বারহাট্টায় জাতীয় পতাকা বিক্রিতে ব্যস্ত বিক্রেতারা
সবুজের বুকে লাল পতাকা মানেই গোটা বাংলাদেশ আর ডিসেম্বর মানেই বিজয়ের মাস। মহান বিজয় দিবসকে সামনে রেখে বারহাট্টায় ছোট-বড় বিভিন্ন আকৃতির পতাকা বিক্রি করতে ব্যস্ত মৌসুমি পতাকা বিক্রেতারা।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা লাখো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে বিজয় আসে বাংলার বুকে তাইতো বাঙালি প্রতি বছরেই ব্যপক উৎসাহ-উদ্দীপনা আর জাঁকজমকপূর্ণভাবে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপন করে। শহীদের রক্তের দামে কেনা স্বাধীন পতাকা জানান দেয় দৃঢ় চিত্তে গোটা বাংলাদেশের নাম। এতে বাড়তি আনন্দ যুক্ত করে জাতীয় পতাকা। দেশপ্রেম আর শহীদদের সম্মান জানাতে অনেকেই এদিন পতাকা হাতে রাখেন। এছাড়া হাতে থাকে জাতীয় পতাকার ব্যান্ড, মাথায় বাঁধা হয় জাতীয় পতাকার ফিতা। বিজয়ের মাসে বাড়ির ছাদ ও গাড়ির সামনে জাতীয় পতাকা টানিয়ে রাখেন অনেকেই। ১৬ ডিসেম্বর সব অফিস ও প্রতিষ্ঠানেও উড়ানো হয় জাতীয় পতাকা। বিজয়ের মাসে জাতীয় পতাকার চাহিদা থাকে বেশি। তাই বিজয়ের মাসকে ঘিরে প্রায় সবাই কিনছেন জাতীয় পতাকা।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায়, উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকার পাড়া-মহল্লায়, অলি-গলিতে ঘুরে পতাকা বিক্রি করছেন ভ্রাম্যমাণ মৌসুমি পতাকা বিক্রেতারা। কিন্তু বরাবরের তুলনায় এবার পতাকা বিক্রি কম হচ্ছে বলে জানান তারা।
উপজেলার গোপালপুর বাজারে পতাকা বিক্রি করতে আসা মৌসুমি পতাকা বিক্রেতা মো. শামসুল হক ও হোসেন মিয়ার সাথে কথা বললে তারা সকালের সময়কে বলেন, বছরের অন্য সময় বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরা ও কৃষি কাজ করি। ডিসেম্বর বিজয়ের মাস। বিজয়ের চেতনায় প্রতি বছর এ মাসের শুরু থেকেই জাতীয় পতাকার চাহিদা বেড়ে যায়। এ মাসে সবাই পতাকা কেনে, ব্যবসা ভালো হয়। তাই এসময় পতাকা বিক্রি করি। এছাড়া পতাকা বিক্রির কাজটাও সহজ। আকারভেদে একেকটি পতাকা ৩০, ৫০, ১০০ টাকা, এমনকি ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাগজের ছোট পতাকাসহ বিভিন্ন সাইজের পতাকাও বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে।
বিক্রেতারা জানান, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর কিংবা বিশ্বকাপের সময় তাদের ব্যবসার ব্যস্ততা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তাদের সাইকেলের পেছনে বা হাতে থাকে শত শত পতাকা। উপজেলা সদরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত, পাড়া-মহল্লার অলিগলি কিংবা স্কুল-কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে বিক্রি করেন তারা।
গোপালপুর মধ্য বাজারে পতাকা কিনতে আসা মো. আলী হায়দার খানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ১৯৭১ আমি দেখিনি। তবে, বাঙালি হিসাবে লাল-সবুজের পতাকা দেখলে হৃদয়ে এক ধরনের আবেগ তৈরি হয়। এ পতাকার জন্য বাংলাদেশের লাখো মানুষ জীবন দিয়েছেন। এ পতাকা আমাদের অস্তিত্ব। এ পতাকার জন্য আজ আমরা স্বাধীনভাবে চলাচল করছি। বিজয়ের এই উল্লাসে লাল-সবুজ শুধুমাত্র দুইটি রঙই নয়, এ যেন অনুভূতির আরেক নাম।
পতাকা কিনতে আসা স্কুল ছাত্র সোহেল ও মেহেদী হাসান বলেন, পতাকা দেখলে মনে হয় আমরা স্বাধীন জাতি। পতাকা আমাদের অনুভূতির জায়গা। পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে অবশেষ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হয় দেশ। মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারীদের রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয় লাল-সবুজ রঙের জাতীয় পতাকা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী তালুকদার বলেন, পতাকা আমাদের অনুভূতির জায়গা। এই পতাকার জন্যই জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলাম। পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন দেশের পতাকা হাতে ফিরেছিলাম জন্মভূমি বারহাট্টার বুকে। আজও মনেপড়ে মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সেই দিনগুলোর কথা। মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারীদের রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয় লাল-সবুজ রঙের জাতীয় পতাকা।
উপজেলা সদরের থানার মোড় এলাকায় নিজের ছেলের জন্য পতাকা কিনছেন স্কুল শিক্ষক হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, বিজয় আমাদের জন্য গৌরবের। ছেলে-মেয়ে দুইজনের জন্য পতাকা কিনলাম। পতাকা পেয়ে তারা খুশি হবে। আমাদের উচিত অন্তত বিজয় দিবসে বাচ্চাদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়া। জাতীয় পতাকা হাতে পেয়ে একটু হলেও দেশের প্রতি তাদের ভালোবাসা জন্মাবে।
এমএসএম / এমএসএম