বারহাট্টায় বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী কামারশিল্প
কালের বিবর্তনে ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য কামার শিল্প। একসময় নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার বিভিন্ন ছোট-বড় হাট-বাজারে লোহা পেটানোর টুং টাং শব্দে মুখর হয়ে থাকতো কামার শিল্পীদের কর্ম তৎপরতায়। কিন্তু বর্তমানে লোহার তৈরি যন্ত্রপাতির জায়গা দখল করে নিচ্ছে স্টিলের যন্ত্রপাতি।
সরেজমিনে উপজেলা সদর, বউসী, চিরাম, নৈহাটি, রায়পুর বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখাগেছে, আগে যে বাজারগুলোতে সাপ্তাহিক হাটের দিনে কঠোর পরিশ্রম করে কামারদের নিজের হাতে তৈরি দা, কোদাল, কুড়াল, ছুরি, শাবল, লাঙ্গলের ফলা, নিড়ানি ইত্যাদি লোহার তৈরি জিনিসপত্র নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসতো। সে দৃশ্য এখন খুব কমই চোখে পড়ে। এমকি বছরের ধানকাটা মৌসুম ও কোরবানির ঈদের সময়ও কামারদের দোকানে তেমন ভিড় দেখা যায় না।
উপজেলা সদরের মডেল মোড় এলাকার ফুটপাতে লোহার তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে দোকান সাজিয়ে বসা ঝন্টু কর্মকার, সাধন কর্মকার, নিপেন্দ্র কর্মকারসহ কামার সম্প্রদায়ের কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা সকালের সময়কে বলেন, বহু আগে থেকেই আমরা শক্ত হাতের কারুকাজের মাধ্যমে লোহা দিয়ে দা, বঁটি, কাস্তে, খুন্তি,কুদাল, চাকুসহ নানা গৃহস্থালির যন্ত্রপাতি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলাম। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়ায় আমাদের ভালোবাসার এই জীবীকা আজ ফিকে হতে চলেছে।
তারা আরও বলেন, কাজের যথাযথ মূল্যায়ন না পেয়ে অনেকে এ পেশাও পরিবর্তন করছেন। বংশ পরম্পরায় চলে আসা এক সময়ের ঐতিহ্য এখন কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের এলাকার হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার এ পেশাকে ধরে রেখে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে তারাও তাদের সন্তানকে এ পেশায় আনতে নারাজ। তারা মনে করেন, এ পেশা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
বাউসী এলাকার রঞ্জন কর্মকার, রায়পুর এলাকার সীতু কর্মকারসহ বিভিন্ন এলাকার কামার সম্প্রদায়ের লোকেরা জানান, কয়লা সংকট আর আধুনিকায়নের ফলে বিলুপ্তির পথে আজ আমাদের কামার শিল্প।
প্রাচীন এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে কামারদের মাঝে খনিজ কয়লার সরবরাহ নিশ্চিত করা হলে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব বলে দাবি সচেতন মহলের।
এমএসএম / এমএসএম