ঢাকা সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫

জীবনযুদ্ধে জেলেপল্লীর শিশুরা, বঞ্চিত শিক্ষার আলো থেকে


সম্রাট, কয়রা photo সম্রাট, কয়রা
প্রকাশিত: ১৮-৮-২০২১ দুপুর ১২:৩২
ওদের কানে পৌঁছায় না স্কুলের ঘণ্টা। যে বয়সে হাতে থাকবে বই, কাঁধে থাকবে স্কুলব্যাগ; সে বয়সে ওরা নদীর উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাছ ধরে। যে বয়সে হাসি-আনন্দে বেড়ে ওঠার কথা; সে বয়সে ওরা মাথায় বহন করে মাছের ঝুড়ি। এমন শিশুদের খোঁজ মেলে উপকূলের কয়রা উপজেলার একাধিক জেলেপল্লীতে।
 
বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে সুন্দরবনবেষ্টিত নদীর কোলঘেঁষে খুলনার কয়রা উপজেলা। সেখানে হাজারো জেলেদের বসবাস। নদীভাঙনে দিশাহারা ওই জনপদের মানুষ। ৭০% লোক নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। পৈতৃক পেশাকে ধরে রেখেছেন উপকূলের এ অঞ্চলের হাজারো জেলে। শিক্ষার আলো পৌঁছলেও যেন শিক্ষা গ্রহণ না করেই জেলে হিসেবে গড়ে উঠছে তাদের শিশুরা। দারিদ্র্যের সংসারে একটু আয়ের আশায় এখানকার শিশুরা খুব কম বয়সেই বেছে নিতে বাধ্য হয় নদী ও জেলে জীবন। যেখানে তাদের এই বয়সে হাসি-খুশি ও আনন্দ-উল্লাসে বেড়ে ওঠার কথা, সেখানে শুধুই দারিদ্র্যের কষাঘাতে জরজড়িত। যে বয়সে শিশুটির হাতে থাকার কথা ছিল বই-খাতা, সেই শিশুটির হাতে আজ মাছ ধরার জাল। দিন কাটে তার নদীর বুকে। সন্তানদের পড়ালেখা করানোর প্রতি আগ্রহ নেই তাদের বাবা মায়ের। আধুনিক সভ্যতা থেকে পিছিয়ে পড়া এই জনপদের অভিভাবকদের অসচেতনতা ও নদীভাঙনের কারণে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না এখানকার শিশুরা। উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেপল্লীর অধিকাংশ শিশুদের জীবনের গল্প এমন। 
 
সরেজমিন দেখা যায়, কয়রা উপজেলার, কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া, আড়পাঙ্গাসিয়া, খোলপেটুয়া নদীতে অসংখ্য শিশু প্রতিদিন মাছ ধরে। বড়দের মাছ ধরার সহযোগী হয় সাগর (১২), আনিচ (১১), নুরুল (১২) তারিম (১৩) সহ অনেকেই। ওরা জাল টানা, কিংবা বৈঠা ধরার কৌশল শিখেছে ষোলোআনা। জেলে নৌকায় কাজ করা অধিকাংশের বয়স আট থেকে পনেরো বছর। জীবনের প্রয়োজনে তারা এই বয়সে হয়ে ওঠে দক্ষ মাঝি বা জেলে। এই শিশুদের কেউ বাবার সঙ্গে জাল টানে, কেউ নৌকার বৈঠা ধরে, কেউবা জাল থেকে মাছ ছাড়িয়ে ঝুড়িতে তোলে। আকৃতি অনুযায়ী মাছ বাছাই করার কাজও তারা করে। এভাবেই নিচ্ছে তারা দক্ষ জেলেতে পরিণত হওয়ার শিক্ষা। মাঝে মাঝে বাবার কাজের দায়ভারও তাদের বইতে হয়। ধরা মাছ নিয়ে বাবা হাটে গেলে বাবার অনুপস্থিতিতে উত্তাল নদীতে নৌকা নিয়ে চলে যায় শিশুটি। জোয়ার-ভাটা ওদের মুখস্থ। দিন শেষে এই মাছ বিক্রি করে যা পায় তা দিয়ে কিছুটা হলেও উপকৃত হয় তাদের পরিবারের মানুষগুলো।
 
উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি, আংটিহারা, চোরামুখা, গুড়িয়াবাড়ি, ৬নং কয়রা, ৪নং কয়রা, মহেশ্বরীপুর, হড্ডা, তেতুললারচর, পবনাসহ এসব অঞ্চলের জেলে পরিবারগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রতিনিয়ত অনিশ্চতায় বিবর্ণ হয়ে ওঠে জেলে পল্লীর হাজারো শিশুর শৈশব। শিশুশ্রমের বেড়াজালে বন্দিজীবন আর বাবার কষ্টের সঙ্গী হতে ষষ্ঠ শ্রেণিতে আর পড়া হয় না অধিকাংশ শিশুর। ফলে কোমলমতি সব শিশুর কাঁধে ওঠে সংসারের বোঝা। বাবা-মা ছোট ভাই-বোন নিয়ে বেঁচে থাকাই তখন তাদের জীবনের মূলমন্ত্র। অনেক শিশুর স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব হয়ে ওঠে না। 
 
কাটকাটা লঞ্চঘাটের  কাছেই বাবার মাছ ধরার সঙ্গী হিসেবে ছিলেন ১০ বছরের শিশু কুদ্দুস আলী। কুদ্দুসের ভাষ্য. ‘স্কুলে যাইতে তো ইচ্ছা করে তবে  কাজের  জন্যিই যাইতে পারি না। জোয়ার আসার আগেই জাল পাতি, আর ভাটায় পানি টানলে মাছ নিয়ে  আসতে  আসতে  স্কুল ছুটি হুই যায়।এখন করোনার জন্যি স্কুল বন্ধথ। দক্ষিণবেদকাশির চোরামুখা এলাকায়  কথা হয় আরো কিছু জেলে শিশুর সঙ্গে। সাগর , আব্বাস ও রুবেল নামের এই শিশুরাও বলছে, বাবার কাজের সঙ্গী হতে হয় বলেই তারা স্কুলে যেতে পারে না। এ অঞ্চলের কয়েকজন জেলের সাথে কথা বললে তারা জানান, মাছ ধরা আমাদের পৈতৃক পেশা। এই পেশাকে ধরে রেখেছি এখনো। আমাদের সন্তানরা সেই পেশা ধরে রাখবে। ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা করানোর খরচ নেই। তাই মাছ ধরার কাজ শিখাচ্ছি। ছেলেবেলা থেকে কাজ শিখলে বড় হয়ে একজন দক্ষ মাঝি হিসাবে নিজেদের গড়তে পারবে ওরা।
 
তে‍ঁতুলতলারচর গ্রামের জেলে আক্কাস  (৪৫) বলেন, সব পরিবারই এখন বোঝে যে, তাগে  ছেলেমেইগুলারে পড়ানো উচিৎ। কিন্তু পেটের তাগিদে সবাই তো পুড়াইতে পারে না।
 
দক্ষিণ বেদকাশি  ইউপি চেয়ারম্যান কবি শামছুর রহমান  জানান, নৌকায় একজন জেলের পক্ষে জাল টেনে মাছ ধরা কষ্টকর। মাছ ধরতে হলে আরো লোকের দরকার হয়। দরিদ্র জেলেরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার পরিবারের মানুষগুলোকে সহকারী হিসেবে ব্যবহার করে। মূলত এই কারণে শিশুগুলোকে স্কুল ছাড়তে হয়।
 
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আলাউদ্দিন  বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে শিশুদের শিক্ষিত করতে হবে এমন প্রবণতা কম। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, এই অঞ্চলে দরিদ্র ও অভাবী মানুষের বিচরণ বেশি। শিশুদের শিক্ষিত করার প্রবণতা তখন বৃদ্ধি পাবে যখন সমাজ থেকে অভাব দূর করা যাবে। প্রতিটি শিশুর জীবনের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পরিবারকে সচেতন করতে পারলে কমে আসবে শিক্ষাবঞ্চিত শিশুর সংখ্যা।

এমএসএম / জামান

ঈশ্বরদীতে ট্রেনে কেটে এক ব্যক্তির মর্মান্তিক মৃত্যু

মসজিদের খতিব–ইমাম–মুয়াজ্জিনদের সুরক্ষায় নীতিমালা চূড়ান্তঃ কুমিল্লায় ধর্ম উপদেষ্টা

মেহেরপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পুনঃবিবেচনার দাবিতে গণজমায়েত

চর ওয়াশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর করেন জাতীয় বীর আমান উল্লাহ আমান

গাজীপুরের রাজনীতিতে ঝড় তুললেন ইরাদ সিদ্দিকী

ধুনটে বালুবাহী দুই ট্রাকের চাপে অটোরিকশাচালক নিহত

পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের হীরক জয়ন্তী পালন

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিলমারী মডেল থানার এসআই আসাদুজ্জামানের আকস্মিক মৃত্যু

কোম্পানীগঞ্জে সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সম্মাননা ও সহায়তা প্রদান

দুমকিতে সশস্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

দুমকিতে গাভী লুটপাটের অভিযোগ 'মিথ্যা', দাবি করে সংবাদ সম্মেলন

ভূমিকম্পকে আল্লাহর সতর্কবার্তা হিসেবে দেখার আহ্বান – মাওলানা আব্দুল ওয়াহাব (বড় হুজুর, কাছাইট)

সিংগাইরে জমি নিয়ে বিরোধে বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা