গুরুদাসপুরে বিএডিসি সেচ প্রকল্পের ভেতর বরেন্দ্রকর্তৃক ডিপ স্থাপনার অভিযোগ
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার কালাকান্দর এলাকায় হাড়িভাঙ্গা বিলে মো. রেজাউল করিমের নিজ জমিতে গত ৬ বছর ধরে চলছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন অনুমদিত (বিএডিসি) প্রকল্পের আওতায় ১০ হর্সের ১টি মোটর দিয়ে চলছে সেচ কাজ। এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে প্রায় ৬০ বিঘা জমি। জমিগুলোর মালিকানায় রয়েছে ১০০ জন কৃষক। অথচ গত ২০২২ সালে ওই সেচ প্রকল্পের আওতার ভেতর অবৈধভাবে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) ডিপ (এলএলপি) স্থাপনা করেছেন। শুধু তাই নয় কৃষকদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে জমিতে সেচ নিতে বাধ্য করছেন বিএমডিএর আওতায় (এলএলপি) ডিপ স্থাপনাকারী কালাকান্দর গ্রামের মৃত নূর মোহাম্মাদ আলীর ছেলে মো. ইউনুছ আলী। এমনকি কৃষকদের কাছ থেকে সেচের জন্য অধিক টাকাও নিচ্ছেন তিনি।
স্থানীয় কৃষকরা জানান- বিগত বছরগুলো আমরা রেজাউল করিমের মোটর থেকে জমিতে সেচ নিতাম। বছরে ৫/৬ টি সেচে আমাদের খরচ হতো ১ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু বরেন্দ্র কর্তৃক ডিপে আমাদের জমিতে বছরে খরচ দিতে হচ্ছে ৪ হাজার টাকা। ডিপের আওতায় আমরা জমিতে সেচ নিতে না চাইলে আমাদের নানা প্রকারে ভয়ভীতি দেখান ইউনুছ। তাই বাধ্য হয়ে বরেন্দ্র কর্তৃক স্থাপনা ডিপের আওতায় জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে আমাদের।
বিএডিসির অনুমোদন কর্তৃক মোটর মালিক রেজাউল করিম বলেন- ২০১৮ সালে বিএডিসির অনুমোদনে আমার নিজ জমিতে ১০ হর্সের ১ টি মোটর স্থাপন করা হয়। এলাকার সকল কৃষক সেই মোটর ব্যবহার করে আসছে। হঠাৎ ২০২২ সালে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে বিএডিসি সেচ প্রকল্পের আওতার ভীতর ডিপ স্থাপনা করেন এবং আমার নিজ জমিসহ অন্যান্য জমি দিয়ে ওই ডিপের পাইপ স্থাপন করেন। আমি ওই সময় বিএডিসি ও বরেন্দ্র কর্তৃক্ষকে অভিযোগ দিয়েছিলাম। তখন তারা সাময়ীক কাজ বন্ধ রেখেছিলেন। কিন্তু সেই সময় হঠাৎ আমার ছেলে এক্সিডেন্ট হয়ে মারা যাওয়ায় আমি শোকাতর অবস্থায় ব্যস্ত থাকায় ইউনুছের যোগসাজসে পুনরায় ডিপ স্থাপনা ও আমার নিজ জমি দিয়ে পাইপ স্থাপন করেন। এমনকি কৃষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ডিপের আওতায় সেচ নিতে বাধ্য করেন ইউনুছ।
তিনি আরোও জানান- বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রকল্পে কোনো মতেই ডিপ (এলএলপি) বোরিং করার অনুমোদন নেই। তারা মুক্ত জলাস্বয়, নদী, খাল-বিল থেকে পানি উত্তোল করে সেচ দিতে পারবে। কিন্তু বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ তা না করে অবৈধভাবে ডিপ (বোরিং) স্থাপনা করেছেন। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অবৈধ স্থাপনা ডিপের অপসারণের দাবি জানাই।
বরেন্দ্র কর্তৃক ডিপ ম্যানেজার ইউনুছ আলী অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন- কোনো কৃষকের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয় না। কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সেচ প্রতি ৪০০ টাকা নেওয়া হয়। আমাদের এলাকায় বিএডিসি অনুমোদনকৃত কোনো সেচ যন্ত্র না থাকায় বরেন্দ্র কর্তৃক ডিপ স্থাপনা করার সিদ্ধান্ত নি। কৃষকদের ভয়ভীতি দেখানো কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
উপজেলা বিএডিসি সহকারী প্রকৌশলী সাঈদুর রহমান জানান- আমাদের প্রকল্পের আওতার ভেতর বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষের সেচ যন্ত্র স্থাপনার কোনো অনুমোদন নেই। এমনকি (এলএলপি) বোরিং করাও কোনো অনুমতি নেই তাদের। তারা যদি আমাদের বিএডিসির আওতায় তাদের সেচ যন্ত্র স্থাপনা করেন বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প কর্তৃপক্ষের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জিয়াউর রহমান জানান- আমরা জানতে পারি গুরুদাসপুর উপজেলার কালাকান্দর এলাকার হাড়িভাঙ্গা বিলে বিএডিসির অনুমোদনকৃত কোনো সেচ যন্ত্র নেই। ব্যক্তি মালিকানায় সেচ পাম্প রয়েছে। তাই ওই এলাকার কৃষকদের কথা ভেবে ২০২২ সালে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় সেচ যন্ত্র স্থাপনা করা হয়েছে এবং নদী শুকিয়ে গেলে জমির ফসল উঠানোর জন্য এলএলপি বোরিং করা হয়েছে।
এমএসএম / এমএসএম