ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

প্রেম এক অনবদ্য কবিতা


অধ্যাপক ফেরদৌসী পারভিন photo অধ্যাপক ফেরদৌসী পারভিন
প্রকাশিত: ২৩-৭-২০২৩ বিকাল ৫:২৩

যে শিরোনামে লিখতে বসেছি আজ, আমি ব্যক্তি মানুষ তা বিশ্বাস করি। কিন্তু সমস্যা হলো সেই কবিতা আজকাল এমনভাবে প্রতারিত হচ্ছে যে ভয় হয়, না জানি নারী-পুরুষের জীবন থেকে ‘প্রেম’ নামক শব্দটি বিদায় নেয়। সেখানে অবিশ্বাস, প্রতারণার আঘাতে শঙ্খচিলের ডানা থেকে খসে পড়ে এক মুঠো রোদ্দুর। যা সে বয়ে নিয়ে এসেছিল দিগন্তের নীল থেকে। কেন সেই ভয়?  সেটাই বলতে চাইছি। কেস স্টাডি হিসেবে লিখতে গেলে শেষ করা যাবে না। তাই সেদিকে না যেয়ে সহজভাবে বলতে চাইছি অনবদ্য কবিতার কষ্টের কথা। তাহলে বলি। 

সমাজে ‘নারী লোভী’ পুরুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই ধরনের পুরুষের মধ্যে এক অদ্ভুত ধরনের মায়া থাকে যা দেখে নারী শুধু নয়, অনেক সময় পুরুষ মানুষও আকৃষ্ট  হয়। এই ধরনের পুরুষ খুব ভালোভাবেই বোঝে তাদের শানিত অস্ত্র কোনটি; যা দিয়ে অন্যকে ঘায়েল করা যায়। আর এই সুযোগটাই তারা গ্রহণ করে অবলীলায়। সেখানে শিক্ষা, বিবেক, মানবিকতা, নৈতিকতা কোনোটাই কাজ করে না তাকে অন্যায় করা থেকে বিরত রাখতে। তার মনোজগতে নারীর প্রতি কামনার দৃষ্টি কাজ করে সচেতন ও অবচেতনভাবে। ফলে পুরুষ কৌশলের আশ্রয় নেয়। আর সেই কৌশলের কাছে নারী বিভ্রান্ত হয় বা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
তারা মায়ায় ফেলে নারীকে ধোঁকা দেয়! এরা ভান করে এদের পার্সোনালিটির  অভাব পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু এদের ইগো অনেক, এরা জীবনের না পাওয়ায় বিরক্ত। এরা নিজের না পাওয়াকে  নিজের বঞ্চনা হিসেবে ভাবে। ফলে অন্যকে খুব সহজেই বঞ্চিত করে  এবং তা নিয়ে তাদের অনুতপ্ত হতে দেখা যায় না। প্রেমের  নামে অন্যের ইমোশনকে  কাজে লাগিয়ে  তারা  প্রেমের সংখ্যা বাড়ায়। তারা জানে কোন দেবতা কোন ফুলে তুষ্ট। সেই ভাবেই তারা সর্ম্পকে এগোয়। এগুলো কমন সাইন এদের। মেয়ে পটানোর জন্য।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো প্রকৃতি নারীকে ‘ইমোশনের ডিব্বা’ করে তৈরি করেছে। অধিকাংশ নারী পুরুষের মন ভুলানো কথায় বেশি আকৃষ্ট হয়। সত্য মিথ্যা যাচাই করার  প্রয়োজন মনে করে না। দুষ্ট লোকের মিষ্টি কথায় ভুলে যায়। মেয়েরা এই ধরনের পুরুষের প্রেমে বেশি পড়ে! কারণ নারী ভুল মানুষকে ভালোবেসে কষ্ট পেতে পছন্দ করে। এটাও বোধহয় নারীর নিয়তি। নারীর মধ্যে পুরুষকে ভালো করার এক মহান চিন্তা কাজ করে। আর সেকারণেই দেখা যায় সমাজের নেশাগ্রস্ত, বখে যাওয়া পুরুষটিকে ভালোবাসে সবচেয়ে সুন্দর ও সৎ নারীটি। সে মনে মনে পুরুষটিকে সঠিকপথে ফিরিয়ে আনার মহান ভাবনা থেকে এই কাজটি করে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয় এবং নিজের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। তবে মুদ্রার উল্টোপিঠও আছে। পুরুষও প্রতারিত হচ্ছে এবং যা দিন দিন বাড়ছে। এ বিষয় নিয়ে অন্য  কোনো লেখায় তুলে ধরার ইচ্ছে রইলো। পুরুষ পাঠকের বিরক্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

আজ যে বিষয় নিয়ে লিখছি সেখানেই থাকি বরং। অবশ্য এত অল্প পরিসরে সবটুকু তুলে ধরে বিশ্লেষণ করা আমার মত সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। শুধুমাত্র আমার চারপাশে যা দেখি, পত্রিকার পাতায় যা ছাপা হয় এবং ভুক্তভোগীদের যে যাতনা লক্ষ্য করেছি তা থেকেই বলার চেষ্টা করছি।

এইসব পুরুষের দ্বারা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অল্পবয়সী মেয়েরা। যারা সদ্য নারী হয়ে উঠছে। পৃথিবীর সমস্ত কিছুই তারা রঙিন দেখে। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না ততক্ষণ পর্যন্ত প্রেমের ভুবন নানা রঙের প্রলোভন পাঠায় তাদের কাছে। অগ্রপশ্চাৎ চিন্তা না করেই দু’হাতে তুলে নেয়। একটা সময় এসে দেখে যে, সে সব হারিয়েছে। সদ্য নারী হতে থাকা মেয়েটি তার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ সম্ভ্রম এবং বিশ্বাস হারিয়েছে। পরবর্তীকালে যা তার জীবনে মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করে। আমাদের সমাজে এখনো বিয়ের আগে ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে শারীরিক সর্ম্পক মেনে নেয় না। কিন্তু দুর্বল মুহূর্তে এবং ভালোবাসা ও বিশ্বাসের কারণে যখন সেই ঘটনাটি ঘটে যায় তখন মেয়েটি আরো বেশি করে ভালোবাসার মানুষটিকে আঁকড়ে ধরতে চায়। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো লোভী, প্রতারক পুরুষটি ছলে বলে কৌশলে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েটি আত্মহননে মুক্তি খোঁজে। সামাজিকভাবে সেই পরিবারটি নানান গঞ্জনার শিকার হয়। আর যদি কোনো শক্ত মনের মেয়ে সেই সংকট থেক বের হয়ে আসতে পারে তাহলেও দেখা যায় পরবর্তীতে আর কোনো পুরুষকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ফলে সমাজে এটার বিরুপ প্রতিক্রিয়া পড়ে।

সমাজ নারী এবং পুরুষ নিয়েই। কেউ কারো প্রতিপক্ষ নয় বরং পরিপূরক। প্রকৃতি নিজের  প্রয়োজনেই নারী ও পুরুষের মাঝে আকর্ষণ দিয়েছে যেন সমস্ত জীবজগত বিলুপ্ত হয়ে না যায়। সেই প্রকৃতিকে অস্বীকার করার উপায় নারী কিংবা পুরুষ কারোর নাই। যেহেতু নাই সেহেতু পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, মায়া-মমতা, সম্মানের সর্ম্পক থাকা দরকার। 

কিন্তু নারীলোভী এই পুরুষরা প্রকৃতির এই সুন্দর উদ্দেশ্যকে নানাভাবে কলুষিত করে চলেছে অপ্রতিরোধ্যভাবে। বাধা পেলেই  নারী বা মেয়েটির নামে বিভিন্নভাবে বদনাম ছড়ায়, খারাপ মেয়ে বলে অভিহিত করে। এমনকি খুব সহজেই ‘প্রস্টিটিউট’ ট্যাগ  লাগিয়ে দেয়। মেয়েটির বা নারীটির জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। ফলে অনেক মেয়ে বা নারী  চুপ করে যেতে  বাধ্য হয়। ফলে এই ধরনের পুরুষেরা আরো সুযোগ পায় এবং নতুন নতুন নারীর সাথে নিজের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য কথিত ভালোবাসার সর্ম্পক গড়ে তোলে  সময় নষ্ট না করেই। কারণ সে বুঝে যায় তাকে শাস্তি দেয়ার কেউ নেই। সে পুরুষ। সব দোষ ওই নারীর।

এইসব লোভী পুরুষ অনেকের প্রেমে অনেকভাবে পতিত হয়। এরা একই ভাবে সকলের প্রেমে পড়ে না। একটা সর্ম্পকে খুব বেশিদিন থাকে না। এরা যখন যে উদ্দেশ্যে প্রেমের জাল ফেলে সেই উদ্দেশ্য সফল হয়ে গেলে এরা চলে যায় এবং যাওয়ার আগে এমন ভাব করবে যেনো মেয়েটা তাকে ভালোবেসে, প্রেমে পড়ে ভুল করেছে!  সেখানে তার কোন দোষ ছিল না। মেয়েটি বা নারীটির কারণে সে সর্ম্পকে জড়িয়েছে। এরা  সবচেয়ে খারাপ আচরণ করতেও  পিছপা হয় না। দুর্বল জায়গায় চরমতম আঘাত করে। এটি শুধু অল্পবয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রেই করে না। যেকোনো বয়সের নারীর সাথেও একই আচরণ করে। এরা অদ্ভুতরকম চালাক মানুষ। মুখ ঢেকে রাখে মিথ্যে ভালোবাসার মুখোশে। 

এই ধরনের পুরুষ ভালোবাসা বা প্রেম যাই বলি না কেন  কোনো কিছুতেই  বিশ্বাসী নয় শুধু নিজের স্বার্থ ছাড়া। একই জায়গার মায়া, ভালোবাসা এদের সহ্য হয় না। এরা মায়ায় ফেলবে কিন্ত  এদের শরীরে কোনো মায়া থাকে না। ভালোবাসার ভান করে সবটুকু নিয়ে এমন ভাব ধরবে যে সে কিছুই করে নাই। যদি  কোনো পুরুষের পৌরুষ থাকে  তাহলে সে একইসাথে অনেক সর্ম্পকে জড়াতে পারে না। মানুষ তো মানুষ; পশুরাও একসাথে দুজন  সঙ্গী  রাখে না। প্রজনন মৌসুমে যাকে সে সঙ্গীনি নেয় সেই তার সাথে থাকে সারাজীবন। অধিকাংশ পশুর ক্ষেত্রেই তাই। কুকুর, বিড়াল ছাড়া। মানুষ সেখানে কি করে ভালোবাসার নামে প্রতারণা করে?

 কি করে বুঝবেন পুরুষটি ঠিক কথা বলছে। বোঝা সত্যিই কঠিন। তবে পৃথিবীর সব পুরুষকে লোভী প্রতারক বলার সুযোগ নেই। কম হলেও পৌরষদীপ্ত পুরুষ নিশ্চয়ই আছে। তারা ভালোবাসার নারীটির ছোট বড় যেকোনো বিষয়ের গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। ভালোবাসার মানুষের যে কোনো সমস্যায় পাশে থাকার চেষ্টা করবেন। নারীটিকে সম্মান করবেন। ভুল হলে দোষ স্বীকার করবেন। ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের অংশ হিসেবে ভাববেন। দায়িত্বশীলতা, অনুভূতি, নির্ভরতা, বিশ্বাস, সর্ম্পককে জড়িয়ে রাখবে। ঝগড়াঝাটি, মান অভিমান থাকবেই। কিন্তু মিথ্যা, অবিশ্বাস এবং প্রতারণা যেন সর্ম্পকে না থাকে। 

পরিবার থেকেই শিক্ষা দিতে হবে। নারীর সাথে তার ব্যবহার কেমন হবে। মাঝে মাঝে এইসব লোভী চরিত্রহীন পুরুষ দেখলে মনে হয় তাদের পরিবার কিছু শেখাইনি। বরং শিখিয়েছে নারী একটি খেলনার সামগ্রী। এমন মজার খেলনা আর কোথাও পাওয়া যায় না। তাই লোভী পুরুষটি নতুন নতুন খেলনা নিয়ে খেলে। ছলে বলে কৌশলে নারী নামক খেলনা হস্তগত করে। খেলা শেষে নানান বদনাম দিয়ে নিজেকে পুতঃপবিত্র ভাবে।

দিনশেষে, জায়গা বদলে এরা কমফোর্ট জোনে থাকে। জীবনকে উপভোগ করে নানাভাবে। কোনো অপরাধ বোধ তাদের স্পর্শ করে না। বরং বহুগামী পুরুষ নিজেকে খুব যোগ্যভাবে। গর্বের সাথে বলে নারীরা সহজে পটে যায়। কিন্তু বলে না যে শত মিথ্যে কথার ফানুসে ফাঁসিয়েছে। কারণ এমন পুরুষের মানসিকতার কথা জানলে কোনো নারীই তার প্রেমে পড়বে না এটা হলফ করে বলা যায়।

আমাদের প্রত্যেকের ঘরে বাইরে ছেলে শিশু আছে। আমাদের দায়িত্ব তাকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা, অবয়বে নয়। পরিবার, প্রতিষ্ঠান, সমাজ সবাই নারীর প্রতি সম্মানজনক আচরণ করবে এবং অন্যকে করতে শেখাবে। পুরুষ, নারী দুজনেই ভালোবাসার এক অনবদ্য কবিতা। লোভ এবং প্রতারণা যেন সেখানে অবিশ্বাসের আগাছা জন্মাতে না দেয়। নারী, পুরুষ প্রবল ভালোবাসায়, বিশ্বাসে প্রকৃতিকে মধুময় করে তুলবে সেই আকাঙ্খা অনাদিকালের। 

লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ
গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজ

এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া