চেয়ারম্যানের টোকেনে টিসিবির পণ্য বিতরণ বঞ্চিত হচ্ছেন কার্ডধারীরা
নাটোরের গুরুদাসপুরে নাজিরপুর ইউনিয়নে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) পণ্য বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারি টিসিবির তালিকায় নাম থাকা আমেনা বেগম, রেজাউল করিম, নাছিমা বেগম, রোকিয়া বেগম, রুবিয়া খাতুন, রহিমা বেগম, বেবি আক্তার, মাজেদুল ইসলাম, কফিল উদ্দিনসহ শতাধীক ব্যক্তি শুরুর দিকে দুই-একবার পেলেও দীর্ঘদিন ধরে টিসিবির পণ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন। এমনকি তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে টাকা লেনদেন, অনেকের নাম থাকলেও তালিকায় মোবাইল নম্বর ভুলসহ নানা ধরণের অনিয়ম উঠে এসেছে অনুসন্ধানে।
বঞ্চিতরা অভিযোগ করে বলেন- নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব আলী তালিকা হালনাগাদের কথা বলে তাদের কার্ডগুলো জমা নিয়েছেন। এখন চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত টোকেন দেখিয়ে টিসিবির পণ্য নিতে হচ্ছে। পছন্দের ব্যক্তিদের টোকেন দেওয়ায় বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত কার্ডধারীরা। সুযোগ বুঝে সংশ্লিষ্টদের উৎকোচ দিয়ে অবৈধভাবে খোলা বাজারে এসব পণ্য বিক্রিও করছেন ডিলারেরা।
উল্লেখ্য- গত ২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সন্ধ্যায় সিংড়া-গুরুদাসপুর উপজেলার সীমান্ত বিলদহর বাজার এলাকার ব্যবসায়ী শাহ আলমের বাড়ি থেকে টিসিবির ১৭৫ বোতল সয়াবিন তেল উদ্ধার করে র্যাব। এই ব্যবসায়ী নাজিরপুর ইউনিয়নের ডিলার রিপন আলী ও স্বপন আলীর কাছ থেকে টিসিবির এসব তেল কেনার কথা স্বীকার করেন। মূলত এই ঘটনার পর টিসিবির পণ্য বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি সামনে আসে। এরপর চলে অনুসন্ধান।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া টিসিবির সুবিধা ভোগী ব্যক্তিদের নামের তালিকায় দেখা গেছে, নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় ২ হাজার ৪৮৯ জনের নাম রয়েছে। এই তালিকা সবশেষ হালনাগাদ হয়েছিল গত বছরের আগস্ট মাসে। সেই তালিকা অনুযায়ী সুবিধাভোগিদের নামে পারিবারিক কার্ড ইস্যু করার কথা ছিল। কিন্তু সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে বাস্তবে তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিদের কাউকেই পারিবারিক কার্ড দেওয়া হয়নি। এই ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে কার্ড ছাড়াই টিসিবির পণ্য বিতরণ চলছে।
অনুসন্ধানে জানাযায়- টিসিবির তালিকায় নাম থাকা শতাধিক ব্যক্তি পণ্য না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। ফলে টিসিবির বেশিরভাগ পণ্য অবিক্রিত থাকে। সুযোগ বুঝে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান, কর্মকর্তার যোগসাজসে ডিলারেরা কালো বাজারে সেসব পণ্য বিক্রি করেন। সিংড়া-গুরুদাসপুর সীমান্ত বিলদহর বাজারের ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন- নাজিরপুর ইউনিয়নের টিসিবির ডিলার রিপন ও স্বপন আলীর কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে টিসিবির তেলসহ অন্যান্য পণ্য কম দামে কিনে তা খোলা বাজারে বিক্রি করতেন তিনি। এই অপরাধে এখন তিনি জেলহাজতে আছেন।
ডিলার রিপন ও স্বপন আলী টিসিবির পণ্য বিক্রিয়ের কথা অস্বীকার করে বলেন- তার ইউনিয়নে তালিকা অনুসারে সুবিধাভোগীদের কার্ড দেওয়া হয়নি। তারা চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত টোকেনেই টিসিবির পণ্য বিতরণ করছেন।
নাজিরপুর ইউনিয়নের টিসিবির তালিকায় ৩৭৫ নম্বর ক্রমিকে নাম থাকা চন্দ্রপুরের কফিল উদ্দিন, ৩৭৪ নম্বরের মাজেদুল, ১৫৪ নম্বরের আছমা বেগম অভিযোগ করে বলেন- তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রথমের দিকে দুই একবার টিসিবির পণ্য পেয়েছিলেন। এখন তারা কেউই টিসিবির পণ্য পাননা। কেন বঞ্চিত এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন- সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দেওয়ায় তাদের টিসিবির সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছেন ইউপি চেয়ারম্যান আয়ুব আলী। তাদের ভাষ্যমতে- টিসিবির পারিবারিক তালিকা হালনাগাদের সময় কার্ড করে দেওয়ার নাম করে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যরা জনপ্রতি ৬শ করে টাকাও নিয়েছেন।
তালিকার ২৬ নম্বর ক্রমিকে নাম থাকা শ্যামপুর গ্রামের দিনমজুর শাহিনুর ইসলাম, ২৪৫৯ ক্রমিকের জুমাইনগর গ্রামের আসাদুল ইসলাম, ১৪৫ ক্রমিকের চন্দ্রপুর গ্রামের মজিবর রহমান বলেন- টিসিবির তালিকায় নাম থাকলেও তাদের পণ্য দেওয়া হয়না। এসব পণ্য কালোবাজারে বিক্রি করেন ডিলারেরা।
স্থানীয় আরমান আলী, মোবারক হোসেন ও রমজান আলী বলেন- টিসিবির তালিকায় নাম তুলতে তাদের পরিবার থেকে ৫০০ টাকা করে নিয়েছেন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর। কিন্তু তারা টিসিবির পণ্য পাননা।
নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব আলী টোকেনের মাধ্যমে টিসিবির পন্য বিতরণের কথা স্বীকার করে বলেন- কার্ড ছাপতে দেরি হওয়ায় তারা টোকেনে টিসিবির পণ্য বিতরণ করছেন। তাছাড়া তালিকায় নাম আছে টিসিবির পণ্য পাননা এই অভিযোগ মিথ্যা। কার্ড দিতে টাকাও নেওয়া হয়নি। যদি কোনো মেম্বার টাকা নিয়ে থাকে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তার বলেন- তালিকায় নাম থাকলেও টিসিবির পণ্য না পাওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমএসএম / এমএসএম