অধরা চোরাকারকারি দুলাল-জবের-রিশন
সিলেটে ২১ কোটি টাকার চোরাই পন্য আটক

সিলেট গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে সম্প্রতি ২১ কোটি টাকার চোরচালানে পণ্যের জব্দ করেছে বিজিবি। হওয়ার পণ্যে বাজারমূল্য আনুমানিক ২১ কোটি টাকা। এটি সিলেট সীমান্ত থেকে উদ্ধার হওয়া এ যাবৎকালের সর্ববৃহৎ চোরাচোলানের পণ্যের চালান বলে নিশ্চিত করেছে বিজিবি। সম্প্রতি বিজিবির ৪৮ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রতাপপুর সীমান্তের বিভিন্ন স্থান থেকে বিশাল এ চালান জব্দ করা হয়। জব্দকৃত ভারতীয় পণ্যের মধ্যে রয়েছে, বিপুল পরিমাণ শাড়ী, লেহেঙ্গা, থান কাপড়, কসমেটিক্স, জিরা, বাসমতি চাল, চিনি, কমলা, পোস্তদানা, কাজুবাদাম ও কিসমিস। যার বাজারমূল্য ২১ কোটি টাকা। গত ১২ মার্চ বুধবারে অভিযানে বিশাল এ চালানটি আটক করা হয়। বৃহস্পতিবার বিজিবি এক সংবাদ সম্মোলন করে বিষয়টি নিশ্চিত করে। এতোবড় চোরচালান আটক করা প্রশাসনের তোলপাড় শুরু হলেও কোন চোরাকারবারিকে আটক করতে পারিনি আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। স্থানীয় ভাবে অনুসন্ধানকালে জানা যায়, এই বিশাল চালানের পিছনের জড়িত রয়েছেন পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি ইত্রিস আলী উরফে মন্ত্রীর ছেলে বিজিবির লাইনম্যান হিসাবে পরিচিত দুলাল আহমেদ ও খাশিয়া লাপাপুঞ্জির হেডম্যান হিসাবে পরিচিত রিশন কংওয়াং খাশিয়া ও যুবদল নেতা জুবের আহমদ। জুবের এক সময় আওয়ামিলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন, তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদলের আহবায়ক কমিটির সিনিয়র সদস্য ও ২নং পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহিন। গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ আহমদ বলেন, উপজেলা যুবদলের ৪১ নং সদস্য জুবের আহমদের বিরুদ্ধে দলের শৃঙ্খলাভঙ্গের ডকুমেন্টসসহ একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিয়ষটি জেলা যুবদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
বিজিবির লাইনম্যান দুলাল আহমদ প্রকাশ মন্ত্রীর পুত্র দুলাল এক নামেই পরিচিত। তাকে বলা হয়ে থাকে সীমান্তের মাদক চোরাচালেন ‘গডফাদার’। সে গোয়াইনঘাট থানাধীন হাজিপুর (ঢালার পার) এলাকার মৃত ইদ্রিস ওরফে মন্ত্রীর পুত্র। গোয়াইনঘাট উপজেলার ২নং পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের সোনারহাট- ক্যাম্পের আওতাধীন মাতুরতল ও সোনার হাট সীমান্তের বাউরকোনা, পান্তুমাই, মায়াবী ঝর্ণা, নোয়াগাও ও কুলুম ছড়া এলাকার মাদক কারবারেই উঠে আসে প্রথমে তার নাম। সরাসরিও নিয়ন্ত্রণ করেন মাদক চোরাকারবার। সীমান্তের ওপারেও আছে তার বাহিনী। ওপার নিয়ন্ত্রণ করে ওরা, আর এপার নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। মূল কাজই মাদক চোরাকারবার। ২নং পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের সোনারহাট-ক্যাম্পের আওতাধীন মাতুরতল ও সোনারহাট সীমান্তের বাউরকোনা, পান্তুমাই, মায়াবী ঝর্ণা, নোয়াগাও ও কুলুম ছড়া সীমান্তের মাদক চোরাচালানের সব টাকাই পাঁচার হয় তার হাত ধরে। এ কারণে সীমান্তের সব ধরনের চোলাচালানের নিয়ন্ত্রণও করতে হয় তাকে। মাদক চোরাকারবারি ও বিজিবির লাইনম্যান দুলাল আহমদ তার দলের সদস্যরা কতিত সোর্স বা লাইনম্যানের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি, আইনশৃংলা বাহিনী পুলিশ, ডিবিপুলিশ ও কিছু বখরাবাজ সাংবাদিক নিয়ন্ত্রণ করছে এ কারণে এক দশক ধরে সীমান্তের কর্তৃত্ব তাদের হাতে। সীমান্তের বাউরকোনা, পান্তুমাই, মায়াবী ঝর্ণা, নোয়াগাও ও কুলুম ছড়া এলাকার সমস্ত মাদকের চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করেন দুলাল। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, সিলেটের গোয়াইনঘাট সীমান্তে রয়েছে জুবের আহমদের নিজস্ব একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট দিয়ে সীমান্তবর্তী চোরাচালানের একটি ‘লাইন’ নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। চোরাচালানের ‘বিজিবি লাইনম্যান’ হিসেবে থাকায় চোরাকারবারিদের মধ্যে তাকে আলাদা পরিচিত এনে দিয়েছে। তার মাধ্যমে সীমান্তে চোরাচালানের লাইন নিয়ন্ত্রণ করছেন তার ভাই দুলাল, নাজিম, হুমায়ুন। চোরাচালানের অভিযোগে গত ২০২২ সালের ১১ মে গোয়াইনঘাট থানায় তার বিরুদ্ধে মামালা দায়ের করা হয়। গোয়াইনঘাট থানার ১৪/২২ নং মামলায় ২ নম্বর আসামি হলেন জুবের আহমদ। সূত্র জানায়, গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জুবের আহমদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপি- যুবদলের মিছিল-মিটিংয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে আসার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এদিকে আন্ড্রারগ্রাউন্ডে থেকে সীমান্ত এলাকার চোরচালান নিয়ন্ত্রন করেন খাশিয়া লাপাপুঞ্জির হেডম্যান হিসাবে পরিচিত রিশন কংওয়াং খাশিয়া। তবে তিনি সব সময় থেকে গেছেন আলোচনার বাহিরে। তিনি মূলত ভারতের চোরাকারবারিদের যোগাযোগ স্থানপন করে দেন দেশের চোরাকাবারিদের সাথে।
অপরদিকে সিলেট সীমান্তে ব্যাপকভাবে বেড়েছে চোরাচালান। বেড়েছে বিজিবির তৎপরতাও। ফলে চোরাই পণ্য জব্দের নতুন নতুন রেকর্ড যেমন হচ্ছে, তেমনি সিলেট হয়ে পড়ছে চোরাচালানের ‘অভয়ারণ্য’। চলতি বছরের প্রথম আড়াই মাসেরও কম সময়ে সিলেটে জব্দ হয়েছে ৫৮ কোটি টাকার বেশি মূল্যের চোরাই পণ্য। এর মধ্যে শুধু মার্চ মাসের প্রথম ১২ দিনে জব্দ হয় ২৩ কোটি টাকার পণ্য। এমনভাবে চললে চলতি বছর জব্দের পরিমাণ গত বছরকেও ছাড়াবে। ২০২৪ সালে জব্দ হয় ১৫৬ কোটি টাকার পণ্য। এটি এক বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড। আর অন্তর্বতী সরকারের সাড়ে সাত মাসে জব্দ হয়েছে ১৬৩ কোটি ১১ লাখ ৮৮ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকার চোরাই পণ্য। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় মার্চে অভিযান কম হলেও চোরাচালানের বিশাল এই চালান জব্দের কারণে আর্থিক পরিমাণ বিচারে বছরের প্রথম দুই মাসকে পেছনে ফেলে দিয়েছে মার্চ মাসের প্রথম ১২ দিনের তিন অভিযান। বিজিবির তথ্য ও পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, মার্চ মাসের প্রথম ১২ দিনে তিনটি অভিযান হয়েছে। এর মধ্যে ১২ মার্চের অভিযানে ২১ কোটি টাকার ভারতীয় চোরাই পণ্য জব্দের আগে গত ১০ মার্চ এক কোটি চার হাজার ৮৭৫ টাকা মূল্যের ভারতীয় পণ্য এবং ৭ মার্চ এক কোটি ১৩ লাখ ১২ হাজার টাকা মূল্যের পণ্য জব্দ করেছে বিজিবি। অর্থাৎ মার্চের তিন অভিযানে জব্দকৃত ভারতীয় চোরাই পণ্যের সিজার মূল্য ২৩ কোটি ১৩ লাখ ১৭ হাজার ৭৪৫ টাকা। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় ১০ দিনের অভিযানে ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৭৭ হাজার ৯৫০ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ করে বিজিবি। এর মধ্যে ১৮ ফেব্রুয়ারি এক দিনে চার কোটি ৮০ লাখ ৬৭ হাজার ১০০ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ করা হয়। এর আগে গত জানুয়ারিতে এক মাসে জব্দ করা হয় ১৯ কোটি ৪২ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭৫ টাকার চোরাই পণ্য। এর মধ্যে ২৪ জানুয়ারি সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি ২২ লাখ ১৬ হাজার ৭০০ টাকার ভারতীয় চোরাই পণ্য জব্দ করে বিজিবি। পরদিন ২৫ জানুয়ারি দুই কোটি সাত লাখ ৫০ হাজার ৬২৫ টাকার চোরাই পণ্য এবং এর আগে ১৮ জানুয়ারি দুই কোটি ৮১ লাখ ২৩ হাজার ৩০০ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ করা হয়। বিজিবির জব্দের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসে ১৫৫ কোটি ৭৬ লাখ ৭৩ হাজার ৭৫৩ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ হয়। এটি এই সীমান্তের ইতিহাসে যেকোনো বছরের তুলনায় দেড় গুণ। বছর বিবেচনায় এক দশকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগে সবচেয়ে বেশি ৯৫ কোটি ৩৬ লাখ ১৮ হাজার ৫৩৬ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ হয় ২০২২ সালে। ২০২৩ সালে জব্দ হয় ৮২ কোটি ৯৮ লাখ ৫৭ হাজার ৮৯০ টাকার পণ্য। সে হিসাবে অর্ন্তর্বতী সরকারের ছয় মাসে জব্দ হয়েছে এর প্রায় দেড় গুণ। এ ছাড়া ২০২১ সালে ২৩ কোটি ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৬৯ টাকার চোরাই পণ্য, ২০২০ সালে ১৬ কোটি ৪৯ লাখ ছয় হাজার ৪৮৮ টাকার, ২০১৯ সালে ১৩ কোটি ৫১ লাখ এক হাজার ৮১২ টাকার, ২০১৮ সালে চার কোটি ৮২ লাখ ৯১ হাজার ৩২২ টাকার, ২০১৭ সালে চার কোটি ৮৮ লাখ ৩৫ হাজার ১৫০ টাকার, ২০১৬ সালে চার কোটি ৫৪ লাখ ৫১ হাজার ৯৯৮ টাকার ও ২০১৫ সালে চার কোটি ১২ লাখ ৬৫ হাজার ৭৩৬ টাকার চোরাই মালপত্র জব্দ করা হয়। এসব তথ্য বিভিন্ন সময় বিজিবি ৪৮ ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করেন ওই ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাজমুল হক।
এবিষয়ে সিলেট ব্যাটালিয়ন (৪৮ বিজিবি)'র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ হাফিজুর রহমান, পিএসসি বলেন, উর্ধ্বতন সদরের নির্দেশনা অনুযায়ী সীমান্তে নিরাপত্তা রক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি'র আভিযানিক কার্যক্রম ও গোয়েন্দা তৎপরতা সর্বোতভাবে অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সীমান্তবর্তী এলাকার অভিযান পরিচালনা করে চোরাচালানী মালামাল জব্দ করা হয়।
এদিকে শনিবার চোরাচালানের খবর পেয়ে অভিযান চালাতে গিয়ে চোরাকারবারিদের হামলা চোরাকারবারিদের ধরতে গিয়ে সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্ত এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা হামলার শিকার হয়েছেন। হামলায় দুই বিজিবি সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (১৬ মার্চ) রাত ১০টার দিকে, যখন বিজিবি টহল দল সীমান্তে ভারতীয় গরু প্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা করছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তের ঘিলাতৈল, ফুলবাড়ী, তলাল, টিপরাখলা, করিমটিলা, কমলাবাড়ী, গোযাবাড়ী ও বাইরাখেল দিয়ে অবৈধভাবে ভারতীয় গরু প্রবেশ
এমএসএম / এমএসএম

গাজীপুরে সাংবাদিক রুবেল আহমেদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, আহত ৩

বরগুনায় পল্লী বিদ্যুতকর্মীকে শিকলে বাঁধলেন নারী গ্রাহক

সীতাকুণ্ডে মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু

দুমকিতে গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন

কাহালুতে জনতার হাতে ৫ ডাকাত আটক

গজারিয়ায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে আটক ৩

পাঁচবিবি রেলওয়ে প্লাটফর্ম বর্ধিত করণ শুধুই আশ্বাস আন্তঃনগর ট্রেনে উঠা নামায় যাত্রীদের দূর্ভোগ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার উদ্যোগে মশক নিধন ও পরিষ্কার -পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি

মুকসুদপুরে উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের উদ্যোগে পোনা জাতীয় মাছ অবমুক্ত করা হয়েছে

জরার্জীণ মহেশখালী আদালত ভবন,ভাড়া কক্ষে চলছে বিচারকার্য

নাসা গ্রুপের শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত

রৌমারীতে শিক্ষার্থীর অশালীন ভাষায় গালিগালাজের অভিযোগ শিক্ষকের বিরুদ্ধে
