেই এসব ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে।