এরোনেস ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিকীর সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সময়ে ডিবি পরিচয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট বাসা থেকে তুলে নেওয়া বিএনপি নেতা ব্যবসায়ী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবুর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গত বছরের ৫ আগস্টের আগে তাকে ধরে নিয়ে টাকা ছয়দিন আয়নাঘরে গুমকরে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। গত বচরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
জানা গেছে, লুৎফুল্লাহেল মাজেদ এরোনেস ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি ২০১৬ সালে তারেক সিদ্দিকীর পৃষ্টপোষকদের নামে মামলা করে ২১০০ কোটি টাকার প্রজেক্ট ক্যানসেল করেছিলেন। যা ফ্রান্স সরকারের সহায়তায় ৬৫৮ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন করা হয়। সেই সুযোগ সন্ধানীরা গত বছরের ৫ই অগাস্টের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দুদকে অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো তদন্ত ছাড়াই মামলা করা হয়। এরোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড বাংলাদেশের একমাত্র এভিয়েশনের জটিল কারিগর জ্ঞান সম্পন্ন একটি প্রতিষ্ঠান।
দুদকের মামলায় এরোনেস ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুল আনামকেও আসামি করা হয়েছে। তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চারটি উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদক ওই মামলাটি করে। অথচ স্বৈরাচারী সরকারের সময়ে মাহবুব আনামের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতকে আর্থিক সহযোগিতা করার অভিযোগে দুদকে অভিযোগ গঠিত হয়েছিল। তখন তার বিরুদ্ধে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে উক্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমানিত হওয়ায় সে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারও করা হয়। এসব উন্নয়ন প্রকল্পে প্রধান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে আসামি না করায় মামলার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এরোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটি উল্লেখিত চারটি প্রকল্পের একটিতেও প্রধান ঠিকাদার নয়। এমনকি কোন প্রকল্পেই বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সঙ্গে তাদের সরাসরি কোন চুক্তি নেই। প্রধান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অধীনে তাঁরা সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করছে। এজন্য দেশি-বিদেশি ঠিকাদারদের সঙ্গে তাদের প্রতিযোগিতা করতে হয়েছে। ফলে কোন রকম তদন্ত ছাড়া এমন মামলাকে ‘গায়েবি মামলা’ হিসেবে দেখছে ভুক্তভোগী এই প্রতিষ্ঠানটি। এরোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড সাধারণত বিমানবন্দরে ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল কাজ এবং এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সিস্টেমস, ভিডিজিএস, আইএলএস, ডিভিওআর, রাডার সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন ও এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট’র মতো জটিল কারিগরি কাজসমূহ করে থাকে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রাডার প্রতিস্থাপনে বেবিচক’র সঙ্গে চুক্তি থ্যালেস’র, মামলার আসামী এরোনেস’ আকাশসীমা নিরাপদ রাখতে নজরদারি জরুরি হওয়ায় হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে রাডার প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিএনএস-এটিএম (কমিউনিকেশন, নেভিগেশন, সার্ভিল্যান্স ও এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট) সিস্টেমসহ রাডার স্থাপন’ নামের প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১ মার্চ অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২১’শ কোটি টাকা। দেশীয় প্রতিষ্ঠান করিম অ্যাসোসিয়েটসকে মনোনীত করে বেবিচক। কিন্তু বিশাল ব্যয়ের চিত্র দেখে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। ব্যাপক সমালোচনার মুখে এই অনুমোদন বাতিলও করা হয়।গত ২০২১ সালে বেবিচক তার নিজস্ব অর্থায়নে এ-সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমোদন পায়। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের হস্তক্ষেপে জি-টু-জি পদ্ধতিতে রাডার বসানোর সিদ্ধান্ত হয়।
অপর এক সূত্র জানায়, জানান, ২০২১ সালের এপ্রিলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় সরকার। বেবিচকের কমিউনিকেশন, নেভিগেশন, সার্ভিল্যান্স ও এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট আধুনিকায়নে প্রকল্পটি ২০২১ সালের ৮ জুন ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন করে। ৬৫৮ কোটি টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ফ্রান্সের বিশ্বখ্যাত রাডার প্রস্তুতকারি কোম্পানি থ্যালেসের সঙ্গে ২০২১ সালের ২১ অক্টোবরে চুক্তি করে বেবিচক। চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়েরর মধ্যেই রাডার স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এক্ষত্রে প্রকল্পটি জিটুজি পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করায় কমপক্ষে দেড় হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বিষয়টি পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেবিচক’র সঙ্গে চুক্তি হয়েছে থ্যালেস এলএএস ফ্রান্স এসএএস’র। এরোনেস’র সঙ্গে তাদের কোন চুক্তিই নেই। এরোনেস ইন্টারন্যাশনাল এখানে বিমানবন্দরের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য নিযুক্ত বাংলাদেশী কি ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পার্টনার। এর ফলে তাঁরা কো-কন্ট্রাকটিং পার্টনার হিসেবে থ্যালেসের নির্দেশনা মোতাবেক নির্দিষ্ট কিছু কাজে দায়িত্ব পালন করে।
এছাড়া প্রকল্পে ব্যয় হওয়া ৭৩০ কোটি টাকা বেবিচক নিজস্ব তহবিল থেকে থ্যালেসকে পরিশোধ করে। থ্যালেসের কাছ থেকেই বেবিচক পুরো প্রকল্পের কাজ বুঝে নেয়। এখানে এরোনেসকে জড়িয়ে দেয়া উদ্দেশ্যপ্রনোদিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারন (থার্ড টার্মিনাল) প্রকল্পের প্রধান ঠিকাদার এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি)। এডিসি’র অধীনে এই প্রকল্পে ২৩৭টি সাব-কন্ট্রাক্টর কাজ করছে। এরোনেস এই ২৩৭টি সাব-কন্ট্রাকটরের মধ্যে মাত্র একটি সাব-কন্ট্রাকটর। তাঁরা শুধুমাত্র এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সিস্টেমস (এজিএল) এবং ভিজিডিএস লোকাল ইনস্টলেশন’র কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিন্তু দুদকের মামলার এজাহারে বিমানবন্দরটির প্যাসেঞ্জার বোর্ডিং ব্রিজের কাজের সাথে এরোনেসকে জড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এটি একবারেই ভিত্তিহীন বলে দাবী করেছে কোম্পানিটি। মূলত প্যাসেঞ্জার বোর্ডিং ব্রিজের কাজটি করেছে চাইনিজ কোম্পানি সিআইএমসি। আর অগ্রিম বিল তুলেছে বিইউসিজি, দোষ চাপছে এরোনেস এর কাঁধে।
তাছাড়া, সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারন প্রকল্প (ফেজ-১) বাস্তবায়ন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেইজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপ (বিইউসিজি)। এরোনেস এই প্রকল্পে বিইউসিজি’র একজন সাবকন্ট্রাক্টর। প্রকল্প শুরু হওয়ার পর চুক্তি অনুযায়ী সমমূল্যের ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদান করে বেবিচকের কাছ থেকে অগ্রিম বিল নেয় বিইউসিজি। ২০২০ সালে এই প্রকল্প শুরুর আগেই কনসালটেন্টের মাধ্যমে বেবিচক নকশা অনুমোদন করে। কিন্তু ওই বছরের ডিসেম্বরে কাজ শুরুর পর নকশার ত্রুটি ধরা পড়ে। নতুন নকশার জন্য বেবিচক চার বছর প্রকল্পের কাজ স্থগিত রাখে। এই অবস্থায় প্রকল্প কাজ পুনরায় শুরু করার জন্য এরোনেস প্রধান ঠিকাদার বিইউসিজিকে তাগাদা দিয়ে একাধিক পত্র দেয়। কিন্তু বেবিচকে নকশা অনুমোদন আটকে থাকায় কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। শুরু থেকেই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এলাকায় এরোনেস এর কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রয়োজনীয় জনবল অবস্থান করে। একবারের জন্যও তাঁরা সাইট অফিস বন্ধ করেনি। এ কারণে প্রতি মাসেই এরোনেসকে বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। বেবিচকের কাছ থেকে অগ্রিম বিল নিয়েছে মূল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এ বিষয়েও এরোনেসকে মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এখানে ‘অগ্রিম বিল নিয়ে আত্মগোপন’ অভিযোগটিও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
অপরদিকে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবন নির্মাণ বা কক্সবাজার টার্মিনাল প্রকল্পে প্রধান ঠিকাদার বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সিআরএফজি-এনডিইজেভি। এই প্রকল্পে এরোনেস সাবকন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু মামলার এজাহারে উল্লেখিত কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারন প্রকল্পের সঙ্গে এরোনেসের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে এরোনেস ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এমএসএম / এমএসএম

এরোনেস ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

স্নায়ু বিকাশ প্রতিবন্ধীদের সুইড বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা লোপাট

বিসিক মুদ্রণ শিল্পনগরী প্রকল্পের মাটি ভরাটের প্রিলেভেল সার্ভে কাজে প্রকল্প পরিচালকের অনিয়ম-দুর্নীতি

মাদারীপুরের আলোচিত মিথ্যা মুক্তিযোদ্ধার কোটায় একই পরিবারের চারজন করছেন সরকারি চাকরি

নিষিদ্ধ হলেও হিযবুত তাহরীরের প্রকাশ্যে কর্মসূচী ঘোষণা

মিরপুর ফায়ার সার্ভিসের ট্রেনিং কমপ্লেক্সের অফিসার তৌহিদুলের শাস্তি দাবি

বিসিকের প্রকল্প পরিচালক মোঃ রাকিবুল হাসানের ঘুস-দুর্নীতি সমাচার

জমি ক্রয়ের নামে ভাইয়ের বিরুদ্ধে প্রবাসি স্বামীর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

বিআইডব্লিউটিএ বন্দর শাখার সাবেক পরিচালক সাইফুলের টাকার উৎস কি?

নার্গিসকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি দেওয়া হোক

গাজীপুর গণপূর্তের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিমের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকের ঢাকায় ১৯ বছরের লুটপাটের রাজত্ব
