নির্বাহী প্রকৌশলী ঘুম
তলিয়ে গেল দোহাজারী পাওয়ার প্ল্যান্টের ফার্নেস অয়েল

চট্টগ্রামের দোহাজারীতে পাওয়ার প্ল্যান্টে ফার্নেস অয়েল সরবরাহের জন্য মাটির নিচ দিয়ে নেওয়া পাইপ লাইন ফেটে নষ্ট হয়েছে হাজার হাজার লিটার ফার্নেস অয়েল। দীর্ঘদিন ধরে ব্যাটারির এসিডযুক্ত পানি ফেলে পাইপ লাইনের বিরাট ক্ষতি করলেও ঘুমে ছিলেন নির্বাহী প্রকৌশলী। গত বুধবার এ ঘটনা ঘটে। তবে তিনি টের পান স্থানীয়দের কানাঘুষার খবরে। এরপরই শুরু হয় খোঁড়াখুঁড়ির পর্ব। বুধবার পেরিয় বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত চলে এ পর্ব। ততক্ষণে বিওসির মোড়ের পরিবেশ চলাচলের অবস্থা নাজুক। মান্ধাত্বা আমলের প্রযুক্তি ব্যবহার করে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে পাইপ লাইনের ক্ষত স্থান খুঁজে পেতে দেরি হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। প্রত্যক্ষদর্শী ও শ্রমিকদের বক্তব্য— ততক্ষণে হাজার হাজার লিটার তেল নষ্ট হয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৫/৬জনের শ্রমিকের একটি টিম ধীরগতিতে মান্ধান্তা আমলের যন্ত্রপাতি দিয়ে চালাচ্ছে পাইপলাইনের ড্রেনের মাটি খননের কাজ। পাশে পড়ে আছে ২০-২৫ ড্রাম ফার্নেস অয়েল, যেগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, বিকেল থেকে পাইপ লাইনের ফুটো খুঁজতে ও তেল সংগ্রহে কাজ করছেন তারা। প্রায় দেড় শতাধিক ড্রাম তেল উদ্ধার করতে পেরেছেন তারা। যেগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।
দোহাজারী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী যা বলছেন লোহার তৈরি পাইপলাইন ফেটে যাওয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের তদারকিতে অবহেলা নাকি অন্য কিছু সেই বিষয়ে 0000 জানতে চায় কালিয়াইশ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভাশিস চক্রবর্তীর কাছে। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক খুঁজাখুঁজির পরে ঘটনাস্থল কোথায় তা বের করতে পেরেছি। পাইপলাইন থেকে বাইরে পড়ে যাওয়া ফার্নেস অয়েল সবগুলিই ইতিমধ্যে ড্রামে করে কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। কোন তেল নষ্ট হয়নি বলে দাবি করেছেন তিনি।
কেন পাইপ লাইন ফেটে তেল বাহির হলো কর্তৃপক্ষ কি এটা নিয়মিত তদারকি করেনা এবং কি কারণে পাইপলাইন ফেটে বা ক্ষয়ে যেতে পারেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তেলবাহী লোহার পাইপলাইনের পাশে একটি গাড়ির ব্যাটারির দোকান আছে। ওই দোকানের ব্যাটারির এসিডযুক্ত পানি ফেলা হয়েছে পাইপের উপর। ওই পানির কারণেই পাইপ লাইন ফেটে গেছে। পাইপলাইন গলে গিয়ে ১০-১৫ হাজার লিটার তেল পড়ে গেছে, তবে আমাদের দ্রুত প্রচেষ্টায় আমরা তেল নষ্ট হয়নি, সবগুলো কেন্দ্রে আনা হয়েছে।
ফার্নেস অয়েল সরে গিয়ে নিকটস্থ শঙ্খ নদীতে গেল কিনা বা অন্যকোন উপায়ের সরকারি এই তেল খোয়া গেল কিনা এমন জবাবে তিনি বলেন, পাইপলাইনের ড্রেনটা ওপেন না ওটা ক্লোজ ড্রেন। তাই শঙ্খ নদীতে যাওয়ার প্রশ্নেও আসে।না যা বের হয়েছে তেল তা আমরা নিয়ে ফেলতে পেরেছি সেটাই শতভাগ সত্য।
অন্যদিকে তিনদিনে মাটি চুষে মোট কি পরিমাণ তেল খোয়া গেল এমন প্রশ্নের কোন জবাব দেননি তিনি। এছাড়া এসিডের পানির কারণে যদি পাইপ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে ওই দোকান কেন উচ্ছেদ করা হয়নি বা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে আমি চলাচলের সময় এই দোকানটার অবস্থান খেয়াল করিনি, স্থানীয়রাও আমাদের খবর দেয়নি। তেলের গন্ধের বিষয়টা আমরা নিজেরা নিজেরা পেয়ে মূলত ফাইন্ড আউট করছি।
যদি সমস্যাটা দ্রুত সমাধান না হত সাতকানিয়া লোহাগাড়া কি অন্ধকারে ডুবে যেত কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে শুভাশিস চক্রবর্তী বলেন, না আমাদের তেল মজুদ ছিল সাময়িক কোন অসুবিধার সম্ভাবনা ছিলনা। ব্যাটারির দোকানের কারণে জাতীয় পর্যায়ে এতবড় ক্ষতি হলো তবুও আপনি এখনো কোন ধরনের আইনি পদক্ষেপ নিলেননা কেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, পুলিশ প্রশাসনকে মৌখিকভাবে জানিয়েছে। তবে এখনো কোন ধরনের লিখিত অভিযোগ করিনি। দ্রুত সেটাও করবো।
ক্ষয়ে যাওয়া পাইপলাইনটা কি মেরামত নাকি নতুন সংযোজন করা হয়েছে তিনি বলেন-৩ফিটের মত নতুন পাইপ ফিটিং করেছি যেহেতু ঐটুকু পরিমাণ পাইপ একদম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অভিযুক্ত দোকানদার কি বলছেন, পাইপলাইন ফেটে যাওয়ার ঘটনায় দোষ চেপেছে স্থানীয় দোকানদার সাইফুল ইসলাম ও সাকিবুল ইসলামের উপর। গত ১ বছর ধরে তারা এ জায়গায় ব্যবসা করছেন। তারা বলছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেল পরিবহনের পাইপলাইন যাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ খবর তাদের কাছে ছিলনা। আশপাশেও কোন নির্দেশনা দেখা যায়নি। গত ১ বছর ধরে তারা ব্যবসা করছেন, যদি জানতেন কখনো সেখানে ব্যাটারির পানি ফেলতেন না।
সাইফুল ইসলাম ও সাকিবুল ইসলাম বলেন,মূলত আমরা ১ বছর ধরেই এখানে দোকানটা দিয়েছি, অনেক ধারদেনা ও লোন নিয়ে এটা আমরা দুই ভাইয়ে করেছি।আমরা ওটা ড্রেন ভেবেই পানিগুলি ফেলতাম দীর্ঘ ১বছর ধরে। আমরা শপথ করে বলতে পারব আমরা মোটেই ও জানতাম না যে এখানে একটা লোহার তেলবাহী পাইপলাইন আছে আর না হলে কি এসিডের পানি এখানে ফেলতাম? বিদ্যুৎ বিভাগকেও এই লাইনের আশপাশে দেখেননি বলছেন তারা। আজকে এতোবড়ো দুর্ঘটনার পর এই স্থানে সবাইকে দেখছি।
অন্যান্য দোকানদাররা বলছেন, মূলত শুভাশিস চক্রবর্তী পদে আসীন হওয়ার পর থেকেই পাইপলাইন একবারও তদারকি করা হয়নি। এদিকে ব্যাটারীর দোকানদার সাকিবকে বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের দিদার নামে এক শ্রমিক মারধর করেন। অন্য দোকানদাররা প্রতিবেদককে বলেন, নির্বাহি প্রকৌশলীর নির্দেশে দিদার নামে এক শ্রমিক ব্যাটারীর দোকানদারকে মারধর করা করেছে, সেটা উচিত হয়নি। মারধর করার বিষয়টি অভিযুক্ত শ্রমিক নিজেই স্বীকার করেছে প্রতিবেদকের কাছে। তবে নির্বাহী প্রকৌশলী বিষয়টি জানেনা বলে জানিয়েছেন।
সরেজমিনে ফার্নেস অয়েল সংগ্রহের সময় কোন ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা প্রতিবেদকের চোখে ধরা পড়েনি এবং এই নিরাপত্তার ব্যবস্থা মোটেও ছিলনা বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান ড্রেনে কেউ শত্রুতার বশবর্তী হয়ে কিংবা কোন পথচারী সিগারেট খেয়ে সিগারেটের মাথা ফেললেও পুরো এলাকাজুড়ে আগুনের লেলিহান ছড়িয়ে পড়তো বলেও আশংকা প্রকাশ করেন তারা।
তারা আরও বলেন, পুরো এলাকাজুড়ে নিরাপত্তাবলয়ের পাশাপাশি পাইপলাইনের স্থানটা বিশেষ ভাবে ঘিরে ফেলা উচিত ছিল। কিন্তু শুভাশিস চক্রবর্তী নিরাপত্তার বদলে প্রতিষ্ঠানের ক্রাইসিস মুহূর্তে তার চট্টগ্রাম শহরের বাসায় চলে যেতে গেছেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি শুরু থেকেই শিফটিং করে দিনরাত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি আপনি চাইলে সিকিউরিটি সুপারভাইজারের সাথে কথা বলতে পারেন।
অন্যদিকে সিকিউরিটি সুপার ভাইজার বোয়ালখালী উপজেলার বাসিন্দা তৌহিদ বলেন, আমরা স্যারের নির্দেশে শুধু রাত ১০টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ডিউটি করেছি পাইপলাইনে।
অথচ!প্রকৌশলী নিজেই বলেছেন রাতদিন তিনি ডিউটি করিয়েছেন, অর্থাৎ পাইপলাইনের তেল বাইরে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তিনি প্রতিটা মুহূর্তে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছেন সাংবাদিকদের। অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে নির্বাহী প্রকৌশলী শুভাশিষ চক্রবর্তী থাকার কোয়ার্টার থাকলেও তিনি নিয়মিত শহরের বাসায় চলে যাওয়ার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের জরুরি কোন মুহূর্তে তাকে পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ করেছে একাধিক কর্মচারী।
শুধু তাই নয়ম প্রকৌশলী শুভাশিস চক্রবর্তী নিয়মিত অফিস করেননা বলেও জানান কয়েক কর্মকর্তা ও কর্মচারী।তারা প্রতিবেদককে বলেন, স্যার যখনি আসে তখনি দুপুর ১টা ২টা বেজে যায় তখন তিনি অফিসে আসেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মচারীরা বলেন, স্থানীয় এক প্রভাবশালী কর্মচারীর শেল্টারে মূলত এই প্রকৌশলী নিজের মত করেই অফিস কার্যক্রম চালান এবং স্থানীয় ওই কর্মচারীও তার মত করে অফিসে এসে হাজিরা দেন। নির্বাহী প্রকৌশলীর রুমে শুয়ে বসে দিন কাটিয়ে বেতন তুলেন তিনি।
এমএসএম / এমএসএম

ঠাকুরগাঁওয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রামদাড়া সেতুতে জীবন বিপন্নের আশংকা

জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষায় কাজ করবে সিএসও

ঝিনাইদহে ভাঙা রাস্তা মেরামতে বিএনপি নেতা আব্দুল মজিদ বিশ্বাসের বিশেষ উদ্যোগ

যশোর-খুলনা মহাসড়কে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ, চিকিৎসক সহ নিহত-২

চাঁদপুরে যান চলাচলের নিয়ম না মেনে চালকদের বিক্ষোভ, যাত্রীদের ভোগান্তি

রৌমারীতে বিনামূল্যে ধান কাটার রিপার মেশিন বিতরণ

বড়লেখার শৌখিন ফলচাষী রেজাউলের বাগানে ঝুলছে দেশি-বিদেশি নানা জাতের ফল

বাঘায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সংঘর্ষ থানায় অভিযোগ

উল্লাপাড়া উপজেলা প্রসাশকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

রায়গঞ্জে রাইস মিল ও পুকুর খনন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

বাংলাদেশ সাংবাদিক ক্লাবের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি অসিত গাইনকে সংবর্ধনা প্রদান

শ্রীমঙ্গলে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা
