ঢামেক হাসপাতালে ওষুধ চুরি রুধিবে কেমনে?

ঢামেক হাসপাতালে ওষুধ চুরি রুধিবে কেমনে? ঢামেক হাসপাতালের ওষুধাগারে কানায় কানায় ভরা সরকারি ওষুধ। তারপরও চিকিৎসাধীন রোগীরা প্রয়োজনীয় ওষুধ পাচ্ছেন না। হাসপাতালের চারপাশের দোকান থেকে সরকারি ওষুধই কিনে আনতে বাধ্য হচ্ছেন। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের সকল সরকারী হাসপাতালে বিনামূল্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ সরবরাহ করছে বর্তমান সরকার। কিন্তু তারপরও চিকিৎসাধীন রোগীরা হাসপাতাল থেকে ওষুধ পাচ্ছেন না। হাসপাতালের বরাদ্দকৃত ওষুধগুলো দোকানে বিক্রি করছে কর্মচারীরা।
সূত্র জানায়, প্রতিদিন সকালে হাসপাতালে কর্মরত নার্স ও কর্মচারীরা বহির্বিভাগে ডিউটিতে এসে প্রথমে হাসপাতালের নির্ধারিত ব্যবস্থাপত্রে দামী দামী ওষুধের নাম লিখেন। এরপর কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সিল নিজেরাই দেন। পরে স্টোর থেকে ওই ওষুধ সংগ্রহ করে চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে তা হাসপাতালের বাইরে পাঠিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
এসব ওষুধ বিক্রি বা হাসপাতাল থেকে পাচারের সময় র্যাব-পুলিশসহ গোয়েন্দাদের হাতে সরকারি কর্মচারীরা ধরা পড়ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, এই অপরাধের সাথে যাদের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আর তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমেও বা অটোমেশন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢামেক হাসপাতালের স্টোরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাধ্যে স্টোর থেকে ভাউচারের মাধ্যমে ওয়ার্ডগুলোতে ওষুধ সরবরাহ করা হয়। সেখান থেকে ওয়ার্ডে পৌঁছানোর পর রোগীদের নামে ব্যবহারের হিসাব দেখানো হয়ে থাকে। অথচ ওই রোগীদের স্বজনদের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা কাগজে ওষুধ লিখে বাইরে থেকে কিনে আনতে বাধ্য করছেন। এরপর সরকারি বরাদ্দকৃত ওষুধগুলো হাসপাতালের কর্মচারীদের মাধ্যমে তা পুনরায় দোকানে বিক্রি করা হচ্ছে। আবার হাসপাতালের নার্স’রাও এভাবে ওষুধ সংগ্রহ করে তা ডিউটি শেষে বাসায় যাওয়ার পথে দোকানে নিয়ে বিক্রি করছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাছাড়া হাসপাতালের চারপাশের ফুটপাতেও আয়াদের মাধ্যমে চিকিৎসার সরঞ্জাম বিক্রি করা হয়ে থাকে।
সূত্র জানায়, হাসপাতালের ওষুধাগারগুলোতে যেসব কর্মচারী ডিউটি করেন, তারা একই জায়গায় দীর্ঘ দিন থাকার সুযোগে ওষুধ চোরচক্রের সাথে সখ্যতা গড়েছে। ফলে ওয়ার্ডে চাহিদাপত্রের সাথে অতিরিক্ত ওষুধ নিয়ে তা আবার চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে দোকানে বিক্রি করছে। এভাবে ঢামেক হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ওষুধ অবৈধভাবে পাচার করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সারাদেশ থেকে ঢামেক হাসপাতালে আসা অসহায় গরীব রোগীদের জন্য সরকারের সরবরাহকৃত ওষুধসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি, সুতা, গ্লাভর্স বাইরে পাচার করছে একটি চক্র। এই চক্রের সদস্যরা হচ্ছেন, হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং কতিপয় বহিরাগত। এদের গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকছে। কিন্তু মাঝে মধ্যেই ধরা পড়ে চুনোপুটিরা। যারা ধরা পড়ছে, তাদের বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাময়িক বহিষ্কার ও তদন্ত কমিটি করে থাকেন। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন কখনো প্রকাশ হয় না। ফলে চলছে সিন্ডিকেটদের বাণিজ্য। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই চক্রের কাছে জিম্মি হওয়ার উপক্রম বলেও অভিজ্ঞ ডা., নার্স ও কর্মচারী-কর্মকর্তাগণ বলেছেন। ঢামেক হাসপাতাল থেকে সরকারি ইনজেকশন বাইরে বিক্রির চেষ্টাকালে ইসমাইল হোসেন (৩৪) নামে এক ফার্মাসিস্টকে আটক করেছে র্যাব-৩।
গত সোমবার দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বহির্বিভাগের মেডিসিন স্টোরের সামনে থেকে তাকে আটক করা হয়। হাসপাতালে বহির্বিভাগের মেডিসিন স্টোরের সামনে থেকে বাইরে বিক্রয়ের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়ার সময় র্যাব তাকে আটক করে। এ সময় তার কাছ থেকে সরকারি বিক্রয় নিষিদ্ধ ১৯৫ পিস ইনজেকশন (নলেবান) পাওয়া যায়। হাসপাতাল পরিচালক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য র্যাবের হেফাজতে দিয়ে দেন। এ ঘটনায় বহির্বিভাগের ওয়ার্ড মাস্টার মো. আবুল বাসার বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
সূত্র জানায়, স্টোরের ডা. মশিউর রহমান দীর্ঘ দিন ধরে একই জায়গায় (স্টোরে) দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বিভিন্ন মাদকাসক্তদের নিয়ে স্টোর এলাকায় আড্ডা দিয়ে থাকেন। আর তিনি নিজেও বিভিন্ন নেশায় আসক্ত বলে হাসপাতালের কর্মচারীদের মুখে মুখে শোনা গেছে। এসব মাদকাসক্তদের স্টোর থেকে ওষুধ বাইরে নিতে সহায়তা করে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
র্যাব সূত্র জানায়, আটক ইসমাইল হোসেন ঢামেক হাসপাতালে তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির বর্তমান ক্রীড়া সম্পাদক। তার বাবার নাম আ. কুদ্দুস মোল্লা। গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়। এর আগেও সরকারি সুতাসহ ওয়ার্ড বয় হাকিম নামে এক কর্মচারীকে আটক করে র্যাব। আটককৃত ইনজেকশন বাইরে নিয়ে ১৪ টাকা দামে বিক্রয় করতো ইসমাইল। আর তা ফার্মেসী হতে ৯০ টাকা করে বিক্রি করা হয়। আর ওই ওষুধ চুরির সঙ্গে মেডিসিন স্টোরের প্রধানসহ অনেকেই জড়িত রয়েছে। আর মনোয়ার হোসেন, সাইফুল ইসলাম বহিরাগতদের দিয়ে মালামাল বিক্রি করে। কিন্তু তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। এর আগে আব্দুল হাকিম নামে সরকারি একজন স্টাফকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সুতাসহ গত ৮ মে দুপুরে র্যাব গ্রেফতার করেন।
ঢামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, আব্দুল হাকিম হাসপাতালের ২১৪ নম্বর সার্জারি ওয়ার্ডে কাজ করেন। তিনি বাংলাদেশ চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সমাজকল্যাণ ও ধর্মবিষয়ক সম্পাদক। তিনি জামিনে বের হয়ে পুনরায় একই কাজ শুরু করছেন। এসব চক্রের সদস্যরা বছরের পর বছর ধরে রোগীদের জীবন বাঁচার ওষুধসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করে বাইরে বিক্রি করছে। ওয়ার্ডবয় হাকিম ঢামেকের কর্মচারীদের কাছে বলেছেন, আমি সুতাসহ ধরা পড়ি। কিন্তু এসব সুতাগুলো আমাকে বিক্রির জন্য আইসিটির ইনর্চাজ অফিস সহকারী মনোয়ার হোসেন দেন। তার বিনিময়ে তিনি আমাকে কিছু টাকা দেন। এই মনোয়ার আমাকে, কর্মচারী আলামিন ও মুরাদকে দিয়ে সুতা, গ্লাভস ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি বাইরে বিক্রির জন্য পাঠাতো। একবার ইনচার্জ মনোয়ার মিনি ট্রাক ভর্তি হাসপাতালের বরাদ্দকৃত গ্লাভস বাইরে বিক্রির সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কিছু দিন তাকে ইনচার্জ থেকে সরিয়ে নেয়। পরে তাদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে তদন্ত রিপোর্ট ধামাচাপা পড়ে যায়। পুনরায় তিনি আবার ইনচার্জ হিসেবে পুনর্বহাল হন। মনোয়ার আইসিটির ইনচার্জ হয়ে আসার পর থেকে আবার পুরোদমে তার বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। মনোয়ার একই জায়গায় দীর্ঘ ১২ থেকে ১৫ বছর যাবত রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকার পরেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে আইসিটি বিভাগেই রেখেছেন। এ ব্যাপারে মনোয়ার এর সেল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ঢামেক হাসপাতালের সিনিয়র স্টোর অফিসার ডা. মো. সায়াদ উল্লাহ এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্টোর থেকে ভাওচারের ভিত্তিতে ওয়ার্ডে ওষুধ সরবরাহ করা হয়। কাগজপত্রে সম্পূর্ণ হিসাব থাকে। এখান থেকে ওষুধ চুরির কোনো প্রকারেই সম্ভব নয়। তারপরও কিভাবে চুরি হচ্ছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। তবে এই চুরির ঘটনা বন্ধে আমরা অটোমেশন পদ্ধতি গ্রহণ করছি। এটা করা হলে আশা করি চুরির ঘটনা বন্ধ হবে বলে জানান তিনি।
ওষুধ চুরির বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের সহকারি পরিচালক প্রশাসন (অর্থ) ডা. মো. জিল্লুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি অল্প কিছুদিন ধরে এখানে আসছি। তাই এ বিষয়ে তিনি কথা না বলে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. আশরাফুল আলম এর সাথে কথা বলতে বলেন। পরে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক এর সাথে কথা বলার জন্য পরামর্শ দেন।
ওষুধ চুরির বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক সকালের সময়কে বলেন, এ ঘটনায় যারা ধরা পড়ছেন, তাদের বিরুদ্ধে আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। তাদেরকে সাময়িক বহিষ্কার করা হচ্ছে। আর এই ওষুধসহ হাসপাতালের বিভিন্ন সরঞ্জাম চুরিরোধে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। আর অটোমেশন এর ব্যবস্থা বা ডাটা বেইজ সিস্টেম চালু করা হচ্ছে। এটা হলে আশা করি এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ হবে বলে তিনি মনে করেন।
এমএসএম / এমএসএম

বিসিক মুদ্রণ শিল্পনগরী প্রকল্পের মাটি ভরাটের প্রিলেভেল সার্ভে কাজে প্রকল্প পরিচালকের অনিয়ম-দুর্নীতি

মাদারীপুরের আলোচিত মিথ্যা মুক্তিযোদ্ধার কোটায় একই পরিবারের চারজন করছেন সরকারি চাকরি

নিষিদ্ধ হলেও হিযবুত তাহরীরের প্রকাশ্যে কর্মসূচী ঘোষণা

মিরপুর ফায়ার সার্ভিসের ট্রেনিং কমপ্লেক্সের অফিসার তৌহিদুলের শাস্তি দাবি

বিসিকের প্রকল্প পরিচালক মোঃ রাকিবুল হাসানের ঘুস-দুর্নীতি সমাচার

জমি ক্রয়ের নামে ভাইয়ের বিরুদ্ধে প্রবাসি স্বামীর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

বিআইডব্লিউটিএ বন্দর শাখার সাবেক পরিচালক সাইফুলের টাকার উৎস কি?

নার্গিসকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি দেওয়া হোক

গাজীপুর গণপূর্তের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিমের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকের ঢাকায় ১৯ বছরের লুটপাটের রাজত্ব

মসজিদের নামে জমি দখলের চেষ্টা করছে মল্লিক বিল্ডার্স

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ডিজি আবু সুফিয়ান এর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে টেন্ডার বাতিল এর অভিযোগ
