দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে বিশ্বকবির কাছারি বাড়ি

ডিহি শাহজাদপুর জমিদারি একদা নাটোরের রাণী ভবানীর জমিদারীর অংশ ছিলো।১৮৪০ খ্রিঃ শাহজাদপুরের জমিদারি নিলামে উঠলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দারকনাথ মাত্র ১৩ টাকা ১০ আনায় কিনে নেন।জমিদারির সাথে সাথে শাহজাদপুরের কাছারি বাড়ি ঠাকুর পরিবারের হস্তগত হয়েছিলো বলে ধারনা করা হয়। তার আগে এখানে ছিল নীলকরদের নীলকুঠি। তবে নীলকুঠি বর্তমান পরিত্যাক্ত।
লন্ডন থেকে ঘুরে আসার পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওপর জমিদারি তদারকির ভার ন্যস্ত হয়।১৮৯০ থেকে ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত মাত্র আট বছর জমিদারি দেখাশোনার জন্য মাঝে মাঝে শাহজাদপুরে আসতেন এবং সাময়িকভাবে বসবাস করতেন। তিনি স্থায়ীভাবে থাকতেন কুষ্টিয়ার শিলাইদহে। সম্ভবত এ কারনে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে তার বাসগৃহ কুঠিবাড়ী ও শাহজাদপুরের বাড়িটি কাছারি বাড়ি নামে পরিচিত।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে পৌর সদর দ্বারিয়াপুরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি। শাহজাদপুরের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। তার মানস গঠনেও এ অঞ্চলের প্রভাব অনস্বীকার্য। ১৯৪০ সালে বাণী সম্মেলনীতে তিনি সে কথা স্বহস্তে লিখে পাঠান ।১৯৬৯ সালে শাহজাদপুরের এই কাছারি বাড়ীকে পরিছন্ন করে সরকার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় এনে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় এবং ১৯৯৯ সালে কাছাড়ি বাড়ীর পশ্চিম আঙ্গিনায় ৫০০ আসন বিশিষ্ট উত্তর বঙ্গের সবচেয়ে নান্দনিক অডিটোরিয়াম নির্মান করে।
প্রতি বছর বাংলা সনের ২৫, ২৬, ২৭ বৈশাখ কবির জন্মজয়ন্তী সরকারিভাবে উদযাপন করা হয় নানা অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে । উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ উপলক্ষে ৫দিন ব্যাপী বসে রবীন্দ্র মেলা। এসময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কবি ভক্তরা ভীড় করে কবির কাছারি বাড়ীতে। বর্তমানে কাছারি বাড়ীটি আধুনিকতায় বাহারী গাছ ও ফুলের সমারোহে সুসজ্জিত করার ফলে পর্যটকদের দারুন ভাবে আকর্ষিত করছে। এক কথায় দর্শনার্থীদের নজড় কারে বিশ্বকবির শাহজাদপুরের কাছারি বাড়ি।বিশ্বকবির এই কাছারি বাড়িকে স্থানীয়রা রবীন্দ্র কাছারি বলে ডাকে।
শাহজাদপুরের পৌর শহরের দ্বাড়িয়াপুরে কাপড়ের হাট সংলগ্ন উপজেলা পরিষদের উত্তরে প্রায় দশ বিঘা জমির ওপর পুরো কাছারি বাড়ির অবস্থান। রবীন্দ্র স্মৃতি যাদুঘর হলুদ রঙের দ্বি-তল ভবন। ভবনের দৈর্ঘ্য ২৬.৮৫ মিটার, প্রস্থ ১০.২০ মিটার, উচ্চতা ৮.৭৪ মিটার। প্রতি তলায় সাতটি করে ঘর। উত্তর ও দক্ষিণে প্রশস্থ বারান্দা। কুঠি-ভবনের পাশেই কাছারি বাড়ি, মালখানা পুরোটাই রবীন্দ্র-কাছারি। কাছারি বাড়িটি দেখভালে একজন কাস্টোডিয়ানসহ স্থায়ী অস্থায়ী ভিত্তিতে দশজন জনবল নিযুক্ত করেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।
কাছারি বাড়ির দক্ষিণ দিকের গেটটি বর্তমানে প্রধান গেইট করা হয়েছে। কাছারি বাড়ির গেটে দাঁড়ালেই চোখ জুড়িয়ে যায়, বড় বাগান। নানা রঙের ফুল, বাগানের পরই তার হলুদ রঙের দোতলা কুঠি। নিচতলা জুড়ে রবীন্দ্রনাথের নিজের বিভিন্ন ছবি, তার আঁকা ছবি এবং তার হাতে লেখা পাণ্ডুলিপির পাতার অংশ বাধাই করে দেয়ালে টানানো রয়েছে। কিছুদিন আগেও এখানে লাইব্রেরি ছিল। অডিটোরিয়াম হওয়ার পর লাইব্রেরিটি তারই একটি কক্ষে স্থানান্তরিত হয়েছে। উত্তরদিকের বারান্দার একেবারে পশ্চিমে সিঁড়িঘর। গোল-প্যাঁচানো সিঁড়িটি যেন সবাইকেই উপরে উঠার জানান দেয়। ওঠার সময় পশ্চিমে একটি জানালা। সিঁড়ির মুখেই দুটি দরজা একটি দরজা খোলা শুরুতেই একটি পালকি চোখে পরবে, এটিই সেই ঠাকুর বাড়ির পালকি।
বংশ পরম্পরায় ব্যবহার হয়েছে এই পালকি, পড়ার টেবিল, চিঠি লেখার ডেস্ক, আলনা, গোল টি-টেবিল। এরপর এঘর থেকে সেঘর। সেগুলোতে রক্ষিত রয়েছে রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত নানারকম আসবাব-তৈজষপত্র বেতের চেয়ার, বড় ড্রেসিং টেবিল, চিনা মাটির ছাকুনি, টেবিল বেসিন, আলনা, দেবতার আসন, বড় টেবিল, শ্বেত পাথরের গোল টেবিল, ইজি চেয়ার, পিয়ানো, কাঠের দোলনা চেয়ার, সোফা সেট, হাতলযুক্ত চেয়ার, স্ট্যান্ডে সংযুক্ত দুটি ড্রয়ার, হাতলওয়ালা গদিযুক্ত চেয়ার, আলনা স্ট্যান্ড, ৫টি আলমারি, আলমারির ভেতরে কেতলি, সসপ্যান, ফ্রাইপ্যান, কাটা চামচ, চিনা মাটির ফুলদানি, ডিস, টব, জগ, জমিদারি মনোগ্রাম ৭টি, বালতি, কেরোসিনের বাতি, ঘণ্টা ট্রে, বাতির চিমনি ইত্যাদি। আরও রয়েছে দুটি খাট। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী বেড়াতে আসেন এই কাছারি বাড়িতে।
কাছারি বাড়ীতে সাধারন দর্শনার্থীদের প্রবেশ টিকিট মুল্য ২০ টাকা। ১ টিকিটে সারাদিন কাছারি বাড়ি ঘুরে দেখার সুযোগ এখানে তবে একবার বাউন্ডারির বাহিরে গেলে পুনরায় প্রবেশের জন্য টিকিট নিতে হবে। প্রবেশ টিকিট বিক্রি প্রতিমাসে প্রায় দেড় লাখ টাকার।কাছারি বাড়ির প্রধান পটকে টিকিট কাউন্টারে টিকিট পাওয়া যায়। এখানকার অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হলে প্রতি ৬ ঘন্টায় ভাড়া ভ্যাটসহ ৬৯০০টাকা। আপনি যদি ইচ্ছে করেন তাহলে পরিবারপরিজন নিয়ে ঘুরতে যেতে পারেন। দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে শাহজাদপুর বিসিক বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালেই চোখে পড়বে কবিগুরুর ভাসকর্য। ওখান থেকে রিক্সাযোগে অথবা গাড়ি যোগে সরাসরি কবি গুরুর কাছারি বাড়িতে যাওয়া যায়। তবে চলাচলের সুবিধার্থে দিলরুবা বাসস্ট্যান্ড হয়ে কাছারি বাড়ীতে পৌছানো সহজ। যাতায়াতের সুবিধার্থে গুগল ম্যাপের সহযোগিতা নেওয়া যায়। যাদুঘর পরিদর্শন করা যায় প্রতি মঙ্গলবার শনিবার সকাল১০টা হতে বিকেল ৬টা পর্যন্ত। দুপুর ১টা থেকে ১ঃ৩০ পর্যন্ত বিরতি।
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২ঃ৩০ পর্যন্ত এবং দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত। সোমবার ২ঃ৩০থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে রোববার সাপ্তাহিক পুর্নদিবস ও সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে এছারা অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন বন্ধ থাকে।
টিকিটমুল্য নির্ধারন করা হয়েছে, দেশি পর্যটক ২০টাকা এবং সার্কভুক্ত বিদেশী পর্যটকের টিকিট মুল্য ১০০টাকা কিন্তু সার্কের বাইরের বিদেশী পর্যটকের টিকিট মুল্য ২০০টাকা। এক টিকিটে সারাদিন কাচারিবাড়ি পরিদর্শন করার সুযোগ আছে।
এমএসএম / জামান

ভূঞাপুরে টাইফয়েড টিকাদান বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন সভা

রাণীশংকৈলে পুলিশের ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠিত

সবুজে ঢেকে যাক কালকিনি: পরিবেশ রক্ষায় আনসার-ভিডিপি’র অঙ্গীকার

অভয়নগরে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা

শ্রীমঙ্গলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত -১

তানোরে ব্যাক ডেট ও জালিয়াতি নিয়োগের তদন্তে হাজির হননি ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে স্কুল শিক্ষকের ওপর হামলার প্রতিবাদে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন

চট্টগ্রামে নেক্সাস ফেস্ট-২০২৫ সম্পন্ন

পিআর পদ্ধতিতে ভোট হলে মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ হবে: জামায়াতের অধ্যাপক মজিবুর রহমান

শ্রীপুরে পরিবেশ বিপর্যয় রোধে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা

অনার্সের খাতা দেখেন কলেজ হোস্টেলের গার্ড !

মানিকগঞ্জে ইয়াবাসহ দুই মাদক কারবারী আটক
