ঢাকা সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫

‘ঘরের মধ্যে পানি ঢুকতেছে, বাঁধ না হলি আমরা কনে থাকপো’


সম্রাট, কয়রা photo সম্রাট, কয়রা
প্রকাশিত: ২৯-৫-২০২১ দুপুর ২:৪৫
খুলনার কয়রা উপজেলা মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া গ্রামে কপোতাক্ষ নদের তীরে বেঁড়িবাধের অদূরে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন দিনমজুর আনোয়ার হোসেন (৫০)। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে নিয়মিত সংগ্রাম করে চলছেন তিনি। ঘূর্ণিঝড় সিড়র, আইলা, ফণি, আম্ফান ও ইয়াসের কবলে কয়েক দফায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যায় তার চোখের সামনেই। এখন কোনোরকমে টিকে আছে তার ঘরটি, তাও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় যাতায়াতের কোনো পথ নেই। নেই পায়োঃনিষ্কাশন ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা। দেখা দিয়েছে খাবার সংকট। বিচিত্র জীবনে রূঢ় বাস্তবতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছেন এ  উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। দুর্গত এলাকার এসব মানুষ সহায়-সম্বল হারিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামে এখন দিোহারা। এসব বানভাসি ক্ষতিগ্রস্ত পানিবন্দি মানুষের মধ্যে চলছে শুধু হাহাকার। প্রতিদিন জোয়ারে পানি উঠে যাওয়ায় বানভাসিদের বেঁচে থাকাতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
 
শনিবার (২৯ মে) দুপুরে দশহালিয়া এলাকায় গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, ষাটের দশকের পর জোড়াতালি দিয়ে বাঁধটি মেরামত করা হলেও তা বেশিদিন টিকছে না। টেকসই নির্মাণ না করায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে কিছুটা ক্ষতি হলেও ইয়াসে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে যায় বেড়িবাঁধটি। দশহালিয়া বেঁড়িবাধ ভেঙে মহারাজপুরের সকল এলাকা প্লাবিতসহ পার্শ্ববর্তী বাগালী ইউনিয়নের বেশকিছু অংশ প্লাবিত হয়েছে। হাজার হাজার বিঘার মৎস্য ঘের, ফসলি জমি, দুই হাজার বসতঘর, মসজিদ-মাদরাসা, দোকানঘর ও একটি খেয়াঘাট হুমকির মুখে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। আশ্রায় কেন্দ্রেও আশ্রয় নিয়েছে ঘরহারা ও প্লাবিত মানুষ।
 
দিনমজুর আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গেল বছর আম্পানে ভাঙা বেড়িবাঁধ কোনো রকমে মেরামত করা হইছিল। এবার ইয়াসে পুরাই ভাইসা গেছে। এহন ছেলেপুলে, নাতি-নাতনি নিয়া খাইয়া না খাইয়া অতি দুশ্চিন্তায় আছি। একটু জোয়ার আইলেই সব পানিতে ডুইব্যা যায়। ঘরের মধ্যে পানি ঢুকতেছে, বাঁধ না হলি আমরা কনে থাকপো।’ টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি করেছেন তিনি।
 
পার্শ্ববর্তী আটরা গ্রামের তরুণ সমাজ সেবক আছাফুর রহমান বলেন, সেই ষাটের দশকে নির্মিত বাঁধটি যেমন দুর্বল হয়েছে তেমন নিচু। বাঁধটি ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসে বারবার ভাঙে, আবার সংস্কারও করা হয়। কিন্তু টেকসই বেড়িবাঁধ না দিলে কিভাবে টিকবে? একটু জোয়ারের পানি বাড়লেই বাঁধ ভাঙে। পানিবন্দি মানুষ খুব কষ্টে জীবন অতিবাহিত করছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ মো. আক্তারুজ্জামান বাবু ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রেখেছেন কিন্তু চাহিদার তুলনায় সীমিত। স্থানীয় সাংসদ জনগণের দুঃখ লাঘবে বাঁধের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শ করেছেন। আমাদের একটাই দাবি, আমরা টেকসই বেড়িবাঁধ চাই।
 
উত্তর বেদকাশি গাতির ঘেরী নদী তীরের বাসিন্দা আবদুর রব খোকন বলেন, ঝড়-বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলে আমরা খুবই আতঙ্কে থাকি। বিশেষ করে রাতে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বসে থাকতে হয়, কখন বাড়িঘর ভেঙে নদীতে চলে যায়। 
 
মহারাজপুর ইউনিয়নের মডবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধা জরিনা খাতুন অশ্রুভেজা চোখে বলেন, ‘এক জোয়ারেই পানি অনেক বাড়ছে। এহোন বেড়ি ভাইঙ্গা ওই পাশ দিয়্যা ছুইট্ট্যা গ্যাছে। এতে আমাগো ঘর-বাড়ির মেলা ক্ষতি হইছে। ঘেরের ও পুকুরের মাছ সব চইলা গেছে নদীর পানিতে, আমাগোর স্বপ্ন ভাইয়া গেছে। বারবার এমন ভাঙা আমাদের ভালো কোরি বাঁচতে দেয় না। সব শ্যাষ করে দেয়। আমাদের বেড়িবাঁধের ব্যবস্থা কইরা দেক, আমাগো স্বপ্ন যেন আর না ভেসে যায়।’
 
সাতক্ষরীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান বলেন, কয়রায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে পায় ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৫ কিলোমিটার। ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে বাঁধ মেরামতের জন্য জাইকা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কাজ শুরু করা হবে। বর্তমানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বাঁধ মেরামতের সরঞ্জামাদি বাঁশ, জিওব্যাগ, সিনথেটিক ব্যাগ, দড়ি, পেরেক দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে মেরামতকাজ অব্যাহত আছে। ২৮ মে ৫টি পয়েন্ট ভেঙে যাওয়া বেঁড়িবাধ মেরামত করা হয়েছে। 
 
উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস জানান, একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে খুলনার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীতীরের ১১৭ কিলোমিটারের মধ্যে ৫১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থান ক্ষতবিক্ষত হয়। মাঝেমধ্যে ও বিগত দিনগুলোতে সংস্কার হলেও বেশিরভাগই অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। গত ২৬ মে  অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের ৮টি পয়েন্ট ভেঙে যায় এবং জোয়ায়ের পানি অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার ৩০টি পয়েন্ট দিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বেঁড়িবাধ উপচে লোকালয় পানি প্রবেশ করে। ফলে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে বসতঘর, ফসলের ক্ষেত ও মাছের ঘের। দুর্ভোগে পড়া নদীতীরের বাসিন্দারা দুর্বিষহ রাত কাটাচ্ছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত আছে। এলাকাবাসীর দুঃখ লাঘবে দ্রুত উপকূলে টেকসই বেঁড়িবাধ দরকার।  
 
স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ মো. আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, আমি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জনগণ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় ভাঙা বেঁড়িবাধের কাজ অব্যাহত আছে। এলাকাবাসীর দুর্দশা লাঘবে ভেঙে যাওয়া স্থানগুলো মেরামতের জন্য জাইকা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড তাৎক্ষণিক টেন্ডার আহ্বান করেছে। ইনশা ‍আল্লাহ ২-৪ দিনের মধ্যে মেরামতকাজ শুরু হবে এবং তা দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হবে। বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

এমএসএম / জামান

ঈশ্বরদীতে ট্রেনে কেটে এক ব্যক্তির মর্মান্তিক মৃত্যু

মসজিদের খতিব–ইমাম–মুয়াজ্জিনদের সুরক্ষায় নীতিমালা চূড়ান্তঃ কুমিল্লায় ধর্ম উপদেষ্টা

মেহেরপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পুনঃবিবেচনার দাবিতে গণজমায়েত

চর ওয়াশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর করেন জাতীয় বীর আমান উল্লাহ আমান

গাজীপুরের রাজনীতিতে ঝড় তুললেন ইরাদ সিদ্দিকী

ধুনটে বালুবাহী দুই ট্রাকের চাপে অটোরিকশাচালক নিহত

পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের হীরক জয়ন্তী পালন

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিলমারী মডেল থানার এসআই আসাদুজ্জামানের আকস্মিক মৃত্যু

কোম্পানীগঞ্জে সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সম্মাননা ও সহায়তা প্রদান

দুমকিতে সশস্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

দুমকিতে গাভী লুটপাটের অভিযোগ 'মিথ্যা', দাবি করে সংবাদ সম্মেলন

ভূমিকম্পকে আল্লাহর সতর্কবার্তা হিসেবে দেখার আহ্বান – মাওলানা আব্দুল ওয়াহাব (বড় হুজুর, কাছাইট)

সিংগাইরে জমি নিয়ে বিরোধে বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা