ঢাকা রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বিদেশযাত্রা


জাফর ইকবাল  photo জাফর ইকবাল
প্রকাশিত: ২৫-৫-২০২১ দুপুর ১:৩৫
বিদেশযাত্রা শব্দটির সাথে আমাদের পরিচয় ঐতিহ্যগত। এটি সমাস সাধিত একটি যৌগিক শব্দ।যুগে যুগে আমরা এই শব্দটির যথার্থ ও অযথার্থ প্রয়োগ ঘটিয়ে ইতিহাস রচনা করেছি। যা জাতি হিসেবে আমাদের  ঐতিহ্যকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। 
 
এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মেজর জিয়াউর রহমান। তিনি ক্ষমতায় এসে স্বাধীনতা বিরোধী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্বস্বীকৃত খুনিদের 'বিদেশযাত্রা' করিয়ে বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূতের চাকরি দিয়ে মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন যা এই শব্দটিকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। আর জাতি হিসেবে আমাদের চরিত্রকে বিশ্ব দরবারে করেছে উলঙ্গ। 
 
জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য পুত্র তারেক রহমানও এই শব্দটির প্রয়োগে কোনভাবেই পিছিয়ে নেই। বরং তিনি 'বিদেশযাত্রা' শব্দটির এক ভিন্নধর্মী ব্যবহার করেছেন। তত্বাবধায়ক সরকারের কাছে রাজনীতি না করার শর্তে মুচলেকা দিয়ে, চিকিৎসার উদ্দেশ্যে  "বিদেশযাত্রা" করেন তারেক রহমান। বিদেশে গিয়েই তিনি মুচলেকার শর্ত ভুলে রাজনীতি শুরু করেন। তার বৈদেশিক প্রেসক্রিপশনে রাজনীতি করতে গিয়েই বিএনপি আজ বিলুপ্ত প্রায়। 
তবে বিএনপি'র যাইহোক তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন রাজনীতি করতে হলে জনসম্পৃক্তই থাকতে হবে এমন কোন কথা নাই  বরং জনগণের সাথে সম্পৃক্ত না থেকে রাজনীতি করা যায় এবং বিএনপির মতো এতো বৃহৎ একটি দল পরিচালনা করা যায়। যা নিঃসন্দেহে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয়। শুধু পরবর্তী প্রজন্মই নয় বরং বিশ্বরাজনীতিতে এটি বিরল দৃষ্টান্ত। যা শুধু 'বিদেশযাত্রা শব্দটিকেই  সমৃদ্ধ করছে না বরং বাংলা সাহিত্য এমন একটি শব্দ থাকায় জাতি হিসেবে আমাদের গৌরবান্বিত করছে।
 
এই শব্দটির ব্যবহারে কোনভাবেই পিছিয়ে নেই আমলা, মন্ত্রী কিংবা সচিব। সবাই সমানতালে প্রতিযোগিতার মতো ব্যবহার করছেন এই শব্দটি। একজন মন্ত্রী কিংবা সচিবের নামের পাশে সরকারি খরচে একাধিকবার বিদেশ ভ্রমনের ট্যাগ না থাকা যেন জাত যাওয়ার মতো অবস্থা। 
 
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই শব্দটির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরে ২০১১ সালের ১৯ জুন তার(প্রধানমন্ত্রীর) কার্যালয় থেকে মন্ত্রী-সচিবসহ অন্য কর্মকর্তাদের বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা জারি করেন। এতে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও সচিব বা ভারপ্রাপ্ত সচিবদের একত্রে বিদেশ ভ্রমণ সাধারণভাবে পরিহার করতে হবে। জাতীয় স্বার্থে বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ইত্যাদির বার্ষিক সভা, দাতা গোষ্ঠীর সভা হলে অত্যন্ত সীমিত ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় হতে পারে।
 
কিন্তু এত উচ্চমানের শব্দের ব্যবহার শুধুমাত্র একটি নির্দেশনা দিয়েই দমিয়ে রাখা যায় না।২০১৪ সালে একসাথে অন্তত ১০টি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব "বিদেশযাত্রা'র" মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রমাণ করেন কোনভাবেই এই শব্দটির ব্যবহার থেকে তাদের বিরত রাখা যাবে না।
 
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর সাথের ১৮২ জন সফরসঙ্গীর মধ্যে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সচিবই ছিলেন ১৮ জন।
এ ছাড়া ঠিক ওই সময়ে আরও অন্তত ১৭ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিব দেশের বাইরে ছিলেন। ওই সময়ে মন্ত্রণালয়সমূহের কাছে স্থবিরতা সৃষ্টি হলেও বিদেশযাত্রা শব্দটির বহুল প্রচার আমাদের বাংলা  সাহিত্যর জন্যও কম গুরুত্বের ছিলো না। 
 
এছাড়াও সর্বোচ্চ সংখ্যক লোক বিদেশযাত্রায় পাঠিয়ে গিনেস রেকর্ড গড়ার  একেবারে দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এসেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। ডিপিই  তার অন্তত  এক হাজার  কর্মকর্তাকে স্কুল ফিডিং কর্মসূচির আওতায় প্রশিক্ষণের জন্য  বাজার থেকে কীভাবে দ্রব্যাদি ক্রয় করা হয়, খিচুরি রান্নার নিয়ম এবং তা শিক্ষার্থীদের বিতরণের উপায় শেখাতে বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। যেখানে বাগড়া দেয় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালায় বাগড়া না দিলে হয়ত সর্বোচ্চ সংখ্যাক কর্মকর্তাকে 'বিদেশযাত্রায়' পাঠানোর গিনেসরেকর্ড হয়ত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) এর দখলে থাকত। 
 
২০১৯ সালে ২৮ জুলাই দেশের ভয়াবহ ডেঙ্গু পরিস্থিতির মধ্যেও মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী মহোদয় 'বিদেশযাত্রা' করেন। সফর শেষে দেশে ফিরলে সাংবাদিকরা বিদেশ যাত্রা নিয়ে প্রশ্ন করলে,  স্বাস্থ্যমন্ত্রী ধমক দিয়ে  সাংবাদিককে থামিয়ে দিয়ে অন্য প্রসঙ্গে যেতে বলেন।
যার মাধ্যমে  'বিদেশযাত্রা' শব্দটি চলে যায় জবাবদিহিতার উর্ধ্বে। সেই হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে অনার্স করা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বাংলা সাহিত্যে এহেন অবদানের জন্য দুই/চারটি এ্যাওয়ার্ড দিলেও তাতে দোষের কিছু নেই। 
 
গত ২৩ মে ২০১৯ সালে কোর্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা মামলার রায়ে ' বিদেশ না যাওয়ার' শর্তে সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে জামিন দিয়ে প্রমাণ করেছেন তারাও এই শব্দটির ব্যবহারে কোন অংশেই পিছিয়ে নেই। 
 
ভবিষ্যতে বাংলা সাহিত্যের এই গুরুত্বপূর্ণ শব্দটিকে বহুল ব্যবহারকারীকে প্রতি বছর বিশেষ পুরস্কার দেওয়ার দাবিতে শাহবাগ মোড় কিংবা প্রেসক্লাবের সামনে  মানববন্ধন করা এখন সময়ের দাবি। 
 
 
লেখক : জাফর ইকবাল 
লেখক,সাংবাদিক ও বিতার্কিক।

এমএসএম / এমএসএম

শারদীয় দুর্গোৎসবে সম্প্রীতির বাংলাদেশ ভাবনা

দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রয়োজন পর্যটন গন্তব্যগুলোর সামগ্রিক উন্নয়ন এবং শক্তিশালী ব্র্যান্ডিং

গণতান্ত্রিক অধিকার ও নতুন নেতৃত্বের অন্বেষণ

দুঃখই সবচেয়ে আপন

জাতিগত নিধন বন্ধে জাতিসংঘের ব্যর্থতা

গণতান্ত্রিক হতে হলে মৌলিক অধিকার সমুন্নত রাখতে হয়

স্মার্ট ডিভাইস-আসক্তিতে বিপদগামী হচ্ছে শিশু-কিশোররা

মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা

সৌদির ভূরাজনৈতিক কণ্ঠস্বর: তেল, জোট ও পুরোনো মার্কিন চুক্তির টানাপোড়েন

শুভ মহালয়া : দূর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার আগমনী মঙ্গল বার্তা

সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ অপরিহার্য

আন্তর্জাতিক বিশ্বব্যবস্থা ও বৈশ্বিক বাস্তবতা

উপাচার্য ড. শওকাত আলীর এক বছর: শিক্ষা, প্রশাসন ও সৃজনশীল নেতৃত্বের মূল্যায়ন