বারহাট্টায় কাগজে-কলমেই নিষিদ্ধ পলিথিন, ব্যবহার বন্ধে নেই উদ্যোগ
নিষিদ্ধের পরও নেত্রকোনার বারহাট্টায় প্রকাশ্যেই বিক্রি ও ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। পলিথিনের সহজলভ্যতা ও ব্যবহারে সুবিধা থাকায় নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও ক্রেতা ও বিক্রেতারা প্রতিনিয়ত ব্যবহার করে যাচ্ছেন। মাছ বাজার থেকে শুরু করে মাংস, ডিম, তরকারি, পান-সুপারি, ফল, মিষ্টি ও মনোহারি দোকানসহ প্রতিটি দোকানিই ব্যবহার করছেন পলিথিন ব্যাগ। অথচ গত ১ অক্টোবর থেকে সারা দেশে সুপার মলগুলোতে এবং ১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারেও পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
গত রবিবার থেকে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত উপজেলার গোপালপুর বাজার, আসমা বাজার, বাউসী বাজার, ডেমুরা বাজার, সাহতা বাজার, রায়পুর বাজার, ফকিরের বাজার, দশধার বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখাগেছে, উপজেলা সদরসহ প্রতিটি বাজারেই নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগের ছড়াছড়ি। কোথাও ক্রেতা অথবা বিক্রেতার হাতে দেখা যায়নি বিকল্প পাটের ব্যাগ কিংবা পরিবেশ বান্ধব ব্যাগ বরং পলিথিন নিষিদ্ধ ঘোষণার পর বাজারে বেড়েছে পলিথিন ব্যাগের দাম।। পলিথিনের দাম বাড়াতে সুযোগ বুঝে ব্যবসায়ীরা সেই বাড়তি টাকাও তুলে নিচ্ছেন পণ্যের দামের সাথে। নিষিদ্ধ এই পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে- বাজারে কাগজের ঠোঙা (খাম), চটের ব্যাগ, নেট ব্যাগ, টিস্যু ব্যাগ ইত্যাদি থাকলেও এসব ব্যবহারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের তেমন আগ্রহ নেই।
উপজেলা সদরের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বললে তারা সকালের সময়কে জানান, পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও এর যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় পলিথিন ব্যবহারে মানুষ দিন দিন অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। ফলে বাসা থেকে কোনো ধরণের ব্যাগ না নিয়েই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বাজারে চলে আসেন ক্রেতারা। তাদের চাহিদার পণ্য পলিথিন ব্যাগে ভরে না দিলে নাখোশ হয়ে ক্রেতারা অন্য যে দোকানে পলিথিনে ভরে পণ্য দিবে সেই দোকানে চলে যায়। নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ হলে আমাদের অনেক লাভ হবে কারণ কাস্টমারদের চাহিদা মেটাতে প্রতিদিনই তিন থেকে চারশ টাকার ব্যাগ লাগে। দিন দিন ব্যাগের দামও আগের তুলনায় বাড়ছে। এতে আমাদের ব্যবসারও ক্ষতি হচ্ছে। সবাই সচেতন ও কঠোর হলে একসময় পলিথিন ব্যবহার রোধ করা সম্ভব হবে।
তারা আরও জানান, যদি পলিথিন ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ হয় তাহলে আমরা হালকা জিনিসপত্রের জন্য ছোট টিস্যু ব্যাগ এবং ভারি জিনিসপত্র বহনের জন্য বস্তা ব্যবহার করবো। কিন্তু পলিথিন উৎপাদন বন্ধ না করতে পারলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রকৃতপক্ষে কোন লাভ হবে না।
বাজার করতে আসা কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, খালি হাতে বাসা থেকে বাজারে আসায় অভ্যস্থ হয়ে গেছেন তারা। কারণ বাজারে এসে যেকোনো পণ্য ক্রয় করলেই দোকানিরা সুন্দর করে পলিথিন ব্যাগে ভরে হাতে ধরিয়ে দেন। ফলে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ব্যাগ আনার কথা মনেই থকেনা।
তারা আরও জানান, আমাদের বাপ-দাদার আমলে মানুষ মাছ কিনতে বাঁশের তৈরি ঝুড়ি, চাল, ডাল, তরিতরকারিসহ অন্যান্য পণ্য কিনতে পাটের বস্তা বা কাপড়ের তৈরি ব্যাগ নিয়ে বজারে আসতেন। এখন এসব আর চোখে পড়েনা। কারণ বাজারে চাওয়ার আগেই মিলছে পলিথিন ব্যাগ।
উপজেলা সদরের গোপালপুর ও আসমা বাজারের কয়েকজন সবজি ও মাছ বিক্রেতা জানান, বাজারের বেশ কয়েকটি দোকানে গোপনে নির্দিষ্ট লোকদের কাছে পাইকারি পলিথিন ব্যাগ বিক্রি করা হয়। আগে দাম একটু কম ছিল। এখন এক মাস ধরে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে কয়েকজন পাইকারি পলিথিন বিক্রেতার সাথে কথা হলে তারা জানান, নিষিদ্ধ হওয়ার পর আমরা পলিথিন বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছিলাম কিন্তু কাস্টমারদের চাহিদা মেটাতে লুকিয়ে বিক্রি করি। এতে তাদেরও লাভ আমাদেরও সংসার চলে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার ববি জানান, পলিথিন ব্যাগ বিক্রি ও ব্যবহার দন্ডনীয় অপরাধ। এটা রোধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত আছে।
T.A.S / T.A.S