ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে একজন কর্মীর প্রত্যাশা


মো. নাহিদ পারভেজ photo মো. নাহিদ পারভেজ
প্রকাশিত: ২৬-৬-২০২৪ দুপুর ৪:৩১

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী প্রধানতম দল। দলটি ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতাসীন। ২৩ জুন ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের গোড়াপত্তন হয়। পরবর্তীসময়ে কিছুদিন এর নাম ছিল নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। তবে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য ১৯৫৫ সালে এর ‘আওয়ামী লীগ’ নামকরণ করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগ ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট-সরকার গঠন করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে জয়লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকদের স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব ও শোষণের ফলস্বরূপ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালে আবারও সরকার গঠন করে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩০টি আসন পেয়ে  শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করে।  ১৯৭০ সাল থেকে দেশের মানুষের আশা ও ভরসার আশ্রয়স্থল আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা। 
নদী মাতৃক দেশে নৌকায় ভর করে নৌ-পথে দেশের মানুষের আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। নৌ-পরিবহনে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর খুব শীঘ্রই দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরানোর প্রধানতম হাতিয়ার হিসেবে গণ্য হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচিত হতে চলেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ৯টি মেগা প্রকল্প এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, কক্সবাজার রেল সংযোগ প্রকল্প, আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ প্রকল্প দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার পুরো চিত্র পাল্টে দিয়েছে। ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে এখন আলো জ্বলছে, এর চেয়ে খুশির খবর আর কি হতে পারে! তরুণদের জন্যে দেশে অসংখ্য কর্ম সংস্থান তৈরির অনেক প্রকল্প ইতোমধ্যেই সরকার হাতে নিয়েছেন। ঠিকমতো বাস্তবায়ন হলে দেশের বেকার সমস্যার আমূল পরিবর্তন সাধিত হবে বলে সবাই আশা করছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশের পুরো চিত্র পাল্টে দিয়েছেন। তার দেখানো পথে হাঁটছে বাংলাদেশ আর সেই দিন বদলের পালা দেখছে গোটা বিশ্ব। সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্যে তিনি ভিজিএফ  (কার্যকারিতা গ্যাপ ফান্ডিং) কার্ড, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, শিক্ষা উপবৃত্তি, প্রতিবন্ধী ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পসহ আরও অনেক সুযোগ সুবিধা দিয়েছেন। বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা তিনি তৈরি করেছেন। উত্তর বঙ্গের মানুষের জন্যে তিনি দিয়েছেন উত্তরা ইপিজেড যা মঙ্গা পীড়িত এলাকাটির মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। মঙ্গা আজ দূর হয়েছে। পুরো উত্তর বঙ্গের সাধারণ মানুষের জীবন চিত্র যেন পাল্টে গেছে। যেই মানুষগুলো কিছুদিন আগেও তিন বেলা ঠিকমতো খেতে পারতো না, কাজের আশায় বাসের ছাদে চড়ে রাজধানী’তে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে ছুটে আসতো, মেয়েরা বাসাবাড়িতে কাজ করতো। তাদের অনেকেই এখন নিজ গ্রামে সুখে-শান্তিতে বসবাস করছে, ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পড়াচ্ছে, ঘরে ঘরে এখন টিভি ফ্রিজ এমনকি ওয়াশিং মেশিন। মঙ্গা এলাকার অনেকেই এখন প্লেনে যাতায়াত করে।  রাজধানী বাসীকে জননেত্রী দিয়েছেন মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। নিন্দুকেরাও এখন যুগান্তকারী এই সাফল্যের সুফল ভোগ করছে। ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বদলে গেছে। সময় ও খরচ বাঁচিয়ে মানুষের অর্থনৈতিক গতি সচল হয়েছে। দক্ষিণের সাথেও পুরো দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন হয়েছে স্বপ্নের উড়াল পদ্মা সেতুর মাধ্যমে। যোগাযোগের এই সহজীকরণ এর ফলে পুরো দক্ষিণ অঞ্চলের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটেছে। রাতারাতি অনেক শিল্প কারখানা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু এখন পদ্মার আশেপাশের এলাকাগুলো। এতো এতো সাফল্যের পরেও সরকারের উপর খুশি হতে পারছেন না অনেকেই। কারণ দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকলে তার কর্মীরা ছোটোখাটো ভুল করতেই থাকে। সেগুলো দলের কারো চোখে পড়ে না। সবাই ভাবে এরা’তো আমাদেরই লোক। কিন্তু এক সময় এগুলোই জন-দুর্ভোগের নিমিত্ত হয়। কিছু ব্যক্তি/গোষ্ঠীর সুযোগের সৎ ব্যবহার দলের জন্যে বড়ো ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়াও বর্তমানে আমরা দিবস ভিত্তিক রাজনীতি’তে অভ্যস্ত। সারা বছর সাংগঠনিক তৎপরতা খুব বেশি পরিলক্ষিত হয় না। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও দিবসগুলোতে আমরা দল বেঁধে মিছিল মিটিং-সভায় যোগ দিয়ে মনে করি সব দায়িত্ব শেষ। কিন্তু সংগঠন’তো একটি চলমান প্রক্রিয়া। দিবসের বাইরেও সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের বেশকিছু দায়বদ্ধতা আছে। সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েই’তো আমরা আজ এতদিন ক্ষমতায়। তাই সাংগঠনিক দায়িত্বের সুষ্ঠ বণ্টন অতি জরুরি। সব ক্ষমতা এখনো সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক অথবা জন-প্রতিনিধিদের হাতে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কি এরকম সংগঠন চেয়েছিলেন? জননেত্রীর লক্ষ্যগুলো খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন তার আন্তরিকতার আসলে কোনো অভাব নেই। তিনি নিরলসভাবে চেষ্টা করে চলেছেন। তাই’তো সোনার বাংলার দ্বার প্রান্তে বাংলাদেশ। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ভুল শুধরে সামনে এগুনোই এখন সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ। দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা নিয়ে আরও বেশ কিছুদিন কাজ করতে হবে। সব মানুষকে শিক্ষা ও চিকিৎসার আওয়াতায় নিয়ে আসতে হবে। ধনী-গরিব বৈষম্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশচুম্বি মূল্য সব সাফল্যকে দিন দিন ম্লান করে দিচ্ছে। কৃষকরা তাদের ফসলের যথাযথ মূল্য পাক, সিন্ডিকেট বাণিজ্যের সঠিক মনিটরিং হোক, কারণ এর সাথে পণ্যের দাম সম্পর্কযুক্ত। ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করে সবাইকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। যে কোনো অসংগতি চোখে পড়লেই কথা বলতে হবে। দশে মিলে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে, সোনার বাংলা গড়তে হবে। তাহলেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী প্লাটিনাম জয়ন্তী সফল হবে।  খুশির বিষয় হলো মানবতার মা দেশরত্ন শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলো বড় বড় দেশের মানুষকেও হতবাক করেছে। যেই মানুষগুলো কিছুদিন আগেও রাস্তা ও গাছের নীচে আশ্রয় খুঁজতো। তারা এখন জমিসহ বাড়ি পেয়ে মহাখুশি। দুর্ভাগ্য আমাদের এই মানুষগুলোর হাসিমুখ জাতির পিতা দেখে যেতে পারেনি। ১৯৭৫ সালে ঘাতকের নির্মম বুলেট তার সব স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে এবং সেই সাথে তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যদের হত্যা করে তারা হয়তো ভেবেছিল আবার একটি নতুন পূর্ব পাকিস্তান কায়েম করবে। আসলে তখন পুরো জাতি ঘুমিয়ে ছিল। কিন্তু বঙ্গরত্ন, হে জননেত্রী আমরা মুজিব সৈনিক এখন জেগে রবো.. অতন্দ্র প্রহরীর মতো তোমায় পাহাড়া দিব। তুমি জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দুর্বর গতিতে এগিয়ে চলো।  তোমার দেখানো পথ ২০৪১ এর ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশের বাস্তবায়ন এখন সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি। বঙ্গবন্ধু ফুলের মালা চায়নি, চেয়েছিল দেশের সাধারণ মানুষের হাসি। যেই হাসি তুমি ফিরিয়ে দিয়েছো। তোমাকে স্যালুট। জয় বাংলা। জয়তু শেখ হাসিনা ।

লেখক: কলামিস্ট ও রাজনীতিবিদ

 

এমএসএম / এমএসএম

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া

মানবিক সংকটের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব