ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

একটা লাশ কি সত্যিই খুব দরকার ছিল?


সিরাজুল ইসলাম photo সিরাজুল ইসলাম
প্রকাশিত: ৯-১২-২০২২ বিকাল ৬:৫৩

মকবুল হোসেন এখন সবার কাছে পরিচিত। বলতে গেলে তিনি ‘সেলিব্রেটি’ হয়ে গেছেন। কিন্তু তার সেই ‘সেলিব্রেটি’ হওয়া তার পরিবার-স্বজন কিংবা দেশের কোনো কাজে আসবে না। বরং তার স্ত্রী হালিমা খাতুন আর অবুঝ সন্তান মিথিলা দুঃখ-কষ্টের উত্তাল সাগরে পড়ে গেলেন। তার এই ‘সেলিব্রেটি’ হওয়া কিন্তু কেউ চায়নি। হয়তো চেয়েছে এ দেশের নষ্ট রাজনীতি। হ্যাঁ, তিনি নষ্ট রাজনীতির শিকার হয়ে অকালে প্রাণ হারিয়েছেন।

তাদের একটা লাশ কি সত্যিই খুব দরকার ছিল? যদি সেটা প্রয়োজন হয়ও, তবে মকবুল কেন? কেননা, তার স্ত্রী দাবি করছেন- মকবুল রাজনীতি করতেন না। তাহলে অরাজনৈতিক ব্যক্তি কেন ‘রাজনীতির’ শিকার হবেন? বুধবার সন্ধ্যায় মর্গে তার কাছে বার বার ফোনকল আসছিল। এ সময় তিনি অপর প্রান্তের লোকটিকে বলছিলেন ‘আপনি কেন আমার এত বড় ক্ষতি করলেন। আমাকে বিধবা করলেন, আমার অবুঝ মেয়েকে এতিম করলেন।’ তার এ কথার গুরুত্ব হয়তো সবাই বুঝবেন না। শিশুকালে যারা বাবাকে হারিয়েছেন, তারাই এটা বুঝতে পারবেন। আরও বুঝতে পারবেন তরুণ বয়সে বিধবা হওয়া নারী। এই মানুষ দুটির চোখে এখন কেবলই অন্ধকার। হালিমার কথায় কিন্তু স্পষ্ট মকবুলকে ‘জোর’ করে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে নেওয়া হয়েছিল। ওই লোকটি কে, তা কিন্তু জানা যায়নি। মকবুলের স্ত্রী তার নামও বলছেন না। এখানে কি কোনো ভয় কাজ করছে? হয়তো। করতেই পারে। মকবুলের স্ত্রীর ভাষ্য, নুন আনতে পানতা ফুরাতো’ তাদের। স্বামী-স্ত্রী মিলে যা আয় করতেন; তা দিয়ে কোনো মতে সংসার চলছিল। তারা চামড়ার জুতায় নকশায় তুলতেন। এই নকশার উপকরণ কারচুপির পুঁতি কিনতে হালিমার বোনের কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে নয়াপল্টনে এসেছিলেন মকবুল হোসেন (৩০)। তার যাওয়ার কথা ছিল মিরপুরে। বাসা থেকে বের হওয়ার ঘণ্টাখানেক পরে মোবাইলে কথা হলে মকবুল তাকে জানান- তিনি মিরপুর ১১ নম্বরে আছেন। তখন মিথিলা নাস্তা খেয়েছে কি-না জিজ্ঞেস করেন। এটাই ছিল মকবুলের সঙ্গে হালিমার শেষ কথা। নয়াপল্টনে বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন মকবুল হোসেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। আমি জ্ঞানী বা বিচক্ষণ মানুষ নই। রাজনীতিও বুঝি না।

তবে একটা কথা বলতে পারি- মকবুল অন্যায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তার মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। মকবুলকে কে নয়াপল্টনে নিয়ে গেছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। তিনি কি ‘টাকার বিনিময়ে’ নয়াপল্টনে এসেছিলেন? বিষয়টি আলোচনা, তদন্তের দাবি রাখে। যদি তিনি ভাড়ায় আসেন, যিনি বা যারা তাকে ভাড়া করেছেন, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এ সংক্রান্ত আইন আছে কি-না, আমার জানা নেই। না থাকলে আইন প্রণয়ন করে বিচার করতে হবে। আর রাজনীতিক দলগুলোকে ‘মানুষ ভাড়া’ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আমাদেরও সচেতন হতে হবে- যেন আমরা ভাড়ায় না যাই। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি আরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে পারতো। যেহেতু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে পুলিশ তাদের অনুমতি দিয়েছে। ১০ ডিসেম্বর ওই সমাবেশ হওয়ার কথা। এর তিনদিন আগে কেন নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে তাদের অবস্থান নিতে হবে? আর ইট-পাটকেল এলো কোথা থেকে? নিশ্চয়ই পুলিশের ওপর হামলা করা তাদের টার্গেট ছিল। অন্যদিকে পুলিশের এমন ভূমিকাও কাম্য ছিল না। তারা কেন গুলি ছুঁড়তে গেল? হয়তো হাজারখানেক মানুষ রাস্তায় অবস্থান নিয়েছিল। তাদের সরিয়ে দিতে গুলি করা কি খুব জরুরি ছিল? টিয়ারশেলের সঙ্গে বিকল্প অ্যাকশন; গরম পানি বা পিপার স্প্রে করতে পারতো। অতীতে পুলিশ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গরম পানি ও পেপার স্প্রে ব্যবহার করেছে। আর এ কাজ করলে হয়তো শতাধিক মানুষ আহত হতো না। পুলিশ যাদের উপর গুলি চালিয়েছে, তারা এদেশেরই মানুষ। আমাদেরই ভাই। হয়তো কোনো পুলিশ সদস্যর ভাই বা আত্মীয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে মনে রাখতে হবে- তাদের বেতন-ভাতা হয় এদেশের মানুষের দেওয়া করের টাকায়। তাদের সহ্যের মাত্রা আরও বাড়াতে হবে। কোনো দলের পক্ষ নিয়ে অপর পক্ষকে ঘায়েল করা তাদের কাজ নয়। আর রাজনীতিক দলগুলোকেও কর্মসূচি পালনে সতর্ক থাকতে হবে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি সবার কাম্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর উপর হামলা করাও অগ্রহণযোগ্য। তাদেরও সহ্যের সীমা বাড়াতে হবে। ইট-পাটকেল নিয়ে কর্মসূচিতে আসাও সভ্য রাজনীতি নয়। এ ক্ষেত্রে সরকারকে আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল। গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে বিভিন্ন সময় কয়েকজন মন্ত্রী বলেছেন- বিএনপি গন্ডগোল বাঁধানোর পাঁয়তারা করছে। হয়তো বিএনপি এক্ষেত্রে সফল। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলে একটা ভুল বার্তা গেল।

পুলিশকে তারা ‘নির্যাতক বাহিনী’ হিসেবে জানল। বিএনপি এটাই চাচ্ছিল। তাদের বক্তব্যে বিষয়টি স্পষ্ট। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পুলিশকে ‘সন্ত্রাসী’ বলেছেন। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না- আমাদের পুলিশের ভালো কাজের রেকর্ড নেহাত কম নয়। তারপরও বিএনপির কোটে বল চলে গেল। আবার আসি হালিমা-মিথিলা প্রসঙ্গে। হালিমা আমার স্ত্রীর সমবয়সী। আর মিথিলার বয়সী আমার একটা মেয়ে আছে। আমি যতক্ষণ বাইরে থাকি, ওর চেহারাটা সব সময় আমার চোখে ভাসে। সব সময়ই ভাবি- আমার কিছু হয়ে গেলে এই মানুষগুলো অথৈ সাগরে পড়ে যাবে। যেমনটা পড়লো হালিমা-মিথিলা। নিশ্চয়ই মিথিলা কলিজার টুকরো ছিল মকবুলের। কারণ হালিমার সঙ্গে শেষ কথায়ও মকবুল জিজ্ঞাসা করছিল ‘মিথিলা নাস্তা খেয়েছে কি-না।’ মকবুল যখন গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন- হয়তো তার চোখে মিথিলার ছবি ভাসছিল। বার বার বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে ইচ্ছা করছিল। শেষ আদর। বলতে ইচ্ছা করছিল- ক্ষমা করে দিস মা। মিথিলা যখন মর্গে বার বার বাবার লাশের কাছে যাচ্ছিল; তার চোখ দিয়ে অঝরো পানি পড়ছিল। প্রাণপ্রিয় বাবাকে হারিয়ে হাউমাউ করে কাঁদছিল। ওর আহাজারি এখনো আমার কানে বাজছে।

লেখক: বার্তা সম্পাদক, দৈনিক সকালের সময়।

এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া