ঢাকা শনিবার, ২ আগস্ট, ২০২৫

নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধকে পৌঁছে দিচ্ছেন বিকুল


রাজেশ ভৌমিক (শ্রীমঙ্গল) photo রাজেশ ভৌমিক (শ্রীমঙ্গল)
প্রকাশিত: ৪-১-২০২৪ দুপুর ১:৩

মুক্তিযুদ্ধের আগে জন্ম হয়নি বলে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারেন নি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বিকুল চক্রবর্তী। তবে বাঙ্গালীর মুক্তির সংগ্রাম এই মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ এই মানুষ জেলার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত এলাকায় ঘুরে বেড়ান। সংগ্রহ করেন মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মারক এবং মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের ব্যবহৃত নানান জিনিসপত্র ও তাদের পরিবারের বর্তমান অবস্থার কথা। সংগ্রহ করা এসব জিনিস দিয়ে প্রায় প্রতিবছরই দেশ বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় আয়োজন করেন মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ও আলোকচিত্র প্রদশর্নীর। বিকুল চক্রবর্তীর এই স্মারক ও আলোকচিত্র প্রদশর্নীর ফলে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে জানতে পারছে তেমনি অঞ্চলের বিভিন্ন বধ্যভুমি ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজরিত স্থানগুলো সংরক্ষনে ভুমিকার রাখছেন তিনি। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও তিনিই প্রথম ইউরোপের ফ্রান্স, ইতালী ও ডেনমার্কে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ও আলোকচিত্র প্রদর্শন করেছেন। যা প্রবাসে থাকা বাঙ্গালী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছে।
এবছর শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রেসক্লাবের আয়োজনে মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র ও স্মারক প্রদশনী চলছে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রেসক্লাবের হল রুমে। এই প্রদশনী দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন আসছেন। 
বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের নানান ছবি টাঙ্গানো হয়েছে দেয়ালে। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর থেকে সংগ্রহ করা এই ছবিগুলোর ফাঁকে ফাঁকে রাখা হয়েছে এতদ অঞ্চলের নানান ছবি। কোথাও বধ্যভুমির ছবি, কোথায় শহীদ হওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের পুরোনো ছবি, তাদের পরিবারের বর্তমান অবস্থার ছবি। প্রদশর্নী কক্ষের টেবিলে রাখা হয়েছে ১৯৭১ সালে পাকিস্থানীদের হাতে মারা যাওয়া চা বাগানের প্রথম গ্রেজুয়েট পবন তাঁতীর মুখের চোয়াল ও হাড়, তাঁর ব্যবহৃত টাই, রাখা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের ব্যবহৃত, শার্ট, লুঙ্গি, তামুক, থাল, গ্লাস, কলম, তাদের হাতে লিখা চিঠিসহ বিভিন্ন স্মরক, বিভিন্ন বধ্যভুমি থেকে সংগ্রহ করা মাটি ইত্যাদি।

প্রদর্শণী দেখতে আসা তরুন যুবক  রিপন মৃর্ধা বলেন, এখানে এই প্রদশনী দেখতে এসে মুক্তিযুদ্ধের অনেক না জানা ইতিহাস জানতে পেরেছি। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত অনেক কিছু দেখতে পেরেছি। আমাদের তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত করতে এসব প্রদশনী আরো বড় আকারে করা প্রয়োজন। 
বিকুল চক্রবর্তী সকালের সময়কে বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের বিজয় অর্জন হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে কত মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। মৃত্যুর মুখোমুখি দাড়িয়ে এদেশকে স্বাধীন করেছেন। স্বাধীনতার ৫২ বছরে এসে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের স্মারকগুলো। আমরা হারাচ্ছি বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা প্রবীণদের। আমাদের এলাকার মুক্তিযুদ্ধের এই ইতিহাসগুলো যেন হারিয়ে না যায় সে জন্য আমি দীর্ঘদিন থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীনদের সহযোগিতায় বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছি মুক্তিযুদ্ধের নানান তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছি। মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগ করা মানুষদের পরিবারের তথ্য উঠিয়ে আনছি। আর এসব তথ্য উপাত্ত, আলোকচিত্র, স্মারক দিয়ে  আয়োজন করছি প্রদশর্নীর। আমাদের নতুন প্রজন্ম যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভুধ্য হতে পারে সেটাই আমরা চাওয়া।
 বিকুল চক্রবর্তী জানান, শুধু দেশে নয় বহি বিশ্বেও তিনি প্রথম মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র প্রদর্শনী করেছেন। তিনি ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে, ইতালীর রাজধানী রোমে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ও ভারতের ত্রিপুরায় আলোকচিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করেন। যেখানে প্রবাসে থাকা শত শত বাঙ্গালী নতুন প্রজন্ম ছাড়াও বাংলাদেশের আত্ম ত্যাগের ইতিহাস প্রবাসীরাও জেনেছেন। আর সরকারের কাছে আবেদন যেন আমার সংগ্রহ করা এসব আলোকচিত্র ও স্মারক দিয়ে শ্রীমঙ্গলে স্থায়ীভাবে একটি মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর প্রতিষ্টা করা হয়। তাহলে নতুন প্রজন্ম আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আগ্রহ নিয়ে জানবে। 
শ্রীমঙ্গল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার কুমুদ রঞ্জন দেব প্রথম আলোকে বলেন, বিকুল চক্রবর্তী এতদ অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছে। মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন, স্মারক, আলোকচিত্র ও মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের বর্তমান অবস্থার তথ্য ও আলোকচিত্র নিয়ে সে বিজয়ের মাস এলেই প্রদর্শনীর আয়োজন করে। দেশের বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও বিদেশেও অনেক প্রদর্শনী করেছে সে। তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আমরা অনেকগুলো বধ্যভূমি ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় জায়গাগুলো উদ্ধার করতে পেরেছি। অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরঙ্গনাদের সন্মান জানাতে পেরেছি তার তথ্যচিত্রের মাধ্যমে। সংরক্ষিত হয়েছে বেশ কিছু বধ্যভুমি। বিশেষ কওে শ্রীমঙ্গল সাধুবার তলি বর্তমান বধ্যভূমি একাত্তর সংরক্ষনে প্রথম উদ্যোগই ছিল তার। সিন্দুরখান জয়বাংলা বধ্যভুমি বেদখলের হাত থেকে রক্ষা করতে তিনি অগ্রনী ভুমিকা পালন করেন। তিনি সংরক্ষন করেন কমলগঞ্জ দেওরাছড়া বধ্যভুমি। তিনিই প্রবীণ ব্যক্তিদের নিয়ে স্বাধীনতার ৪৮ বছর বর খেঁজে বের করেন শ্রীমঙ্গল ভূনবীর বধ্যভূমি।
প্রদর্শনী দেখতে আসা বীরাঙ্গনা মনোয়ারা বেগম ও প্রভা মালাকার জানান, বিকুর চক্রবর্তীই প্রথম তাদের খোঁজে বের করেন। তাদের তথ্য দিয়ে আবেদন করতে বলেন। এর ফলে তারা এখন গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা। প্রতিমাসে ভাতা পাচ্ছেন যা তাদের পরিবারের আর্থিক সংকটে বড় ভুমিকা রাখছে।

বিকুল চক্রবর্তী মুক্তিযুুেদ্ধর তথ্য সংগ্রহ ও রিপোর্টিং বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর থেকে প্রশিক্ষন গ্রহন করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জার্নালিজমে মাস্টার্স পাস করেন। বিকুল চক্রবর্তী বর্তমানে একুশে টেলিভিশন ও বিডিনিউজ এ মৌলভীবাজার প্রতিনিধি ও দৈনিক ভোরের কাগজে নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। পাশাপাশি শ্রীমঙ্গলে সাংস্কৃতিক অঙ্গণের বিভিন্ন সংগঠনের সাথে তিনি অতপ্রতভাবে জড়িত রয়েছেন।

এমএসএম / এমএসএম

মেহেরপুর মুজিবনগর সীমান্তে ১৫ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করলো বিএসএফ

ভূরুঙ্গামারীর রাজনীতিতে নতুন গতি:৩১ দফা নিয়ে আন্ধারিঝাড়ে বিএনপির প্রচারণা

কুড়িগ্রামে জাতীয় শিক্ষক ফোরামের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

চন্দ্রঘোনা থানা পুলিশ কর্তৃক পরোয়ানাভুক্ত আসামী গ্রেফতার

‎কুতুবদিয়ায় সমুদ্র সৈকতে ভেসে এলো অর্ধগলিত লাশ

চট্টগ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া রোগী

হাইস্পিড গ্রুপ অফ কোম্পানির মালিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান

বোদায় মহিলা মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে সাইকেল বিতরণ

হাটহাজারী মাদ্রাসায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্থায়ী সদস্য কবর জেয়ারত ও পরিচালক'র সাথে সৌজন্য সাক্ষাত

ভবদাহ অঞ্চলে পানিবন্দি শত শত পরিবার

বারহাট্টার প্রকৃতিতে ফুটন্ত শাপলা যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে

কুড়িগ্রামে দূর্গম চরাঞ্চলের দরিদ্র মহিলাদের মাঝে সেলাই/হস্তশিল্প বিষয়ক প্রশিক্ষনের উদ্বোধন

মানিকগঞ্জে সাবেক মন্ত্রী মুন্নুর মৃত্যুবার্ষিকীতে চিকিৎসা সেবা ও শ্রদ্ধাঞ্জলি