সিলেটে বালু-পাথর লুটেরাজদের রক্ষায় মরিয়া প্রশাসন: দুটি মামলা নেই কোন লুটকারীর নাম

সিলেটের বিভিন্ন পাথর কোয়ারী থেকে অবৈধ পাথর আর বালু লুটের ঘটনায় সারাদেশে চলছে তোলপাড়। ইতিমধ্যে লুটপাটের ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার কারণে বদলী করা হয়েছে সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ (ওএসডি) ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইউএনও আজিজুন নাহারকে। কিন্ত লুটপাটের ঘটনায় একমাস আগে গোয়াইনঘাটের ইউএনও রতন কুমার অধিকারীকে বদলী করা হলেও অদৃশ্য কারণে তার বদলীর আদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। পাথর লুটপাটে উঠে এসেছে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াত, বৈষম্যবিরোধী সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তার নাম। কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর লুটের ঘটনার পর থানায় দেড় হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর গতকাল জাফলংয়ে পাথর লুটপাটের ঘটনায় ১০০- ১৫০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সোমবার রাতে গোয়াইনঘাট থানায় মামলাটি দায়ের করেন উপজেলা সহকারী ভ‚মি অফিসার আব্দুল মুনায়েম। মামলার নম্বর ২৯ (তারিখঃ ১৮/০৮/২০২৫)। কিন্তু অদৃশ্য কারণে মামলায় কোন আসামীর নাম নেই। স্থানীয়রা বলছেন প্রশাসন লুটপাটকারীদের নাম পরিচয় জানার পর মামলায় তাদের নাম ঠিকানা উল্লেখ না করা প্রকৃত অপরাধীদের রক্ষায় একটি কৌশল মাত্র।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত ৭, ৮ ও ৯ আগস্ট টানা তিন দিন ধরে জাফলং এলাকায় ব্যাপক পাথর লুটপাট হয়। এ ঘটনায় যৌথবাহিনী ও প্রশাসন উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। গত পাঁচ দিনে প্রায় ৫ লাখ ঘনফুট লুট হওয়া পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত পাথর পর্যটনকেন্দ্র এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে লুট হওয়া বিপুল পরিমাণ পাথরের তুলনায় উদ্ধার অনেকটাই অপ্রতুল বলে জানা গেছে। মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে ৪০ হাজার ঘন ফুট পাথর লুট করা হয়েছে। এ লুট পাথর থেকে এখন পর্যন্ত উদ্ধার করে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে ২২ হাজার ঘনফুট। এজাহারে তিনি উল্লেখ করনে স্থানীয় চোরাকারবারীরা প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি বারকি নৌকা ব্যবহার করে বিপুল সংখ্যক শ্রমিককে দিয়ে পাথর লুট করে নিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর ২০১৫ সালে জাফলং-ডাউকি ও পিয়াইন নদীর মধ্যবর্তী প্রায় ১৪.৯৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। এরপরও সরকারি আইন অমান্য করে প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন চলছে। এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমদ জাফলং জিরো পয়েন্টে পাথর লুটের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে সিলেটে পর্যটন স্পট জৈন্তাপুরের শ্রীপুর এলাকার রাংপানিতে পাথর লুটে রাংপানি নদী তীরবর্তী এলাকার বিভিন্ন স্থানে টাস্কফোর্সের অভিযানে বিপুল পরিমাণ বালু ও পাথর জব্দ করা হয়েছে। অভিযানে বাংলাবাজার সংলগ্ন নদী তীর থেকে প্রায় ৩৫ ট্রাক বালু জব্দ করা হয়। পরে উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে জব্দকৃত বালু ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। এছাড়া একটি স্থানীয় ক্রাশার মেশিন থেকে প্রায় ৯ হাজার ৫০০ ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়, যা রাংপানি নদী থেকে উত্তোলিত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। জব্দকৃত এসব পাথর বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ক্রাশার মালিকের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জৈন্তাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) ফারজানা আক্তার লাবনী।
লাগাতার অভিযানেও থেমে নেই পাথর লুট: লাগাতার অভিযানের পরও কোনভাবেই থামছেনা সিলেটের বালু-পাথর লুট। সাদাপাথরসহ বিভিন্ন স্পট থেকে লুট হওয়া পাথর উদ্ধারে চলছে লাগাতার অভিযান। প্রতিদিন জব্দ হচ্ছে হাজার হাজার ঘনফুট পাথর। এরপরও থেমে নেই পাথর লুট। অভিযানের বিষয়টি মাথায় রেখে পাল্টেছে লুটের কৌশল। এবার নিলামকে হাতিয়ার বানিয়ে কানাইঘাটের লোভায় চলছে পাথর লুট। কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী লোভা নদীতে নিলামের আড়ালে চলছে অবৈধ পাথর উত্তোলন। নদীর দুই পাড়ে সারি সারি বাল্কহেড, খননযন্ত্র ও ক্রাশার মেশিন বসিয়ে প্রতিদিনই শত শত শ্রমিক পাথর তুলছেন। যদিও সরকার ২০২০ সালে এ কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ ঘোষণা করেছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ, নিলামে বিক্রি হওয়া পাথর সরানোর নামে নতুন করে নদী থেকে পাথর তোলা হচ্ছে। এ কাজে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী নেতাও জড়িত।
সিলেটের বদলী হওয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানান, নিলামে পাওয়া প্রতিষ্ঠানকে পাথর সরানোর জন্য ৪৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। পরে আরও ৩০ দিন বাড়ানো হলেও নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়ানোর আবেদন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় নাকচ করেছে। তাই আর কোনো বৈধ সুযোগ নেই।
অপর দিকে জৈন্তাপুর উপজেলার আসামপাড়া এলাকায় দুই বছর আগে জাফলং ও শ্রীপুর পাথর কোয়ারি থেকে স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার আশায় পাথর লুট করেন। কয়েক মাস আগে শ্রীপুর পাথর কোয়ারি থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের অভিযোগে বর্তমান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) ফারজানা আক্তার লাবনী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। তিনি লুট হওয়া পাথর জব্দ করেন।
সিলেটের সচেতন মহলের অভিযোগ, ভোলাগঞ্জের ঘটনায় সামনে আসায় পর্যটন ধ্বংসের দায় এড়াতে প্রশাসন এখন দায়সারা অভিযান চালাচ্ছে। জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমা বলেন, লুট বন্ধ ও লুট হওয়া পাথর উদ্ধারে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্পটে আমাদের অভিযান চলছে।
সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের দাবি, গত বছরের ৫ আগস্টের পর এখন পর্যন্ত অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের অভিযোগে তারা ১২টি মামলা করেছে। এসব মামলার আসামি ১৯১ জন। একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের ১৯টি মামলায় ৬০ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। টাস্কফোর্সের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে ৫২ জন। আর বিএমডির এক মামলায় আসামি দেড় হাজার থেকে ২ হাজার। এখস পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পরিবেশকর্মী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর পুলিশি তৎপরতার ঘাটতির সুযোগে জেলার প্রতিটি কোয়ারিতে পাথর লুট শুরু হয়। এ সময় গোয়াইনঘাটের জাফলং, বিছনাকান্দি; কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি, শাহ আরেফিন টিলা, সংরক্ষিত বাংকার (রেলওয়ের পুরোনো স্থাপনা) এলাকা, উৎমাছড়া; জৈন্তাপুরের শ্রীপুর, সারী নদীর বাওন হাওর, আদর্শগ্রাম ঘাট,কানাইঘাটের লোভাছড়াসহ বিভিন্ন কোয়ারি-মহাল থেকে বালু-পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন শুরু হয়। এক বছর ধরে লুটপাটের কারণে এসব এলাকা এখন অনেকটাই পাথরহীন।
এমএসএম / এমএসএম

সম্প্রীতির বাঁশখালীতে ভোলানাথ ধামকে ঘিরে ফেইসবুক গুজব, আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক

তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা সাবেক চেয়ারম্যান স্বপন ঢাকায় গ্রেফতার

পূর্বধলায় বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নে উপজেলা ছাত্রদলের উদ্যােগে সড়ক সংস্কার

মাগুরায় সর্প দংশন প্রতিকার বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’

আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে কোটালীপাড়ায় পুলিশের মত বিনিময় সভা

অভয়নগরে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

কেশবপুর আওয়ামীলীগ নেতা তুহিন জামায়াতে যোগদান

চাঁদপুরে বিএনপির রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফার লাখো লিফলেট বিতরণ

চা কারখানার পরিচালক পক্ষের দ্বন্দে মামলার শিকার উদ্যোক্তারা, প্রতিবাদে ভুক্তভোগীর সংবাদ সম্মেলন

শিবচরে কাঠের ফেস টুন ব্যানার কারখানায় আগুন

জয়পুরহাটে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের মাঝে বিনামুল্যে ছাগল বিতরণ
