মার্কিন হুংকারে আওয়ামী লীগ, বিএনপি-জাপা এক টেবিলে!

গণতন্ত্রের জন্য আওয়ামী লীগের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস স্বর্ণালক্ষরে লেখা আছে; চিরদিনই তা থাকবে। পাকিস্তান আমলে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে আত্মপ্রকাশের পর থেকেই দলটি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের পর সেই আন্দোলন শেষ হয়।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন; বাঙালির মুক্তির সনদ ১৯৬৬ সালের ৬ দফা এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল দলটির নেতৃত্বে। পরের বছর সাধারণ নির্বাচনে জয় লাভ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালী জাতি স্বাধীনতা লাভ করে এই দলটির নেতৃত্বে। ৬ দফা ও গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন। প্রাণও উৎসর্গ করেছিলেন কয়েকজন। এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং মানুষের ভাগ্য বদলের জন্য আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি অবদান কারো নেই। কিন্তু সেই দলটির বিরুদ্ধে গণতন্ত্র হরণের অভিযোগ করে আসছে ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো বন্দুকের নল ধরে ক্ষমতায় আসা এবং পরে গঠন করা দলটির নেতারা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘স্বৈরশাসক’ও বলছেন। তাদের সঙ্গে সুর মেলাচ্ছেন ক্ষমতার খুব কাছাকাছি থাকা এবং ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেওয়া আরেকটি দল ‘জাতীয় পার্টি’র (জাপা) কিছু নেতা। তারাও গণতন্ত্রের ছবক দিচ্ছেন। চোরের মায়ের বড় গলা আর কি!
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্যর হাতে নিহত হন। নানা নাটকীয় ঘটনার মধ্যদিয়ে ক্ষমতা দখল করে নেন মেজর জিয়াউর রহমান। তিনিও সেনা সদস্যদের হাতে প্রাণ হারান। ক্ষমতা দখল করে নেন আরেক সেনা কর্মকর্তা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এই এরশাদকে ক্ষমতা থেকে নামাতে সব দল আন্দোলন করে। সেখানে সবার আগে ছিল আওয়ামী লীগ। এই আন্দোলনেও দলটির অনেক নেতাকর্মী নিহত হন। আওয়ামী লীগের ইতিহাস আন্দোলনের ইতিহাস। আওয়ামী লীগের ইতিহাস দেশের মানুষের কল্যাণে রক্ত দেওয়ার ইতিহাস। আওয়ামী লীগের ইতিহাস প্রাণ উৎসর্গ করার ইতিহাস। কিন্তু বিএনপির ইতিহাস বরাবরই ষড়যন্ত্রের ইতিহাস। তারা এখনো থেমে নেই। রাজপথে আন্দোলন করে সরকার পতন ঘটাতে না পেরে তারা বিদেশি প্রভুদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে; তাতে এই দলটি এবং তাদের মিত্রদের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক ঘটনার বিশ্লেষকরা। মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পর বিএনপি বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিল। তাদের মুখে ছিল তৃপ্তির হাসি। এই সরকারের পতন হলো- এ রকম একটা ভাব ছিল তাদের কথা বার্তায়। তবে তাদের মধ্যে ভয়ও ছিল। কেননা, মার্কিন ভিসা নীতিতে স্পষ্ট বলা আছে; যারা নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করবে বা ব্যাঘাত ঘটাবে, তাদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচন বানচালের ইতিহাস তো বিএনপির-ই রয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছিল। নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না- এমন ঘোষণা এসেছিল দলটির শীর্ষ পর্যায় থেকে। সারা দেশে তারা অনেক ভোট কেন্দ্রে আগুন দিয়েছিল। সেই আগুনে পুড়ে বেশ কয়েকজন প্রাণ হারান। সুতরাং ভিসা নীতি তো প্রয়োগ হবে বিএনপির ওপর। এখানে তো আওয়ামী লীগের ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ যে কিছুটা ভড়কে গিয়েছিল, সেটা বলতে হবে। বিএনপির ভড়কে যাওয়া তো স্বাভাবিক। তারা তো আছে কেবল ভেটকি ধরে। আর জাতীয় পার্টির লাফালাফি তো ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো।
ভড়কে যাওয়ার কারণে ‘সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দেবে না’ এমন নীতি ঘোষণার পর গত ২৫ মে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারা। দুপুরে রাজধানীর গুলশানে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় দুই ঘণ্টা ধরে বৈঠকটি হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে ছিলেন দলের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ ও কেন্দ্রীয় নেতা মো. এ আরাফাত। বিএনপির পক্ষে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ। আর জাতীয় পার্টির পক্ষে ছিলেন মহাসচিব মুজিবুল হক (চুন্নু) ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল। বৈঠক শেষে বেরিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, তারই প্রতিফলন মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা (বস্তুত নতুন ভিসা নীতি)। বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে এটি একটা বড় পদক্ষেপ। এ পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাই।
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন ভিসা নীতির উদ্দেশ্য বোঝা গেছে, তারা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চায় এবং নির্বাচনটা যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়। এ ব্যাপারে আমাদের দলও একমত। বৈঠক শেষে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস তাদের ফেসবুক পেজে পিটার হাসের বার্তা প্রচার করে। সেখানে তিনি বলেন, আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থন করি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে এমন ব্যক্তিদের ভিসা সীমিত করার এই নতুন ভিসা নীতি সবার জন্য প্রযোজ্য। আসলে ভিসা নীতিতে কী বলা হয়েছে, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি কী বলছে? পিটার হাসও অবশ্য তাদের সঙ্গেই রয়েছেন। কেননা, ভিসা নীতিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলা হয়নি। আবারও বলছি- ইংরেজি সেনটেন্সটা পড়লেই পানির মতো ক্লিয়ার হবে বিষয়টি। সেখানে কেবল বলা হয়েছে, নির্বাচনে বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। ঘটনা যা-ই ঘটুক, মার্কিন হুংকারে যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি এক টেবিলে বসেছে; তা তো ঠিক। লেখক: সাংবাদিক
এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন
