মো: হারুন অর রশিদ রুবেল
বিআরটিএ-এর দালালি করে কয়েক কোটি টাকার মালিক

বিআরটিএ-এর দালালি করে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে মো: হারুন অর রশিদ রুবেল (৩৫) কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, বিআরটিএ-এর কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় এসব বিপুল অর্থের সম্পদের মালিক বনেছেন তিনি। বিআরটিএ-এর গাড়ির মালিকানা বদল, ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন ও রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত লেনদেন থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে সামান্য দিনমজুরের বড় ছেলে রুবেল কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
তিনি ঢাকায় ফ্ল্যাট, গাড়ি ছাড়াও নামে-বেনামে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। দিনমজুর মো: অহিদুর রহমান তালুকদারের বড় ছেলে রুবেল দারিদ্র্যের বোঝা মাথায় নিয়ে ২০১১ সালে মামার হাত ধরে ঢাকায় পা রাখেন। প্রথমে তিনি মিরপুর বিআরটিএ মেট্রো সার্কেল -১ সহকারী পরিচালক (রেজিস্ট্রেশন) জামাল উদ্দিনের বহিরাগত অফিস পিয়ন হিসেবে চা ও ফাইলপত্র এনে দেওয়ার কাজ করতেন। এক বছর কাজ করার পর র্যাং স মোটরসের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং সেখান থেকে তিনি কোম্পানিটির ট্রান্সপোর্ট বিভাগে যুক্ত হন। দুই বছরের মতো কাজ করার সময় তিনি রেজিস্ট্রেশনের বডি ভ্যাটের কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন। বিষয়টি র্যাং স কর্তৃপক্ষ জানার পর তাঁকে চাকরিচ্যুত করে। পরে দুই বছরের বেকার জীবন পার করে রুবেল বিআরটিএ-এর পাশে অনলাইন ব্যাংকিং জমার জন্য ‘শাহারাস্তি বিজনেস সেন্টার’ নামে একটি দোকান ভাড়া নেন, যেখান থেকে আর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি একটি চক্র গড়ে তোলেন। এই চক্রের মাধ্যমে করোনাকালীন সময়ে বিআরটিএ-এর কার্যক্রম বন্ধ থাকায় যখন গ্রাহকের গাড়িগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ হতে থাকে, তখন সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ট্যাক্স টোকেনের বিআরটিএ-এর কোষাগারে মাত্র ৫২ টাকা জমা দিয়ে কয়েক ‘শ’ গ্রাহকের গাড়ীর ইনকাম ট্যাক্সের কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এর পরবর্তীতে বিকাশ পেমেন্ট গেটওয়ে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমেও চক্রটি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এর মধ্যে গত ১৫ মে ২০২৩ সালে র্যাবের অভিযানে কয়েকজনকে আটক করা হলেও মূল আসামীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। চক্রটি এখনও বিআরটিএ-তে সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর সঙ্গে বিআরটিএ-এর কিছু অসাধু কর্মকর্তা জড়িত। তাদের যোগসাজশে একজনের টিন সার্টিফিকেট আরেক জনের নামে দেখিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। কয়েক বছরের ব্যবধানে রুবেল ফ্ল্যাট, গাড়ি ও নারীর নামেও সম্পদ গড়েছেন। রুবেলের স্ত্রীর নামেও রয়েছে ৮টি সিএনজি গাড়ি, আর রুবেলের নামে রয়েছে ৭টি সিএনজি ও ১টি মাইক্রোবাস। এছাড়া নামে-বেনামে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ করেছেন। রুবেলের ফ্ল্যাটের বিবরণ: সেনপাড়া পর্বতা কাফরুল ফ্ল্যাট নং ৩৩১/২/৩, এবং মিরপুর শাহআলী প্লাজা তৃতীয়তলা শাহরাস্তী টেলিকম এন্ড ইলেকট্রনিক্স দোকান নং-২০।
রুবেলের ক্রয়কৃত গাড়ির বিবনণ: ঢাকা মেট্রো- থ- ১৬-৪৯০৭ (ক্রয়: ১৬/০৫/২০২২, ৭ লক্ষ টাকায়); ঢাকা মেট্রো- থ- ১৬-৪৪৩৮ (ক্রয়: ১৬/০২/২০২৩, ৮ লক্ষ টাকায়); ঢাকা মেট্রো- থ- ১৬-৪৯৩২ (ক্রয়: ২০/০৩/২০২৩, ১০ লক্ষ টাকায়); ঢাকা মেট্রো- থ- ১৬-৪৮২৯ (ক্রয়: ১১/১১/২০২৪, ১০ লাখ টাকায়); ঢাকা মেট্রো- থ- ১৬-৪৬০৩ (ক্রয়: ২২/০৪/২০২৫, ৭ লক্ষ টাকায়); ঢাকা মেট্রো- থ- ১৬-২৮০৮ (১০ লক্ষ টাকায়); ঢাকা মেট্রো- চ- ১২-৭৫৫২ (মাইক্রোবাস, ৩০ লাখ টাকায়)। যদিও এক একটি সিএনজি'র বাজার মূল্য ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা হয়ে থাকে, এক্ষেত্রেও রুবেল দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। কাগজে ৭ থেকে ১০ লাখ টাকা দেখানো হলেও গাড়িগুলো কেনা হয়েছে বাজারমূল্যর দামেই। রুবেলের টিন নাম্বার-১৭৩৩০০২৩৯৬০১৮, ইস্যুর তারিখ মার্চ ০৯/২০২০। রুবেল ২০১৪ সালে তানিয়া আক্তারকে বিবাহ করেন। শ্বশুর কৃষক হলেও রুবেলের বদৌলতে এখন তিনিও কোটি টাকার মালিক। রুবেলের স্ত্রীর নামেও রয়েছে ৮টি সিএনজি। তানিয়া আক্তারের সম্পদের বিবরণ: ঢাকা মেট্রো- থ- ১৬-৪৪০১ (ক্রয়: ২০/০৬/২০২১, ৬ লাখ টাকায়); ঢাকা মেট্রো- থ- ১৬-৪৪৪৭ (ক্রয়: ২০/০৬/২০২১, ৬ লক্ষ টাকায়); ঢাকা মেট্রো- থ- ১৬-৪৪৪৫ (ক্রয়: ২০/০৬/২০২১, ৭ টাকায়); ঢাকা মেট্রো- থ- ১৬-৪৪৫২ (ক্রয়: ২০/০৬/২০২১, ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায়); ঢাকা মেট্রো- থ- ১৫-০৫২৪ (ক্রয়: ২৮/০৬/২০২২, ৭ লাখ টাকায়); ঢাকা মেট্রো- থ- ১৫-০৫০৮ (ক্রয়: ১৫/০৩/২০২২, ৮ লাখ টাকায়); ঢাকা মেট্রো- থ- ১৫-০৫০৭ (ক্রয়: ১৫/০৩/২০২২, ৭ লাখ টাকায়); ঢাকা মেট্রো- থ- ১৫-০৫২৫ (৭ লাখ টাকায়)। ২৭ বছর বয়সে স্বামীর বদৌলতে তিনিও কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তাঁর টিন সার্টিফিকেট নাম্বার-৩৭৪১৫১২৪৪৩৫৩, ইস্যুর তারিখ জুন /০৭ /২০২১।
এখানেও প্রতিটি সিএনজি'র বাজারদর ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা হলেও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। বিআরটিএ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক দিন পরপর লোক দেখানো অভিযানের মধ্যে দিয়ে এইসব রুবেলরা আড়ালে থেকে যায় এবং তাদের কাছেই লাখো সেবা গ্রহীতা বন্দি থাকে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, দ্রুত এইসব রুবেলদের মতো প্রতারকদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক এবং বিআরটিএ-কে দালাল মুক্ত করে সেবার গ্রহীতাদের ভোগান্তি লাঘব করা হোক, এটাই তাদের প্রত্যাশা।
অভিযোগের বিষয়ে হারুন অর রশিদ রুবেল এর মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি ফোনটি কেটে দেন ।
এমএসএম / এমএসএম

বিআরটিএ-এর দালালি করে কয়েক কোটি টাকার মালিক

চট্টগ্রাম দিয়ে কখনই দেশ ছেড়ে বিদেশে যেতে চাইনি : রায়হান কবির

দেড় হাজার টাকা বেতনের সেই কর্মচারী এখন শতকোটি টাকার মালিক

ক্রীড়া পরিদপ্তরে ভয়াবহ লুটপাট

ভিন্ন মতের শিকার: জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যানের দীর্ঘ প্রশাসনিক দুর্ভোগ

রেলের “র” এর ষড়যন্তকারীরা আবারো সক্রিয়

ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত

দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত বিআরটিএ’র ৪ কর্মকর্তার সাজা মওকুফে তৎপরতা

নির্বাচন সামনে রেখে সীমান্তে বেড়েছে অবৈধ অস্ত্রের চালান

ক্রীড়া পরিদপ্তরে ভয়াবহ লুটপাট!

৯২৬ টন পণ্যের হদিস নেই কাস্টমসে

গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হালিমের পাহাড় সমান দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে না কেন?
