ঢাকা রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫

পাপের সূচনা হয় যেভাবে


ডেস্ক রিপোর্ট  photo ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১২-১০-২০২৫ সকাল ৯:২৮

মানুষ যেসব কাজ করে, তা প্রথমে অন্তরে ভাবে। আর অন্তরের ভাবনা তৈরি হয় প্রধানত দৃষ্টির মাধ্যমে। মানুষ যখন চোখ ব্যবহার করে ভালো জিনিস দেখে, তখন অন্তরে ভালো কাজের আগ্রহ জন্মে, তারপর সে ভালো কাজে উদ্যোগী হয়। একইভাবে যখন সে কোনো খারাপ জিনিস দেখে, তখন অন্তরে খারাপ কাজের আগ্রহ জন্মে, তারপর সে খারাপ কাজে উদ্যোগী হয়। আসলে দৃষ্টিশক্তি মহান আল্লাহর দেওয়া অনেক বড় নেয়ামত। এই নেয়ামতের যথেচ্ছা ব্যবহার অনুচিত। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এই অনন্য নেয়ামতের আলোচনা বহুবার করেছেন। যাতে মানুষ এ নেয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন করে, কৃতজ্ঞচিত্তে এর সদ্ব্যবহার করে, হারাম দৃষ্টিপাত থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী! আপনি বলে দিন, তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও অন্তঃকরণ। তোমরা খুব সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকো’ (সুরা মুলক : ২৩)। আল্লাহ না করুন, যদি এ দৃষ্টিশক্তি তিনি ছিনিয়ে নেন তা হলে সারা পৃথিবীর বিনিময়েও কি তা ফিরিয়ে আনা সম্ভব? আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আপনি বলুন, তোমরা আমাকে একটু বলো তো, আল্লাহ যদি তোমাদের শ্রবণশক্তি এবং তোমাদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেন এবং তোমাদের অন্তরে মোহর করে দেন, তবে আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ আছে, যে তোমাদের এগুলো ফিরিয়ে দেবে?’ (সুরা আনআম : ৪৬)।
কুরআনে দৃষ্টি সংযমের নির্দেশ
সন্দেহ নেই, চোখ মনের প্রধান কপাট। দৃষ্টিপাত হৃদয়ের
বার্তাবাহক। চোখ কোনো কিছু অবলোকন করা মাত্রই তা মুহূর্তেই পৌঁছে দেয়। তখন সেটাকে কেন্দ্র করে অন্তরে কল্পনা-জল্পনার ঝড় ওঠে। তাই দৃষ্টির হেফাজত যেমন পুরুষের জন্য আবশ্যক তেমনি নারীর জন্যও জরুরি। অথচ বর্তমান সমাজের চিত্র খুবই ভীতিপ্রদ। পুরুষরা যেমন নারীদের থেকে দৃষ্টি সংযত করে না তেমনি নারীদৃষ্টিও পুরুষদের প্রতি খুবই বেপরোয়া। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা নারী-পুরুষ উভয়কে দৃষ্টি সংযম ও যৌনাঙ্গের হেফাজতের আদেশ দিয়ে বলেছেন, ‘আপনি মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য রয়েছে অধিক পবিত্রতা। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ তা জানেন। আর আপনি মুমিন নারীদের বলুন, যেন তারা দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের গোপনাঙ্গের হেফাজত করে’ (সুরা নুর : ৩০-৩১)।
দৃষ্টিশক্তির সদ্ব্যবহার ও অপব্যবহার
চোখের নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও সদ্ব্যবহার হলো হারাম বস্তু না দেখা, পরনারী থেকে দৃষ্টি সংযত রাখা, অভিশপ্ত নর্তকীদের নাচ-গান, ব্লু ফিল্ম, পর্নোগ্রাফি ইত্যাদি জীবনবিধ্বংসী অশ্লীলতা দেখা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা। এসবই অভিশপ্ত শয়তানের পাতানো ফাঁদ। যে এ ফাঁদে পা রাখবে তার ধ্বংস অনিবার্য। এ ছাড়া চোখে দেখে কুরআন তেলাওয়াত, দ্বীনি বই-পুস্তক অধ্যয়ন এবং খাঁটি আল্লাহওয়ালাদের সংস্রব লাভে তাদের চেহারায় দৃষ্টিপাত চোখের সদ্ব্যবহারের অন্তর্ভুক্ত। সেই সঙ্গে পিতা-মাতার প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও অনুকম্পার দৃষ্টিতে তাকানো, প্রিয়তমা স্ত্রীর প্রতি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভালোবাসার আদান-প্রদান, সন্তানদের স্নেহ-মমতার দৃষ্টিতে অবলোকন এবং অন্যান্য মানুষকে কল্যাণকামিতা ও শুভকামনার সঙ্গে দেখা ইত্যাদির মাধ্যমেও দৃষ্টিশক্তির সদ্ব্যবহার করা যায়। চোখের সদ্ব্যবহারে পৃথিবীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আল্লাহর সৃষ্টিরাজি দেখে তা থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং স্রষ্টার পরিচয় লাভ করাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ মর্মে পবিত্র কুরআনের বাণী খুবই চমৎকার, ‘তারা কি দৃষ্টিপাত করে না উটের দিকে, কীভাবে তা সৃষ্টি করা হয়েছে? এবং আকাশের দিকে, কীভাবে তা ঊর্ধ্বে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে? পর্বতমালার দিকে, কীভাবে তা স্থাপন করা হয়েছে? ভূমির দিকে, কীভাবে তা বিস্তৃত করা হয়েছে?’ (সুরা গাশিয়াহ : ১৭-২০) 
কুনজর শয়তানের মোক্ষম হাতিয়ার
কুনজর দেহমনে নিক্ষিপ্ত এক বিষাক্ত তীর। যা প্রথমে হৃদয়ে বিদ্ধ হয় তারপর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এর বিষক্রিয়া। ইবলিশ মানবজাতিকে পথভ্রষ্ট করার জন্য যারপরনাই পাঁয়তারা করে! এসবের মধ্যে কুনজর তার মোক্ষম হাতিয়ার। এটাকে কাজে লাগিয়ে সে প্রথমে মানবমনে কুমন্ত্রণা ও কুচিন্তা সৃষ্টি করে, যা জন্ম দেয় কুপ্রবৃত্তি। এবার এই প্রবৃত্তি দেহ-মনে লাগিয়ে দেয় যৌবনের উন্মাদনার ভয়াবহ আগুন। যা জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেয় মানুষের চারিত্রিক পবিত্রতা, আত্মিক প্রশান্তি এবং দৈহিক শক্তি। সে সৃষ্টির সেরা মানবকে জনসমাজে ধিকৃত, অপদস্থ ও লাঞ্ছিত করে। যারা কামভাব নিয়ে পরনারীর প্রতি তাকিয়ে থাকে তাদের ইহজীবন যেমন অশান্তি, অস্থিরতা ও বেদনায় পর্যুদস্ত তেমনি পরকালীন জীবনও হয় অসহনীয় শাস্তি ও দুঃখ-কষ্টে লন্ডভন্ড। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ সূত্রে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) মহান আল্লাহর ভাষ্য বর্ণনা করেন এভাবে ‘দৃষ্টিপাত ইবলিশের বিষাক্ত তীরগুলোর একটি। যে ব্যক্তি আমার ভয়ে তা পরিত্যাগ করে, বিনিময় হিসেবে তাকে ঈমানের এমন অপার্থিব স্বাদ আস্বাদন করায়, যা সে তার অন্তরে অনুভব করে’ (আতারগিব ওয়াত তারহিব : ৩/৮৬) ।
গোপন বিষয়ে দৃষ্টিপাত অপরাধ
ইসলামের অনুপম শিক্ষা হলো, কারণ ছাড়া অন্যের ব্যক্তিগত গোপনীয় বিষয় দেখা জায়েজ নয়। যেমন কারও মোবাইলের মেসেজ, ইনবক্স, মেসেঞ্জার, গ্যালারি ইত্যাদি চেক করা নিষেধ। একইভাবে কারও ব্যক্তিগত তথ্য, চিঠিপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করা, পরীক্ষার হলে একে অপরের উত্তর দেখে কপি করা, কারও ঘরে সদর দরজা কিংবা জানালা দিয়ে উঁকি দেওয়া বৈধ নয়। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যদি কেউ তোমার ঘরে তোমার অনুমতি ব্যতীত উঁকি মারে আর তুমি পাথর মেরে তার চক্ষু ফুটো করে দাও, তাতে তোমার কোনো গুনাহ হবে না’ (বুখারি : ৬৮৮৮)। এ ছাড়া নারী-পুরুষ একে অপরের সতরের দিকে তাকানো নাজায়েজ। পুরুষের সতর হচ্ছে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। নারীর সতর মাহরামদের সামনে মুখাবয়ব, হাতের কব্জি এবং পায়ের টাখনু ছাড়া বাকি দেহ। আর গায়ের মাহরামের সামনে পূর্ণ শরীর। 

Aminur / Aminur