ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

মডেল তিন্নির ঘাতক অভির সন্ধান পাচ্ছে না ইন্টারপোল


আব্দুল লতিফ রানা photo আব্দুল লতিফ রানা
প্রকাশিত: ২৮-৫-২০২৪ দুপুর ৪:৫৪

বহুল আলোচিত মডেল কন্যা তানিয়া মাহবুব ওরফে তিন্নি খুনের ঘাতক পলাতক আসামি গোলাম ফারুক ওরফে অভি’র সন্ধান করতে পারেনি আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা (ইন্টারপোল)। নব্বই দশকের আলোচিত ছাত্রনেতা গোলাম ফারুক অভি মডেল কন্যা তিন্নির সঙ্গে পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্কের পর অবৈধ মেলা এবং জোরপূর্বক বিয়ের চাপ দিয়েছিল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সংবাদ মাধ্যমে তার অপকর্ম ফাঁস করার হুমকি দেওয়ায় পরিকল্পিতভাবে বুড়িগঙ্গা নদীর চীন মৈত্রী সেতুর উপর থেকে ফেলে তাকে খুন করা হয়। এই মডেল কন্যা তিন্নি হত্যা মামলায় ২০০৭ সালে ও ২০১৮ সালে ইন্টারপোল অভির বিরুদ্ধে লাল নোটিশ জারি করে। কিন্তু দীর্ঘ ২১ বছর ৬ মাস ১৭ দিন পর তার ঘাতক অভির সন্ধান করতে পরেনি আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল। 
বাংলাদেশ পুলিশের ইন্টারপোলের দায়িত্বে এআইজি ‘এনসিবি’ আলী হায়দার চৌধুরী সকালের সময়কে জানান,  গোলাম ফারুক অভি ও জামায়াত নেতা মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের সন্ধান ইন্টাপোলেল কাছে নেই। যদি তাদের অবস্থান জানা থাকতো, তাহলে তাদের ধরে আনা যেত। তিনি আরো বলেন, তিনি এখানে নুতন দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই বিষয়গুলো ভাল করে দেখে বলতে হবে। আর দীর্ঘ দিনের এই বিষয়গুলো পুলিশের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত দেওয়া আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। 
জানা গেছে, গত ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর আলোচিত এই হত্যামামলার একমাত্র আসামি গোলাম ফারুক অভিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এরপর ২০১০ সালের ১৪ জুলাই ঢাকার ৭ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এই মামলায় অনুপস্থিত অভির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। নব্বইয়ের ছাত্র নেতা গোলাম ফারুক অভি সামরিক শাসক এরশাদের সঙ্গে আপস করে যোগ দেন তার দল জাতীয় পার্টিতে। সেই ধারাবাহিকতায় এরশাদের দলের টিকিট নিয়েই হয়েছিলেন নির্বাচিত সাংসদ। রাজনীতির সঙ্গে অপরাধ জগতে আলোচিত সেই অভির সঙ্গেই পরকীয়ায় জড়িয়েছিলেন মডেল তানিয়া মাহবুব তিন্নি। অভির সঙ্গে সম্পর্কের জেরেই তিন্নি তার স্বামী সাক্কাত হোসেন পিয়ালের ঘর ছেড়েছিলেন। এমনকি মাত্র দেড় বছরের মেয়েকেও রেখে আসেন অভির কাছে। কিন্তু একপর্যায়ে তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিলেও পরে তাকে এড়িয়ে চলতে থাকে অভি। অপরদিকে স্বামীকে তালাক দেওয়ার কয়েক দিন পরই তাকে ব্রিজ থেকে ফেলে দেওয়া হয়। এতে বুড়িগঙ্গার ১ নম্বর চীন মৈত্রী সেতুর ওপর থেকে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। তিনি তার লাশ পানিতে না পড়ে সেতুর পিলারের উঁচু অংশে গিয়ে পড়ে। পরদিন সকালে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ তার লাশটি উদ্ধারের পর মিটফোর্ড মর্গে পাঠায়। কিন্তু পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় মর্গে চার দিন রাখার পর ১৫ নভেম্বর অজ্ঞাত হিসেবে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয় তিন্নিকে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি ছোট্ট সংবাদের সূত্র ধরে তিন্নির স্বজনরা আঞ্জুমানে মুফিদুলে যান। সেখানে ছবি দেখেই তারা কবর দেয়া অজ্ঞাতনামা লাশটি তিন্নির বলে নিশ্চিত হন। এরপরই ঘটনাটি ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
এর আগে নিহত তিন্নির চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম কেরানীগঞ্জ থানায় একটি ‘মিসিং ডায়েরি’ করেন। লাশ উদ্ধারের দিন একই থানায় একটি হত্যা মামলা করেন কেরানীগঞ্জ থানার তৎকালীন সহকারী উপ-পরিদর্শক শফি উদ্দিন। আর মামলায় আসামি করা হয় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে। এরপর ২০০২ সালে ২৪ নভেম্বর মামলাটি চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে সিআইডিকে তদন্তভার দেওয়া হয়। সেই তদন্তেই ধীরে ধীরে সামনে চলে আসে গোলাম ফারুক অভির নাম। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের তৎকালীন এএসপি মোজাম্মেল হক একমাত্র আসামি হিসেবে সাবেক সাংসদ গোলাম ফারুক অভির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আর উক্ত মামলায় ৪১ জন সাক্ষী ও ২২টি আলামত জব্দ করা হয়। 
সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ১৪ জুলাই ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তিন্নি হত্যা মামলায় আসামি অভির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। পরে অভিযোগপত্রভুক্ত ৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। অপরদিকে তিন্নি হত্যা মামলা ছাড়াও অন্য একটি হত্যা মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে কানাডায় পাড়ি জমায় অভি। তারপরও তিন্নির পরিবার এখনো বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছেন। তাদের প্রত্যাশা, অভির উপযুক্ত শাস্তির রায় এবং তাকে বিদেশ থেকে এনে সেই শাস্তি কার্যকর করা হবে। 
আদালত সূত্র জানা যায়, দীর্ঘ প্রায় ২১ বছর আগে খুন হন তিন্নি। 
আলোচিত ঘটনায় প্রথমেই গ্রেফতার হন তিন্নির স্বামী পিয়াল, এবাদুল্লাহ ওরফে স্বপন গাজী, গাজী শফিউল্লাহ ওরফে তপন গাজী, মো. শফিকুল ইসলাম ওরফে জুয়েল এবং সোমনাথ সাহা বাপ্পীসহ কয়েকজন। একপর্যায়ে সিআইডির তদন্তে প্রমান না মেলায় তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। তখন কারাগারে বন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের স্বীকারোক্তিতেই ফাঁস হয় আসল গোমর। বেড়িয়ে আসে অভির নাম। আর তারপরই একমাত্র অভিকেই দায়ী করে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়। পরে ২০০২ সালে অভি পালিয়ে প্রথমে ভারত চলে যান। সেখান থেকে পালিয়ে কানাডায়।
আলোচিত ঘটনার ৭ বছর ৯ মাস পর অভির অনুপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়। মামলাটির ৩ নম্বর সাক্ষী তিন্নির পিতা সৈয়দ মাহবুব করিম। ২০১১ সালের ১০ই এপ্রিল আদালতে তার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সাক্ষ্যে আদালতকে তিনি জানান, অভিনয়ে আগ্রহী ছিল না তিন্নি। তিন্নির স্বামী পিয়ালই তাকে নানা কৌশলে অভিনয়ে আনে। একদিন পিয়াল তাকে ব্যাংককে শপিংয়ে পাঠায়। সেখানে বাবু নামে এক ভদ্রলোক তাকে সহযোগিতা করবে বলে জানানো হয়। সেই বাবুই ছিল অভি। এরপর অভির সঙ্গে তিন্নির সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে গভীর পরকীয়ায় রূপ নেয়। নির্মম মৃত্যুই তার পরিণতি ডেকে আনে। তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ না হতেই উচ্চ আদালতে অভির পক্ষে করা রিট পিটিশনে (নং-৯৫৩১/২০১০) নিম্ন আদালতে মামলাটির ওপর স্থগিতাদেশ দেয়া হয়।
পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র জানায়, কানাডার টরেন্টো থেকে অভি পাওয়ার অব অ্যাটর্নির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠিয়ে এক আইনজীবীর মাধ্যমে মামলাটির স্থগিতাদেশ চেয়ে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। যার রিট পিটিশন নম্বর ৯৫৩১/২০১০। বাংলাদেশে নিম্ন আদালতে চলমান মামলাটিতে অংশ নেয়ার জন্য (ওই দেশে অবস্থিত) বাংলাদেশ দূতাবাসে পাসপোর্ট চেয়ে পায়নি। আর পাসপোর্ট না পওয়ায় তিনি দেশে এসে মামলা চালাতে পারছেন বিধায় মামলার কার্যক্রম স্থাগিতাদেশ চাওয়া হয় অভির পক্ষে। ২০১১ সালের ২৩শে জুন হাইকোর্ট মামলাটির স্থগিতাদেশ দেন। এরপর দীর্ঘ দিন পর মামলার শুনানির কার্যক্রম শুরু হয়। মডেল তিন্নি হত্যা মামলায় তার চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম ২০২২ সালের ২৩ মার্চ আদালতে দেওয়া সাক্ষ্য দেন। আর তিন্নি বাবাও সাক্ষ্য দিয়েছেন। আলোচিত এ হত্যা মামলায় রায় ঘোষণার জন্য গত বছরের ১৫ নভেম্বর দিন ধার্য্য  ছিল। কিন্তু মামলার দুই সাক্ষী তিন্নির বাবা ও চাচা সাক্ষ্য দিতে চাইলে আদালত রায় মুলতবি করা হয়েছে। 
সুত্র জানায়, বহুল আলোচিত তিন্নি হত্যার রায়ের তারিখ একত্রিশ বার পেছানোর পর ঢাকা জেলা ৭ম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে রায় ঘোষণার জন্য ২০২১ সালের নভেম্বরের ১৫ তারিখ নির্ধারিত হয়। কিন্তু সেই তারিখেও রায় হয়নি। 
এতো কিছুর পরও মডেল কন্যা তিন্নি হত্যা মামলার আসামি অভি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন এবং দেশে ফিরে সক্রিয় রাজনীতিতে পুনরায় যুক্ত হবেন বলে তার নির্বাচনী এলাকা বরিশাল-২ এর অনেকেই বলে আসছেন। শুধু তাই নয়, প্রতি বছর ঈদের নামাজে তিনি মোবাইল ফোনে তার সহেযাগিদের সহযোগিতায় বক্তব্য দিয়ে থাকেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ঘনিষ্ঠ প্রশাসনের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, অভি দেশে ফিরলে তাকে বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে সরাসরি কারাগারে পাঠানো হবে। 

এমএসএম / এমএসএম

গণপূর্তের ইএম কারখানা বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ইউসুফের দুর্নীতির রাজত্ব

দুর্নীতিতে পিছিয়ে নেই এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীগন

‘এনবিআর’এ স্বৈরাচার সরকারের পালিয়ে থাকা চক্রের চক্রান্ত

প্রাণ ধ্বংসকারী কোম্পানি প্রাণ

বিসিএসআইআরের ৬ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনায় ভাগ বাটোয়ারা

কোতোয়ালীতে অপহৃত ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

রেজিস্ট্রি অফিসের প্রভাবশালী নকলনবিশের কাণ্ডঃ মন্ত্রীদের প্রভাবে চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

বিসিক এর নীরিক্ষা কর্মকর্তা সাবধান আলী হতে সাবধান!

কেরানীগঞ্জ উপজেলার রাজাবাড়ী রোডে অবৈধ এলপিজি বটলিং প্লান্ট এর সন্ধান

গডফাদার মুরাদ জং-এর বোন পরিচয়ে দলিল দাতা-গ্রহীতাদের জিম্মি করার অভিযোগ

গাজীপুরের কাশিমপুরে সরকারি খাস জমি ভূমিদস্যুদের দখলে

বগুড়ায় সাবেক অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে 'ফ্যাসিস্ট সিন্ডিকেটের' মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আইন যেন শুধু খাতা কলমে