বিটকয়েন বা ভার্চুয়াল কারেন্সি; আগামীর মুদ্রা ব্যবস্থার জন্য মঙ্গল নাকি অমঙ্গল!

যুগে যুগে মানুষের পণ্য ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যম হিসেবে মুদ্রার ব্যবহার চলে আসছে। পৃথিবীতে মুদ্রা ধারণা আসার আগে প্রচলন ছিল বিনিময় প্রথার। এক পণ্য বা সেবার বিনিময়ে আরেকটি পণ্য বা সেবা। ৯ হাজার থেকে ৬ হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দে গবাদি পশু পালন এবং ফসলের চাষকে কেন্দ্র করে গৃহস্থালি পশু-পাখি এবং উদ্ভিদজাত পণ্য বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
প্রায় ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চীনের ঝাউ রাজবংশের শাসনামলে ব্রোঞ্জের তৈরি মুদ্রার প্রচলন হয়। এর আগে অবশ্য কাউরি বা ঝিনুকের খোল দিয়ে মুদ্রা বানানো হতো। এগুলো প্রকৃতিতে খুব সহজলভ্য ছিল বিধায় বিকল্প হিসেবে ব্রোঞ্জে খোদাই করা মুদ্রার ব্যবহার শুরু হয়। সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে মুদ্রা ব্যবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। একবিংশ শতাব্দীতে মুদ্রা ব্যবস্থায় এনে দিলো বিস্ময়কর পরিবর্তন। নিয়ে এলো বিশ্বব্যাপী এক ভিন্ন ধারণার যার নাম বিটকয়েন।
আমরা মূলতঃ লিকুইড মানি বা ক্যাশলেস সোসাইটি সম্পর্কে জানি। এই টার্ম বাস্তবায়ন করার জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সির ভূমিকা সব থেকে বেশি। বিশেষ করে বিটকয়েন বর্তমান সময়ে তার সার্ভিস এবং বিশ্বাস দিয়ে প্রযুক্তি দুনিয়ায় একটি ডিসেন্ট্রালাইজড আর্থিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করছে। আজকের লেখায় বিটকয়েন কি, কীভাবে কাজ করে এবং এর সুবিধা অসুবিধার পাশাপাশি কিভাবে বিটকয়েন আগামীর মুদ্রা ব্যবস্থাকে নিয়ে যাবে অনন্য উচ্চতায় এবং এ প্রভাব রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলবে তা জানানোর আজকের লেখা।
বিটকয়েন কি?
বিটকয়েন হলো একটি ভার্চুয়াল কারেন্সি বা ক্রিপ্টোকারেন্সি। যে কারেন্সি সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোন সেন্ট্রাল সিস্টেম নেই তাকে ভার্চুয়াল কারেন্সি বলে। ক্রিপ্টোকারেন্সির দুনিয়ায় বিটকয়েন হলো রাজা এবং বাকি কয়েনগুলো হলো মন্ত্রী।
যুক্তরাষ্ট্রকে ক্রিপ্টোকারেন্সির রাজধানী বানিয়ে বিটকয়েনের একটি কৌশলগত মজুত গড়ে তোলা হবে—প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময়েই এ ঘোষণা দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনে জিতেছেন তিনি এবং এর পরপরই বিটকয়েনের রমরমা অবস্থা চলছে। দামের ক্ষেত্রে একের পর এক রেকর্ড গড়ে চলেছে এই ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা। একপর্যায়ে দাম ছাড়িয়ে যায় এক লাখ ডলার। বিটকয়েন নিয়ে এখন সত্যিকার এক উন্মাদনা চলছে দুনিয়াজুড়ে।
বিটকয়েন বলে অবশ্য বাস্তবে কোনো মুদ্রা নেই। এটি একটি ডিজিটাল মুদ্রা। বিটকয়েন কোনো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কিংবা কোনো সরকার বা ব্যাংকের তদারকি ছাড়াই স্বাধীনভাবে কাজ করে। একটি পাবলিক লেজারে বিটকয়েনের সব লেনদেনের রেকর্ড রাখা হয় এবং এই লেজারের কপি পুরো বিশ্বে হাজার হাজার সার্ভারে সংরক্ষিত আছে। এগুলো পরিচিত নোড নামে। বিটকয়েনের যেকেনো লেনদেন নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং বিভিন্ন নোডের মধ্যে তা শেয়ার করা হয়।
কীভাবে এল বিটকয়েন
২০০৮ সালের আগস্টে ‘বিটকয়েন ডটকম’ এই ডোমেইন নাম কেনা হয়। পেছনের মূল ব্যক্তি সাতোশি নাকামোতো। সঙ্গে ছিলেন মারতি মালমি নামের আরেক ব্যক্তি। তবে সাতোশি নাকামোতো একজন অদৃশ্য ব্যক্তি, অর্থাৎ তিনি কে তা কেউ জানেন না। এমনকি তিনি একজন ব্যক্তি না-ও হতে পারেন। ওই ডোমেইনে তখন একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়। শিরোনাম ছিল ‘বিটকয়েন: আসলে পিয়ার-টু-পিয়ার ইলেকট্রনিক ক্যাশ সিস্টেম’।
ওই নিবন্ধে একটি তত্ত্ব ও একটি সিস্টেমের নকশা উপস্থাপন করা হয়। উদ্দেশ্য, এমন একটি ডিজিটাল মুদ্রা চালু করা, যেটি প্রতিষ্ঠান বা সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থাকবে। ওই নিবন্ধের লেখক সাতোশি নাকামোতো বলেন, ‘প্রচলিত মুদ্রার মূল সমস্যা হলো, একে কাজ করাতে হলে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। মুদ্রাকে হেয় না করতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বিশ্বাস করতে হবে। তবে প্রচলিত মুদ্রার ইতিহাস হলো বিশ্বাস ভঙ্গের ইতিহাস।’
বিটকয়েন ডটকমে প্রকাশিত নিবন্ধে যে সফটওয়্যারের বর্ণনা দেওয়া হয়েছিল, পরের বছর সেটির কাজ শেষ হয়। বিটকয়েন নেটওয়ার্ক চালু করা হয় ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে সর্বপ্রথম বিশ্ববাজারে উন্মুক্ত করা হয়। প্রথম বিটকয়েন ব্লকটি মাইন করা হয় ওই বছরের ৩ জানুয়ারি বা তারপরের কাছাকাছি কোনো তারিখে। এটি পরিচিতি পায় ব্লক জিরো হিসেবে।
একে একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি হিসেবে তৈরি করার পেছনে কারণ হলো ডিসেন্ট্রালাইজেশন বা বিকেন্দ্রীকরণ। অর্থাৎ গতানুগতিক ধারায় টাকা তৈরি এবং নিয়ন্ত্রণ করে যে কোন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যে কারণে পুরো আর্থিক সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ এই ব্যাংকের কাছেই থাকে।
অন্যদিকে ক্রিপ্টোকারেন্সি সিস্টেমে কোন সেন্ট্রাল ব্যাংক বা কোন নির্দিষ্ট মানুষের নিয়ন্ত্রণ নেই। এতে কোন দেশ বা সরকার ক্রিপ্টো লেনদেন ট্র্যাক করতে পারে না এবং বন্ধ করতে পারে না। এই সুবিধার জন্যই সময়ে সময়ে ক্রিপ্টো কয়েন রিলিজ হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত যত গুলো ভার্চুয়াল কয়েন রিলিজ হয়েছে তাদের মধ্যে বিটকয়েন সব থেকে বেশি জনপ্রিয়। এর পেছনের কারণ হলো মানুষ একে খুব তাড়াতাড়ি গ্রহণ করেছে। বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অতি দ্রুত অবিশ্বাস্য হারে এর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
বর্তমানে ১ বিটকয়েন সমান ২৪,৪৬৭ ডলার। কারো কাছে ১ টি বিটকয়েন থাকা মানে ঐ ব্যক্তি ৩০ লক্ষ টাকার মালিক। যাইহোক, বিটকয়েন সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।
খুচরা বিটকয়েন:
এক টাকাকে যেমন ১০০ পয়সায় ভাগ করা যায়, তেমনটি একটি বিটকয়েনকেও ভাগ করা যায়। বিটকয়েনের এক হাজার ভাগের এক ভাগকে বলা হয় মিলি। তবে সবচেয়ে ছোট ইউনিটটি হলো সাতোশি। একটি বিটকয়েনের ১০ কোটি ভাগের ১ ভাগ হলো ১ সাতোশি। সুতরাং কেউ যদি বিটকয়েনে কোনো পণ্য বা সেবার দাম দিতে চায়, তাহলে বিটকয়েনে খণ্ডাংশে দাম পরিশোধ করতে কোনো সমস্যা হয় না। বিটকয়েনের মালিকানা নির্ধারণের জন্য বিশেষ সংকেত ব্যবহার করা হয়, যাকে বলা হয় প্রাইভেট কি। বিটকয়েনের মালিককে এটি মনে রেখে প্রয়োজনমতো ব্যবহার করতে হয়। তবে এর জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেট থাকতে হবে।
বিটকয়েন এর কাজ কি?
বিটকয়েন একটি কারেন্সি। টাকার যে কাজ বিটকয়েন ঠিক সেই সকল কাজেই ব্যবহৃত হয়। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
আর্থিক লেনদেন:
অনলাইনে আর্থিক লেনদেন করার জন্য এই কয়েন ব্যবহার করা যায়। যেহেতু ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন হিসেব ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরিচালিত হয় সেহেতু এর কোনো প্রমাণ থাকে না। সে কারণে যেখানে টাকা বা ডলার পৌঁছায় না সেখানে বিটকয়েন পৌঁছায়।
কেনাকাটা:
বিটকয়েনের এই পপুলারিটির কারণে আজকাল অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাদের পেমেন্ট সিস্টেমে এই কয়েন যোগ করেছে। পর্যাপ্ত গোপনীয়তা বজায় থাকে বলে প্রকাশ্য কেনাকাটার সাথে সাথে গোপন কেনাকাটা করা যায়।
সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সরকার তাদের গোপন আর্থিক লেনদেন করার জন্য এই কয়েনের সাহায্য নেওয়া শুরু করেছে। যত বেশি ব্যবহার হচ্ছে তত বেশি বিটকয়েনের মার্কেট ভ্যালু বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ট্যাক্স থেকে মুক্তি:
বিটকয়েন ট্র্যাক করা যায় না বলে এটি কোন ট্যাক্স আইনের আওতায় পরে না। আপনি যত কয়েনের মালিক হন তাতে কোন সমস্যা নেই। আপনাকে কোনো ট্যাক্স দিতে হবে না এবং সরকার আপনাকে বাধ্য করতে পারবে না।
ডার্ক ওয়েবে পেমেন্ট:
ডার্ক ওয়েব একটি নিষিদ্ধ জিনিস। এখানে সকল ধরনের ইলিগাল আধুনিক অস্ত্র, হিউম্যান অর্গান, ক্রেডিট কার্ড, ভাড়াটে সৈন্য ইত্যাদি সহ আরও অনেক কিছু পাওয়া যায়। যেহেতু ডার্ক ওয়েব অনেক গোপন একটা বিষয় এবং বড় বড় দেশের সরকার এগুলো তদারকি করে সেহেতু এখান থেকে গোপনে কিছু ক্রয় করতে চাইলে বিটকয়েন একমাত্র অবলম্বন।
অতএব, ডার্ক ওয়েব থেকে কোন কিছু ক্রয় করলে তার পেমেন্ট করার জন্য এই কয়েন ইউজ করা হয়। এতে ট্রানজেকশন ট্র্যাক হয় না এবং গোপনীয়তা বজায় থাকে।
আর্থিক বিকেন্দ্রীকরণ
আমরা আগেই জেনেছি গতানুগতিক অর্থ ব্যবস্থা একটি প্রতিষ্ঠান বা সরকারের কাছে জিম্মি থাকে। যারা প্রতিটি আর্থিক লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ আপনি যে টাকার মালিক তা কোথায় কীভাবে খরচ হচ্ছে তার হিসেব সরকার চাইলে আপনি দিতে বাধ্য। এতে সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুরো দেশে কি পরিমাণ নোট থাকবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং চাইলেই কোন প্রচলিত নোট বন্ধ করে দিতে পারে।
কারো কাছে ১০০ টি ১০০০ টাকার নোট আছে। হুট করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১০০০ টাকার নোট নিষিদ্ধ করলো এবং পুরোনো টাকা আর জমা নিলো না। এখন এই বিপুল পরিমাণ টাকা তখন কোন কাজেই ব্যবহার করা যাবে না।
কিন্তু বিটকয়েনে এই ধরনের কোনো রিস্ক নেই। কারণ এটি পরিচালিত ব্লকচেইন পদ্ধতি ব্যবহার করে। যার ফলে বিটকয়েন ট্রানজেকশনের সময় কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে না গিয়ে এই কয়েনের সাথে জড়িত প্রত্যেকটি কম্পিউটারে চলে যায়। কম্পিউটার ক্যালকুলেশন করে তারপর ট্রানজেকশন ভ্যালিড করে তা ব্লকচেইনে জমা রাখে। এভাবে বিকেন্দ্রীকরণ করে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হস্তক্ষেপ থেকে এই কয়েন মুক্ত থাকে।
বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে?
বিটকয়েন ক্রিপ্টোকারেন্সি পদ্ধতিতে ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করে। অর্থাৎ যখন কোন লেনদেন সংঘটিত হয় তখন এই নেটওয়ার্কে থাকা সকল কম্পিউটারে ডাটা চলে যায়। উক্ত কম্পিউটারগুলো সেই ডাটার উপর ভিত্তি করে বিটকয়েন অ্যালগরিদমের মাধ্যমে উক্ত লেনদেন সঠিক কিনা তা যাচাই করে।
এই যাচাই করার সময় তা ব্লকচেইনে থাকে পূর্বের লেনদেন ডাটা চেক করে দেখে। যখন বিটকয়েন জমা থাকা কম্পিউটারগুলো ভেরিফাই করে যে লেনদেন সঠিক আছে তখন তা স্থায়ীভাবে ব্লক চেইনে যোগ হয়ে যাবে। এই প্রসেস সম্পন্ন করার জন্য প্রতিটি বিটকয়েন লেনদেনের একটি করে পাবলিক কি থাকে। যা একটি প্রাইভেট কি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। লেনদেন চলাকালীন ভেরিফিকেশনের জন্য এই কি প্রয়োজন পরে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি নেটওয়ার্কে মাইনিং অনেক প্রচলিত শব্দ। যার অর্থ করলে দাঁড়ায় খনি খনন করা। তো একজন মাইনারের কাজ হলো ব্লকচেইন প্রযুক্তির প্রতিটি ব্লকের বৈধতা যাচাই করা। আমরা জানি বিটকয়েন লেনদেন করার সকল ডাটা ব্লকচেইনে জমা থাকে। কোনো কারণে সেই ডাটা ইনভ্যালিড হলে গ্রাহকের কম্পিউটারে স্টোর থাকা কয়েন ট্র্যান্সফার হবে না।
এই কারণে মাইনিং পদ্ধতি ইউজ করে ব্লকগুলোকে বৈধতা দেওয়া হয়। কেউ যদি কোন ব্লক হ্যাক করে ডাটা নষ্ট করার চেষ্টা করে তাহলে তার অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য ব্লক নষ্ট হবে। এ কারণে সহজেই কোথায় সমস্যা বের করে তা ঠিক করা যায়। ব্লকচেইন প্রযুক্তি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেখানে এখন শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যত এন্ট্রি হয়েছে তা দেখা যায় তবে তা পরিবর্তন করা যায় না।
বিটকয়েনের ফাউন্ডার সাতোসি নাকামাতো বিটকয়েন সফটওয়্যার তৈরি করার সময় সাপ্লাই লিমিট দিয়েছিলো ২১ মিলিয়ন। এই পরিমাণ বিটকয়েন তৈরি হওয়ার জন্য অ্যালগরিদম ভিত্তিক একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে যার মতে ২১৪০ সাল পর্যন্ত বিটকয়েন সাপ্লাই চেইন চলার সম্ভাবনা আছে।
বিটকয়েন-এর সুবিধা অসুবিধা:
বিটকয়েনের বেশ কিছু সুবিধা ও অসুবিধা আছে যা নিচে বর্ণনা করা হলো।
শক্তিশালী নিরাপত্তাঃ নিরাপত্তার দিক দিয়ে বিটকয়েন সবার উপরে। কোন নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সরকার নিয়ন্ত্রণ করে না জন্য এত কোন সিকিউরিটি সমস্যা হয় না।
এক্সট্রা চার্জ নেইঃ বিটকয়েন লেনদেন করার জন্য কোন অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হয় না।
ওপেনসোর্সঃ এটি একটি ওপেনসোর্স প্রোজেক্ট। অর্থাৎ বিটকয়েন সার্ভিস যে কেউ একদম ফ্রি তে ব্যবহার করতে পারবেন, এখানে কোন গোপন ফি নেই।
গ্লোবাল সাপোর্টঃ ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপি বিটকয়েন বৈধতা পাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে সব ধরনের কেনাকাটা করার জন্য মানুষ এই কয়েন সিস্টেম ইউজ করবে।
দ্রুত ট্রানজেকশনঃ Peer-To-Peer কানেকশন ইউজ করে ট্রানজেকশন হয় জন্য অনেক দ্রুত গতিতে কয়েন এক ওয়ালেট থেকে অন্য ওয়ালেটে ট্র্যান্সফার হয়।
অসুবিধাঃ
অনেক দেশে অবৈধঃ বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে বিটকয়েন তথা ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে লেনদেন করা অবৈধ। এটি ব্যবহারের কারণে ব্যবহারকারীর জেলেও যেতে পারেন।
রিস্কিঃ ধরুন কোন কারণে ট্রানজেকশন অসম্পূর্ণ হয়ে গেল। তখন কিন্তু ওয়ালেট থেকে সেন্ড করা কয়েন আর ফেরত পাওয়া যাবে না। অতএব প্রতিটি লেনদেন অনেক সতর্কতার সাথে করতে হয় যা অনেক রিস্কি।
রিকভারি করা যায় নাঃ বিটকয়েন কম্পিউটারের হার্ডডিস্কে থাকে। কোন কারণে সে ডিস্ক নষ্ট হয়ে গেলে কোন ভাবেই কয়েন পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয় না।
অস্থিতিশীল বাজার মূল্যঃ মার্কেট ট্রেন্ডের উপর নির্ভর করে বিটকয়েনের দাম কমে এবং বাড়ে অর্থাৎ বিটকয়েনের মূল্যের স্থিতিশীলতা নেই।
বিটকয়েন অনেক প্রচলিত কারেন্সি। যেভাবে এটি পুরো সমাজকে লিকুইড মানির দিকে নিয়ে যাচ্ছে তাতে খুব বেশি দিন লাগবে না আমরা ক্যাশ লেস সোসাইটিতে প্রবেশ করে ফেলব।
বিটকয়েন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, দেশের আইন অনুযায়ী বিটকয়েন বা অন্য কোনো ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন বা সংরক্ষণ করা বেআইনি। যেহেতু ভার্চুয়াল মুদ্রা কোনো দেশের বৈধ কর্তৃপক্ষ ইস্যু করে না, সেজন্য এর বিপরীতে আর্থিক দাবির কোনো স্বীকৃতিও থাকে না। ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেনের মাধ্যমে অর্থপাচার এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন সম্পর্কিত আইনের লঙ্ঘন হতে পারে। পাশাপাশি এ ধরনের লেনদেনের মাধ্যমে আর্থিক এবং আইনগত ঝুঁকিও রয়েছে।
এসব সতর্কতার কথা জানিয়ে বিটকয়েনে লেনদেনের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়ে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০২১ সালের ২৯ জুলাই এমন আরেকটি বিজ্ঞপ্তি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিটকয়েনের মতো ভার্চুয়াল মুদ্রার মালিকানা, সংরক্ষণ বা লেনদেন অবৈধ। তাই আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকি এড়াতে বিটকয়েনের মতো ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেন বা সহায়তা প্রদান ও এর প্রচার থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায় যে, দেশে অনলাইনভিত্তিক ভার্চুয়াল মুদ্রার (বিটকয়েন, ইথেরিয়াম, রিপল, লিটকয়) বিনিময় বা লেনদেন হচ্ছে। এসব ভার্চুয়াল মুদ্রা কোনো দেশের বৈধ কর্তৃপক্ষের ইস্যুকৃত বৈধ মুদ্রা নয়। এসব মুদ্রায় লেনদেন বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত নয়, তাই এর বিপরীতে কোনো আর্থিক দাবির স্বীকৃতিও থাকে না। ভার্চুয়াল মুদ্রায় এসব লেনদেন অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সম্পর্কিত আইনের লঙ্ঘন হতে পারে। একইসঙ্গে বৈধ কোনো সংস্থার স্বীকৃত না হওয়ায় গ্রাহকরা ভার্চুয়াল মুদ্রার সম্ভাব্য আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকিসহ নানা ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন। এমতাবস্থায় আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকি এড়াতে বিটকয়েনের মতো ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেন থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
পরিশেষে একটি কথা বলবো সব কিছুর মঙ্গল ও অমঙ্গল দিক রয়েছে। বিটকয়েন বিশ্বব্যাপী চালু হলে কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণই বেশী হবে। যেহেতু বিটকয়েন বা ভার্চুয়াল কারেন্সি নিয়ন্ত্রণের নির্দিষ্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থা নেই তাই এর যথেচ্ছা ব্যবহার যেকোন দেশের অর্থনীতিতে বিরূপপ্রভাব ফেলবে। তাছাড়াও বিটকয়েনে লেনদেনে ট্যাক্স ফ্রি-র কারণে মানুষ এদিকে বেশী ঝুকবে ফলে দেশ যেমন সম্পদ ও অর্থের ট্যাক্স হতে বঞ্চিত হবে অন্যদিকে দেশের অন্যদেশে পাচারের সম্ভাবনা বাড়বে। ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন বা সংরক্ষণ করা বেআইনি। ভার্চুয়াল মুদ্রায় এসব লেনদেন অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সম্পর্কিত আইনের লঙ্ঘন হতে পারে। তাই প্রত্যেক দেশের সরকারের উচিত বিটকয়েন বা ভার্চুয়াল কারেন্সির লেনদেন বন্ধের ব্যাপারে সুদৃষ্টি দেয়া।
এমএসএম / এমএসএম

বিটকয়েন বা ভার্চুয়াল কারেন্সি; আগামীর মুদ্রা ব্যবস্থার জন্য মঙ্গল নাকি অমঙ্গল!

মহা শিবরাত্রির ইতিহাস ও জগতের মঙ্গল কামনা

জিনিস যেটা ভালো , দাম তার একটু বেশি

মব জাস্টিসের প্রভাবে বর্তমান বাংলাদেশ

সুস্থ জাতি গঠনে দরকার নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা

রাষ্ট্রভাষা বাংলা ও একুশে বইমেলা

বিশ্ব জলাভূমি দিবস: টিকে থাকার জন্য জলাভূমি সুরক্ষা এখন সময়ের দাবি

দেবী সরস্বতী: বিদ্যা, জ্ঞান, ও শুভ্রতার বিশুদ্ধ প্রতীক

স্বাস্থ্যসেবায় বায়োকেমিস্টদের অবদান: এক অপরিহার্য দৃষ্টিভঙ্গি

আতঙ্ক আর হতাশার মধ্যেই ট্রাম্পের যাত্রা

কন কনে শীতে অযত্নে -অবহেলায় কাটছে পথশিশুদের জীবন

দাবি আদায়ের প্রশ্নে আপসহীন ছিলেন সাংবাদিক নেতা আলতাফ মাহমুদ
