ঢাকা রবিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৫

বিজয়ের উল্লাসে মেতেছিলেন শেখ রাসেল


জি.বি.এম রুবেল আহম্মেদ, মাদারগঞ্জ photo জি.বি.এম রুবেল আহম্মেদ, মাদারগঞ্জ
প্রকাশিত: ৫-১২-২০২৩ দুপুর ১:৫০

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হওয়ার পর সাত বছরের ছোট্ট ছেলে শেখ রাসেলের চোখেমুখেও ছিল বিজয়ের অফুরন্ত উল্লাস। তিনি ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ঘরে কনিষ্ঠ শিশু সন্তান হিসেবে জন্ম নেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রিয় লেখক খ্যাতিমান দার্শনিক ও নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিত্ব বার্ট্রান্ড রাসেলের নামানুসারে কনিষ্ঠ সন্তানের নাম রাখেন 'রাসেল'। এই নামকরণে মা বেগম ফজিলাতুন নেছাও এই নামে সন্তুষ্ট হোন। জন্মের পর বুঝদার হয়ে উঠার ঠিক মুহূর্তেই তাঁর বাবাকে খুব বেশি পাশে পাননি। কারণ, তিনি জন্মগ্রহণ করার পরপরই বঙ্গবন্ধু কারাগারে যান। শেখ রাসেলের শৈশব কেটেছে দুরন্তপনায়। ছোট্ট রাসেল পরিবারের সবার আদরের সোনা মনি ছিলেন। বাবা ও হাসু আপা ভক্ত তিনি কারাগারে যেতেন বাবাকে দেখতে। ঘরে মাকে প্রতিনিয়ত বলতেনেন, “মা আমি বাবার কাছে যাব। বাবা আসে না কেন?”

৭-৮ বছর বয়সে ধানমন্ডি লেকের পূর্বপাড়ের ৩১ ও ৩২ নম্বর সড়কে দুরন্ত গতিতে সাইকেল চালাতেন। কখনো কখনো ব্রেক করে মোড় ঘোরাতেই পড়ে যেতেন মাটিতে। লজ্জার ভয়ে কেউ বুঝে উঠার আগেই চোখের পলকে আবার উড়ালও দিতেন। বাতাসের গতির মতো উড়ে উড়ে বেড়াতেন প্রাণবন্ত এক শিশু শেখ রাসেল। বাবার মতো দুর্দান্ত সাহসী তিনি সর্বদা বঙ্গবন্ধুর সাথে থাকার কারণে বিভিন্ন আন্দোলন ও দাবীতে তিনিও অটুট ছিলেন পিতার মতো। স্বাধীনতা পরবর্তী পরিবারের সবাইকে নিয়ে প্রাণোচ্ছ্বল সময় কাটানোর সুযোগ আসে তাঁর জীবনে। বঙ্গবন্ধু বাসায় থাকলে সবসময়ই তাঁর আশেপাশে থাকতেন। বঙ্গবন্ধু দেশ-বিদেশে রাজনৈতিক সফরে গেলে তাঁর আদরের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলকে সাথে নিয়েই যেতেন। তাঁর মনোযোগ, দৃষ্টি-ভঙ্গি আর আত্মবিশ্বাসী উচ্চ শির দেখে অবাক হতেন বিশ্বনেতারাও। 

১৯৬৯ এর গণআন্দোলনে মাত্র সাড়ে চার বয়সী শেখ  রাসেল খুব কাছ থেকে দেখেছেন। ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধও খুব মনোযোগী হয়ে বুঝেছেন তিনি। যখন তাঁর বয়স মাত্র সাত বছর। স্বাধীনতা ঘোষনার বার্তার কাগজ নিয়ে পরিবারে সর্বপ্রথম তিনি জানান দেন। মুক্তিযোদ্ধা আর দেশের সেনাদের তিনি গভীর অবলোকে ভাবনায় গাঁথেন। তাই তাঁর স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে একজন সেনা কর্মকর্তা হওয়ার। টুঙ্গিপাড়া গ্রামে বেড়াতে গেলে শিশু বন্ধুুদের নিয়ে প্যারেড করতেন আর বন্দুক দিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় মগ্ন থাকতেন।

শেখ রাসেল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ছোট্ট থেকেই খাবারের প্রতি অনিহা ছিল শেখ রাসেলের। পরিবর্তী একজন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হয়েও তাঁর মধ্যে কোনো প্রকার অহমিকা-লোভ ছিল না। সাদাসিধে ছেলে হয়েই ঘর আলোকিত করে মাতিয়ে রাখতেনে। কাজের লোক, পড়ার ঘরোয়া শিক্ষকের সাথে নিবিড় সু-সম্পর্ক ছিল তাঁর। সকাল-বিকাল-সন্ধ্যায় খোঁজ-খবর রাখতেন পোষ্য পায়রা ও কুকুর টমি’র। আদর করতেেন গোয়ালের গাভীকেও। পোষা প্রাণীদের সাথে তাঁর সখ্যতা ছিল নিবিড়।

খুব বেশি ছোট্ট বেলা থেকেই রাসেল বাবার মতো অদম্য সাহসী ও উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ছিলেন। তাঁর ভয় ছিল লাল পিঁপড়া দেখে। তবে কালো পিঁপড়া দেখলেই হাত দিয়ে ধরতে যেতেন তিনি। সে পিঁপড়াকে ডাকতো ‘ভুট্টু’ বলে। সে ভুট্টো মানেই ভাবতো বাঙালির আমক্রমণকারী শত্রু। কারণ, বাঙালির শোষক, জুলুমকারীদের বিরুদ্ধে মুক্তির স্লোগান শুনতে শুনতে একসময় তা হৃদয়ে রপ্ত করে নেন। কারাগারের রোজনামচা গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘আড়াই বৎসের ছেলে আমাকে বলছে- ৬ দফা মানতে হবে- সংগ্রাংম-সংগ্রাম-চলবে-চলবে-”। তখন বঙ্গমাতা বলেন , রাসেল এসব স্লোগান রাজনৈতিক বৈঠক ও সড়কের মিছিল থেকেই শিখেছে। এভাবেই স্বাধীনতার পর সুখে-দুঃখে আনন্দে দিন কাটতে থাকে তাঁদের।

কিন্তু ইতিহাসে নেমে এলো কালো অধ্যায়। ৭৫’র ১৫ আগস্ট ভয়াল কালো রাতে একঝাঁক দোসর- ঘাতকদের বুলেটে সব তছনছ হয়ে যায়। সেদিন বুলেটের আঘাত থেকে ফুলের কলির মতো কনিষ্ঠ শিশু শেখ রাসেলও রেহাই পায়নি। মাত্র এগারো তম জন্মদিন পূর্ণ হতে না হতেই, বর্বর ঘাতকরা পরিবারের সঙ্গে নির্মমভাবে হত্যা করে তাকেও। অনেক আকুতি করেও মৃত্যু থেকে বাঁচতে পারেননি তিনি। তাঁর আত্মচিৎকারে আকাশ, বাতাস, বৃক্ষ-লতা, পক্ষিকূল কন্দন করেছিল, তবুও কিঞ্চিৎ মায়া হয়নি সেই নিষ্ঠুর ঘাতকদের। মায়ের কোলে ঢলে পড়ে মৃত্যুর পথযাত্রী হয়ে। আজ রাসেল নেই। কিন্তু আবার অকাল মৃত্যুর অন্ধকারেও হারিয়ে যায়নি রাসেল। এই বাংলার দুরন্ত, নিরন্তর সাহসী দেশপ্রেমিক এবং বাংলার প্রতিটি শিশুর প্রতিকৃতি হিসেবে বাঙালির হৃদয়ে- বেঁচে আছেন তিনি, বেঁচে থাকবেন আজীবন। রাসেলের শৈশব ও দেশপ্রেমিকতা প্রতিনিয়ত স্বপ্ন ছড়াবে আমাদের প্রতিটি শিশুর অন্তরে। প্রতিটি শিশু-কিশোরের অদম্য অনুকরণ হয়ে আছে শেখ রাসেল। 

এমএসএম / এমএসএম

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া

মানবিক সংকটের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব

বিশ্ব পানিতে ডুবা প্রতিরোধ দিবস ২০২৫ : গল্পের মাধ্যমে গড়ে উঠুক সচেতনতার বাঁধ

রাজনীতি আজ নিলামের হাট: কুষ্টিয়া-৪ এ হাইব্রিড দাপটের নির্মম প্রতিচ্ছবি

জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবার ভোট দিবে প্রবাসীরা, আনন্দে ভাসছে পরবাসে বাঙালীরা

বিশ্ববাণিজ্যে অস্থিরতা ও বাংলাদেশে তার প্রভাব

বাংলাদেশে ওয়াশিং প্ল্যান্টের বর্জ্য দ্বারা মিঠাপানির দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে

বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ

দলীয় পরিচয়ে পদোন্নতি ও বদলি: দুর্নীতির ভয়াল থাবায় বাংলাদেশ

ব্যবসায়ীদের জন্য ওয়ান-স্টপ সমাধান: FBCCI-এর বিদ্যমান সেবার উৎকর্ষ সাধন

বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিসরকে একীভূত করা: অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার জন্য বিসিক কেন অপরিহার্য

সবুজ অর্থায়নের কৌশলগত বিশ্লেষণ: বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের ঝুঁকি ও সুযোগ