গ্রামগঞ্জে আবারও বেড়ে যাচ্ছে বাল্যবিবাহ

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও আশাতীত হ্রাস করা সম্ভব হচ্ছে না। ২০১৫-২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রশাসন ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সংস্থার কঠোর উদ্যোগে বিগত কয়েক বছর শিথিল ছিল বাল্যবিয়ে। বাল্যবিবাহমুক্ত রাষ্ট্র গড়তে বেসরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা ও সামাজিক সংগঠন জনসাধারণ বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে সম্পৃক্ত করে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে দেশের মানুষের মাঝে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে অনেকটা সচেতনতা গড়ে উঠেছিল। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাকে বাল্যবিবাহ মুক্ত হলেও মফস্বলে আবারও এর মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে করোনা মহামারীর পর থেকে আবারও দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এই ব্যাধি। প্রত্যন্ত অঞ্চল গ্রাম-গঞ্জে প্রাথমিক থেকে শুরু করে নিম্ন মাধ্যমিক পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই এ তালিকায় বেশি। নানা অযুহাত দেখিয়ে মেয়ে কিশোরী হতে না হতেই বাবা-মা ছেলে দেখা শুরু করেন। তাদের ধারণা মেয়েদের বয়স বেড়ে গেলে বিবাহের উপযুক্ত পাত্র পাওয়া নাকি দুষ্কর। নানা কুসংস্কার আর বিভ্রান্তিকর পথ থেকে গ্রামের মানুষগুলো আজও অগ্রসর হতে পারেনি। তবে এর সাথে সায় দিয়ে যাচ্ছেন- সদ্য নিয়োজিত কিছু ডিফেন্সের সরকারি চাকুরিজীবি। যারা নিজের বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজেন স্বল্পবয়সী কিশোরী। বিশেষ করে ৭ম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণীর কিশোরীদের এ তালিতায় বেশি দেখা যাচ্ছে। এর সাথে গোপনে অধিক হারে যৌতুকও নেওয়া হচ্ছে। যা এখন সমাজের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গ্রামের সমাজপতিরা অনেক সময় এসব বিয়ের খবর জেনেও তাঁরা চুপচাপ থাকেন। কখনো কখনো বাল্যবিয়ে সম্পর্কে সমাজের সচেতন মানুষ জানার পর প্রতিবাদ করলে মেয়ের পরিবার থেকে বলা হয়, স্কুলে বা বাড়িতে বখাটে যুবকরা মেয়েদের বিরক্ত করে। যন্ত্রণায় অতিষ্ট হয়ে মেয়েকে দ্রুত পাত্রস্থ করতে হচ্ছে। কোনো কোনো পরিবার থেকে বলা হয়, গরিবের সংসারে মেয়েরা অনেকটা বোঝা। তাই ভালো বা পয়সাওয়ালা অথবা প্রবাসী পাত্র পেয়ে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। ১১-১৫ বছর বয়সী মেয়েদের অর্থের লোভে বয়স্ক পাত্রদের কাছেও বাবা মা তুলে দিচ্ছেন। আবার সরকারি চাকুরিজীবি ছেলের প্রস্তাবের লোভ সামলাতে না পেরে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে হলেও মেয়ের সুুখের জন্য বাল্যবিয়ে দিতে রাজি হচ্ছেন অভিভাবকরা। যেখানে নাবালিকা মেয়ের সম্মতিও নেওয়া হচ্ছে না। প্রশাসন ও থানা পুলিশদের আড়ালেই বহু বাল্যবিয়ে এখনো চলমান।
ইউনাইটেড নেশনস পলুলেশন ফান্ড (ইউএনএফপিএ) 'এইট বিলিয়ন লাইভস, ইনফিনিট পসিবিলিটিজ' শিরোনামে বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২৩ রিপোর্টে দেখা গেছে, বাল্যবিবাহতে এখনও দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। এখানে ১৮ বছর বয়সের আগেই ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। বাল্যবিবাহ বাড়ার ফলে অল্প বয়সে গর্ভধারণের ঝুঁকি বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রতি হাজারে ৭৪টি শিশুর জন্ম দিচ্ছেন ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মায়েরা। বাল্যবিবাহের সার্বিক প্রভাব পড়ে মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যে। বাল্যবিবাহের কারণে মা ও নবজাতক মৃত্যুঝুঁকিও বাড়ছে। উচ্চ শিক্ষা অর্জন করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিয়ের পর আর স্কুলে যাওয়া হচ্ছে না। ইদানিং অল্প বয়সে বিবাহবন্ধনে জড়ানোর ফলে খুব বেশি ডিভোর্সের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। যে বয়সে পড়াশুনা করার সময়, সেই বয়সে মাথায় চেপে দিচ্ছে ভারী সংসার। এর চাপ সহ্য করতে না পেরে অকালে আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছে অনেক কিশোরী। এতে করে সমাজ ও দেশের অভাবনীয় ক্ষতি হচ্ছে। তাই বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক ব্যাধি।
সমাজ থেকে এই ব্যাধি দূর করা না হলে হুমকির মুখে পড়বে সমাজ-দেশ। তাই প্রয়োজন প্রশাসন, থানা ও জনপ্রতিনিধিদের জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে জনসচেতনতার পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক বিভিন্ন সেমিনার, পথনাটক ও বাল্যবিবাহের কুফল তুলে ধরা জরুরী। অন্যথায়, সমাজ ও জাতির জন্য এটি অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে।
এমএসএম / এমএসএম

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া

মানবিক সংকটের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব

বিশ্ব পানিতে ডুবা প্রতিরোধ দিবস ২০২৫ : গল্পের মাধ্যমে গড়ে উঠুক সচেতনতার বাঁধ

রাজনীতি আজ নিলামের হাট: কুষ্টিয়া-৪ এ হাইব্রিড দাপটের নির্মম প্রতিচ্ছবি

জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবার ভোট দিবে প্রবাসীরা, আনন্দে ভাসছে পরবাসে বাঙালীরা

বিশ্ববাণিজ্যে অস্থিরতা ও বাংলাদেশে তার প্রভাব

বাংলাদেশে ওয়াশিং প্ল্যান্টের বর্জ্য দ্বারা মিঠাপানির দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে

বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ

দলীয় পরিচয়ে পদোন্নতি ও বদলি: দুর্নীতির ভয়াল থাবায় বাংলাদেশ

ব্যবসায়ীদের জন্য ওয়ান-স্টপ সমাধান: FBCCI-এর বিদ্যমান সেবার উৎকর্ষ সাধন

বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিসরকে একীভূত করা: অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার জন্য বিসিক কেন অপরিহার্য
