পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সাত্তারের সিন্ডিকেট
চাকরি ও বিদেশে লোক পাঠানোর নামে প্রতারণা

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার এর বিরুদ্ধে চাকুরি দেয়া ও বিদেশে লোক পাঠানোর নামে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র সৃজন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।শুধু তাই নয়, এই সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে একটি শক্তিশালী প্রতারক চক্রও রয়েছে। ওই চক্রের সদস্যরা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাস্টার রোলে চাকরি ও পরে স্থায়ী করার জন্য ভুক্তভোগিদের কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা আদায় করছেন। আর এই টাকার বিপরীতে তাদেরকে বিভিন্ন ব্যাংকের চেকও দেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগিরা পরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব, সচিব সংস্থাপন-২ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক এর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এছাড়া রাজধানীর হাজারীবাগ থানায় গত ২০২১ সালের ২২ জুন ১৩০০ নম্বর জিডি করা হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো প্রকার প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কমকর্তা আব্দুল সাত্তারের প্রতারণার সিন্ডিকেট সদস্য জনৈক মো. মাসুম বিল্লাহ তার পরিচিত বাকেরগঞ্জের আব্দুস সাত্তার বিশ^াসের ছেলে মাহাবুবুর রহমানকে জানান যে, পররাষ্ট মন্ত্রণালয়ের দু’জন অফিস সহায়ক অস্থায়ী (মাস্টার রোল) লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। তার কোনো প্রার্থী আছে কিনা, তা জানতে চাওয়া হয়। এরপর মাহাবুবুর রহমান ভুক্তভোগির বড় ভাই মো. জাহিদুল ইসলাম কে জানান। পরে জাহিদুল ইসলাম তার এক ছোট ভাই মো. ইয়াছিন মল্লিকে চাকরি দেওয়ার জন্য আলোচনা করেন। একপর্যায়ে মাহবুবুর রহমান তাদেরকে জানান, অস্থায়ী চাকরির জন্য ৮ লাখ টাকা দিতে হবে। এরপর চাকরি হওয়ার পর স্থায়ী করার জন্য আরও ৮ লাখ টাকা দিতে হবে। তখন জাহিদুল ইসলাম আব্দুস সাত্তার ও মো. মাসুম বিল্লাহ কে বলেন, এই টাকার ডকুমেন্ট হিসেবে কি দেবেন। তখন আব্দুস সাত্তার তার অফিশিয়াল প্যাড ও স্যালারি একাউন্টের চেক দেওয়ার কথা বলেন। উক্ত কথার ভিত্তিতে জাহিদুল ইসলাম টাকা দিতে রাজী হন। এরপর মো. ইয়াছিন মল্লিক ও রায়হান ৭ লাখ টাকা সেগুনবাগিচাস্থ শিল্পকলা একাডেমীর পেছনের গেইটের চায়ের দোকানের সামনে আব্দুস সাত্তারের কাছে দেওয়া হয়।
উক্ত টাকা প্রদানের সময় প্রতারকচক্রের অন্যতম সদস্য মো. মাসুম বিল্লাহ, পুরানো পল্টনস্থ ৫১/৫১/এ এম বিল্লাহ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, মো. জাহিদুল ইসলাম ও মাহাবুবুর রহমান স্বাক্ষীস্বরূপ উপস্থিত ছিলেন। এসময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার তার অফিশিয়াল প্যাডে মো. জাহিদুল ইসলামের নাম উল্লেখ করে ৭ লাখ টাকার রূপালী ব্যাংক লিমিডেট, পল্টন শাখার একটি চেক প্রদান করেন। যার এসবিএ- ৮২৫৪৯৫০। এসময় আব্দুস সাত্তার ও মো. মাসুম বিল্লাহ ভুক্তভোগি মো. ইয়াছিন মল্লিক কে বলেন, ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে চাকরি হবে। এরপর ভুক্তভোগিকে দিয়ে একটি আবেদন পত্র সৃজন করে। আর ওই আবেদন পত্রে গত ৩ মার্চ ড. হাছান মাহমুদ এমপি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এর মন্ত্রীর জাল স্বাক্ষরযুক্ত সুপারিশ সম্বলিত পত্রের ফটোকপি দেওয়া হয়। আর তাদেরকে বলা হয়, তোমার আবেদনে মন্ত্রী সুপারিশ করেছেন। এজন্যই তোমার চাকরি হয়ে গেছে।
আর এই চাকরি না হলে, তাদের টাকার দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু উক্ত সময় পার হওয়ার পর প্রতারকচক্রের অন্যতম সদস্য মাসুম বিল্লাহ ইয়াছিনকে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রী দেশের বাইরে আছেন। এজন্য কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। এরপর গত ২ এপ্রিল মো. মাসুম বিল্লাহ ইয়াছিন এর ভাই জাহিদুল ইসলামকে জানান যে, ইয়াছিনের চাকরি হয়েছে। তার করোনা টেস্ট করাতে হবে এবং ৪ এপ্রিল তার স্বাক্ষাৎকার হবে। উক্ত কথার প্রমাণ হিসেবে সহকারি সচিব (হিসাব ও সমন্বয়ক) মো. শারহাদ শাকীল চূড়ান্ত বাছাই কমিটি এর স্বাক্ষরিত নোটিশ বোর্ড এ ছবি প্রদান করেন। উক্ত নোটিশে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের কাজ তরান্বিত করতে কিছু সংখ্যক লোক দৈনিক ভিত্তিতে অফিস সহায়ক হিসেবে নিয়োগের নিমিত্তে নিম্ন ব্যক্তিগণ মূল সনদপত্র ও কোভিড-১৯ এর সনদ নিয়ে ০৪-০৪-২২ ইং তারিখ থেকে ০৫-০৪-২২ ইং তারিখ দুপুর ২টা ৩০ ঘটিকার মধ্যে স্বাক্ষাৎ করার উদ্দেশ্যে পররাষ্ট্র একাডেমিক ভবনে হাজির হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। উক্ত নোটিশ বোর্ডে মোট ১০ জন চাকরি প্রার্থীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, নোটিশ বোর্ডে যাদের নাম টাঙানো হয়েছে, এই দশ জনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা একই প্রক্রিয়ায় হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, জালিয়াতচক্রের হোতা দুর্নীতিবাজ আব্দুস সাত্তারের নেতৃত্বে বিদেশে লোক পাঠানোর নামেও ব্যাংকের চেক প্রদান করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। উক্ত নোটিশ বোর্ডের ছবি ভুক্তভোগিদের দেয় প্রতারকচক্র। এর তাদের দেওয়া নির্ধারিত সময় মোতাবেক ভুক্তভোগিরা স্বাক্ষাতের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যান। এসময় তাদের স্বাক্ষাতকার পরবর্তী সময়ে হবে বলে সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়।
ভুক্তভোগি মো. ইয়াছিন মল্লিক সকালের সময়কে জানান, সেখান থেকে ফিরে আসার পর স্বাক্ষাতকারের জন্য আর না ডাকায়, তারা খোঁজ খবর নিতে থাকেন। এতে তারা আব্দুস সাত্তার ও মো. মাসুম বিল্লাহ’র দেওয়া কাগজপত্র, ভুয়া নোটিশ বোর্ড ছবি ভুয়া হিসেবে জানতে পারেন। এরপর তাদের কাছে চাকরির জন্য দেওয়া তার ৭ লাখ টাকা ফেরত চান। এতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার ও প্রতারচক্রের সদস্য মো. মাসুম বিল্লাহ বিভিন্ন প্রকার প্রতারণামূলক ছল-চাতুরী করতে থাকে এবং ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদান করেন।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার আব্দুস সাত্তারের সন্ধান করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার অফিসের লোকজন তার বিষয়েও কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তবে জানা গেছে, তিনি প্রতিমাসে নিয়মিত বেতন উত্তোলন করছেন। গত জুন -২২ পে বিল ফর অফিসার, বিল নং ০০০০১০৩ তারিখ ২২/০৬/২০২২ ইয় এবং জুলাই মাসের পে বিল ফর অফিসার বিল নং ০০০৫০১ তারিখ ২২/০৭/২০২২ ইং দাখিল করেছেন বলে জানা গেছে। এভাবে প্রতিমাসে বেতন উত্তোলন করা হলেও তিনি তার কার্যালয়ে উপস্থিত থাকেন না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
ভুক্তভোগি জানান, এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) আল ইমাম এর সাথে দেখা করে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। এসময় তিনি মৌখিকভাবে তার অভিযোগও শোনেন। এরপর তিনি সহকারী সচিব নাজনীন সুলতানার কাছে অভিযোগটি দেন এবং তাকে বিষয়টি দেখার জন্য বলা হয়। এবিষয়ে পরিচালক প্রশাসন আল ইমাম এর সেল ফোনে বার বার কল করা হলেও তিনি তার ফোনটি রিসিভ করেননি।
এমএসএম / এমএসএম

রকিবুল হাসান রনি ও তার পরিবারের ভয়ঙ্কর প্রতারণার জাল

পাপ্পীর কানাডা ও আমেরিকার ভিসা বাতিলের আবেদন

আপিল বিভাগের নিদের্শনা অমান্য করে জনবল নিয়োগ

ঘুষ কেলেংকারীতে ১৫ দিন খালি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের চেয়ার

ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এমডির বিচার চেয়ে ফের দুদকে আবেদন

উৎপাদন বেড়েছে, খরচ কমেছে, নতুন প্রকল্পে আশার আলো

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সকল সেক্টরে ইতিবাচক পরিবর্তন করবে : জননেতা অধ্যাপক মামুন মাহমুদ

কারা অধিদপ্তরে সক্রিয় বদলী বাণিজ্য সিন্ডিকেট, মূলহোতা রিয়াল

দুদকের ফাঁদে ফেঁসে গেলেন এম এ কাশেম

দরপত্র খোলার আগেই ২.৫ কোটি টাকার চুক্তিতে কাজ নিশ্চিত করলো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রুভেন বুল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক

বিআরটিএ-এর দালালি করে কয়েক কোটি টাকার মালিক

চট্টগ্রাম দিয়ে কখনই দেশ ছেড়ে বিদেশে যেতে চাইনি : রায়হান কবির
