খাদ্য ও জ্বালানি যখন যুদ্ধের অস্ত্র হয়
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে উদ্ভব হয়ে করোনা মহামারি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে বিশ্বে খাদ্য সংকটের বিষয়ে নানাভাবে সতর্ক করে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু মহামারির বিপর্যয় কাটিয়ে যেই বিশ্বে অর্থনীতির চাকা সচল হতে শুরু করেছিল, ঠিক তখনই ইউক্রেন যুদ্ধ এক ঘোরতর দুঃস্বপ্ন হয়ে হাজির হয়েছে। সরাসরি যুদ্ধে যে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি, তার চেয়ে যুদ্ধের নানামুখী অভিঘাতের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি অনেক বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মহামারির পর সারা বিশ্ব অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে চলছিল। তখন ইউক্রেন যুদ্ধ এসে আবার বিশ্বকে বড় সংকটে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশেও এর বড় প্রভাব পড়েছে, ইতিমধ্যে কিছু বিষয় আমরা লক্ষও করেছি। আসলে গোটা বিশ্ব এখন একটা মন্দার দিকে চলে যাচ্ছে। এ মন্দার ধরন গত কয়েক দশকের তুলনায় একটু অন্য রকম মনে হচ্ছে। একদিকে মন্দা বাড়ছে, অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে এবং একই সঙ্গে কর্মসংস্থান কমে যাচ্ছে। এটি গুরুতর সংকট, গোটা বিশ্বের জন্যই। ১৯৭০ সালের মন্দায় অনেকটা এমন দেখা দিয়েছিল। ভবিষ্যতের যেকোনো খারাপ পরিস্থিতির জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে।পশ্চিম এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশ রীতিমতো খাদ্য সংকটের মুখে। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে। ইতিমধ্যেই অনেক দেশে সামাজিক অস্থিরতা ও রাজনৈতিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ শুরু হয়েছে এ বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি। জাতিসংঘ কৃষি ও খাদ্য সংস্থার গত ৮ এপ্রিলের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, যুদ্ধ শুরুর পর দেড় মাসের মধ্যে বিশ্বে গম ও ভুট্টার মতো প্রধান প্রধান খাদ্যশস্যের দাম ১৭ শতাংশ বেড়েছে, যা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের খাদ্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করছে। এ ঝুঁকি নিশ্চিতভাবেই আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ার ইয়েমেন, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সাউথ সুদান, নাইজেরিয়া, কঙ্গো এবং আফগানিস্তানের মতো আগে থেকেই নাজুক অবস্থায় থাকা দেশগুলোর জন্য অনেক বেশি।
আমাদের মনে রাখতে হবে, ভূরাজনীতির সঙ্গে বৈশ্বিক খাদ্যবাজার জড়িয়ে পড়াটা বিপজ্জনক। মুক্তবাজার অর্থনীতি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল, সেটিও বাধাগ্রস্ত হবে। মহামারি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তেমনটাই আমরা দেখতে পারছি। বিশ্বায়নের দর্শনের ওপরে আঘাত চলে এসেছে। এখানে এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। কূটনৈতিকভাবে খাদ্য আমদানি-রপ্তানিতে নানা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ বাধা আসছে। এখানে অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানও জড়িয়ে পড়েছে, তারা রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের মতো ছোট দেশগুলোর জন্য নানা ঝুঁকি তৈরি হবে। ইতিমধ্যে হয়েছেও। ফলে খাদ্য আমদানিতে আমাদের পরিকল্পনামাফিক এগোতে হবে এবং সে অনুসারে রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, এমনকি বিশ্বব্যাংক ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে এবং বৈরী জলবায়ুর প্রভাবে ভবিষ্যতে খাদ্যসংকটের আশঙ্কা করছে। সেই আশঙ্কায় দেশে দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সঞ্চয়ের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তার বড় ঝুঁকি না থাকলেও সব সময় খাদ্য আমদানি করে দেশের চাহিদা মেটানো বেশ দুরূহ। খাদ্য ও ভোগ্যপণ্য উৎপাদনে বহুল পরিচিত দেশগুলোতেও খাদ্য উৎপাদন কম হচ্ছে। সরবরাহব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দাম বেড়েছে। পত্রিকান্তরে জানা গেছে, নিজেদের প্রয়োজন মেটানোকে প্রাধান্য দিয়ে এখন পর্যন্ত ২৫টি দেশ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। কিছু দেশ আবার নানা ধরনের বিধিনিষেধও আরোপ করেছে। একদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যের জোগান নেই, অন্যদিকে দেশে ডলারের সংকটের কারণে খাদ্য আমদানির জন্য এলসি বা ঋণপত্র খোলা সম্ভব হচ্ছে না। এতে খাদ্য আমদানি কমে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে খাদ্য আমদানি আরও কঠিন হবে।মোকাবিলা করতে হবে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ।
তবু বলা যায়, বিশ্ব খাদ্য উৎপাদন ঘাটতির প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে। বাংলাদেশে খাদ্যের হয়তো খুব বেশি সংকট হবে না। তবে অবশ্যই কৃষি উৎপাদনে জোর দিতে হবে। কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে ধরে রাখতে হবে। দারিদ্র্য মানুষের জন্য খাদ্যের বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীকেও জোরদার করতে হবে। সাধারণত শীতে দেশে সবজি, ধান ও গমের উৎপাদন বেশি হয়। ফলে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকার খাদ্য নিয়ে স্বস্তিতে থাকবে। এপ্রিলে আসবে ইরি। তখনো সরবরাহ বাড়বে। সংকটটা হবে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। এর জন্য আমদানি বা মজুত প্রয়োজন। চলতি অর্থবছরে দেশে ৪ কোটি ২৭ লাখ টন চাল ও গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭ লাখ টন আউশ, ১ কোটি ৬৪ লাখ টন আমন, ২ কোটি ১৫ লাখ টন বোরো ও ১১ লাখ ৬০ হাজার টন গম। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী খাদ্য উৎপাদন হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে আরও উদ্বৃত্ত থাকার কথা। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন কিছুটা কমতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ তাদের এক প্রতিবেদনে আগাম পূর্বাভাস দিয়েছে। এর কারণ হিসেবে তারা মনে করছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সার, সেচের জন্য জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে কৃষির উৎপাদন খরচ বাড়বে। এতে কৃষক যথাযথ সক্ষমতার অভাবে আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন। গত অর্থবছরে দেশে খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ কোটি ৯৬ লাখ টন। উৎপাদন হয়েছিল ৩ কোটি ৮৭ লাখ টন। চলতি অর্থবছরেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন কম হবে। গত অর্থবছরে খাদ্য আমদানি করা হয়েছিল ৫০ লাখ টন। চলতি অর্থবছরে খাদ্য আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪৭ লাখ টন। দেশীয় উৎপাদন চাঙা থাকলে ও সময়মতো আমদানি করতে পারলে খাদ্য সরবরাহে কোনো ঘাটতি হবে না বলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর থেকে জুনের মধ্যে সরকার ৫ লাখ ৩০ হাজার টন চাল এবং জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ৬ লাখ ১৩ হাজার টন গম আমদানি করার কথা।
এদিকে বিশ্বের গম, ভোজ্যতেল, জ্বালানির প্রায় ৩৪ শতাংশ জোগান দেয় ইউক্রেন ও রাশিয়া। রাশিয়ার আক্রমণের কারণে ইউক্রেন থেকে খাদ্যপণ্যবাহী জাহাজ আসতে পারছে না। অন্যদিকে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়াও রপ্তানি করতে পারছে না। এতে খাদ্যের সরবরাহ কমেছে, বেড়েছে দাম। ওই দুই দেশ থেকে ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় সার উৎপাদন কমে গেছে। এতে সারসহ কৃষি উপকরণের দাম বেড়েছে প্রায় ৭২ শতাংশ। এতে উৎপাদন কমছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যের জোগান মিলছে না। অন্যদিকে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে ডলারের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। একই সঙ্গে টাকার বিপরীতে বেড়েছে ডলারের দাম। গত এক বছরের ব্যবধানে ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ২৩ শতাংশ। একদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে যোগ হয়েছে ডলার-সংকট। ফলে খাদ্যসামগ্রী আমদানির জন্য ডলার মিলছে না। এতে এসব পণ্যের এলসি খোলা কমেছে, আমদানিও কমেছে। আমদানি কমায় সরবরাহ-সংকটের অজুহাতে দাম বেড়ে যাচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে খাদ্যসামগ্রী আমদানির এলসি খোলা হয়েছিল ৯৮৪ কোটি ডলারের। আমদানি হয়েছে ৮৬৮ কোটি ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে এলসি খোলা হয়েছিল ৭৮২ কোটি ডলারের। আমদানি হয়েছে ৬৮১ কোটি ডলারের। আলোচ্য সময়ে এলসি খোলা বেড়েছে ২৬ শতাংশ। আমদানি বেড়েছে সাড়ে ২৭ শতাংশ। আমদানি ডলারের হিসাবে বাড়লেও পরিমাণে কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে বেশি দামে কম পণ্য আমদানি হচ্ছে। ফলে সরবরাহ-সংকট দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অক্টোবর থেকে বিশ্বব্যাপী ধানের উৎপাদন কম হবে। এরই মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ভিয়েতনামসহ প্রধান প্রধান খাদ্য রপ্তানিকারক দেশগুলোতে উৎপাদন কমে যাবে।
তবে থাইল্যান্ডে বাড়বে। কেননা, সে দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম। অবশ্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, রাশিয়া, ইউক্রেনসহ প্রায় সব দেশেই খাদ্যের দাম বেড়েছে। ফলে রপ্তানিতেও দাম বাড়বে। এদিকে নিজেদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশসহ ২৫টি দেশ ৬৪টি পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা ও বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ডাল, গম, ময়দা, সার, সবজি, ফল, চিকিৎসা সামগ্রী, মিনারেল ওয়াটার, ভোজ্যতেল, মাংস, মাছ ইত্যাদি। কোনো কোনো দেশ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সাল পর্যন্ত নিয়ে গেছে। অনেক দেশের নিষেধাজ্ঞা এই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে। বাংলাদেশে আমরা যদি খাদ্যসংকট মোকাবিলা করতে চাই, তাহলে অবশ্যই স্থানীয় উৎপাদনে নজর দিতে হবে, উৎপাদকদের প্রণোদনা দিতে হবে, ঠিক সময়ে সার-বীজ সরবরাহ এবং সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খল বজায় রাখায় সব উদ্যোগ চালিয়ে যেতে হবে। সত্যিকারের উৎপাদকেরা যাতে পণ্যের সঠিক মূল্য পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রান্তীয় পুঁজিবাদী দেশগুলো তাদের কৃষিজমি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে ব্যবহারের বদলে বাজারে যে পণ্যের চাহিদা বেশি, সেটি উৎপাদনে ব্যবহার করছে। এ কারণে প্রান্তীয় বা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো খাদ্যশস্যের বদলে অর্থকরী ফসল উৎপাদনে তাদের অনেক জমি ব্যবহার করছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো কেন্দ্রীয় পুঁজিবাদী দেশগুলো সব সময় উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন করছে। প্রান্তীয় দেশগুলো খাদ্যশস্যের জন্য কেন্দ্রীয় দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বর্তমান পুঁজিবাদীব্যবস্থা বৈশ্বিক উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থার পারস্পরিক নির্ভরশীলতার একটা বৃহৎ শৃঙ্খল। মহামারি ও যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি যখন এ শৃঙ্খলকে ভেঙে ফেলে, তখন অনিবার্যভাবেই কোটি কোটি মানুষের জন্য খাদ্যসংকট ডেকে আনছে।
ঐতিহাসিক বিচারে সবচেয়ে বড় খাদ্যের মজুত থাকা সত্ত্বেও সেটা পরহস্তের ধনের মতো তৃতীয় বিশ্বের কোনো কাজেই আসছে না। জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, গত তিন দশকে নাইজেরিয়ায় মাথাপিছু খাদ্যশস্যের উৎপাদন ২০ শতাংশ কমেছে। একই সময়ে কেনিয়াতেও খাদ্যশস্যের উৎপাদন কমেছে মাথাপিছু ২০ শতাংশ। নাইজেরিয়া-আফ্রিকার মতো অনেক দেশ তাদের কৃষিজমির একটা বড় অংশে পশ্চিমা বিশ্বের জন্য জৈব জ্বালানি উৎপাদনকারী ফসল ফলাচ্ছে। এভাবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের নীতির বিসর্জন যেকোনো দেশের জন্য আত্মহত্যার মতো ব্যাপার হতে পারে, সেটা করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্ব বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মাধ্যমে তুলনামূলক সুবিধা নীতি তৃতীয় বিশ্বের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে, কিন্তু এ সংকটের দায় কি তারা নিচ্ছে? চলমান সংকট থেকে নতুন কোনো শিক্ষা নেওয়া যাবে? এটি বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনেরই শঙ্কার। যেহেতু আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নই। খাদ্যের একটি বড় অংশ আমাদের আমদানি করতে হয়। একটি পণ্যের উদাহরণ দিয়ে বলি। গম এখন আমাদের প্রধানতম খাদ্য হয়ে উঠেছে, চালের পরেই তার স্থান। আমরা ক্যালরির ৭-৮ শতাংশ এখন গম থেকে নিচ্ছি। এটি বিশাল অংশ। এ চাহিদা আরও বাড়ছে, কিন্তু গমের উৎপাদন তো বাড়ছে না। আমাদের গমের প্রায় ৮০ ভাগই আমদানি করি। এর বেশির ভাগই আমদানি করি আবার রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। ভারত এবং কানাডা থেকেও আমরা গম আমদানি করে থাকি, যদিও সেটি কম। এখন বৈশ্বিকভাবে উৎপাদন কমে গেলে সেটির ধাক্কা সরাসরি এসে পড়বে। আমদানি খরচ বাড়বে, খাদ্যদ্রব্যের দাম তো বাড়বেই। কিছুদিন আগে আমরা ভোজ্যতেল নিয়ে সংকট দেখেছি। এমনিতেই দরিদ্র্য বা নিম্ন আয়ের মানুষেরা তাদের খাদ্যচাহিদা পূরণের জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এখন গ্রেইনস কাউন্সিলের প্রতিবেদন যা বলছে, তাতে আমাদের জন্য ভয়াবহ দিন অপেক্ষা করছে। বিষয়টি আসলেই গুরুত্ব দিয়ে অনুধাবন করার সময় এখনই।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
এমএসএম / এমএসএম