কুরআন-হাদিসে বর্ণিত দশ প্রকার সুন্দর মৃত্যু
মৃত্যু এক অনিবার্য বাস্তবতা। মৃত্যুকে অস্বীকার করেছেন, এমন কোনো সুস্থ মানুষের কথা পৃথিবীর ইতিহাসে পাওয়া যাবে না। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘সব প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে’ (সুরা আলে ইমরান : ১৮৫)। তাই মৃত্যুকে ভুলে নয়, বরং মৃত্যুর স্মরণেই মুমিনের ঈমান তাজা হয়। কুরআন-হাদিস থেকে দশ প্রকার সুন্দর মৃত্যুর বিবরণ তুলে ধরছি
১. মৃত্যুর সময় তাওহিদ ও একত্ববাদের কালেমা পাঠ করে মৃত্যুবরণ করা অনেক সৌভাগ্যের বিষয়। হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যার শেষ কথা হবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (আবু দাউদ : ৩১১৬)
২. পৃথিবীতে আল্লাহর বাণী ও আহ্বান উচ্চকিত রাখার জন্য শাহাদাতবরণকারী সৌভাগ্যবান। আল্লাহ বলেছেন‘যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদের কখনো মৃত মনে করো না, বরং তারা জীবিত। তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে রিজিক দেওয়া হয়। আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের যা কিছু দিয়েছেন তারা তাতে প্রফুল্ল। আর তাদের পরে এখনও যারা (শাহাদাতে) তাদের সঙ্গে মিলিত হয়নি, তাদের ব্যাপারে এ কারণে তারা আনন্দ বোধ করে যে, (তারা যখন তাদের সঙ্গে এসে মিলিত হবে তখন) তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না। তারা আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের কারণেও আনন্দ লাভ করে এবং এ কারণেও যে, আল্লাহ মুমিনদের কর্মফল নষ্ট করেন না।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৬৯-১৭১)
৩. আল্লাহর রাস্তায় সফরে বা হজের ইহরাম বাঁধা অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি। হজের ইহরাম অবস্থায় উটের পিঠ থেকে পড়ে একজন ব্যক্তির মৃত্যু হলে আল্লাহর রাসুল (সা.) তার সম্পর্কে বললেন, ‘তাকে বরই পাতাযুক্ত পানি দ্বারা গোসল দাও এবং তার (পরিহিত) দুটো কাপড়েই তাকে কাফন দাও। তবে তার মাথা আবৃত করো না। কেননা কেয়ামতের দিন সে তালবিয়া পাঠ করতে করতে উত্থিত হবে।’ (মুসলিম : ১২০৬)
৪. ইবাদত-বন্দেগি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে এবং এটাই হবে তার শেষ আমল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় একদিন রোজা রাখবে এবং এটাই হবে তার শেষ আমল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় সদকা করবে এবং এটাই হবে তার শেষ আমল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৫/৩৯১)
৫. শরিয়তের পক্ষ থেকে অর্পিত কোনো বিষয় রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করা। আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে তার সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়, সে শহিদ। যে তার পরিবার-পরিজনদের রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়, সে শহিদ। যে দ্বীন রক্ষায় নিহত হয়, সে শহিদ। যে তার জীবন রক্ষায় নিহত হয় সে শহিদ।’ (আবু দাউদ : ৪৭৭২)
৬. মহামারি-জাতীয় কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তাউন’ হচ্ছে সব মুসলিমের জন্য শাহাদাত। (বুখারি : ১০/১৬৫-১৬৭)
৭. সন্তান প্রসবের সময় ও নেফাস অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা। হজরত উবাদা ইবনে সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন ‘সন্তান প্রসব করতে গিয়ে নারীর মৃত্যু হলে তা শাহাদাত। তার সন্তান তাকে জান্নাতের দিকে টেনে নিয়ে যাবে।’ (মুসনাদে আহমদ : ৪/২০১)
৮. পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে কিংবা ভূমি ধসে মৃত্যুবরণ করা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘শহিদ পাঁচ শ্রেণির ১. প্লেগ রোগে মৃত্যুবরণকারী। ২. পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারী। ৩. পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী। ৪. ভূমি ধসে মৃত্যুবরণকারী এবং ৫. আল্লাহর পথের শহিদ।’ (তিরমিজি : ১০৬৩)
৯. জুমার দিন বা রাতে মৃত্যুবরণ করা। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো মুসলিম শুক্রবার দিনের বেলা কিংবা রাতে মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে কবরের ফেতনা থেকে মুক্তি দান করেন।’ (তিরমিজি : ১০৮০)
১০. মৃত্যুর সময় কপাল ঘর্মাক্ত হওয়া। হোসাইব থেকে বোরায়দা বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ঈমানদার মৃত্যুবরণ করে কপাল ঘর্মাক্ত অবস্থায়।’ (তিরমিজি : ৯৮২)
এসব মৃত্যু যারা লাভ করবেন, তাদের ব্যাপারে সুধারণা রাখা। কিন্তু যারা এর ব্যতিক্রম মৃত্যুবরণ করবেন, তাদের ব্যাপারে কোনো প্রকার অমূলক মন্তব্য না করা।
Aminur / Aminur
কুরআন-হাদিসে বর্ণিত দশ প্রকার সুন্দর মৃত্যু
অবৈধ সম্পদে জীবনের যত ক্ষতি
মন খারাপ দূর করার আমল
বছর শেষে সময়ের হিসাব মেলানোর তাগিদ
মুমিন হৃদয়ে আরবি ভাষার ভালোবাসা
সচ্চরিত্রের অধিকারী পুরুষের মর্যাদা
কোরআনের হৃৎপিণ্ড যে সুরা
আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করলেও সওয়াব
সুস্থতার নেয়ামত রক্ষা করা জরুরি
নববী আদর্শের নওজোয়ান: ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন-নুমান রিডার
নিরাপদ জীবনের চার উপাদান
ইসলামে মানবাধিকারের শিক্ষা