রূপগঞ্জে ১০ গ্রামের মানুষের মূর্তিমান আতঙ্ক হানজালা বাহিনী
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ১০ গ্রামের মানুষের মূর্তিমান আতঙ্কের নাম হানজালা বাহিনী। বাড়ি নির্মাণ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জমিজমা বিক্রিসহ সব কাজে হানজালা বাহিনীকে চাঁদা দিতে হয়। না দিলেই গুম, খুন, হামলা-মামলার হুমকি দিয়ে থাকে এ বাহিনী। এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে বেড়ালেও রহস্যজনক কারণে হানজালাসহ তার হানজালা বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে পারছে না প্রশাসন। শুধু তাই নয়, গত বছরখানেক আগেও হানজালাসহ তার বাহিনীর সদস্যরা ভুলতা ফাঁড়ি পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুটে নেয়। ওই ঘটনায়ও পুলিশ বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করে হানজালাসহ তার বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায়ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে হানজালা পার পেয়ে যায়।
গতকাল শনিবার (২৯ মে) বিকেলে হকার উচ্ছেদ ইস্যু ও বিক্ষোভ মিছিলের কারণ জিজ্ঞাসা করায় পুলিশের ওপর হামলা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হানজালাসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। রোববার সকালে ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্র্শক (এসআই) মিন্টু বৈদা ২২ জনের নাম উল্লেখ এবং ১০০-১২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- ভুলতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হানজালা ওরফে হামজালা, ফাহিম, সফিউদ্দিন, সোহাগ, মেহেদী, নাসিম ওসমান, ফাহিম, নয়ন, দ্বীপ, বাসির, আমিনুল, নাহিদ, আল-আমিন, কবির, ওবায়দুর, আরিয়ান, ইমন, রবিউল, মফিজুল, ম্ইুরাব, মোশারফ, আল-আমিন, ইসমাইল, হাসান। এ ঘটনায় বাসির নামের এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত বাসির উপজেলার গুতিয়াবো এলাকার মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে।
মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে ভুলতা ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর নাজিম উদ্দিন জানান, গত এক সপ্তাহ আগে ভুলতা এলাকায় গাউছিয়া মার্কেটের সামনের ফুটপাত দখলমুক্ত কাঁ হয়। শনিবার (২৯ মে) বিকেলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হানজালা ওরফে হামজালা ও তার বাহিনীর সদস্যরা ভুলতা এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে আফজাল হোসেন নামে ব্যবসায়ী বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বিক্ষোভ মিছিলটি গোলাকান্দাইল গোলচত্বর এলাকা হয়ে ভুলতা ফাঁড়ির সামনে এসে পৌঁছালে ভুলতা তাদের বাহিনীর সদস্যদের কাছে বিক্ষোভ মিছিলের কারণ জিজ্ঞাসা কাঁ হয়। বিক্ষোভ মিছিলের কারণ জিজ্ঞাসা করায় হানজালা ও তার বাহিনীর সদস্যরা ভুলতা তাকে (ফাড়ির ইনচার্জ নাজিম উদ্দিন) হুমকি-ধমকি প্রদান করেন। এ সময় হানজালা ও তার সহযোগীরা তাকে গালিগালাজ করতে করতে হুমকি দিয়ে বলেন, আপনি ফুটপাতের দোকানপাট বন্ধ করে ভালো করেননি, আপনি ফুটপাতের দোকানপাট বন্ধ করতে পারবেন না। জোর করে হলেও ফুটপাত চলবে, আপনি পারলে ঠেকাবেন।
তিনি আরো জানান, এর আগে ব্যবসায়ী আফজাল হোসেনকে হুমকি-ধমকি প্রদান করেন। হানজালা ও তার বাহিনীর সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে ভুলতা ফাঁড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় হানজালা ও তার বাহিনীর সদস্যরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে রিপন ও কবির নামে দুই পুলিশ কনস্টেবল আহত করেন। তাদের স্থানীয় হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। হানজালার নামে রূপগঞ্জ থানায় চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে প্রায় হাফডজন মামলা রয়েছে। এর আগেও গত বছর হানজালার নামে পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে মামলা হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, গত বছর হানজালার নামে পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে মামলা হয়। এছাড়াও হানাজালার নামে একাধিক মামলা থাকার পরও প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় তাকে কেউ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তাকে গ্রেপ্তার করলেও প্রভাবশালী মহলের ফোনে ছেড়ে দিতে হয়। হানজালা ও তার বাহিনীর সদস্যরা এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক। ভুলতা ও বলায়খা এলাকার প্রায় ১০ গ্রামের মানুষ বাড়ি নির্মাণ করতে গেলে তাদের চাঁদা দিতে হয়। তাদের চাঁদা দেয়া ছাড়া কেউ এলাকায় বাড়িঘর নির্মাণ করতে পারে না। হানজালা তার বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে ভুলতা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মাদক বিক্রি করায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, অপরাধীরা যে দলেরই হউক না কেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। যে কোনো মূল্যে হানজালা ও তার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হবে।
এমএসএম / জামান