ঢাকা মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগে দুর্নীতি


আব্দুল লতিফ রানা photo আব্দুল লতিফ রানা
প্রকাশিত: ১৪-৮-২০২২ বিকাল ৫:৪৫

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগের প্রকল্পের ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে চাকরির নামে বেকার যুবকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। আবার অনেককে চাকরি দেওয়ার পর চাহিদামত ঘুষের টাকা আদায় করতে না পেরে বেতন না দিয়েই চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। 
গত ১১ আগস্ট দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ‘অনৈতিক সুবিধা নেন প্রকল্প পরিচালকরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আউটসোর্সিংয়ে জনবল নিয়োগ’ শিরোনামে এক প্রতিবেদক প্রকাশ হয়। উক্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর ভুক্তভোগিরা সকালের সময়-এ ফোন করে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য জানিয়েছেন। 
অভিযোগে জানা গেছে, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগের জন্য ‘ধলেশ^রী সিকিউরিটি এন্ড ক্লিনিং সার্ভিস (প্রা.) লিমিটেড’ নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জনবল সরবরাহের জন্য দায়িত্ব পান। এরপর প্রতিষ্ঠানটি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৪০ জন জনবল সরবরাহের দায়িত্ব পান। পরে এদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর নিয়োগপ্রাপ্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কাছ থেকে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরির নিয়োগপত্র প্রদান করা হয়। উক্ত নিয়োগপত্রের ৮ নম্বর ক্রমিকে বলা হয়েছে, জাতীয় বেতনস্কেলে-২০১৫ অনুযায়ী মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য জনপ্রতি মাসিক সাকুল্য বেতন ১৭ হাজার ৬শ ১০ টাকা। বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন, সাভার পৌরসভার জন্য জনপ্রতি ১৬ হাজার ৬শ ২০ টাকা। আর অন্যান্য এলাকা ১৬ হাজার ৬শ ৩০ টাকা হারে প্রাপ্ত হবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 
বিল্লাল হোসেন নামে একজন ভুক্তভোগির নামে ধলেশ^রী সিকিউরিটি এন্ড ক্লিনিং সার্ভিস (প্রা.) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আতিকুল ইসলামের স্বাক্ষরিত চাকরির নিয়োগপত্র দেন। কিন্তু সেখানে ১০ থেকে ১৫ দিন ডিউটি করার পর আমার আইডি এর মেইল না আসায় আমাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। আর তার কিছুদিন পরেই তাকে পুনরায় চাকরি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় কয়েক মাস অতিবাহিত হলেও এখনো তাকে চাকরি দেওয়া হয়নি। তার এক ভাই সকালের সময়কে সেল ফোনে জানান, তার ভাইকে সরকারি চাকরি দেওয়ার জন্য ১০ লাখ টাকা নিয়েছে। কিন্তু সরকারি চাকরির নামে আউটসোর্সিংয়ের চাকরি দেয়। সেখানে কিছু দিন চাকরি করানোর পর বেতন ভাতা না দিয়েই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। 
এ ছাড়া মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার সোনাখালী গ্রামের মো. ফজলুল হকের ছেলে নাহিদ মিয়া জানান, ধলেশ^রী সিকিউরিটি এন্ড ক্লিয়ারিং সার্ভিস (প্রা.) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আতিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক নিয়োগপত্র দিয়েছেন। এজন্য তাদের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। সেখানে প্রায় তিন মাস চাকরি করার পর বেতন ভাতা না দিয়ে হেড অফিসের সমস্যার কারণ দেখিতে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। সমস্যার সমাধানের পর তাকে পুনরায় চাকরিতে যোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। একই অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদার ধান্যঘরা গ্রামের মো. আবু তাহেরের ছেলে মো. বশির আহমেদ এর চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। তিনি গত রোজার মাস থেকে প্রায় ৩ মাস ডিউটি করলেও তার বেতন ভাতা না দিয়ে তাকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। 
সূত্র জানায়, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কয়েকটি প্রকল্পের জন্য আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে ৭ শতাধিক জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। আর ওই সব প্রকল্পের কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রত্যেক জনের কাছ থেকে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আদায়ের পরিকল্পনা নিয়েছে। এতে দুর্নীতির মাধ্যমে দালালদের সহযোগিতায় কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা নেয়। আর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে উল্লেখিত প্রকল্প পরিচালকদের সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়েছেন বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে।  
সূত্রটি আরও জানায়, য্বু উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালকদের আহ্বানকৃত আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে গত ৫মে জনবল নিয়োগের দরপত্র নং ৩৪.০১.--১৪০. এ প্রদানকৃত অনিয়ম দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে ভুয়া কাগজধারী ও পছন্দের প্রতিষ্ঠান আল মমিন আউটসোর্সিং কে আউটসোর্সিং ভিত্তিতে জনবল নিয়োগের নোয়া, চুক্তি ও কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হচ্ছেন- আব্দুল লতিফ মোল্লা। এ ছাড়া, একই অধিদপ্তরের অপর প্রকল্প পরিচালক ড. এস. এম. আলমগীর কবির এর আহ্বানকৃত গত ২ জুন তারিখের দরপত্র নং ৩৪.০১.০০--৬২.- এ অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে আউটসোর্সিং ভিত্তিতে জনবল নিয়োগের নোয়া দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। অর্থ প্রাইভেট লিমিটেড এবং গালফ সিকিউরিটি সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনামিকা সামাদ এসব অভিযোগ করেছেন।
ভুক্তভোগিরা জানান, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সততা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে সকল অর্জিত কার্যক্রমের সুনাম ক্ষুণ্ন করতে যুব উন্নয়নের কতিপয় কর্মকর্তা প্রশ্রয়ে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ওই সিন্ডিকেটের সাথে সমঝোতা ছাড়া এই দপ্তরের কোনো দরপত্রের যোগ্যতা সম্পূর্ণ দরদাতা প্রতিষ্ঠান কাজ পায় না। গত ১৬মে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আব্দুল লতিফ মোল্লা এর চাহিদামত প্রকল্পের শর্তরোপ কাগজপত্র আল মমিন আউটসোর্সিং নামক প্রতিষ্ঠানের নাই। কিন্তু ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্রের আবেদনের সঙ্গে যেসব প্রমাণপত্র দাখিল করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুয়া কাগজপত্র। এ অভিযোগ থাকার পরও উক্ত দরপত্রের মূল্যায়ন কমিটি সিডিউলের শর্তানুযায়ী দরদাতাদের দাখিলকৃত কোনো প্রকারের কাগজপত্রাদি যাচাই-বাছাই না করেই আল মমিন আউটসোর্সিং নামক প্রতিষ্ঠান হতে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে উক্ত জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজনকৃত কাগজধারী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে নোয়া, চুক্তি ও কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। উক্ত প্রতিষ্ঠানটি বেকার চাকরী প্রার্থীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা সরকারী চাকরীর নামে হাতিয়ে নিচ্ছে বলেও অভিযোগে জানা গেছে।
তাছাড়া, ড. এস এম আলমগীর কবির প্রকল্প পরিচালক, ‘দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রযুক্তি নির্ভর সমন্বিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা (৩য়)’ প্রকল্প, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কে সর্বমোট ৫টি লট অর্থাৎ লট-০১,০২,০৩,০৪. এবং ০৫ হিসেবে বিভক্ত করে দরপত্র আহ্বান করা হয়। উক্ত দরপত্রে অর্থ প্রাইভেট লিমিটেড এর পক্ষ থেকে লট-০১ এ অংশগ্রহণ করে এবং গালফ সিকিউরিটি সার্ভিস (প্রা. লিমিটেড -০৪ লট এ অংশগ্রহণ করে। কিন্তু আগের প্রকল্প পরিচালক আব্দুল লতিফ মোল্লা এর আহ্বানকৃত দরপত্রের ন্যায় কতিপয় কর্মকর্তার সাথে বহিরাগত দালাল চক্রসহ গঠিত সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে পচ্ছন্দের প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্প পরিচালক ড. এস এম আলমগীর কবির আহ্বানকৃত উপরেল্লিখিত লট নং- ০১ হতে ০৫ পর্যন্ত আউটসোর্সিং ভিত্তিতে জনবল নিয়োগের লক্ষ্যে নোয়া পেয়েছে। 
উল্লেখিত প্রকল্পগুলোতে মোট ৪৮টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। এরপর একই মালকের দু’টি প্রতিষ্ঠানকে দুটি নোয়া দেওয়া হয়। আর অপর তিনটি প্রতিষ্ঠানকে তিনটি নোয়া দেওয়া হয়েছে। আর এসব প্রতিষ্ঠানই যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকদের দালালের মাধ্যমে আঁতাত করে কার্যাদেশ পেয়ে থাকেন। ফলে পেশাদার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো অনিয়ম ও দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের চাহিদামত উৎকোচ দিত অপরাগতা প্রকাশ করায় তাদেরকে কার্যাদেশ দেওয়া হচ্ছে না। আর বৈধভাবে উল্লেখিত প্রকল্পের নোয়া পাওয়া হতে বঞ্চিতদের পক্ষে অর্থ প্রাইভেট লিমিটেড লিখিত অভিযোগ করেছেন। আর গালফ সিকিউরিটি সার্ভিসেস (প্রা.) লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনামিকা সামাদ এর লিখিত অভিযোগে বলেছেন, প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ড. এস এম আলমগীর কবির ও প্রকল্প পরিচালক আব্দুল লতিফ মোল্লা আহ্বানকৃত দরপত্র বরাদ্দে দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তপূর্বক পরবর্তীতে দরপত্রের মূল্যায়নপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন

 

এমএসএম / এমএসএম

বিসিক মুদ্রণ শিল্পনগরী প্রকল্পের মাটি ভরাটের প্রিলেভেল সার্ভে কাজে প্রকল্প পরিচালকের অনিয়ম-দুর্নীতি

মাদারীপুরের আলোচিত মিথ্যা মুক্তিযোদ্ধার কোটায় একই পরিবারের চারজন করছেন সরকারি চাকরি

নিষিদ্ধ হলেও হিযবুত তাহরীরের প্রকাশ্যে কর্মসূচী ঘোষণা

মিরপুর ফায়ার সার্ভিসের ট্রেনিং কমপ্লেক্সের অফিসার তৌহিদুলের শাস্তি দাবি

বিসিকের প্রকল্প পরিচালক মোঃ রাকিবুল হাসানের ঘুস-দুর্নীতি সমাচার

জমি ক্রয়ের নামে ভাইয়ের বিরুদ্ধে প্রবাসি স্বামীর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

বিআইডব্লিউটিএ বন্দর শাখার সাবেক পরিচালক সাইফুলের টাকার উৎস কি?

নার্গিসকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি দেওয়া হোক

গাজীপুর গণপূর্তের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিমের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকের ঢাকায় ১৯ বছরের লুটপাটের রাজত্ব

মসজিদের নামে জমি দখলের চেষ্টা করছে মল্লিক বিল্ডার্স

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ডিজি আবু সুফিয়ান এর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে টেন্ডার বাতিল এর অভিযোগ

পিডব্লিউডি এর কয়েকজন স্টাফের বিরুদ্ধে আইন ও বিচার বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর অভিযোগ