সিকদার হাসনাত স্বপনেই বেপরোয়া প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তার
ঢাকার মিরপুর হযরত শাহ আলী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তার নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই, অনিয়ম ও দুর্নীতি যেন গ্রাস করে ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটিকে । গত ২৭-০৪-০২ তারিখে তিনি সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পেলেও প্রধান শিক্ষিকার চেয়ার দখল করে নেন । তৎকালীন শিক্ষা অফিসার ও ম্যানেজিং কমিটির প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়, অবৈধভাবে তিনি সহকারী শিক্ষিকা,সহকারী প্রধান শিক্ষিকা ও সর্বশেষ প্রধান শিক্ষিকার পদ বাগিয়ে নেন ।
চেয়ার দখল করেই তিনি, তার ভিত মজবুত করার জন্য গড়ে তোলেন একের পর এক লাঠিয়াল বাহিনী । যার নেতৃত্বে ছিলেন মোঃ ওয়াহেদ আলী শিকদার, সাবেক সভাপতি ও এমপি আগা খান মিন্টুর ডান হাত হিসেবে পরিচিত । মোঃ সাইফুল ইসলাম খান স্বপন ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সভাপতি ও এমপি আগা খান মিন্টুর হাত ধরেই তার উত্থান ।
ও আবুল হোসাইন হাসনাত , শাহ আলী থানা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সদস্য, তারা সকলে মিলে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে বিতর্কিত প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তারের আজ্ঞাবহ হয়ে তারা বাগিয়ে নিয়েছিলেন ঐতিহাসিক এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য পদ । দীর্ঘ ১৬ থেকে ১৮ বছর ম্যানেজিং কমিটিতে দায়িত্ব পালন করলেও ,প্রতিষ্ঠানের কোন উপকার না হলেও তারা ফেঁপে ফুলে হয়েছেন কলা থেকে কলা গাছ ।
স্কুলের বরাদ্দ না থাকলেও, প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তারের ব্যক্তি ক্ষমতা বলে বিদ্যালয়ের মার্কেটে বাগিয়ে নিয়েছেন ৭/৮ টি করে দোকান । সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, কোন বরাদ্দপত্র না থাকলেও দোকান নম্বর-এ ৮০,৮১,৮২ দীপু মনির খালাতো ভাই পরিচয় দান কারী বিপুল পাটোয়ারীর ভাই শাকিল পাটোয়ারী নামে একজন দখল করে ব্যাবসা পরিচালনা করছেন । দোকান নম্বর-সি ৬৩,৬৪, ৬৭,৬৮,৬৯ দোকানের কোন বরাদ্দ না থাকলেও, আবুল হোসাইন হাসনাত ও তার ছোট ভাই আবুল কাশেম সুমন ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন । দোকান নম্বর সি-৬৫,৬৬ ও বি-৭৭ ওয়াহেদ আলী সিকদার দখল নিয়ে ভাড়া দিয়ে খাচ্ছেন ।
মার্কেটের ৭০ টি দোকানে অনুসন্ধান করে জানা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তারের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বরাদ্দপত্রের কোনো কাগজপত্র না দিয়েই, মৌখিকভাবে , বিনা রসিদে এক একটি দোকান থেকে ২৫ মাসের ভাড়া বাবদ অগ্ৰিম নগদ, সাড়ে ৩ লক্ষ থেকে সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন । ৪৩ টি দোকানের তালিকা অনুসন্ধানী টিমের নিকট সংরক্ষিত ।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তারের লাঠিয়াল বাহিনীর অন্যতম এই তিনজনের নানা দুর্নীতির কাহিনী । প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা এবং পরে এমপি আগা খান মিন্টুর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ওয়াকফ কৃত সম্পত্তির প্রতিষ্ঠানের দাতা সদস্য হিসাবে মোঃ ওয়াহেদ আলী শিকদার ১৮ বছর যাবত ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হিসেবে ছিলেন । মোঃ সাইফুল ইসলাম স্বপন ও আবুল হোসেন হাসনাত তারাও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন । এই সিন্ডিকেটের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়, মোঃ ইসমাইল ও অফিস সহকারি হিমেল (মামুন) এই ভাড়ার টাকাগুলো তুলে সিন্ডিকেটের হাতে দিতেন ।
নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে,বিগত দিনের ফ্যাসিস্ট আমলে, প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তার তার পদ টিকিয়ে রাখতে, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির খালাতো ভাই হিসেবে পরিচিত বিপুল পাটোয়ারীর মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রীকে দেড় কোটি টাকা উপঢৌকন হিসেবে পাঠান, এবং প্রত্যেক মাসে বিপুল পাটোয়ারী কে ৫০ হাজার টাকা করে নগদ দিতেন ।
তারপরে অবৈধ সরকারের নির্বাচনে মাইনুল হোসেন খান নিখিলের এমপি নির্বাচনের সময় প্রধান শিক্ষিকার পদ টিকিয়ে রাখতে ৫ কোটি , নিখিলের ডানহাত হিসেবে পরিচিত ও বন্ধু খায়রুলকে নগদ পাঁচ লক্ষ টাকা এবং তার স্ত্রীকে পাঁচ ভরি স্বর্ণ উপঢৌকন হিসেবে পাঠান । একাধিক শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিগত সরকারের আমলে এই সিন্ডিকেট এতই বেপরোয়া ছিল যে, স্কুল চলাকালীন সময়ে প্রধান শিক্ষিকার রুমের সামনে তারা ধূমপান করতেন এমনকি সন্ধ্যার পরে মদের আসর বসাতেন ।
এসব বিষয়ে জানতে মোঃ ওয়াহেদ আলী শিকদারের নিকট ফোন দিলে, তিনি ব্যস্ত আছেন পরে কথা বলবেন । এ বিষয়ে কোনো কথা থাকলে সাবেক সভাপতি আগা খান মিন্টু, আরেক সভাপতি মাজহারুল কবীর মিধাত, প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তারের নিকট থেকে বিস্তারিত জানতে বলেন । সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আবুল হোসেন হাসনাতের ফোনে বারবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি ।
মোঃ সাইফুল ইসলাম খান স্বপনের ফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি । এ ব্যাপারে হিমেল (মামুন) ও ইসমাইলের সঙ্গে ফোনে কথা বললে তারা প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন । এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি, সিটি কর্পোরেশন অঞ্চল-২ এর নির্বাহী পরিচালক জুলকার নায়ন কে ফোন দিলে তিনি মেসেজে লিখেন, বিষয়গুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি দেখে,উনাদের জানানো হয়েছে। উনাদের সাথে যোগাযোগ করুন।। তদন্ত উনারা করবে।।কোন সমস্যা পেলে উনারা সভাপতি সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জানাবে।
জানা যায় প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তার তার অপকর্ম আড়াল করতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন । জাতীয় দৈনিক সকালের সময় পত্রিকায় একাধিক নিউজ হওয়ার পর,গত ১৬/০২/২৪ তারিখ বৃহস্পতিবার জামায়াতে ইসলামী নিয়ন্ত্রিত দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় তিনি নিউজের প্রতিবাদ ছাপিয়েছেন বলে জানা যায় ।
উল্লেখ্য যে, প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তারের স্বামী জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন ।
এসব বিষয়ে জানতে নার্গিস আক্তারের ফোনে ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি ।প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তার যখন নিয়োগ পেয়েছিলেন তখন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন,আগা খান মিন্টু, তারপর আগা মিন্টু এমপি হওয়ার পরে সভাপতি হন তার মেয়ের জামাই মাজহারুল ইসলাম মিধাত, তারপর এমপি নিখিল হওয়ার পরে সভাপতি হন প্রিন্স গ্রুপের মালিক কাজী রুহুল আমিন ।
পরবর্তীতে ঐতিহাসিক ৫ই আগস্ট এর ছাত্র জনতার বিজয়ের পর সরকারিভাবে দায়িত্ব পান সিটি কর্পোরেশন অঞ্চল -২ এর( যুগ্ম সচিব পদমর্যাদা) জুলকার নায়ন ।
প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তার কে রক্ষা করতে তাদের সহ জড়িত সিন্ডিকেটের কি কি ভূমিকা ছিল বা আছে, সেই অজানা তথ্য নিয়ে আসছি পরবর্তীতে ।
এমএসএম / এমএসএম