রাজধানীতে মরা মুরগির কদর বাড়ছে

রাজধানীতে মরা মুরগির কদর বাড়ছে। এসব মরা মুরগি সংগ্রহকারীরা বলছেন, মাছের খামারীদের কাছে বিক্রি করছেন। তবে নগরীর কাপ্তানবাজারসহ পাইকারী মুরগির বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব মরা মুরগি বিভিন্ন খাবারের হোটেল চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে।
নগরীর বিভিন্ন মুরগির মার্কেটে সিটি করপোরেশনের কতিপয় কর্মচারীর সহযোগিতায় একশ্রেণির প্রতারক এসব মরা মুরগি সংগ্রহ করে ব্যবসা করছেন বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য যানা গেছে। দেশে মাছ মাংসসহ ভোজ্য দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির সুযোগে এক শ্রেনীর অসাধু মানুষ এসব খাবার অযোগ্য মরা মুরগির ব্যবসায় নিয়জিত হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে আবার ভেজাল বিরোধী অভিযান না থাকার সুযোগে এসব কর্মকাণ্ড রাজধানীতে চালানো হচ্ছে বলে অভিজ্ঞমহল মনে করছেন।
পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এসব মরা মুরগির মাংস খেলে মানুষের পেটের পীড়াসহ নানা ধরনের মারাত্মক দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে মারা যেতে পারেন। রাজধানীর গুলিস্তান কাপ্তানবাজার, ঠাটারি বাজার, ফকিরাপুল, মিরপুর-১ ও মিরপুর ৬ নম্বর বাজার, লালবাগের কিল্লার মোড়, নবাবগঞ্জের বাজার, চিটাগাং রোডস্থ মুরগি পট্টি, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ সাদেকখান বাজারের মুরগির আড়ত, খিলগাঁও বাজার, মালিবাগ রেলগেট বাজার, নিউমার্কেট, রামপুরা বাজারসহ বিভিন্ন মার্কেটে খোঁজ নিয়ে মরা মুরগি ব্যবসার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতি দিন প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ মুরগি পাইকারী মার্কেটের আড়ত থেকে বিক্রি হয়ে থাকে। আর এসব মুরগির মধ্যে শুধু রাজধানীতেই প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৫ হাজার মুরগি মারা যায়। আর এই মরা মুরগিগুলো এক শ্রেনীর বোরকা পড়াা নারী ও টোকাই সংগ্রহ করছে। পরে আড়ারে গিয়ে তার গলা কেটে রাখা হয়। এগুলো পাইকারী মার্কেটে প্রতিদিন গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত অত্যন্ত সুকৌশলে আবার প্রকাশ্যেই বিক্রি করা হচ্ছে।প্রতিটি দেশি বা ছোট আকারের মরা মুরগি ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। আর বয়লারের মুরগি ৬০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি করা হয়ে থাকে। পাইকারী মার্কেটের ঢাকা সিটি করপোরেশনের ক্লিনারদের সহযোগিতায় এক ধরনের প্রতারকচক্র মরা মুরগিগুলো সংগ্রহ করে। শুক্রবার ও শনিবার মধ্যরাতে কাপ্তানবাজারের মুরগির পাইকারী বাজারের আড়তে এবং রাস্তায় মরা মুরগি সংগ্রহ ও বিক্রির অভিনব প্রতারণার তথ্য জানা গেছে।
ভোর রাতে সেহরির সময় গিয়ে ঠাটারি বাজারে দেখা যায়, মুরগি ব্যবসায়ীরা পিকআপ ভ্যান যোগে মুরগি বহনকারী গাড়ি নিয়ে আসার পর সেখানে এক ধরনের ভদ্রবেশী ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হন। এরপর গাড়ি থেকে মুরগি নামানোর পর আড়তে নেওয়ার পর মরা মুরগিগুলো ঝুড়ি থেকে বের করে দোকানের সামনে ফেলা হয়। আর তখন ওই ভদ্রবেশী ব্যক্তিরা চটের ছালায় তা ভরে নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে মরা মুরগিগুলোর গলা কেটে রাখা হয়। এরপর তার চামড়া ছুলিয়ে পলিথিনের ব্যাগে দ্রুত প্যাকেট করে।
আবার মুরগির আড়তগুলোর সামনে নিদিষ্ট প্লাস্টিকের ড্রামে মরা মুরগিগুলো ফেলা হয়। এরপর ডিসিসির ক্লিনাররা গিয়ে তার ময়লার ট্রলি যোগে তা নিয়ে ড্রাস্টবিনের পাশে নিয়ে রাখে। এরপর গলা কেটে তা চামড়া ছুলিয়ে পলিথিনে প্যাকেটজাক করে তা বস্তায় ভরা হয়। গুলিস্তান ঠাটারি বাজারের পাশের ড্রাস্টবিনের পাশে ভোরে দেখা যায়, কয়েকজন ডিসিসির ক্লিনার মরা মুরগিগুলো প্লাষ্টিকের বস্তায় ভরছেন। আবার আর একজন মরগির নারী ভুড়িগুলো ময়লার গাড়িতে তুলছেন। আবার ড্রাস্টবিনের আড়ালে বসে কয়েকজন মরা মুরগির গলা কাটার পর চামড়া ছুলে প্লাস্টিকের বালতিতে ভরে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে। তারা জানান, ক্লিনারের কাজ করে যা পান, তাতে তাদের সংসার চলে না। এজন্য মরা মুরগি সংগ্রহ করে কতিপয় ব্যক্তির কাছে অল্প দামে বিক্রি করে। প্রতিটি দেশি মুরগি তাদের কাছ থেকে ৩০ থেকে ৫০ টাকা আর বয়লারের মুরগি ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা কেজি ধরে কিনে নেয়। আর প্রতিদিন তারা ৪৫ থেকে ৫০ ড্রাম মরা মুরগি সংগ্রহ করে। এ ব্যবসার কথা পুলিশের জয়কালী মন্দিরের পাশের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ও ওয়ারী থানার পুলিশ ও ফরমাররা জানেন বলে তারা জানিয়েছেন।
শনিবার সকালের মাকসুদ নামে এক মুরগির ফড়িয়া জানান, প্রতিদিন তিনি কাপ্তানবাজারে ৩০ থেকে ৩৫ হালি মুরগি বিক্রি করেন। প্রতি হালি মুরগি ৭শ থেকে সাড়ে ৮শ টাকায় ক্রয় করেন। আর প্রতি হালি মুরগি তিনি ৮শ থেকে সাড়ে ৯শ টাকায় বিক্রি করেন। এভাসে প্রতিদিন রাত ১২ টা থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত মুরগি কিনে আবার সেখানেই বিক্রি করেন। আর এসব মুরগির মধ্যে অনেকগুলো মারাও যায়। আর মরা মুরগিগুলো আগে তিনি ফেলে দিতেন। এখন কয়েকজন ব্যক্তি আছেন, তারা মাছের খাবারের কথা বলে তার কাছ থেকে ২শ টাকা হালি দরে কিনে নেয়। তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি কিনে নেয়, সে মাছের খাবারের কথা বলে নিয়ে কি করেন, সেটা আমার দেখার বিষয় না। তবে সন্দেহ হয়, মরা মুরগির ক্রেতারা কিনে নিয়ে ফুটপাতের হোটেল রেস্টুরেন্টে বিক্রি করে। শুধু পুরান ঢাকায়ই নয়, রাজধানীর মিরপুর এলাকায় মরা মুরগির ব্যবসা চরছে প্রায় প্রকাশ্যেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী জানান, বর্তমানে বাজারদর চড়া থাকার কারণে এখন ভেজাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতারকচক্র মরা মুরগি সংগ্রহ করছে। তারা বাজার কমিটি ও সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের সহযোগিতায় এসব মরা মুরগি সংগ্রহ করছে। এরপর সুকৌশলে নগরী বিভিন্ন ফুটপাতের হোটেলগুলোতে সরবরাহ করে আসছে। মরা মুরগির ব্যবসা সম্পর্কে তিনি বলেন, মোমিন মোসলমানরা কখনো এগুলোর ব্যবসা করবে। মাদকসেবীরা ক্লিনার পরিচয় দিয়ে আবার ডিসিসির কর্মচারী পরিচয়ে এই মরা মুরগি সংগ্রহ করে। এরপর বিভিন্ন চক্রের কাছে গোপনে তা বিক্রি করে।
অপরদিকে কাপ্তানবাজার হতে মরা মুরগি সংগ্রহকারী লাভলী বেগম নামের এক নারীর পেছনে পেছনে গিয়ে দেখা যায়, তিনি কেরাণীগঞ্জ এলাকায় যেতে নৌকাযোগে বুড়িগঙ্গা নদী পার হবে। এসময় তার সঙ্গে কথা বললে তিনি প্রথমে ভয়ে কথা বলতে চাননি। একপর্যায়ে তিনি জানান, সংসার চালানোর মতো তেমন কোন উপায় নেই। তাই বাধ্য হয়ে রাত জেগে মরা মুরগি সংগ্রহ করে। এলাকার দু’টি হোটেলে দেই। এতে প্রতি দিন ৫শ’ ১০০০ হাজার টাকা পাই তা দিয়ে কোন রকম জীবন ধারন করছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, আসলে আমাদের সমাজটাই নষ্ট হয়ে গেছে। যারা মুরগির ব্যবসা করেন, তাদের কিছু মুরগি মারা যেতেই পারে। তাই বলে কি, ওইগুলো মানুষের খাবারের জন্য হোটেলে বিক্রি করবে। আর প্রশাসন কত দিক দেখবে। তার পরও প্রশাসনের কারণেই অনেক কমেছে। তবে তাদের সম্পর্কে তথ্য পেলে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হবে বলে জানান তিনি।
এর আগে গত বছর সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেছিলেন, প্রতিদিন ৫-৭ হাজার মোরগ-মুরগি সারাদেশ থেকে ঢাকায় আসার পথে মারা যায়। পরে এই মরা মুরগিগুলো ঢাকার হোটেলগুলোতে সরবরাহ করা হয়।রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ভেজাল প্রতিরোধ উপলক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হালাল খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা বলতে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী এ দাবি করেছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেছিলেন, 'মরা মুরগিগুলো কোথায় যায়? এগুলো দেখবেন বিভিন্ন হোটেলগুলোতে বিক্রি করছে। এসব কর্মকাণ্ড কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।'
গোপনে অবস্থানকালে দেখা যায়, গভীর রাতে গাড়িতে রাখা সেইসব মরা মুরগি দুজন লোক প্লাস্টিকের নীল ড্রামে ভরে নিয়ে যায়। এরপর কাপ্তান বাজারের ভেতরের সরু গলি দিয়ে তারা ভেতরে দক্ষিণদিকে চলে যায়। এভাবে আরও কিছু সময় কেটে যায়। তাদের অনুসরণের এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ২টার দিকে কাপ্তান বাজারের দক্ষিণ দিতে চলে যায়। এসময় তাদের একজনের কাছে জানতে চাইলে তিনি ক্ষুব্ধভাবে বলেন, ‘মরা মুরগি পাইলেন কোথায়? এইগুলা তাজা মুরগি। জবাই করা হয়েছে।
মরা মুরগি সাধারণত গাড়ি থেকে দ্রুত বের করে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ডাস্টবিনে ফেলার কথা। এ জন্য প্রতিটি দোকান থেকে নিয়মিত টাকা তোলা হয়। কিন্তু অসৎ উদ্দেশ্যেই একটি সিন্ডিকেট সেটি না করে অনেক সময় মরা মুরগিগুলো গোপনে তাজা জবাইকৃত মুরগির সঙ্গে মিশিয়ে সবই টাটকা হিসেবে ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করছে। প্রতি রাতে কেবল কাপ্তান বাজারেই অন্তত পাঁচ শতাধিক মুরগি মরা অবস্থায় পাওয়া যায়। এ ছাড়া কারওয়ান বাজার ও যাত্রাবাড়ীতেও প্রচুর মরা মুরগি পাওয়া যায়। যেগুলো দেশের দূরদূরান্ত থেকে গাড়িযোগে আনার সময় বা অসুস্থ-স্ট্রোক করে মারা যায়। শুক্রবার সকালে জয়কালিমন্দিরের পাশের ময়লার ডাপ্তিংয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখান ৬ থেকে ৭জন লোক কাজ করছে। তাদের একজন মুরগির নাড়ীভুরি ডাস্টবিনে তুলছে। আর কয়েকজন মরা মুরগির চাড়া ছুড়ছে। আর দুইজন বস্তা ও ড্রামে তা ভরছে। জানতে চাইলে তারা জানান, এসব মুরগি মাছের খামারীদের কাছে দেওয়া হয়। এজন্য তারা যে টাকা দেন, তা আমরা কয়েকজনে ভাগ করে নেই।
এমএসএম / এমএসএম

স্নায়ু বিকাশ প্রতিবন্ধীদের সুইড বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা লোপাট

বিসিক মুদ্রণ শিল্পনগরী প্রকল্পের মাটি ভরাটের প্রিলেভেল সার্ভে কাজে প্রকল্প পরিচালকের অনিয়ম-দুর্নীতি

মাদারীপুরের আলোচিত মিথ্যা মুক্তিযোদ্ধার কোটায় একই পরিবারের চারজন করছেন সরকারি চাকরি

নিষিদ্ধ হলেও হিযবুত তাহরীরের প্রকাশ্যে কর্মসূচী ঘোষণা

মিরপুর ফায়ার সার্ভিসের ট্রেনিং কমপ্লেক্সের অফিসার তৌহিদুলের শাস্তি দাবি

বিসিকের প্রকল্প পরিচালক মোঃ রাকিবুল হাসানের ঘুস-দুর্নীতি সমাচার

জমি ক্রয়ের নামে ভাইয়ের বিরুদ্ধে প্রবাসি স্বামীর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

বিআইডব্লিউটিএ বন্দর শাখার সাবেক পরিচালক সাইফুলের টাকার উৎস কি?

নার্গিসকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি দেওয়া হোক

গাজীপুর গণপূর্তের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিমের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকের ঢাকায় ১৯ বছরের লুটপাটের রাজত্ব

মসজিদের নামে জমি দখলের চেষ্টা করছে মল্লিক বিল্ডার্স
