ঢাকা মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫

কোনভাবেই থামছে না নৃশংস হত্যাকাণ্ড


আব্দুল লতিফ রানা photo আব্দুল লতিফ রানা
প্রকাশিত: ৯-৬-২০২৪ দুপুর ৩:৫১

নৃশংস হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। খুনের ধরণ ও ভয়াবহতার মাত্রা  দিন দিন বেড়েই চলছে। কোনভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না অপরাধীদের। গত প্রায় ত্রিশ বছরে সবচেয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ডগুলো দেশের সচেতনমহলকে ভাবিয়ে তুলছে। মানুষের প্রতি মানুষের হিংস্রতার মাত্রা প্রতিনিয়ত বেড়ে যাওয়ায় শান্তিপ্রিয় মানুষ শঙ্কিত, আতঙ্কিত, হতাশাগ্রস্ত ও উদ্বিগ্ন। আর এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে আস্থাহীনতা ও সন্দেহের কারণে বিকৃত মানসিকতা একের পর এক মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক সকালের সময়কে বলেন, বীভৎস খুনের অপরাধ একেকটি একেক রকম হচ্ছে। ব্যক্তি স্বার্থ ও ভুল বোঝাবুঝি যখন চূড়ান্ত পর্যায় পৌঁছায় তখনই এরকম ঘটনা ঘটছে। দুই পক্ষের মধ্যে যে পক্ষ শক্তিশালী বা প্রভাবশালী সেই পক্ষই এই বীভৎস ঘটনা ঘটাচ্ছে। তাছাড়া পারিবারিক মনোমালিন্যের কারণেও এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। এছাড়া, রাজনৈতিক শত্রুতার কারণে এরকম অপরাধ করা হচ্ছে। আর যাকে হত্যা করা হচ্ছে, তার পক্ষ যদি দুর্বল হন, তাহলে অপরাধীরা পার পেয়ে থাকেন। আর দেশে হত্যার পর পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা তেমন না হলেও বীভৎস হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড হচ্ছে। আর আইনগত বিষয়ের কারণে অনেকের আক্ষেপ থাকে। মানুষের মাঝে যখন স্থিতি পরিস্থিতি থাকে না, তখনো এই বীভৎস ঘটনা ঘটিয়ে আসছে বলে জানান তিনি। 

দেশের বেশ কয়েকটি বীভৎস খুনের ঘটনায় সরেজমিনে অনুসন্ধান চালিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, তাদের আপনজনকে মাঝে মধ্যে এখনো সেই দৃশ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। জানা গেছে, ত্রিশ বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিদারাবাদে জমি দখলের লোভে একই পরিবারের ৬ জনকে খুনের পর তাদের লাশ টুকরো টুকরো করে চুনামাটি মাখিয়ে ড্রামে ভরে তা বিলে ফেলা দেয়া হয়। এরপর পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ায় দুই ভাইকে খুনের পর লাশ ১২ টুকরো এবং সদরঘাটের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও তার ছেলেকে হত্যার পর ২১৬ টুকরো করা হয়। রাজধানীর দক্ষিণখানে মসজিদের ইমামকে খুনের পর লাশ টুকরো টুকরো করে গায়েবের চেষ্টা এবং সর্বশেষ বহুল আলোচিত ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে খুনের উদ্দেশ্যে প্রতিবেশী দেশে নিয়ে হত্যার পর ৮০ টুকরো করে তা গায়েব করা হয়েছে। রোমহর্ষক খুনের পর পশুর মত মানুষের লাশ টুকরো টুকরো করে হলুদ-মরিচ ও মশলা মিশিয়ে গায়েব করার এসব চেষ্টায় নিহতদের আপনজন ও স্থানীয়রাসহ দেশের অপরাধ বিশেষজ্ঞরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। 

গত ১৩ মে ঝিনাইদহ-৪ আসনের কয়েকবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য দুই শত কোটি টাকার প্রজেক্ট ও হণ্ডি এবং স্বর্ণ চোরাচালানীর বিরোধে বাংলাদেশ থেকে অপহরণের পর ভারতের কলকাতার নিউটাউনে নিয়ে খুনের পর তার দেহ ৮০ টুকরো করে গায়েব করা হয়েছে বলে সেখানকার পুলিশ জানিয়েছে। সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক সোনা চোরাচালানী চক্র বাংলাদেশী এক তরুণীর মাধ্যমে কলকাতার একটি ফ্ল্যাট বাড়িতে নিয়ে প্রথমেই এমপি আনারকে অচেতন করে। এরপর আপত্তিকর ছবি তোলার পর তাকে ভাড়াটিয়া কসাই দিয়ে লাশ টুকরো টুকরো করে। পরে শরীরের হাড় থেকে মাংস ছাড়িয়ে কিমা বানিয়ে তাতে হলুদ, মসলা ও ব্লিচিং পাউডারের মিশ্রন করা হয়। এরপর তিনটি ট্রলির মাধ্যমে লাশের টুকরোগুলো গুম করা হয়েছে বলে ঢাকার গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন। চাঞ্চল্যকর খুনের সঙ্গে একজন তরুণীসহ বাংলাদেশী ও ভারতীয়সহ মোট ৬ জন জড়িত। এই ৬ জন ৫ কোটি টাকার বিনিময়ে এমপি আনারকে কৌশলে ঢাকা থেকে অপহরণ ও খুন করেছে। এমপি আনারকে তার বন্ধু গোপাল বিশ^াসের বাসা থেকেই পরিকল্পিতভাবে একটি ট্যাক্সিক্যাব যোগে ঘটনাস্থলে নিয়ে ঘাতকরা খুন করে। চাঞ্চল্যকর এই খুনের ঘটনায় ঢাকার ডিবি পুলিশ ৩ জনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারা আদালতে দোষ স্বীকার করেছে। অন্যদিকে, ভারতের সিআইডি পুলিশ হত্যার পর নিহতের লাশ টুকরো টুকরো করা কসাই ও গুমের সহায়তাকারী শিমুল ভুইয়া, শিলাস্তি, তানভীর, শিমুল ভুইয়ার আত্মীয় কাজী কামাল আহমেদ বাবু এবং ভারতীয় পুলিশ ঘাতক শিয়ামসহ ট্যাক্সিক্যাব চালককে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।

ঝিনাইদহের একটি সূত্র জানায়, সরকার দলীয় এমপি আনার দীর্ঘ দিন ধরেই সীমান্তে স্বর্ণ, হুণ্ডিসহ চোরাচালানীর চক্র ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। আর বাংলাদেশের একাধিক শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গেও তার সখ্যতা ছিল। স্বর্ণ, মাদক ও অস্ত্র পাচারের মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক বনে যান তিনি। আবার ঝিনাইদহ শহরে কোন হিন্দুদের সম্পত্তি বিক্রি করতে চাইলে তিনি অন্য কোন হিন্দুদের ক্রয় করতে দিতেন না। এসব সম্পত্তি তার বিশ^স্ত হিন্দু বন্ধুদের দিয়ে ক্রয় করতেন। একপর্যায়ে বন্ধুদের কাছ থেকে নিহের ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে রেজিস্ট্রি করে নিতেন। সম্প্রতি ঝিনাইদহে তার বিশ^স্ত বন্ধু ও ব্যক্তিদের দিয়ে সম্পত্তি ক্রয় ও রেজিস্টি করা নিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল। এছাড়া, স্বর্ণ চোরাচালানের দুই শত কোটি টাকার বিরোধে পরিকল্পিত এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
অপরদিকে চাঞ্চল্যকর এই খুনের ঘটনায় ভারতের মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা ঢাকায় এসে গোয়েন্দা পুলিশের সাথে মামলার তদন্ত বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আর ঢাকা ডিবি পুলিশের প্রধান হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে ৩ জন মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তদন্তের জন্য ভারতে যান। ভারতীয় তদন্ত সংস্থা ঘাতক কসাইকে নিয়ে দফায় দফায় তল্লাশী চালিয়েছে। একপর্যায়ে যে ফ্ল্যাটে আনার খুন হন, সেখানকার টয়লেটের রিজার্ভ ট্যাংকি থেকে প্রায় ৪ কেজি কিমা মাংস উদ্ধার করে সিআইডি। যা ডিএনএ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা কাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশ-ভারতসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। ফলে নৃশংস খুনের ঘটনায় মানুষের মধ্যে বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের মাঝে আতংঙ্ক বিরাজ করছে। 

সদরঘাটে ২১৬ টুকরো লাশ: এর আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় বেপরোয়া হয়ে ওঠেছিল রাজধানীর ভয়ঙ্কর সব সন্ত্রাসীরা। তখন মার্কেট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সর্বত্র চাঁদাবাজি এবং টেণ্ডারবাজি, প্রকাশ্যে একের পর এক হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। আর চাঁদা না দেওয়ায় সদরঘাটের পাইকারি কাপড় ব্যবসায়ী হাজী শামসুল হক, তার ছেলে রাসেল ও তাদের ড্রাইভার মোয়াজ্জেমকে হত্যা করে। হাজী শামসুল হক ও তার ছেলে রাসেলের লাশ কেটে ২১৬ টুকরো করা হয়। পরে লাশের টুকরোগুলো নগরীর কলাবাগান ও গাজিপুর গজারির বন এলাকায় ফেলে দেয় তৎকানীল যুবদল নেতা সন্ত্রাসী কাজল।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০০৪ সালের মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে শুক্রবার জুমার নামাজের আগে ব্যবসায়ী শামসুল হককে ফোন দেয় যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী নেতা কাজল। পরে তিনি তার ছেলে রাসেল ও গাড়ি চালককে নিয়ে বাসা থেকে বের হন শামসুল হক। তখন স্ত্রীকে জুমার নামাজ শেষে বাড়িতে ফেরার কথা বলেন। কিন্তু তিনি আর ফিরে আসেননি। পরদিন গার্মেন্টস বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী শামসুল হকের ড্রাইভারের লাশ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। আর ব্যবসায়ী ও তার পুত্রের লাশের মস্তকবিহীন টুকরো টুকরো করা অংশ ধানমণ্ডির আবাহনীর মাঠের পাশ থেকে উদ্ধার হয়। আলোচিত নৃশংস এই খুনের পর শামসুল হকের স্ত্রী জানিয়েছিলেন, সন্ত্রাসী কাজলের ফোন পেয়ে তাকে দুই লাখ টাকা দিতে বের হয়ে ছিলেন তার স্বামী। একবার তার ছেলের সাথে ফোনে কথা হয়েছিল। ছেলে বলেছিল, তারা সাভারের দিকে যাচ্ছে। কিন্তু এরপর তারা আর বাসায় ফেরেনি। এই খুনের ঘটনায় রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষের মাঝে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছিল। যুবদল নেতা কাজল জগন্নাথ কলেজের কাজল নামে পরিচিত ছিল। তার বিরুদ্ধে পুলিশ সার্জেন্ট ফরহাদ, ঘড়ি ব্যবসায়ী সেলিমকে খুন সহ ডজনখানি মামলা ছিল। এ ঘটনায় পুরান ঢাকার সাবেক একজন কাউন্সিলর সকালের সময়কে জানান, চরম ক্রোধ, সম্পত্তির লোভ, অর্থ-বিত্ত ও ক্ষোভের কারণে পিতা-পুত্রকে খুনের পর ২১৬ টুকরো করা হয়েছিল।

গেন্ডারিয়ায় দুই ভাইয়ের ১২ টুকরো লাশ: এছাড়া, পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় সন্ত্রাসী সজল ও সুমনের নেতৃত্বে গেন্ডারিয়া রাইফেল্স ক্লাবে এসকে দাস রোড এলাকার মোহসিন ও সায়েম নামে দুই ভাইকে বিচারের নামে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। শুধু তাই নয়, হত্যার পর তাদের লাশ ১২ টুকরো করে গুমের জন্য রাইফেল্স ক্লাবের পাশের ড্রেনে ফেলে দেয়। তাদের লাশ উদ্ধারের পর পুরো দেশে ভয়ঙ্কর আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় নিহতের মামা চানমিয়া ওরফে গামা বাদি হয়ে মামলা করেন। উক্ত মামলায় ২ জনের ফাঁসির আদেশ ও ১০ জনের যাবত জীবন সাজা হয়। বহুল আলোচিত এই খুনের ঘটনায় এখনো স্থানীয়দের গা-শিউরে উঠছে বলে মামলার বাদি গামা সকালের সময়কে জানিয়েছেন। 

পিবিআইয়ের চিঠিতে খন্ডিত লাশের পরিচয় আবশ্যক: নৃশংস ও বীভৎস খুনের শিকার অনেকের পরিচয় উদ্ধার হলেও একই ব্যক্তির খন্ডিত দেহ ভিন্ন ভিন্ন জেলা হতে উদ্ধার হলেও তাদের পরিচয় দুই বছরেও শনাক্ত করতে পারেনি পিবিআই। পিবিআই জানায়, মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও খুনীদের আইনের আওতায় আনতে নিহতের পরিচয় জানা প্রয়োজন। পুলিশ জানায়, ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি সকাল ৭ টায় ফুরিদপুর সদরের বিলনালিয়া গ্রামের মাঠ থেকে আগুনে পোড়ানো খণ্ডিত দেহের মাথাসহ একটি হাত এবং একই দিনে ধামরাই থানার চন্দ্রাইল গ্রামে নাভির নীচ থেকে পা পযর্ন্ত খণ্ডিত দেহ উদ্ধার করা হয়।আবার একই মাসের ৩১ তারিখ একটি হাতসহ দেহের মাঝ খানের খণ্ডিত অংশ সাভারে সাদাপুর থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ফরিদপুর কোতোয়ালী থানা, ঢাকার ধামরাই ও সাভার মডেল থানায় পৃথক তিনটি মামলা হয়। আর উদ্ধারকৃত খণ্ডিত লাশের ডিএনএ পরীক্ষায় পুলিশ নিশ্চিত হন যে, খণ্ডিত দেহগুলো একই নারীর। যার ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়স হতে পারে। অপরাধীরা নিহতের আঙ্গুলের চামড়া পোড়ানোর কারণেও তার পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি তদন্ত কর্মকর্তাগণ। ঢাকা জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা অজ্ঞাতনামা ভিকটিমের পরিচয় সনাক্তের জন্য সংবাদ প্রচারের সহায়তা চেয়েছেন। আর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. আনোয়ার হোসেন সকালের সময়কে বলেন, নিহতের পরিচয় শনাক্তের জন্য অনেক চেষ্টা করা হচ্ছে। সংবাদপত্রে লেখালেখি করা হলে হয়ত নিহতের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব। আর পরিচয় শনাক্ত হলে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার  আলোচিত ৬ খুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাঁচগাঁও গ্রামে ১৯৮৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাতে কসাই তাজুলের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত। স্থানীয় শশাঙ্কের ঘরের জানালার লোহার রড ভেঙে অস্ত্রের মুখে শশাঙ্কের স্ত্রী বিরজাবালাসহ ৫ সন্তানকে জিম্মি করে।বাঁচার জন্য তারা গগনবিদারী চিৎকার করেন। তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলেও দুর্বৃত্তদের সামনে দ্বারাতে তখন কেই সাহস পায়নি। গ্রামবাসীর সামনেই তাদেরকে নৌকায় তুলে নেয়। পরে ধুপজুড়ি বিলে নিয়ে নৌকার ওপরই ছয়জনকে কুপিয়ে টুকরো টুকরো করে। তাদের খণ্ডিত দেহে হলুদ, মশলা ও চুনামাটি দিয়ে ড্রামে ভরে পানিতে ফেলে দেয়।ঘটনার ১০ দিন পর জেলেদের জালে একটি ড্রাম উঠলে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মর্মান্তিক সেই ঘটনায় পুরো দেশে চাঞ্চল্যের সৃস্টি হয়। আর ঘটনাস্থলেই প্রধান ঘাতক তাজুলের বোন জামাই বাদশা উপস্থিত হলে তাকে আটকের পর পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয়রা। আটক বাদশার স্বীকারোক্তিতে তাজুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, এনু মিয়া, ফিরোজ মিয়া, ফিরোজ মিয়া (২), হাবিব মিয়া, আবুল হোসেন, জজ মিয়া, বাদশা মিয়া, মো. কাজল, ফারুক মিয়া, আবুল কাশেমকে আসামি করে। 

তৎকালীন সেখানকার ইউপি সদস্য ধন মিয়া বাদী হয়ে মামলা করেন। ১৯৯০ সালে আদালত ৯ জনের ফাঁসি, ২৭ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও দুজনকে বেকসুর খালাস দেন। ঘাতক তাজুল রায়ের পর তাবলীগে  ৪০ দিনের চিল্লার জামাতের নামে সারাদেশে পালিয়ে বেড়াতেন। একপর্যায়ে কাকরাইল মসজিদের সামনে থেকে সিআইডির হাতে গ্রেফতার হন তাজুল।  খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালের ১১ আগস্ট রাত ২টা ১ মিনিটে কুমিল্লা কারাগারে তাজুল আর বাদশার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। খুনি কসাই তাজুলের প্রতি মানুষের ঘৃণা-ক্ষোভ এতটাই ছিল যে, তার ফাঁসি কার্যকরের পর ঘরে ঘরে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। তার লাশ কারাগার থেকে বের করার সময় ক্ষুব্ধ মানুষ থুঁথু দিয়েছেন। আবার ছুড়ে মেরেছে জুতা। এর পরেও তাদের ক্ষোভ এখনো প্রশমিত হয়নি বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হরষপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সারওয়ার রহমান ভুয়া সকালের সময়কে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কার্জন হল জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মামুুর রশিদ সকালের সময়কে বলেন, অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা, তাদের জানমালের ক্ষতিসাধন ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট করাকে কবিরা গুনাহ আখ্যায়িত করে। এর ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কারণ ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকে হত্যা করল’। তিনি আরো বলেন, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তির পরিবার আপনজনের ক্ষমা এবং আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে। যদি তার আপনজন ক্ষমা করেন, তাহলে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করতে পারেন বলে জানান তিনি।

এমএসএম / এমএসএম

স্নায়ু বিকাশ প্রতিবন্ধীদের সুইড বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা লোপাট

বিসিক মুদ্রণ শিল্পনগরী প্রকল্পের মাটি ভরাটের প্রিলেভেল সার্ভে কাজে প্রকল্প পরিচালকের অনিয়ম-দুর্নীতি

মাদারীপুরের আলোচিত মিথ্যা মুক্তিযোদ্ধার কোটায় একই পরিবারের চারজন করছেন সরকারি চাকরি

নিষিদ্ধ হলেও হিযবুত তাহরীরের প্রকাশ্যে কর্মসূচী ঘোষণা

মিরপুর ফায়ার সার্ভিসের ট্রেনিং কমপ্লেক্সের অফিসার তৌহিদুলের শাস্তি দাবি

বিসিকের প্রকল্প পরিচালক মোঃ রাকিবুল হাসানের ঘুস-দুর্নীতি সমাচার

জমি ক্রয়ের নামে ভাইয়ের বিরুদ্ধে প্রবাসি স্বামীর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

বিআইডব্লিউটিএ বন্দর শাখার সাবেক পরিচালক সাইফুলের টাকার উৎস কি?

নার্গিসকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি দেওয়া হোক

গাজীপুর গণপূর্তের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিমের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকের ঢাকায় ১৯ বছরের লুটপাটের রাজত্ব

মসজিদের নামে জমি দখলের চেষ্টা করছে মল্লিক বিল্ডার্স

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ডিজি আবু সুফিয়ান এর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে টেন্ডার বাতিল এর অভিযোগ