ঢাকা বৃহষ্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫

ধুলাবালি ও বুনো ঘাসে ভরা ভাষাসৈনিক আলী আজমলের সমাধিস্থল


মাহফুজুর রহমান মিলন, শাহজাদপুর photo মাহফুজুর রহমান মিলন, শাহজাদপুর
প্রকাশিত: ২০-২-২০২২ বিকাল ৫:২৮

মায়ের ভাষা ‘বাংলা’র মর্যাদা রক্ষার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে যাঁরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেন, তাঁদের প্রথম দশজনের একজন হলেন শাহজাদপুরের ভাষাসৈনিক আলী আজমল। ভাষা আন্দোলনের সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র সংসদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। ’৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১১ বার তিনি কারাবরণ করেন এবং ১৭ বার পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় তাঁর নাম ওঠে। ২০০২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে একটানা ৫ দিন অচেতন থাকার পর ৩ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করলে শাহজাদপুর পৌর এলাকার দরগাহপাড়া কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

ভাষাসৈনিক আলী আজমলের স্মৃতি চিরঅম্লান রাখতে দীর্ঘ সময়েও শাহজাদপুরে তাঁর নামে একটি সড়কের নামকরণ করা ছাড়া কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি। আগামীকাল অমর ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন উপলক্ষে শাহজাদপুর সরকারি কলেজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হলেও যথাযথ উদ্যোগের অভাবে ভাষাসৈনিক আলী আজমলের সমাধিস্থল ধুলাবালি ও বুনো ঘাসে ভরে উঠেছে। পাশাপাশি তাঁর নামে নামকরণকৃত ভাষাসৈনিক ডা. আলী আজমল বুলবুল সড়কের নামফলক থেকেও পলেস্তারা খসে পড়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯২৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর পাবনা জেলার শাহজাদপুর থানার পাড়কোলা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আলী আজমল। গ্রামের বাড়ি শাহজাদপুরবাসীর কাছে তিনি ‘বুলবুল ডাক্তার’ নামেই পরিচিত ছিলেন। তাঁর পিতা মুহম্মদ সোলায়মান এবং মাতা জোবেদা খাতুন। পিতার চাকরিসূত্রে আজমলের লেখাপড়া শুরু হয় রাজশাহীতেই। রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে তিনি ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। উভয় পরীক্ষাতেই তিনি অবিভক্ত বাংলায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সম্মিলিত মেধা তালিকায় যথাক্রমে ১৩তম এবং ১১তম স্থান লাভের অসাধারণ গৌরব অর্জন করেন। অতঃপর ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান লাভ করে কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে তিনি চলে আসেন।

তিনি যেমন ছিলেন মেধাবী, তেমনি নেতৃত্ব দানের অসাধারণ যোগ্যতা ছিল তাঁর। ভাষা আন্দোলনের সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র সংসদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৪৮ সালে ছাত্র সমাজ ছিল বিক্ষুদ্ধ। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্রাভাষা করার দাবিতে অনুষ্ঠিত প্রথম হরতালে পিকেটিং করতে যেয়ে তিনি আহত হন। আহতাবস্থায় তাঁকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় কারাগার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৫ মার্চ রাষ্ট্রভাষা চুক্তির শর্ত অনুসারে তিনি মুক্তি পান। ১৯৪৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ধর্মঘটে জড়িত থাকার কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যদের সাথে তিনি আবারো গ্রেফতার হন। ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র সমাজ। ১৪৪ ধারা ভাঙার উদ্দেশ্যে প্রথম দলটির নেতৃত্ব প্রদান করেন আলী আজমল। তিনিই প্রথম গ্রেফতারবরণ করেন এবং ৬ মাস পর মুক্তি পান।

এ প্রসঙ্গে ভাষাসৈনিক বদরুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘দশজনের প্রথম ব্যাচ ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রনেতা আজমলের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলেন। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে ভ্যানে তুলে নিয়ে গেল।’ (সূত্র : সংবাদ, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০০১)। জহির রায়হান বলেন, ‘প্রথম যাদেরকে পুলিশ ধরেছিল তাদের মধ্যে ছিল ডা. আলী আজমল।’ (তথ্যসূত্র : ভাষা-আন্দোলন কতিপয় দলিল-বদরুদ্দীন উমর, পৃ. ২৩৮)। সেই থেকে ‘৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ১১ বার কারাবরণ করেন এবং ১৭ বার পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় আসামি হিসেবে নাম ওঠে তাঁর। এসব কারণে কর্তৃপক্ষ তাঁকে মেডিকেল কলেজ থেকে বহিষ্কার করে। ফলে তাঁর আর এমবিবিএস পাস করা হয়নি। ১৯৫৪ সালে আলী আজমল নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। গ্রামে ফিরে এসে তিনি শাহজাদপুর পৌর এলাকার মণিরামপুর বাজারস্থ পিতার ক্রয়কৃত বাড়িতে সর্বসাধারণের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত হন। আমৃত্যু তিনি অত্যন্ত সাধারণ একটি টিনের বাড়িতে নামমাত্র ফি গ্রহণ করে হতদরিদ্রের চিকিৎসাসেবায় দিয়ে গেছেন।

সর্বসাধারণের কাছে তিনি ‘বুলবুল ডাক্তার’ নামেই পরিচিত ছিলেন। চিকিৎসাক্ষেত্রে তাঁর যে অসাধারণ সাফল্য এবং সুনাম-সুখ্যাতি ছিল তাতে তিনি রীতিমতো অর্থ-বিত্তের মালিক হতে পারতেন। কিন্তু চিকিৎসাকে তিনি মানুষের সেবা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন, অর্থ উপার্জনের পন্থা হিসেবে নয়। তিনি খুব সহজ-সরল জীবনযাপন করতেন। ১৯৫২ সালে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এমবিবিএস ডিগ্রি গ্রহণ করেন। কিন্তু আজমল তাঁর চারপাশের মানুষ এবং রোগীদের ছেড়ে আর কখনো ডিগ্রি লাভের পেছনে ছোটেননি।

আজমল সব ধরনের বই এবং পত্রিকার নিষ্ঠাবান পাঠক ছিলেন। তিনি যা কিছু পড়তেন, তার মধ্যে নিমগ্ন হয়ে যেতেন। বাংলা, ইংরেজি, অংক, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সমকালীন বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান ছিল বিস্ময়কর। আজমলের কাছে দেশ ও দেশের মানুষ ছিল নিজের চেয়ে বড়। তাইতো ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে আমৃত্যু তিনি দেশের মানুষের অধিকার ও দাবি আদায়ে ছিলেন সোচ্চার। নিজের আরাম-আয়েশ ও স্বার্থ ত্যাগ করে সমাজের মানুষের স্বার্থরক্ষায় কাজ করেছেন তিনি। এভাবেই একদিন আজমল জীবন সায়াহ্নে চলে আসেন।

তাঁর জীবনের সমস্ত কাজকর্মের সাথে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে জড়িয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী খুরশিদা আজমল পুতুল। সেই স্ত্রীর মৃত্যুতে তিনি অনেকটা চুপচাপ হয়ে যান। ক্রমশ বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। শ্বাসকষ্টের সাথে অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয় তার শরীরে। ২০০২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে একটানা ৫ দিন অচেতন থাকার পর ৩ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

তাঁর মৃত্যুর পর শাহজাদপুরবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শাহজাদপুর পৌর এলাকার দরগাহপাড়াস্থ হযরত মখদুম শাহদৌলা শহীদ ইয়ামেনি (রহ.)-এর মসজিদ ও মাজারসংলগ্ন দক্ষিণ পাশের কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। তিন ভাই ছয় বোনের মধ্যে আলী আজমল ছিলেন সবার বড়। মেজ ভাই আহম্মদ আলী আজমল (এমকম) বিসিআইসির অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ছোট ভাই ব্যবসায়ী আক্তার আলী আজমল (বিএ) পৈত্রিক বাড়িতেই আছেন। জীবিত তিন বোনের মধ্যে ছোট দুই বোন মাধ্যমিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষিকা।

আজমলের একমাত্র ছেলে অ্যাডভোকেট কবির আজমল বিপুল বিএ (অনার্স) এমএ (ইংরেজি) এবং পুত্রবধূ নাছিমা জামান কলেজের অধ্যাপিকা। বড় মেয়ে ঢাকা শাহীন কলেজের শিক্ষক রওনক আজমল বন্যা বিএ (অনার্স) এমএ। তার স্বামী আবু করিম সাবেক সচিব এবং দেশের একজন প্রতিষ্ঠিত কবি। মেজ মেয়ে ডা. ফেরদৌসী আজমল মেঘনা এবং তার স্বামী ডা. আব্দুর রহমান স্বাস্থ্য বিভাগের পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা।

সূধীজনের মতে, ভাষা সৈনিক আলী আজমলের সমাধিস্থল যথাযথ মর্যাদায় সংরক্ষণসহ তাঁর স্মৃতি চিরঅম্লান রাখতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।

এমএসএম / জামান

ভূঞাপুরে টাইফয়েড টিকাদান বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন সভা

রাণীশংকৈলে পুলিশের ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠিত

সবুজে ঢেকে যাক কালকিনি: পরিবেশ রক্ষায় আনসার-ভিডিপি’র অঙ্গীকার

অভয়নগরে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা

শ্রীমঙ্গলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত -১

তানোরে ব্যাক ডেট ও জালিয়াতি নিয়োগের তদন্তে হাজির হননি ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে স্কুল শিক্ষকের ওপর হামলার প্রতিবাদে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন

চট্টগ্রামে নেক্সাস ফেস্ট-২০২৫ সম্পন্ন

পিআর পদ্ধতিতে ভোট হলে মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ হবে: জামায়াতের অধ্যাপক মজিবুর রহমান

শ্রীপুরে পরিবেশ বিপর্যয় রোধে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা

অনার্সের খাতা দেখেন কলেজ হোস্টেলের গার্ড !

মানিকগঞ্জে ইয়াবাসহ দুই মাদক কারবারী আটক

কাপাসিয়া 'ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় হাইলজোরে' অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত