ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫

আনিসুল হকের নিয়োগকৃত আপনজনরা এখনো বহাল তবিয়তে

নিবন্ধন অধিদপ্তরে ভূতের আঁচড় !


আব্দুল লতিফ রানা photo আব্দুল লতিফ রানা
প্রকাশিত: ৩০-৫-২০২৫ বিকাল ৬:৫৭

পতিত সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের পরিবারতন্ত্র সাব-রেজিস্টার অফিসে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। মন্ত্রীর আপন ফুফাত ভাই ও তার বাসার কাজের লোককেও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কোঠায় ম্যানুয়ালের বিধি বর্হিভূতভাবে নিয়োগ ও বদলী করা হয়েছে। নিয়োগ দেয়া ছাত্রলীগের নেতারা এখনো সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রভাব বিস্তার করে বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছে। সাব-রেজিস্টার কর্মচারীরা প্রকাশ্যে করো নাম না নিলেও এই ইঙ্গিতে তাদেরকে ‘ভূতের আঁচড়’ বলে অবিহিত করছেন। আর এদের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে জেলা রেজিস্ট্রার নিজেই।
সূত্র জানায়, নিবন্ধন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক (আইজিআর) কার্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত নেতারা সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান। দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর ধীরে ধীরে তারা কর্মস্থলে ফেরেন। এতে প্রায় কোটি টাকা লেন-দেনের তথ্য পাওয়া যায়। তাদের এই অবৈধ নিয়োগ বাতিল এবং গ্রেফতারের দাবিতে আইন বিচার ও সংসদ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাসহ আইজিআর দফতরে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ রেজিস্টার এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন। যারা নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী এবং মানবতা বিরোধী অপরাধে গ্রেফতারকৃত আনিসুল হকের আপনজন হিসেবে পরিচিত। তাদের মধ্যে খন্দকার তুহিন, আইজিআর অফিসের অফিস সহকারী কাম -কম্পিউটার বা স্টাফ ছিলেন। তাকে ডেমরা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে বদলী করা হয়েছে। মো. রাসেল মিয়া স্বরাক নং-নিপ ৬৬৭(৫) গত ২০১৬ সালের ১০ জানুয়ারি ঢাকা জেলার সাভার সাব রেজিস্ট্রি অফিসে সহকারী পদে বদলি করা হয়। যা ম্যানুয়াল বিধি বহিভূর্ত করা হয়েছে। সারাদেশে ৫০৫ এর অধিক সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অফিস সহকারী পদে সিনিয়রদের উপেক্ষা করে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন, সাবেক আইন-মন্ত্রী আনিসুল হকের বাসার কাজের ছেলে রাসেল। দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী আনিসুল হকের পিএস মো. মাসুম এর ভাতিজা খন্দকার তুহিনকে স্বারক নম্বর-নিপ-২৪০০(৪), গত ২০১৫ সারের ৩ মার্চ ঢাকা জেলার ডেমরা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহকারী পদে বদলী করা হয়। ছাত্রলীগের নেতা সামিউল মন্ত্রী আনিসুল হকের পিএস এবং ফুফুাত ভাই আলাউদ্দিন বাবুর আপন ছোট ভাই। আর আইজিআর অফিসের জয়নালকে নিয়োগের পর ধানমন্ডি বলদী করা হয়েছে। এরপর সেখান থেকে তাকে কেরানীগঞ্জে বদলী করা হয়েছে। তাছাড়া, মন্ত্রীর এলাকায় ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলেকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। 
অভিযোগে জানা গেছে, আনিসুল হকের নির্বাচনী এলাকার কয়েকজনকে অফিস সহকারী পদে চাকরি দিয়েছিলেন নিবন্ধন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক (আইজিআর) কার্যালয়ে। আইজিআর অফিসে চাকরির নিয়োগ পেলেও সব নিয়ম-কানুন ভঙ্গ করে তাদেরকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে বদলী করা হয়। শুধু তাই নয়, রাজধানীর বিভিন্ন অফিসের অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। আইনমন্ত্রীর আপনজন হওয়ায় রেজিস্ট্রি অফিসে আধিপত্য বিস্তার করে। একারণে জেলা রেজিস্ট্রার, সাব-রেজিস্ট্রারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারাও তাদেরকে ব্যবহার করতেন। গোপালগঞ্জে পুলিশ কনস্টেবলও নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। রেজিস্ট্রি অফিসের নিয়ন্ত্রক ছিলেন ছাত্রলীগের পাঁচজন। আর তারা হলেন, রাসেল, খন্দকার তুহিন, জয়নাল, ইমতিয়াজ আলম ওরপে রিমন ও সামিউল। তারা অফিস সহকারী হলেও আইনমন্ত্রীর পরিচয়ে যেকোনো ধরনের দলিল করিয়ে নেয়া, তদবির, বদলি, রেজিস্ট্রি অফিসের ভলিয়ম বইয়ের পাতা কাটাকাটির মাধ্যমেও কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৫ জুলাইয়ের পর তারা গা ঢাকা দেন। কিন্তু তাদের চাকুরী এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। তারা সরকার পরিবর্তনের পর অফিসে না এসেও বেতন নিয়মিত বেতন নিচ্ছেন। 
গত ৫ আগস্টের পর গ্রেফতারকৃত সাবেক আইনমন্ত্রীর আপনজনদের অবৈধ নিয়োগ বাতিলে আইন বিচার ও সংসদ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাসহ নিবন্ধন অধিদফতরের মহাপরিদর্শকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ রেজিস্টার এমপ্লয়ীজ অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু এখনো তাদের নিয়োগ আদেশ বাতিল না করায় কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃস্টি হয়েছে। ওই আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রেজিস্ট্রেশন বিধিমালা ৩০ (গ) ধারা অনুচ্ছেদ মোতাবেক অফিস সহকারী পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে স্থায়ী মোহরার ও টিসি মোহরারের জ্যেষ্ঠতাই একমাত্র মান নির্ণায়ক। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসসমূহে সরাসরি কর্মচারী নিয়োগের বিধান না থাকায় পদোন্নতির মাধ্যমে শূন্যপদ পূরণ করা হয়। কিন্তু উল্লিখিত ব্যক্তিদের সরাসরি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সহকারী-কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যা রেজিস্টেশন বিধিমালার পরিপন্থি। এতে করে নকলনবিশ ও কর্মচারীরা বৈষম্যের শিকার হয়ে পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন।
সূত্র জানায়, ছাত্রলীগ নেতা জয়নালের বাড়ি চাঁদাপুরে। সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের এপিএস আলাউদ্দিন বাবুর নিকটাত্মীয়। আর সবগুলো নিয়োগেরই ব্যবস্থা করেন এপিএস এই বাবু। ছাত্রলীগের কোটায় ২০১৬ সালে আইজিআর অফিসে নিয়োগ পান জয়নাল। কিন্তু ২০১৯ সালে তাকে আইনমন্ত্রীর নির্দেশে ধানমন্ডি সাব-রেজিস্ট্র্রি অফিসে কম্পিউটার পদে বদলি করেন আইজিআর অথচ একজন অফিস সহকারীকে কম্পিউটার অপারেটর পদে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের সুযোগ নেই। তেজগাঁও রেজিস্টেশন কমপ্লেক্সে ধানমন্ডি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যোগদানের পরেই ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে জয়নাল। দলিলের পাতা ছেড়া, জাল-জালিয়াতি করা, ঘুষের মাধ্যমে ভুয়া নামজারি ও দলিল করত। দলিল লেখকরা ঘুষ দিতে না চাইলে তাদের মারধরসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন করত। সাব-রেজিস্ট্রার এমনকি বিচারক পর্যন্ত বদলির তদবিরের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 
অভিযোগে জানা গেছে, গত ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর ভুয়া দলিল (নং-১১৫০) সৃজন করার পেছনে জয়নালের ভূমিকা ছিল। জাল দলিলের বিষয়ে দুদক তদন্ত শুরু করলে তা ধামাচাপা পড়ে আছে। এক দলিলে ১৩ লাখ টাকার বিনিমণে পাতা পাল্টানোর মামলায় জয়নালকে চাকরিচ্যুত বা বিভাগীয় শাস্তি না দিয়ে কম্পিউটার অপারেটর পদ থেকে কেরানীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্র্রি অফিসে বদলি করেন জেলা রেজিস্ট্রার। তাছাড়া ইমতিয়াজ আলম কসবার সেলিম চেয়ারম্যানের ছেলে। তাকে আইজিআর অফিসে নিয়োগ দেয়া হলেও শ্যামপুর রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত। তিনি ভুয়া কাগজে গত ২০১৬ সালে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি নেয়। প্রভাব খাটিয়ে টানা প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর একই অফিসে কাজ করেন। দলিল প্রতি লাখ টাকার চুক্তি না করে দাতা-গ্রহীতাকে সাব রেজিস্ট্রারের কাছে যেতে দিতেন না। এ ব্যাপারে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে থানায় জিডি করা হলেও পুলিশ সেই তদন্ত করতে পারেনি। সে সাব-রেজিস্ট্রারদের জিম্মি করে রাখত।তার বিরুদ্ধে কর্মচারীরা আন্দোলন করেছে। তাকে শাস্তি না দিয়ে তেজগাঁও কমপ্লেক্সের পল্লবীতে বদলি করে।তার এক মাসের মধ্যেই তাকে শ্যামপুরে নেয়া হয়। ৫ আগস্টের পর তার বিরুদ্ধে কসবা থানায় মামলা হয়। এখনো তিনি অফিসে অনুপস্থিত য়েছেন।
অপরদিকে ছাত্রলীগের নেতা রাসেল আইজিআর অফিস থেকে তাকে অবৈধভাবে সাভার সাব-রেজিস্ট্র্রি অফিসে বদলী হন। তার বিরুদ্দে কর্মচারীরা প্রতিবাদ করে একদিন বন্ধ রাখা হয় দলিল রেজিস্ট্র্রি। উল্টো ঊর্ধ্বতন কর্মচারীদের হয়রানী করা হয়েছে। সাভার থেকে অল্পদিনের মধ্যে তাকে তেজগাঁও রেজিস্ট্র্রি কমপ্লেক্সের বাড্ডা সাব-রেজিস্ট্র্রি অফিসে বদলি করা হয়। এরপর থেকেই বাড্ডা অফিসে কর্মরত। তার নামেও কসবা থানায় মামলা রয়েছে। মাঝে অফিসে আসলেও তাকে কর্মচারীরা বসতে দিচ্ছেন না। ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার তাকে গত ১৩ মার্চ বদলির আদেশ দেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি কোটিপতি বনে গেছেন। এছাড়া, খন্দকার তুহিন সাবেক আইনমন্ত্রীর পিএস মাসুমের আপন ভাতিজা। ২০১৫ সালে আইজিআর অফিসে নিয়োগ পেয়ে ডেমরা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে বদলি হন। অবৈধ বদলির প্রেক্ষিতে রেজিস্ট্রি বিভাগের কর্মচারীরা কাফনের কাপড় বেঁধে আন্দোলন ও কলম-বিরতি করে। কিছুদিন পরই ডেমরা থেকে তেজগাঁওয়ের বাড্ডা রেজিস্ট্রি অফিসে বদলি হন তুহিন। 
কসবার বাসিন্দা সামিউল ২০১৬ সালে আইজিআর অফিসে অবৈধ নিয়োগের পরই পল্লবী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। তারই আপন ভাই আলাউদ্দিন বাবু মন্ত্রীর পিএস ছিলেন। সামিউলেরও চাকরি হয় ছাত্রলীগ কোটায়। চাকরি নেয়ার সময় বয়স কমানোর কারণে বেতন নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। গত ৫ আগস্ট থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার মোখলেছুর রহমান এর সেল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তার ফোনটি রিসিভ করেননি। পরে তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে বার্তা প্রেরণ করা হলেও তিনি তার কোন উত্তর দেননি। 

এমএসএম / এমএসএম

রাজউকের ইমারত পরিদর্শক জয়নাল আবেদিন এর বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ

বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ

বহাল তবিয়তে আছেন আওয়ামী সুবিধাভোগী প্রকল্প পরিচালক মঞ্জুরুল হক!

লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি আনোয়ার হোসেন খানের বিরুদ্ধে ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা আত্মসাত ও বিদেশে পাচারের অভিযোগ

আউটসোর্সিং এ নিয়োগেরনামে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা

নিবন্ধন অধিদপ্তরে ভূতের আঁচড় !

রংপুর জেলা রেজিস্ট্রারের নির্দেশে জালিয়াত চক্র আবারো তৎপর

অভিযোগের অন্ত নেই বিআরটিএ সহকারী পরিচালক নবাব ফাহমে আজিজ-এর বিরুদ্ধে

বিসিক এ আইন কর্মকর্তার বেআইনী কাজ!

ঐতিহাসিক তিন নেতার মাজার অরক্ষিত

রংপুর জেলা রেজিস্টার রফিকুল’এর বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দোসর পিডি কামাল বহাল তবিয়তে

ফেমডম সেশনের নামে নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফির চক্র