বেনাপোলে ভিসা জটিলতায় বাণিজ্য ও রাজস্ব ঘাটতি

দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরে ভারতীয় ভিসা জটিলতার কারনে দু-দেশে বাণিজ্য ঘাটতি চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে গত ৬ মাসে বেনাপোল কাস্টমসে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতি ৩২৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। গেল বছরের (২০২৩-২৪) ৬ মাসে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৮ লাখ ২৪ হাজার ১২৩ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য। সরকার পতন ভারতীয় ভিসা জটিলতা আর বাণিজ্যে নানান প্রতিবন্ধকতা এ অবস্থার জন্য দায়ী বলছেন ব্যবসায়ীরা।
কাস্টমস সূত্র থেকে জানা যায়, ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি হয় তার ওপর প্রতিমাসে নিদিষ্ট পরিমাণে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে থাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের গেল ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বেনাপোল কাস্টমসে এ লক্ষ্যমাত্রার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ২ হাজার ৭৭৭ কোটি ৯ লাখ টাকা। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আদায় হয়েছে ৩২৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা। তবে ৫ই আগষ্ট সরকার পতনের পর অন্তবর্তীকালিন সরকার দায়িত্ব গ্রহনের পর বাণিজ্য সম্প্রসারনে নানান উদ্যোগ নেয়। গত দুই মাসে আগে বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য বেনাপোল বন্দরের শুণ্য রেখায় চালু করা হয় বন্দর কার্গোভেহিকেল টার্মিনাল ও বন্দরে বসানো হয় স্ক্যানিং মেশিন। দ্রুত পণ্য খালাস ও বাণিজ্য সম্প্রসারনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরের উদ্যোগে কমিটি গঠন করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। যার ফলে আগামীতে সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমদানি-রফতানি বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখবে। বেনাপোলে আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে শিল্পকলকারখানার কাঁচামাল, তৈরি পোশাক, গার্মেন্টস, শিশু খাদ্য, মাছ,ফল,জুয়েলারী পণ্য, কেমিকেল,মটরপাটর্স সহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য। আর রফতানি পণ্যের মধ্যে পাট, পাটের তৈরি পণ্য, গার্মেন্টস, তৈরি পোশাক, কেমিকেল, বসুন্ধারা টিসু, মেলামাইন, সুপারী, উল্লেখ্য যোগ্য।
বেনাপোল কাস্টম সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪১৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, আদায় হয়েছে ৪১৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। আগষ্টে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, আদায় হয়েছিল ৪০১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা, আদায় করা হয় ৪৮৯ কোটি ১১ লাখ টাকা। অক্টোবর মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৯৮ কোটি ১ লাখ টাকা, আদায় হয় ৫২৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। নভেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৯৯ কোটি টাকা, আদায় করা হয় ৬১৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এবং ডিসেম্বর মাসে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৯৭ কোটি টাকা, সেখানে আদায় হয়েছিল ৭৭৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। তবে সদ্যসমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১৬ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আয় হয়েছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা। সেখানে তারা আয় করেছিল ৬ হাজার ১৬৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এ সময় আমদানি হয়েছিল ১৭ লাখ ২১ হাজার ৭৮০ টন পণ্য।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমান ভারতে ভিসা জটিলতা, ব্যাংকে ডলার সংকট ও দামের উর্ধ্বগতি কোনভাবে নিয়ন্ত্রণে না আসায় আমদানিকারকেরা আমদানি করতে পারছে না। বর্তমান ভারতীয় সরকার বাণিজ্য ভিসা বন্ধ রেখেছে ফলে ব্যবসায়ীরা ভারতে যেতে পারছেন। পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে পণ্যের গুনাগুন দেখতে হলে ফ্যাক্টারী ও যথাযথ স্থানে যেতে হয় ব্যবসায়ীদের কিন্তু ভিসা বন্ধ থাকায় যেতে পারছেনা। দ্রুত এসব সংকট না কাটলে বছর শেষে আমদানির পরিমাণ আরো কমে বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতির কবলে পড়তে হতে পারে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, বছরে ভারত থেকে আমদানি হয় ৫০ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের পণ্য এবং ৮ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের পণ্য রফতানি হয়ে থাকে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেশির ভাগ আমদানিকারকেরা বেনাপোল বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী। তবে পণ্য দ্রুত খালাস নানান প্রতিবন্ধকতায় হয়রানি হতে হয়। ব্যবসায়ীদের গুরুত্ববুঝে বন্দর আধুনিকায়ন করা জরুরী। দেশের চট্রগ্রাম,মোংলা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ গঠন করে যেমন উন্নয়ন হয়েছে তেমনি ‘বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ’ বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিলে দেশের বাণিজ্যে সম্প্রসারন ব্যপকহারে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি। সাথে সাথে বন্দরে অবকাঠামো উন্নয়ন হলে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের যুগ্ম-সম্পাদক এজাজ উদ্দিন টিপু জানান, ডলার সংকটসহ নানা প্রতিকুল পরিবেশে গত কয়েক বছর ধরে দেশে ব্যবসায়ীক মন্দাভাব বিরাজ করছে। আমদানি কম হলে রাজস্ব আদায়ও কম হবে। তবে বেনাপোল বন্দরেও রয়েছে অনেক সমস্যা। বেনাপোল বন্দরে নেই প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। এতে করে পণ্য খালাসে গতি কমে যাচ্ছে। এছাড়াও আগস্টের পর থেকে বেনাপোল কাস্টমসে হয়রানি ও উৎকোচ বেড়েছে দ্বিগুণ পরিমাণ। সাধারন ব্যবসায়ীরা কাস্টমসের এক শ্রেণী কর্মকর্তাদের নানা হয়রানিতে অতিষ্ঠ। কেমিকেল টেস্ট, এইচ এস কোড পরিবর্তন, জরিমানার ভয় দেখিয়ে যে ভাবে পারছে উৎকোচ আদায় করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক মামুন কবীর তরফদার জানান, ইতিমধ্যে বেনাপোল বন্দরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ সমাপ্ত হয়েছে। পুরো বন্দরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি সব কাজ শেষ হলে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
বেনাপোল কাস্টম হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার এইচ এম শরিফুল হাসান জানান, গেল (জুলাই-আগস্ট) মাসে দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার কারণে ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি থেকে বিরত ছিলেন। ফলে আমদানি বহুলাংশে কমে গেছে। আর আমদানি কমলে আমাদের রাজস্ব আদায়ও কমে যাবে এটা স্বাভাবিক। এখন ডলারের পরিস্থিতিও স্থিতিশীল। তবে গেল দুইমাস (নভেম্বর-ডিসেম্বর) আমাদের আমদানি ও রাজস্ব আদায়ের হার বেড়েছে। আশা করছি সামনের মাসগুলোতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবো।
এমএসএম / এমএসএম

কুষ্টিয়ায় জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

বাঁশখালীতে বেড়িবাঁধ ভাঙ্গণে ঝুঁকিতে হাজারো পরিবার, দ্রুত সংস্কারের দাবি স্থানীয়রা

ধামরাই প্রেস ক্লাবের নির্বাচন : সভাপতি তুষার, সম্পাদক আহাদ

সাপ্টিবাড়ী ডিগ্রি কলেজে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ, রফিকুল আলমের চাকরিচ্যুতি দাবিতে মানববন্ধন

তাড়াশে বিয়ে বাড়িতে চুরির ঘটনা

টুঙ্গিপাড়ায় শুরু হয়েছে টাইফয়েড ভ্যাকসিন টিকাদান কর্মসূচি

তেঁতুলিয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পর্যটন কেন্দ্র এখন মোহনগঞ্জের গলার কাঁটা

অভয়নগরে শ্রমিক ইউনিয়নের নব-নির্বাচিতদের শপথ গ্রহণ

রাঙামাটিতে টাইফয়েড টিকাদান শুরু

শিবচরে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন ২০২৫ এর শুভ উদ্বোধন

শান্তিগঞ্জে টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন এর শুভ উদ্বোধন
