ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌর সদরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বোয়ালমারী জর্জ একাডেমি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল আজিজকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। গত ৩০ আগস্ট বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির এক সভায় তাকে সাময়িক বরখাস্তের এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে বিদ্যালয় সভাপতির এক চিঠির সূত্রে জানাগেছে। সভাপতি মোঃ কামরুল হাসান সাক্ষরিত বরখাস্তাদেশের ঐ চিঠিতে প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে দুইটি কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব না দেয়া,অর্থ আত্মসাৎ,নারী কেলেংকারী,ক্ষমতার অপব্যবহার,স্বেচ্ছাচারীতা,অসদাচরণ,বিদ্যালয় প্রশাসন,শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও শিক্ষার মান নষ্ট করা সহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। একই সঙ্গে কেন তাকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করা হবে না সে মর্মে চিঠি ইস্যুর সাত কার্য দিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে। ম্যানেজিং কমিটির ঐ সভায় বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ সিরাজুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এদিকে জর্জ একাডেমীর প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজকে বরখাস্তের ঘটনায় তীব্র বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সহ উপজেলার গোটা শিক্ষাঙ্গনে। তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনেও। সর্বত্র বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। মঙ্গলবার বরখাস্তাদেশের চিঠি হাতে পাওয়ার পর সন্ধ্যায় তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন ডেকে বরখাস্তাদেশ প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ। বিদ্যালয়ের নিজ কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন,আমি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির নোংরা রাজনীতির শিকার। আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও মন গড়া। ম্যানেজিং কমিটির দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে আপষ না করায় তিনি তাদের রোষানলে পড়েছেন। আব্দুল আজিজ বলেন,স্কুলের সিসি ক্যামেরা,এসি ক্রয় ও সম্ভাব্য দুটি নিয়োগ নিয়ে ব্যাপক বাণিজ্য করার চেষ্টা করছে ম্যানেজিং কমিটি। এতে সায় না দেওয়ায় আমাকে সরিয়ে পথ পরিষ্কার করছেন তারা। ইতিপূর্বে আমাকে কারণ দর্শানোর কোন নোটিশ দেওয়া হয়নি। অথচ তারা নোটিশ দিয়েছে বলে মিথ্যাচার করছেন। সর্বশেষ বরখাস্তের যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে সেটি ইস্যু করা হয় ৩০ আগস্ট আর আমি হাতে পেয়েছি ৫ সেপ্টেম্বর। চিঠি ইস্যুর সাত কার্য দিবসের মধ্যে জবাব চাওয়া হলেও চিঠি প্রাপ্তির আগেই সে সময় সীমা শেষ হয়েগেছে। আমার স্কুলে কোন মিটিং হয়নি। গোপনে বাইরে বসে মিটিং করে আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এটা অন্যায় ও অমানবিক। সকল ন্যায়-নীতি,শৃঙ্খলার পরিপন্থী। বরখাস্তের ঘটনায় আইনের আশ্রয় নেবেন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন আব্দুল আজিজ। এ ব্যাপারে স্কুলের সহকারী শিক্ষক মোঃ আনিসুজ্জামান বলেন,আজিজ স্যার কোন অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িত নন। বরং তিনি সব অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন। তিনি সৎ ও মেধাবী একজন শিক্ষক। তিনি ম্যানেজিং কমিটির অপরাজনীতি ও ষড়যন্ত্রের শিকার। এর আগে কমিটির অধিকাংশ সদস্য সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়েছিলেন। তারাই আবার এখন সভাপতির পক্ষ দিয়ে আজিজ স্যারকে বরখাস্ত করছেন। এই হঠকারী সিদ্ধান্ত বিদ্যালয়টির জন্য কোন সুফল বয়ে আনবে না। বরং চরম ক্ষতিকর হবে। মুন্নি রহমান নামে একজন অভিভাবক বলেন,আজিজ স্যার সৎ ও বিচক্ষণ একজন প্রধান শিক্ষক। তিনি ম্যানেজিং কমিটির নোংরা রাজনীতির শিকার। কোন অসৎ উদ্দেশ্যে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি এর প্রতিবাদ জানাই। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য বিদ্যালয়ের সভাপতি কামরুল হাসানের মুঠো ফোনে কল দেয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া জায়। ম্যানেজিং কমিটির অন্যতম সদস্য মোঃ ফিরোজ আহমেদ প্রধান শিক্ষককে বরখাস্তের চিঠি ইস্যুর সত্যতা স্বীকার করে বলেন,আব্দুল আজিজকে বরখাস্তের কারণ ও তথ্য- উপাত্ত আমাদের হাতে রয়েছে। তিনি তার নিজের ইচ্ছামত বিদ্যালয় পরিচালনা করতে চান। ম্যানেজিং কমিটির দিক-নির্দেশনা ও পরামর্শের তোয়াক্কা করেন না। দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে আয়-ব্যয়ের হিসাব দেন না। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আব্দুল আজিজকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হয়েছে ম্যানেজিং কমিটি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ইস্রাফিল মোল্যা বলেন,আব্দুল আজিজ শিক্ষক মহলে একজন সৎ,আদর্শবান ভদ্রলোক হিসাবে পরিচিত।বেআইনী ও অবৈধ ভাবে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ম্যানেজিং কমিটির যে কোনো সভা নিয়মানুযায়ী বিদ্যালয়ের সভাকক্ষে হবার কথা থাকলেও জর্জ একাডেমি স্কুলের পরিচালনা পরিষদ স্কুলের বাইরে রাতের আধারে মিটিং করে প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত করেছে। আমরা এ সিদ্ধান্ত মানিনা। অচিরেই এ বিষয়ে আমরা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবো। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন,বরখাস্তাদেশের একটি কপি আমি হাতে পেয়েছি। সেটি উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠিয়েও দিয়েছি। তারা যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটিই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।