ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

মুজিবনগর সরকারের প্রচেষ্টায় বঙ্গবন্ধু মুক্ত


আব্দুর রহিম photo আব্দুর রহিম
প্রকাশিত: ১৭-৪-২০২৩ দুপুর ৩:১১

প্রতিদিনই সূর্য উঠে; আবার অস্ত যায়। অর্থাৎ দিন হয়; রাত হয়। কিন্তু সব দিন এক নয়। ১৯৭১ সালের আজকের দিনটি (১৭ এপ্রিল) বাংলার ইতিহাসে অনন্য উচ্চতার দিন। এদিন শপথ নিয়েছিল বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাক হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চ লাইট শুরু করে। হাজার হাজার নিরস্ত্র বাঙালিকে হত্যা করে তারা। পরদিন অর্থাৎ ২৬ মার্চ রুখে দাঁড়ায় বাংলার দামাল ছেলেরা। স্বাধীনতা অর্জনের প্রবল আকাঙ্খা সেদিন থেকে আরও তীব্র হয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের শীর্ষ নেতারা বুঝতে পেরেছিলেন- শুধু মাঠে যুদ্ধ করলেই চলবে না। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সরকার গঠন করতে হবে। ১০ এপ্রিল অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়। এক পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিসভা আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। পরে এই বৈদ্যনাথতলাকেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়।
১০ এপ্রিল গঠিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। আর সৈয়দ নজরুল ইসলাম হন উপরাষ্ট্রপতি (তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন)। প্রধানমন্ত্রী হন তাজউদ্দিন আহমেদ। সীমান্তবর্তী গ্রাম বৈদ্যনাথতলায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আবদুল মান্নান এম.এন.এ এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী এম.এন.এ। নবগঠিত সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে এখানে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছিল মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠান। আর সেই অনুষ্ঠানে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেছিলেন ১৭ বছরের কিশোর মো. বাকের আলী। পরের দিন অর্থাৎ ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ দেশবাসীর উদ্দেশে বেতার ভাষণ দেন। তার এই ভাষণ আকাশবাণী থেকে একাধিকবার সম্প্রচার করা হয়। এ ভাষণে তিনি দেশব্যাপী পরিচালিত প্রতিরোধ যুদ্ধের অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন। ১৭ এপ্রিল মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের তারিখও নির্ধারিত হয়। তাজউদ্দিন আহমেদের ওই ভাষণের মধ্য দিয়েই দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারেন- বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনার লক্ষ্যে একটি আইনানুগ সরকার গঠিত হয়েছে। ১৭ এপ্রিল সকালে মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রবাসী সরকারের এক অধ্যাদেশে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রি-পরিষদ সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা হলেন- এম মনসুর আলী (অর্থ বাণিজ্য ও শিল্প) এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান (স্বরাষ্ট্র, সরবরাহ, ত্রাণ, পুনর্বাসন ও কৃষি)। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীসভার সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি খন্দকার মোশতাক আহমদও (পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ) মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী অস্থায়ী সরকারের মুক্তিবাহিনীর প্রধান কমান্ডার এবং মেজর জেনারেল আবদুর রব চীফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন। মুজিবনগর সরকারকে ১৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ভাগ করা হয়। এছাড়া কয়েকটি বিভাগ মন্ত্রিপরিষদের কর্তৃত্বাধীনে থাকে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যুদ্ধরত অঞ্চলকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে প্রতিটিতে একজন করে সেক্টর কমান্ডার নিয়োগ করা হয়। তবে ১০নং বা নৌ সেক্টরে কোন সেক্টর কমান্ডার ছিল না। কমান্ডোরা যখন যে এলাকায় অভিযান করতেন সে সেক্টরের কমান্ডারের অধীনে থাকত। ১৭ এপ্রিল মুজিব নগর সরকারের মন্ত্রীরা শপথ নিলেও ১৮ এপ্রিল মন্ত্রী পরিষদের প্রথম সভায় মন্ত্রীদের দপ্তর বন্টন করা হয়। মুজিব নগর সরকারের সফল নেতৃত্বে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা লাভ করে। শুধু তা-ই নয়, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের এই প্রথম সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে ভারত এবং ভুটান এই সরকারকে স্বীকৃতি দেয়।
বঙ্গবন্ধুর নামানুসারে বৈদ্যনাথতলার নতুন নামকরণ হয় মুজিবনগর এবং অস্থায়ী সরকার পরিচিত হয় মুজিবনগর সরকার নামে। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ পর্যন্ত মুজিবনগর ছিল বাংলাদেশের প্রথম সরকারের রাজধানী। দেশি-বিদেশি শতাধিক সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সংক্ষিপ্ত সময়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে। মঞ্চে থাকা চেয়ারগুলোর মধ্যে একটি খালি রাখা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য। সেখানে স্বাধীনতার মূল ঘোষণা আদেশ পাঠ করেন গণপরিষদের স্পিকার ইউসুফ আলী। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ‘... এবং যেহেতু সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি যে ম্যান্ডেট দিয়াছে সেই ম্যান্ডেট মোতাবেক আমরা নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আমাদের সমন্বয়ে গণপরিষদ গঠন করিয়া পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা আমাদের পবিত্র কর্তব্য মনে করি, সেহেতু আমরা বাংলাদেশকে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিতেছি এবং উহার দ্বারা পূর্বাহ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা অনুমোদন করিতেছি।’
কুরআন তিলাওয়াতের পর বাংলাদেশের মানচিত্রশোভিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। স্থানীয় চার তরুণ পরিবেশন করেন জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।’ মুজিবনগর সরকার ছিল জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত সরকার। মুক্তিযুদ্ধের ওপর এর প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। আম্রবাগান বাঙালির জীবনের দুটি ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হন। এর মধ্যদিয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। ২১৪ বছর পর অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আরেক আম্রকাননে বাংলার সেই অস্তমিত সূর্য আবারও উদিত হয়। লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক

এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া