আশ্রয়ণ প্রকল্প গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে

প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন ভাবনার অন্তর্ভুক্তিমূলক চেতনা থেকে গ্রহণ করা হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্প। এ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহায়নের সঙ্গে কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, স্যানিটেশন, শিক্ষা, পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম যুক্ত হয়েছে। একটি গৃহ যে সামগ্রিকভাবে পারিবারিক কল্যাণে এবং সামাজিক উন্নয়নের সোপান হতে পারে তার অনন্য দৃষ্টান্ত ‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্প। বাংলাদেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের আবাসন নিশ্চিতকল্পে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অন্যতম উদ্ভাবন হচ্ছে ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’। একটি ঘর,একটি ছিন্নমূল পরিবারের দারিদ্র্য হ্রাসসহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। করোণাকালীন সকল কার্যক্রম স্থবির হয়ে থাকলেও আশ্রায়ন প্রকল্পের কাজ চলেছে। ফলে শ্রমিকেরা তাদের পারিশ্রমিক পেয়েছে, স্থানীয় বাজার থেকে নির্মান উপকরণ কেনার ফলে গ্রামীণ অর্থনীতির গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে যা এখন প্রমাণিত। ১৯৭১ সালের যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শূন্য রিজার্ভ নিয়ে পথচলা শুরু করে ৭১৯ কোটি টাকার প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন।আর আজ ৫০ বছর পর তাঁরই কন্যার হাত ধরে সে বাজেট এখন ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮.১৫ শতাংশ যা এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সর্বোচ্চ। বৃহৎ উন্নয়ন কর্মসূচীর পাশাপাশি একযোগে পরিচালিত হচ্ছে সমাজের পিছিয়ে পড়া দুস্থ, অসহায় এবং ছিন্নমূল মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে নানামুখী কর্মসূচী।
আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে প্রকল্পের বাসিন্দাদের মধ্যে মোছা. শ্যামলী আকতারের (৩৫) সাথে কথা বলে জানতে পারি জীবনটা তার মোটেও সুন্দর ছিল না। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার স্বামী দিনমজুরি খেটে যা উপর্জন করতেন, তাই দিয়েই কোনো রকমে চলতো সংসার। এরপর ঘর ভাড়া দিতেই যখন উপার্জনের প্রায় সবটুকু শেষ, তখন থেকেই স্বামী-সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কাটতো মোছা. শ্যামলী আকতারের কষ্টের দিন। এখন তিনটি ছাগল আর কিছু মুরগী পালন করে সংসারে সহযোগীতা করে ভালোই আছেন। পাশাপাশি বারীর উঠানে সবজির বাগান। স্বামীর আয়ের পাশাপাশি যোগ হয়েছে তার নিজের আয়। প্রায় একই রকম মো. জাবেদ আলীও একসময় ছিলেন ভূমিহীন দিনমজুর। নিজের স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে প্রায় দিনই একবেলা না খেয়েই থাকতেন তিনি। ঘর পেয়ে নিশ্চিন্ত হয়েছেন তিনি। এখন তিনি বর্গাচাষী। আশ্রয়ণ প্রকল্প সংলগ্ন গ্রামের জোতদারদের কাছ থেকে যে জমি বর্গা নিয়ে তিনি চাষ করছেন সবজি আর ধান। সোয়া দুই বিঘা জমি বর্গা চাষ করেন তিনি। একবিঘা জমিতে লাগিয়েছেন বেগুন। ঠিকমত ফলন হলে ৫০ হাজার টাকা লাভের আশা করছেন তিনি। উপজেলায় সর্বমোট ৩২৫ পরিবার এ প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছে। এরমধ্যে খানপুর ইউনিয়নের কয়েরখালি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে যে ২২ পরিবার ঠাঁই পেয়েছে, তাদের অধিকাংশের জীবনের গল্পটাই এমন বা এর থেকেও ভয়াবহ কষ্টের। তবে সেসব কষ্ট এখন লাঘব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘরে মাথা গোঁজার পর থেকে সকলেই হয়ে উঠেছেন স্বাবলম্বী। ভূমিহীন এই মানুষগুলো নিজের ঘর পাওয়ার পর থেকে শুরু করেছেন নতুন কর্মজীবন। আর তা এখন চাঙা করছে গ্রামীণ অর্থনীতিকে। আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, দুই শতাংশ জমির মালিকানাসহ স্বাস্থ্যসম্মত সেমিপাকা ঘর করে দেওয়া হয়েছে এই মানুষগুলোকে। এরসঙ্গে আছে রান্নাঘর ও টয়লেট। উঠানে হাঁস-মুরগি পালন ও শাক-সবজি চাষের জায়গাও আছে বেশ খানিকটা। নিজেদের স্বাবলম্বী করতে আশ্রয়ণের বাসিন্দারা বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন সেটুকু। এছাড়া ঘরগুলো খালের পাড়ে হওয়ায় অনেকেই পালন করছেন হাঁস। এখানে আশ্রয় পাওয়া পরিবারগুলোর অধিকাংশ পুরুষরাই যেখানে দিনমজুর, সেখানে বাড়ির নারীরাও নিজের প্রচেষ্টায় আয়বর্ধনমূলক কাজে অংশ নিয়ে এগিয়ে নিচ্ছেন সংসার আর সন্তানদের। নারীরা যেমন সেলাই মেশিন চালিয়ে বা উঠানে সবজি বাগান ও হাস-মুরগি থেকে উপার্জন করছেন,তেমনি দিনমজুরী বা কৃষি কাজের পাশাপাশি পুরুষরাও গড়ে তুলেছেন মুদি দোকান বা ক্ষুদ্র ছাগল খামার। এই আশ্রয়ণেরই বাসিন্দা চান মিয়া নিজের বাড়িরে উঠানে বেশ বড় করেই একটা সবজি বাগান করেছেন তিনি। বাগানে আছে বেগুন, পেঁপে, লাউ, শাক, কুমড়াসহ বিভিন্ন সবজি।ছাগল, হাঁস, মুরগিও রযেছে তার।
নিরাপদ আশ্রয়ে পরিবারের সবাই যেন হয়ে উঠেছে আস্থাবান, প্রত্যয়ী এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে উদ্যোগী। আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নত হয়েছে যোগাযোগ ব্যাবস্থা, কমেছে ভূমিহীনের সংখ্যা, দরিদ্রসীমার নীচে অবস্থানকারী জনগোষ্ঠীকে দিয়েছে সামাজিক মর্যাদা, নিজের ঘর থাকার সম্মান। তৈরি হয়েছে নতুন নতুন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী যা গতিশীল করছে গ্রামীণ অর্থনীতিকে। এই প্রকল্প একদিকে যেমন বদলে দিচ্ছে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জীবন, ঠিক তেমনি এ প্রকল্প গ্রামীণ অর্থনীতিকেও সমৃদ্ধ করছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২০ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নোয়াখালী বর্তমান লক্ষীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা গ্রামে ভূমিহীন-গৃহহীন, অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রমের যাত্রা শুরু করেন। তার দেখানো পথেই বঙ্গবন্ধুকন্যা ১৯৯৭ সালের ১৯ মে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব কক্সবাজার জেলার সেন্টমার্টিনে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুর্দশা দেখে তাদের পুনর্বাসনের নির্দেশ দেন। সেখান থেকেই শুরু হয় পুনর্বাসন কার্যক্রম। মুজিববর্ষে এসে স্বল্পতম সময়ে গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে গৃহ প্রদানের মাধ্যমে জাতির পিতা সূচিত গৃহায়ন কর্মসূচীকে তিনি নতুনরূপে উপস্থাপন করেন। জাতির সামনে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পকে অধিকতর যুগোপযোগী ও টেকসই করার লক্ষ্যে প্রতিটি দুস্থ পরিবারের জন্য ২ শতক জমি প্রদানসহ স্বাস্থ্যসম্মত দুই কক্ষবিশিষ্ট গৃহ, প্রশস্ত বারান্দা, রান্নাঘর ও টয়লেট নির্মাণের জন্য কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে সহকারি কমিশনার (ভূমি) সাবরিনা শারমিন বলেন,একইসঙ্গে এই বিপুল সংখ্যক পরিবারকে গৃহ প্রদানের ঘটনা পৃথিবীতে আর কোন দেশে সম্ভব হয়নি। সমগ্র বাংলাদেশের জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে এ সকল গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তারা খাস জমি চিহ্নিতকরণ ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ দখলকৃত জমি উদ্ধার করে গৃহহীনদের আবাসনের ব্যবস্থা করছে।
কথা বলি বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ময়নুল ইসলামের সাথে । তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্ভাবিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শুধু গৃহ নির্মাণের ফলে মানুষের জীবনের যেমন টেকসই উন্নয়নের নানামুখী লক্ষ্য অর্জন সম্ভব,গৃহায়নের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা,ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার প্রাপ্তি যেমন সম্পৃক্ত তেমনি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ক্ষেত্রসমূহে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব।
লেখকঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট
এমএসএম / এমএসএম

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া
