পাপমুক্ত জীবন গড়তে যা করণীয়
কোনো সন্দেহ নেই মানুষের জীবন-জীবিকার নিয়ন্ত্রণ আল্লাহর হাতে। তিনি কারো জন্য জীবিকার দ্বার উন্মুক্ত করে দেন এবং কারো জন্য তা সংকীর্ণ করে দেন। মানুষ জীবিকা উপার্জনের যে চেষ্টা করে এবং যা সে অর্জন করে সবই আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। তবে মানুষের জীবন-জীবিকায় পাপ ও পুণ্যের প্রভাব প্রমাণিত।
পাপ মানুষের জীবনকে সংকীর্ণ করে এবং পুণ্য জীবনে প্রশস্তি আনে।
জীবিকার নিয়ন্ত্রণ আল্লাহর হাতে
মানুষের জীবন-জীবিকার নিয়ন্ত্রণ শুধুই আল্লাহর হাতে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার প্রতিপালক যার জন্য ইচ্ছা তার জীবিকা বর্ধিত করেন এবং যার জন্য ইচ্ছা তা সীমিত করেন। তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক পরিজ্ঞাত, সর্বদ্রষ্টা।
(সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩০)
জীবন-জীবিকায় প্রত্যাশার প্রভাব
পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, মানুষের জীবন-জীবিকায় তার চাওয়া-পাওয়া ও প্রত্যাশার প্রভাব রয়েছে। এ ক্ষেত্রে যারা আল্লাহর অনুগত্যের জীবন কামনা করবে এবং পরকালকে প্রাধান্য দেবে আল্লাহ তাকে উত্তম জীবন দান করবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে কেউ পরকালের ফসল কামনা করে তার জন্য আমি তার ফসল বর্ধিত করি এবং যে ব্যক্তি দুনিয়ার ফসল কামনা করে আমি তাকে তারই কিছু দিই, পরকালে তার জন্য কিছুই থাকবে না।’ (সুরা : আশ-শুরা, আয়াত : ২০)
মানবজীবনে পাপ-পুণ্যের প্রভাব
কোরআন ও হাদিস দ্বারা মানুষের জীবন-জীবিকায় পাপ-পুণ্যের প্রভাব প্রমাণিত।
যেমন—পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি সেসব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণ উন্মুক্ত করতাম, কিন্তু তারা প্রত্যাখ্যান করেছিল। সুতরাং তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদের শাস্তি দিয়েছি।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৯৬)
পুণ্যের সুফল পার্থিব জীবনেও মেলে
পুণ্য কাজের সুফল মানুষ পার্থিব জীবনেও পায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘একটি নেকির ক্ষেত্রেও আল্লাহ তাআলা কোনো মুমিন বান্দার প্রতি অবিচার করবেন না, বরং তিনি এর ফলাফল দুনিয়াতে দান করবেন এবং আখিরাতেও দান করবেন। আর অবিশ্বাসী লোক পার্থিব জগতে আল্লাহর উদ্দেশে যে সৎ আমল করে এর প্রতিদান স্বরূপ তিনি তাকে জীবিকা দান করেন।
পরিশেষে আখিরাতে প্রতিফল দেওয়ার মতো তার কাছে কোনো সৎ আমলই থাকবে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৯৮২)
জীবনের প্রশস্তি আসে যেভাবে
সাধারণভাবে নেক আমল মানুষের জীবনে প্রশস্তি আনে। তবে কোরআন ও হাদিসে কিছু আমলের বর্ণনা বিশেষভাবে এসেছে। যেমন—
১. আল্লাহভীতি : মানুষের জীবন-জীবিকায় তাকওয়ার প্রভাব অপরিসীম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার পথ করে দেবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে দান করবেন জীবিকা। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ২-৩)
২. আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) জীবন-জীবিকায় বরকত লাভে প্রত্যাশী ব্যক্তির উদ্দেশে বলেছেন, যে ব্যক্তি চায় যে তার জীবিকা প্রশস্ত হোক এবং আয়ু বৃদ্ধি পাক, সে যেন আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ন রাখে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৮৬)
৩. আল্লাহর ওপর ভরসা করা : মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা যদি প্রকৃতভাবেই আল্লাহ তাআলার ওপর নির্ভরশীল হতে তাহলে পাখিদের যেভাবে জীবিকা দেওয়া হয় সেভাবে তোমাদেরও জীবিকা দেওয়া হতো। এরা সকালবেলা খালি পেটে বের হয় এবং সন্ধ্যা বেলায় ভরা পেটে ফিরে আসে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৪৪)
মুমিনের জন্য হুঁশিয়ারি
নেক আমলে পার্থিব জীবনে প্রশস্তি আসে। তবে নেক আমলের উদ্দেশ্য কখনো পার্থিব জীবন হতে পারে না। এই বিষয়ে বুজুর্গ আলেমরা দুটি বিষয় স্মরণে রাখার নির্দেশ দেন। তা হলো—
১. পৃথিবী মৃত পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট : পৃথিবীর জীবনকে মুমিন নগণ্য মনে করে। জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) আলিয়া অঞ্চল থেকে মদিনায় আসার পথে এক বাজার দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এ সময় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উভয় পাশে বেশ লোকজন ছিল। যেতে যেতে তিনি ক্ষুদ্র কানবিশিষ্ট একটি মৃত বকরির বাচ্চার পাশ দিয়ে যেতে তার কাছে গিয়ে এর কান ধরে বললেন, তোমাদের কেউ কি এক দিরহাম দিয়ে এটা ক্রয় করতে আগ্রহী? তখন উপস্থিত লোকেরা বললেন, কোনো কিছুর বদৌলতে আমরা এটা নিতে আগ্রহী নই এবং এটি নিয়ে আমরা কী করব? তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, বিনা পয়সায় তোমরা কি সেটা নিতে আগ্রহী? তারা বললেন, এ যদি জীবিত হতো তবুও তো এটা দোষী। কেননা এর কান হচ্ছে ছোট ছোট। আর এখন তো সেটা মৃত, আমরা কিভাবে তা গ্রহণ করব? অতঃপর তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! এ তোমাদের কাছে যতটা নগণ্য, আল্লাহর কাছে দুনিয়া তার তুলনায় আরো বেশি নগণ্য। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৩০৮)
২. ভোগ-বিলাস জীবনের লক্ষ্য নয় : পার্থিব ভোগ-বিলাস মুমিন জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ আশু সুখ-সম্ভোগ কামনা করলে আমি যাকে যা ইচ্ছা এখানেই সত্বর দিয়ে থাকি; পরে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারণ করি যেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত ও অনুগ্রহ থেকে দূরীকৃত অবস্থায়।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১৮)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি পার্থিব জীবন ও তার শোভা কামনা করে, দুনিয়াতে আমি তাদের কাজের পূর্ণ ফল দান করি এবং সেখানে তাদের কম দেওয়া হবে না।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ১৫)
আল্লাহ আমাদের উভয় জগতের কল্যাণ দান করুন। আমিন।
Israt / Israt