গাউসিয়া কমিটির মানবিক কার্যক্রমে প্রমাণ পাই
সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই

চারদিকে বাজছে এক নিরব যুদ্ধের দামামা। যে যুদ্ধের নাম করোনা মহামারি। সে যুদ্ধ কোন দেশের সাথে দেশের নয়; বরং অদৃশ্য মরণঘাতী ভাইরাসের সাথে মানবসভ্যতার। করোনা ভাইরাসের ভয়ে মুহূর্তেই সন্তান ভুলে যাচ্ছে পিতা-মাতা আর স্বামী-স্ত্রীর স্বর্গীয় সম্পর্ক। এক নিষ্ঠুর বাস্তবতার মুখোমুখি সারা দুনিয়া। মানবতার আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে আসছে।
এমন ক্রাইসিস মুভমেন্ট একজন প্রকৃত মানবিক বন্ধুর হৃদয়ে রেখাপাত করলো। কী করা যায় মানবতার জন্য, কী করা যায়; ভাবতে ভাবতে চিন্তার বন্দরে নোঙর করলো এক অসাধারণ কনসেপ্ট। আর তা হলো করোনায় মৃতের দাফন-কাফন ও সৎকার কার্যক্রম। এ দুঃসাধ্য কর্মযজ্ঞের সহজ স্বপ্নদ্রষ্টা আর কেউ নন, হোসাইনী আদর্শে অনুপ্রাণিত, এডভোকেট সৈয়দ মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার। তিনি গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব। এ বিদগ্ধ সংগঠকের একটি ফেইসবুক স্টাটাস (করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের দাফন-কাফন করবে গাউসিয়া কমিটি) ক্ষোভ, ভয় ও শঙ্কিত আত্মায় প্রশান্তির সূর্যোদয় ঘটায়। অবশ্য দরবারে সিরিকোটের দীপ্তিমান সূর্য দূরদর্শী পীর হযরত আল্লামা সাবির শাহ হুজুর আরও এক দশক আগ থেকে গাউসিয়া কমিটির কর্মীদের দাওয়াতে খায়ের কার্যক্রমের মাধ্যমে মৃতের গোসল ও দাফন-কাফনের মতো অত্যন্ত জরুরি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে রাখার তাগাদা দিয়ে গেছেন। যে প্রশিক্ষণ করোনাকালিন সকল মানুষের জন্য অন্ধের যষ্টিতে পরিনত হয়েছে।
হুজুর কেবলা আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মাদ তাহের শাহ (মা.জি.আ)'র নেতৃত্বাধীন আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের অঙ্গ সংগঠন শেষ বিদায়ের সাথী গাউসিয়া কমিটির মানবিক টিম করোনার শুরু থেকেই বিবিধ সেবা দিয়ে আসছে। যে করোনা ভাইরাস আপনকে পর বানিয়ে দিয়েছে। সে ভয়ংকর মহামারী করোনার ভয়কে জয় করে পরকে আপন করে নিয়েছে মানবিক গাউসিয়া কমিটি। শেষ বিদায়ের সাথী গাউসিয়া কমিটির মানবিক টিম করোনার শুরু থেকেই বিবিধ সেবা দিয়ে আসছে। করোনা এখন ভয়ংকর থেকে ভয়ংকর। সারাবিশ্বে একটিই শ্লোগান! ঘরে থাকুন, ঘরে থাকুন এবং ঘরে থাকুন। প্রায় সকলেই যখন ঘরে তখন গাউসিয়া কমিটির মানবিক কর্মীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দিবা-রাত্রি মানবসেবায় ব্যস্ত। কী সকাল, কী সন্ধ্যা! বিরামহীন ছুটে চলা। সব চাকরিতে ছুটি আছে। আছে বিশ্রাম। কিন্তু এ মানবিক কাজে ঈদের দিনেও ছুটি নেই। নেই রাতেও বিশ্রাম। ছুটি কেউ দিচ্ছে না তা নয়; বরং বলা চলে এ মানবিক কর্মীরা ছুটি নিচ্ছে না!
রমজানে সবাই যখন বাহারি ইফতারের পশরা সাজিয়ে বসেছিল, ঠিক তখনই গাউসিয়া কমিটির মানবিক কর্মীরা রাস্তায় ইফতার করে লাশ দাফন বা অ্যাম্বুলেন্সে রোগী বহন কিংবা অক্সিজেনের বোতল কাঁধে মানুষের জীবনে আলো ফেরাতে ব্যস্ত। রোজামুখে সবাই যখন বিশ্রামে গাউসিয়া কমিটির মানবিক কর্মীরা তখন লকডাউনে কর্মহীন মানুষের ঘরে ঘরে সাহরি ও ইফতার সামগ্রী নিয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছিল। সবাই যখন নিজের ঈদ শপিংয়ে ব্যস্ত, ঠিক তখন গাউসিয়া কমিটির কর্মীরা নিজের শপিংয়ের টাকায় অভুক্তের মুখে অন্নদান করে হাসি ফুটিয়েছিল। ঈদুল আযহায় যখন আমরা কুরবানি পশুর গোশতের ঝোলে পিঠা ভিজিয়ে অমৃতের স্বাদ নিয়েছিলাম, ঠিক তখন গাউসিয়া কমিটির মানবিক কর্মীরা মুমূর্ষুর মুখে অক্সিজেন সেবা দিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছিল। স্বজনের ফেলে দেওয়া ভালোবাসাগুলোকে খুড়িয়ে কাঁধে তুলে শেষ বিদায়ে উপযুক্ত মর্যাদা দিচ্ছে গাউসিয়া কমিটি। রোদ-বৃষ্টি, গরম-ঠান্ডা, আগুন-পানি কোন প্রতিবন্ধকতাই মানবিক গাউসিয়া কমিটির মানবতার সেবায় বাধা হতে পারছেনা। এ বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালিন করোনা টেস্ট, কর্মহীন পরিবারকে অর্থ সহায়তা, পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণ, ফ্রি এম্বুলেন্স ও অক্সিজেন সার্ভিস, পরিচ্ছন্নতা অভিযানসহ বিবিধ সেবামূলক কার্যক্রম গাউসিয়া কমিটিকে পৌঁছে দিয়েছে অনন্য উচ্চতায়।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী চট্টগ্রামে ৩৯২২ জনসহ সারাদেশে প্রায় ৪৮০৭ জন মৃত ব্যক্তির দাফন ও সৎকারে সহায়তা দিয়েছে গাউসিয়া কমিটি। এ তালিকায় আছে বীর মুক্তিযোদ্ধা ৫১ জনসহ কারাগারের কয়েদি, হিন্দু, বৌদ্ধ, মারমা, খ্রিস্টান ও লাওয়ারিশের লাশ। এ পর্যন্ত ২৫০০৯ জন করোনা রোগীকে অক্সিজেন এবং ৬৬৬৯ জন রোগীকে অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়া হয়েছে। ১২২২১ এর বেশি মানুষকে দেওয়া হয়েছে ফ্রি চিকিৎসা সেবা। চলমান আছে দুই লাখ চারাগাছ রোপণ কর্মসূচি। আড়াই লাখ পরিবারে পৌঁছেছে খাদ্য ও নগদ অর্থ সহায়তা। চলছে অন্যান্য সেবাও। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও এখন গাউসিয়া কমিটির সামনে শ্রদ্ধাবনত। মানবিক পীর তৈয়্যব শাহ (রা.)'র গাউসিয়া কমিটির আলো আজ গীর্জা, মন্দির ও প্যাগোডাকেও আলোকিত করছে। আজ আমার বলতে দ্বিধা নেই, গাউসিয়া কমিটি মুসলমানদের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। হে আল্লাহ এ মানবিক মানুষগুলোকে নিরাপদে রাখুন। উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন। হাজার সালাম, লাখো সালাম! হে মানবিক গাউসিয়া কমিটি।
মানবতার পরম বন্ধু গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা মানব দরদী এক মহান সংস্কারক। যিনি আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়দ মুহাম্মাদ তৈয়্যব শাহ নামে সমাদৃত। তিনি প্রিয় নবী (দ.)'র ৪০তম নুরানি বংশধর। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে আজকের মানবিক গাউসিয়া কমিটি। অবশ্য এ মাদানি কাফেলার গোড়াপত্তন আরও বহুদিন আগে। দূর আরবে মরুর দুলাল প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (দ.) প্রতিষ্ঠিত হিলফুল ফুজুলের ছায়াসংগঠন গাউসিয়া কমিটি। ফিলফুল ফুজুল প্রতিষ্ঠা করেন প্রিয় রাসূল (দ.) আর গাউসিয়া কমিটি প্রতিষ্ঠা করেন আউলাদে রাসূল (দ.)। গাউসিয়া কমিটির মানবিক কর্মীদের কোন খ্যাতির নেশা নেই, নেই কোন দুনিয়াবি প্রতিদানের প্রত্যাশাও। গাউসিয়া কমিটির সার্বজনীন মানবিক কার্যক্রম আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়; সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই। করোনার ঘোর অন্ধকার একদিন কেটে যাবে কিন্তু স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে করোনা যুদ্ধের বীর গাউসিয়া কমিটির নাম।
প্রাবন্ধিক ও সংগঠকসাইফুল ইসলাম চৌধুরীপ্রতিষ্ঠাতা- আলো একাডেমি
এমএসএম / জামান

রেলের উন্নয়ন কেবল প্রকল্প নয়, দরকার র্কাযকর ব্যবস্থাপনা

অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি

টেকসই উন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষা

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও বাস্তবতা

গাজায় যুদ্ধের নৃশংসতা ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালত

বন্ধ হোক অপসাংবাদিকতা

বিভাজনের রাজনীতি দেশের জন্য হুমকি হতে পারে

প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের স্বপ্নের সৌদি আরব

শারদীয় দুর্গোৎসবে সম্প্রীতির বাংলাদেশ ভাবনা

দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রয়োজন পর্যটন গন্তব্যগুলোর সামগ্রিক উন্নয়ন এবং শক্তিশালী ব্র্যান্ডিং

গণতান্ত্রিক অধিকার ও নতুন নেতৃত্বের অন্বেষণ

দুঃখই সবচেয়ে আপন

জাতিগত নিধন বন্ধে জাতিসংঘের ব্যর্থতা
Link Copied