ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫

বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ


আব্দুল লতিফ রানা photo আব্দুল লতিফ রানা
প্রকাশিত: ২১-৬-২০২৫ বিকাল ৫:৪৬

পতিত সরকার প্রধান শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগি প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ কৃর্তপক্ষ ভুয়া সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তার সমন্বয়ে জালিয়াত চক্র বানিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই জালিয়াতির ঘটনা দুই একবার না, আওয়ামী লীগ সরকারের পুরো সময় চালিয়েছে বলে সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে। 
জানা গেছে, বসুন্ধরা গ্রপ অব কোম্পানী এর সিনিয়র ম্যানেজার ফয়েজুর রহমানের নেতৃত্বে সুচতুর ব্যক্তিদের নিয়ে এক শক্তিশালী চক্র গড়ে তোলে। আর এই চক্রের সদস্যরা কখনো সামরিক বাহিনীর মেজর, কর্নেল, পুলিশের উ”চ পদ¯’ কর্মকর্তা, সাবেক এমপি, মন্ত্রী পরিচয়ে সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিতে কাগজপত্র সৃজন করতেন। এরপর সেই কাগজপত্রের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর হতে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত মূল্যবান যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন পন্য খালাস করা হতো। এই জালিয়াতির মাধ্যমে দীর্ঘ দিন ধরে সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিতে সরাসরি বসুন্ধরা মালিকপক্ষ আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এমপি, মন্ত্রী এমনকি প্রভাবশালী সাংবাদিক নেতাকে ব্যবহার করা করেছেন। গত ১৫ বছর বন্দরে জমাকৃত বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষের আমদানিকৃত কন্টেইনারে খালাসের কাগজপত্র সুষ্ঠু তদন্ত করলে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে সংশ্লিস্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
সিআইডি জানায়, জালিয়াত চক্রের অন্যতম এক সদস্যকে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) গত বুধবার রাজধানী ঢাকার সোবহানবাগ এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম  মো.তৌহিদুল ইসলাম ওরফে শুভ (৩০)। ওই ব্যক্তির বাবার নাম মো, মোয়াজ্জেম হোসেন। রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দ থানার বালিয়াডাঙ্গা পশ্চিম উজানচরে তাদের বাড়ি। গ্রেফতারকৃত তৌহিদুল ইসলাম ওরফে শুভ নিজেকে সামরিক বাহিনীর মেজর পরিচয় প্রদান করতেন। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে সামরিক পোষাকযুক্ত মেজর পদের ভুয়া পরিচয়পত্র, অনেকগুলো মেজর পদের ভিজিটিং কার্ড, ৮টি মোবাইল ফোন, ১০টি সীম কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই এবং ১টি ল্যাপটপ জব্দ করেছে সিআইডি। বসুন্ধরা গ্রপ অব কোম্পানী এর সিনিয়র ম্যানেজার ফয়েজুর রহমানের মাধ্যমে সরকারের ষ্টোর রেন্ট ফাঁকি দিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর জাল করা হয়। এরপর চট্টগ্রাম বন্দর হতে আমদানিকৃত শত শত কোটি টাকার যন্ত্রপাতি খালাসের চেষ্টার সময় ঘটনাটি ধরা পড়ে। 
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল কোম্পানী লিমিটেড মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা ¯’াপনের জন্য বিশেষ সুবিধায় বিভিন্ন সময় আনা প্রায় ১৩৯টি কন্টেইনারে মূল্যবান যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয়। কিš‘ সেই কন্টেইনারগুলো যথা সময়ে খালাস না হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট বসুন্ধরা কোম্পানির প্রায় ৯২ (বিরানব্বই) কোটি ষ্টোর রেন্ট বকেয়া পড়ে যায়। এর প্রেক্ষিতে ষ্টোররেন্ট মওকুফের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে বসুন্ধরার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আবেদন করেন। এই বিষয়টি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন থাকাকালীন বসুন্ধরা গ্রপ অব কোম্পানীর সিনিয়র ম্যানেজার ফয়েজুর রহমান একটি স্টোর রেন্ট মওকুফ পত্র হস্তগত হন। আর এই স্টোর রেন্ট মওকুফ পত্রটি প্রতারক চক্রের অন্যতম সদস্য আবু হানিফা ওরফে হানাফি ওরফে আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিন দেন। আর সেই মওকুফের পত্রটির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর হতে উক্ত ১৩৯টি কন্টেইনারের কোটি কোটি টাকার মূল্যবান যন্ত্রপাতি খালাসের চেষ্টা করা হয়। 
চট্টগ্রাম বন্দরের সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, বসুন্ধরা গ্রপ অব কোম্পানীর সিনিয়র ম্যানেজার ফয়েজুর রহমানের নেতৃত্বে স্টোর রেন্ট মওকুফ পত্রের বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে উক্ত পত্রটি জাল লেটার মর্মে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানায়। 
স্টোর রেন্ট মওকুফের জাল পত্রের বিষয়টি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) সদর গত ১৫ মে ০৭ নম্বর মামলা দায়ের করে। ওই মামলার ধারা- ৪২০/৪৬৮/৪৭১/১০৯, পেনাল কোড-১৮৬০। মামলাটি দায়ের করার পর চট্টগ্রাম বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এর উপর তদন্তভার ন্যস্ত করা হয়। পরে সিআইডি‘র সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) এর সহায়তায় ও তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষণ ও গোপন সূত্রের মাধ্যমে অভিযুক্ত মো. তৌহিদুল ইসলাম ওরফে শুভকে গ্রেফতার করে।
বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, গ্রেফতারকৃত অভিযুক্ত কথিত মেজর তৌহিদুল ইসলাম ওরফে শুভ এর বিরুদ্ধে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ ঘাট থানায় প্রতারণাসহ ২টি এবং আরএমপি বোয়ালিয়া থানায় প্রতারণার ২টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়াও উক্ত মামলাগুলো ব্যতীত তার বিরুদ্ধে রাজবাড়ী জেলাধীন গোয়ালন্দ থানায় ১টি সাজা ওয়ারেন্টসহ সর্বমোট ৪টি ওয়ারেন্ট মূলতবীর তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রেফতারকৃত অপর অভিযুক্ত আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিন এর বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারনাসহ বিভিন্ন ¯’ানে ৬টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। মো. রনি রাজ হোসেন (২৯) এর বিরুদ্ধে ১টি নারী নির্যাতনের মামলা ও ১টি প্রতারণা মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মামলা রুজুর পর সিআইডি‘র সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) এর সহায়তায় তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষণ ও গোপন সূত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে উক্ত প্রতারক চক্রের মূল নায়ক মো. ফয়েজুর রহমান (৪২), মোহাম্মদ আবু হানিফা ওরফে হানাফি (৩৩), মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিন (৪১), মো. রনি রাজ হোসেন (২৯)দের গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে মোহাম্মদ আবু হানিফা ওরফে হানাফি (৩৩), মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিন (৪১),  বিজ্ঞ আদালতে ফৌ. কা. বি. ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।
বসুন্ধরা গ্রপ অব কোম্পানীর ১৩৯টি কন্টেইনারে মূল্যবান যন্ত্রপাতি আমদানি করা কন্টেইনার ৫০ কোটি টাকা স্টোর রেন্ট ফাঁকি দিয়ে খালাস চেষ্টায় জালিয়াতির মামলাটি সিআইডি এর চট্টগ্রাম জেলা ও মেট্রোতে তদন্তাধীন রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, প্রতারক চক্রের অপরাপর সদস্যদের সনাক্ত ও গ্রেফতার করার স্বার্থে তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে সিআইডি সদরদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুকের নামে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বন্দরে আমদানি পণ্য রাখার ভাড়া (স্টোর রেন্ট) মওকুফ করার জন্য গত ১২ মে বন্দর চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দেয় বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ। ওই চিঠিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব নজরুল ইসলামের স্বাক্ষর রয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন-২০২২ এর ২২ ও ২৩ ধারা অনুযায়ী বসুন্ধরা স্টিলের আমদানি করা মালামালের ৬০ শতাংশ এক মাসের মধ্যে খালাসের শর্তে স্টোর রেন্ট মওকুফের কথা বলা হয় চিঠিতে। এই চিঠি নিয়ে সন্দেহ হলে বন্দর কর্মকর্তারা বিষয়টি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেন। গত ১৪ মে মন্ত্রণালয় থেকে এক চিঠিতে জানানো হয়, তারা মওকুফ সংক্রান্ত কোনো চিঠি দেয়নি। এটি জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর বলছে, বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল গত বছরের ১২ জুন থেকে এ বছরের ২ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে চারটি জাহাজ এবং বিভিন্ন মাধ্যমে বন্দর দিয়ে ৯৫টি ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের এবং ১৪টি ২০ ফুট দর্ঘ্যের কন্টেইনারের মাধ্যমে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করলেও যথাসময়ে খালাস করেনি। বেজা’র একটি চিঠির বরাতে মূলধনি যন্ত্রপাতির ওপর স্টোর রেন্ট ও পোর্ট ডেমারেজ মওকুফ করতে নৌপরিহন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে বসুন্ধরা স্টিল। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের তরফে মতামত চাওয়া হলে গত ১৯ জানুয়ারি বন্দর কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে জানায়, বসুন্ধরা স্টিলের কাছে স্টোর রেন্টের বকেয়ার পরিমাণ ৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্ধ শত কোটি টাকা ফাঁকির ‘অপচেষ্টা’ করে কোম্পানিটি। চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক গণমাধ্যমে জানান, “প্রতিষ্ঠানটি জাল চিঠির মাধ্যমে ৫০ কোটি টাকা ভাড়া ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করেছিল। এ ঘটনায় থানায় জালিয়াতির মামলা করা হয়েছে। বন্দর থানার ওসি কাজী মুহাম্মদ সুলতান আহসান উদ্দীন বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষ থেকে জালিয়াতির মামলা করে। এ ঘটনায় মোহাম্মদ ফয়েজ নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 
এ ব্যাপারে বসুন্ধরা গ্রুপের প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব এর সেল ফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে তিনি প্রতিবেদক কে ফোন করে পরিচয় জানতে চান। প্রতিবেদক পরিচয় দিয়ে উল্লেখিত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে তার ফোন কলটি কেটে দেন।

এমএসএম / Aminur

রাজউকের ইমারত পরিদর্শক জয়নাল আবেদিন এর বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ

বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ

বহাল তবিয়তে আছেন আওয়ামী সুবিধাভোগী প্রকল্প পরিচালক মঞ্জুরুল হক!

লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি আনোয়ার হোসেন খানের বিরুদ্ধে ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা আত্মসাত ও বিদেশে পাচারের অভিযোগ

আউটসোর্সিং এ নিয়োগেরনামে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা

নিবন্ধন অধিদপ্তরে ভূতের আঁচড় !

রংপুর জেলা রেজিস্ট্রারের নির্দেশে জালিয়াত চক্র আবারো তৎপর

অভিযোগের অন্ত নেই বিআরটিএ সহকারী পরিচালক নবাব ফাহমে আজিজ-এর বিরুদ্ধে

বিসিক এ আইন কর্মকর্তার বেআইনী কাজ!

ঐতিহাসিক তিন নেতার মাজার অরক্ষিত

রংপুর জেলা রেজিস্টার রফিকুল’এর বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দোসর পিডি কামাল বহাল তবিয়তে

ফেমডম সেশনের নামে নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফির চক্র