ঢাকা সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫

ভাঙা দিয়ে ঢুকছে পানি

কয়রায় নতুন এলাকা প্লাবিত : পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ


সম্রাট, কয়রা photo সম্রাট, কয়রা
প্রকাশিত: ২৭-৫-২০২১ রাত ৯:৪২

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে খুলনার কয়রা উপজেলার চারটি ইউনিয়নে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৭-৮ ফুট উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। উচ্চ জোয়ারের তোড়ে কয়রায় বিভিন্ন এলাকার অন্তত ২০টি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ভাঙা বাঁধ থেকে প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানি ঢুকে তলিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এতে প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সকালেন জোয়ারের চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে নতুন গ্রাম প্লাবিত হয়। এর আগে গতকাল বুধবার (২৬ মে) দিনের জোয়ারের পানির তোড়ে বাঁধ ভেঙে ও উপচে পড়ে প্লাবিত হয় কয়রা উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রাম। স্থানীয় জনগণ বিকেলে কয়েকটি পয়েন্টে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বেড়িবাঁধ আটকালেও বৃহস্পতিবার সকালের জোয়ারের তোড়ে আটকানো বেড়িবাঁধসহ নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন দুর্গত এলাকার লক্ষাধিক মানুষ। পানিতে ভেসে গেছে প্রায় ২ হাজার ৫০০ পুকুর-জলাশয়ের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এতে উপজেলার মৎসজীবীরা প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে উপজেলা মৎস্য অফিস।

পাশাপাশি দুর্গত এলাকার অধিকাংশ কাঁচা বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পানির তোড়ে বিভিন্ন এলাকায় গ্রামীণ পাকা-কাঁচা সড়ক ভেঙে ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। অনেক এলাকায় ভেলা ও নৌকায় যোগাযোগ করতে হচ্ছে বানভাসি মানুষের। পানিবন্দি অধিকাংশ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু জায়গা এবং আশ্রায় কেন্দ্রে। তবে আশ্রয় নেয়া পানিবন্দি এসব মানুষ দুর্ভোগ-সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাব। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাকবিলত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী ও নগদ অর্থ বিতরণ অব্যাহত থাকার কথা জানালেও এখনো ত্রাণ পাননি বলে অভিযোগ বানভাসিদের অনেকের।

বডবাড়ী গ্রামের আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া বিধবা রোকেয়া বলেন, ‘আমাগের ঘর পানিতে ডুবি গেছে। বন্যার পানিতে হাবুডুবু খাইতাছি। কোনো অফিসার, চেয়ারম্যান মেম্বরেরা সাহায্য দিতে আসেনি। আমরা কোনো সাহায্য না পাইয়া ২ দিন খেয়ে না খেয়ে খুব কষ্টে আছি।’

পবনা এলাকার গৃহবধূ জায়েদা বলেন, ‘হুনছি বইন্না এহনো আয় নাই। হেইতেই এত পানি। জানি না বইন্নায় কী অইবে!’

দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আব্দুস সবুর গাজী বলেন, আমরা দিন আনি দিন খাই, এখন পানিবন্দি। কাজ নাই, খাবারও নাই। খুব দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছি।

দুর্গতরা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি। যখন জোয়ারের পানি বাড়ছে তখন অন্যত্র আশ্রয় নিতে হচ্ছে তাদের। তাদের দাবি, এমন দুর্যোগে খাদ্য সহায়তা নয়; টেকসই বেড়িবাঁধই বেশি প্রয়োজন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজের ধীরগতি ও কার্যকারী কোনো পদক্ষেপ না থাকায় এলাকাবাসী দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা থাকার আশঙ্কা করছেন।

উপজেলার সবচেয়ে প্লাবিত মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন লাভলু জানান, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের হোগলার দুটি, দশালিয়ার দুটি, মঠবাড়ির দুটি পয়েন্টসহ মোট ৬টি পয়েন্ট ভেঙে হোগলা, দশালিয়া, মঠবাড়ী, আটরা, গোবিন্দপুর, জয়পুর, শিমলারাইট, বাউলিয়া ঘাটা, মঠের ডাঙ্গা, সুতির কোনা, সুতির ধার, পোলাডাঙ্গার চক, মোড়লের চক, অন্তাবুনিয়া, দেয়াড়াসহ অন্তত ২১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ধসে পড়েছে সহস্রাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি। ভেসে গেছে শত শত একর জমির মৎস্য ঘের। আগামী ২৮ মে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে ভেঙে যাওয়া স্থানগুলো আটকানোর চেষ্টা করবেন বলে চেয়ারমান জানান।

উত্তর বেদকাশী ইউপি চেয়ারম্যান সর্দার নুরুল ইসলাম জানান, গাতিরঘেরী হতে বীণাপাণি পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধের চারটি স্থান ও পদ্মপুকুর এলাকার একটি স্থান দিয়ে লাগাতার পানি প্রবেশ করে হরিহরপুর, পদ্মপুকুর, গাতির ঘেরী, বীণাপাণিসহ অন্তত ৭ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ধসে পড়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। এরমধ্যে কিছু মানুষ হরিহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পদ্মপুকুর কপোতাক্ষ স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছেন।

দক্ষিণ বেদকাশী ইউপি চেয়ারম্যান কবি শামসুর রহমান জানান, আংটিহারা এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার ভেঙে লাগাতার জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় আংটিহারা, ঘড়িলাল, জোড়শিং, পাতাখালী, গোলখালীসহ ৫-৭ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান  বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আগেই কয়রায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে কয়রায় কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৭ থেকে ৮ ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ার প্রবাহিত হওয়ায় ৬টি পয়েন্ট ভেঙে এবং ৩০টি পয়েন্ট দিয়ে বেড়িবাঁধ উপচে উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এতে লোকালয়ে পানি ঢুকে অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতের কাজ চলমান আছে। ভালোভাবে সংস্কার করতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের জন্য অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এ বাঁধ আমরা অচিরেই সংস্কার করব।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে ইতোমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। এছাড়া দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা মজুদ আছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত চারটি ইউনিয়নে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে ইউনিয়নপ্রতি আড়াই টন চাল ও নগদ ২৫ হাজার করে টাকা  ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে বণ্টন করার জন্য দেয়া হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এবং পরিবারের তালিকা প্রস্তুতের কাজও শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বানভাসি অসহায় সব মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হবে।

এমএসএম / জামান

ঈশ্বরদীতে ট্রেনে কেটে এক ব্যক্তির মর্মান্তিক মৃত্যু

মসজিদের খতিব–ইমাম–মুয়াজ্জিনদের সুরক্ষায় নীতিমালা চূড়ান্তঃ কুমিল্লায় ধর্ম উপদেষ্টা

মেহেরপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পুনঃবিবেচনার দাবিতে গণজমায়েত

চর ওয়াশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর করেন জাতীয় বীর আমান উল্লাহ আমান

গাজীপুরের রাজনীতিতে ঝড় তুললেন ইরাদ সিদ্দিকী

ধুনটে বালুবাহী দুই ট্রাকের চাপে অটোরিকশাচালক নিহত

পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের হীরক জয়ন্তী পালন

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিলমারী মডেল থানার এসআই আসাদুজ্জামানের আকস্মিক মৃত্যু

কোম্পানীগঞ্জে সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সম্মাননা ও সহায়তা প্রদান

দুমকিতে সশস্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

দুমকিতে গাভী লুটপাটের অভিযোগ 'মিথ্যা', দাবি করে সংবাদ সম্মেলন

ভূমিকম্পকে আল্লাহর সতর্কবার্তা হিসেবে দেখার আহ্বান – মাওলানা আব্দুল ওয়াহাব (বড় হুজুর, কাছাইট)

সিংগাইরে জমি নিয়ে বিরোধে বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা