অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ভাইরাল করছে পমপম গ্রুপ
ফ্রিল্যান্সিং ফাঁদে মেয়েরা

অভিভাবকদের ফ্রিল্যান্সিংয়ের কথা বলে রাত জেগে কিশোরী-তরুণীরা প্রেমিক-প্রেমিকাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি-ভিডিও দিতে বাধ্য করছে পমপম গ্রুপ।এরপর ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে 'পমপম' গ্রুপ খুলে সেই ছবি ও ভিডি পুঁজি করে কোটি কোটি হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকচক্র।
সূত্র জানায়, প্রতারকচক্রের দাবিকৃত অর্থ দিতে না পেরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কিশোরী ও তরুণীসহ অনেক নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন। পমপম গ্রুপের সদস্যরা নানাভাবে তরুণীদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করছেন। এরপর সেই সম্পর্ক প্রেমের পর্যায়ে রূপ নেয়। পরে কৌশলে তাদের ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করছে।একপর্যায়ে তাদের কাছে মোটা অংকের অর্থ দাবি করছে। আর তাদের দাবিকৃত অর্থ দিতে না পারলে ভিডিও কলে ওই সব তরুণ-তরুণীদের আপত্তিকর কর্মকাণ্ড করতে বাধ্য করা হচ্ছে। পরে সেই সব আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও সাকারবার্গের পমপম গ্রুপ চক্রের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।এরপর ভুক্তভোগী কিশোরী ও তরুণীদের নাম-ঠিকানা-পরিচয়সহ ব্যক্তিগত তথ্য গ্রুপের লাখ লাখ সাবস্ক্রাইবারের কাছে ভাইরাল করে দিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের ১২ বছর থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোরী ও তরুণীদের সাবেক প্রেমিকেরাই নতুন নতুন কন্টেন্ট দিচ্ছে। তাদের সাবেক প্রেমিকরা সুসময়ে প্রেমিকার যেসব অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও এবং ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছে। সেই ভিডিও এবং ছবি প্রতিশোধের নেশায় মার্ক-সাকারবার্গদের গ্রুপের কাছে সরবরাহ করছে।পরে মার্ক তার এডমিনদের দিয়ে সেই ভিডিও গুলোতে মিউজিক বসিয়ে, ফেসবুক আইডি থেকে ছবি নিয়ে ৩০-৪০ সেকেন্ডের প্রমো বানিয়ে আপলোড করে গ্রুপগুলোতে। আর প্রমো দেখে যারা ফুল ভার্সন দেখতে চায়, তাদের ১ থেকে ২ হাজার টাকার প্রিমিয়াম সার্ভিস কিনছে। মার্ক-সাকারবার্গের বিভিন্ন পেজের এডমিনদের আসল পরিচয় উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। মার্ক-সায়েম এর সবচেয়ে বিশ্বস্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ডিটিআর শুভ ওরফে মশিউর রহমান। মশিউরের দায়িত্ব ছিল গ্রুপ থেকে কৌশলে কন্টেন্ট সেভ করে রাখা এবং প্রলোভনে তরুণীদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও হাতিয়ে নেওয়া।
মার্ক-সারারবার্গ ও তার সহযোগীদের গ্রুপ বিভিন্ন চ্যানেলগুলোতে সাবস্ক্রাইবের সংখ্যা রয়েছে প্রায় সোয়া চার লাখ। আর সেগুলোতে ২০ হাজার আপত্তিকর ভিডিও এবং প্রায় ৩০ হাজার কন্টেন্ট রয়েছে। আর প্রতিমাসে মাসে ১ থেকে ২ হাজার টাকা ফি দিয়ে তাদের প্রিমিয়াম গ্রুপের সদস্য হয়েছেন। আর বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ৭০০ জন সদস্য রয়েছে। তাদের সদস্যদের বিস্তারিত নাম ঠিকানাসহ পরিচয় গোয়েন্দাদের হাতে পৌছেছে। আর সেই সব তথ্য ছাড়াও ভুক্তভোগিদের অভিযোগের ভিত্তিতে টেলিগ্রাম গ্রুপ পমপম এর কাছে সাবেক প্রেমিকাদের ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও ফাঁস করার অভিযোগে চার তরুণকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন, ফাইজুল মল্লিক (২১), আশরাফুল প্রত্যয় (১৯), সাফিন রহমান (১৮) ও তামিম রহমান (২১)।
সিআইডি সূত্র জানায়, দেশ যতই প্রযুক্তি নির্ভর বা ডিজিটাল হচ্ছে, ততই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিত্য-নতুন অপরাধ। এসব অপরাধ দমনে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের সাইবার পুলিশ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপরাধীদের গ্রেফতার করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা ও ঢাকা জেলার সাভার এবং কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করে সিআইডির সাইবার পুলিশের একটি চৌকস দল। গ্রেফতারকৃতরা সিআইডির প্রার্থমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তারা প্রেমিকাদের হয়রানি করতে আপত্তিকর কন্টেন্ট পমপম গ্রুপের কাছে ভাইরাল করতে দিয়েছিল। এই রকম চারটি ঘটনার চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় সিআইডি। সেই তথ্যগুলোর মধ্যে রাজধানীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর কয়েক বছরের পুরনো প্রেমের সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়।পরে নতুন বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে শুরু করেন। এই জেদের জন্ম দেয় এইচএসসি পরীক্ষার্থী সাবেক প্রেমিক সাফিনের।একপর্যায়ে মেয়েটিকে শায়েস্তা করতে সে ছক আঁকতে থাকে। পরে বেছে নেয় টেলিগ্রামের ভয়ানক অন্ধকার পথ। মেয়েটির প্রায় ২ শতাধিক একান্ত ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও সংগ্রহ করে। যা তাদের প্রেম-পর্বে নানা কৌশলে হস্তগত করেছিল।এরপর তা তুলে দেয় টেলিগ্রাম গ্রুপ পমপম এর কাছে। আর তখনই তার জীবনে নেমে আসে অমানিষার অন্ধকার।চক্রটি মেয়েটির নাম-পরিচয়সহ টেলিগ্রামে ভাইরাল করে। মেগা ফাইলের মাধ্যমে বিক্রি করতে থাকে তার কন্টেন্ট। চেনা-অচেনা মানুষের চাপের মুখে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়।
এছাড়া এইচএসসি পরীক্ষার্থী এক তরুণীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মিরপুরের এক হোটেলে নিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে কুমিল্লার তামীম। ধর্ষণের দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করে ব্ল্যাক মেইলিং করে টাকা এবং একান্ত ছবি দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে সে আত্মহননের চেষ্টা করে। ওইসব ভিডিও ও ছবি টেলিগ্রাম গ্রুপে ছড়িয়ে দেয় নেশাগ্রস্থ তামীম।আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর সঙ্গে অনলাইনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশরাফুল হাসান মল্লিক প্রত্যয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়। সে মুলত দুর্ধর্ষ হ্যাকার। মেয়েটির সাবেক প্রেমিকের সঙ্গে বিনিময় হওয়া অন্তরঙ্গ ছবি ও ভিডিও কৌশলে হস্তগত করে ওই হ্যাকার। পরে তা ছড়িয়ে দেয় পমপম গ্রুপের কাছে। অনলাইনে নিজেই ভাইরাল করার পর সে নিজেই আবার তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। মেয়েটিকে বিপদ থেকে উদ্ধারের কথা বলে তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে। একপর্যায়ে তার কাছ থেকে টাকা আদায় ছাড়াও মানসিক অত্যাচার চালাতে থাকে।তাছাড়া, ফাইজুল মল্লিক নামের এক ছেলে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতেন। তার বাবা সৌদি প্রবাসী। ফাইজুল ক্ষোভের কারণে তার সাবেক প্রেমিকার একান্ত মুহুর্তের ধারণ করা ভিডিও পমপম গ্রুপকে ভাইরাল করার জন্য বলে। এরপর বেশ কিছু ফেসবুক আইডি খুলে তার ভূক্তভোগি ছেলে ও মেয়েটিকে হয়রানি শুরু করে।
সিআইডি জানায়, এসব প্রতিটি ঘটনাতেই অতি অল্প বয়সে কিশোরীরা অনলাইনের অন্ধকার জগতে ঢুকে পড়েছে অভিযুক্ত তরুণরা।বাবা-মায়ের উদাসীনতা এবং অতিরিক্ত আদর-ভালোবাসাকে পুঁজি করে কখনও গেম খেলার আড়ালে, কখনও পড়াশোনার খরচের কথা বলে বিপুল অংকের অর্থ নিয়ে বিপথে পা বাড়িয়েছে। ভুক্তভোগি মেয়েরা তাদের একান্ত মুহুর্তের ছবি বা ভিডিও আদান-প্রদান করে যেমন ভুল করেছে, তারচেয়েও ভয়ানক অপরাধ করেছে এসকল তরুণ সেসব ছবি টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোতে ভাইরাল করে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সুত্র জানায়, পমপম গ্রুপটি আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে যে কেবল টাকা আয় করছে তা নয়, চক্রটি ওইসব ভিডিও দেশে-বিদেশে বিক্রি করেও কোটি টাকা আয় করছে। গত এপ্রিল মাসেই দুই হাজার টাকা সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, পর্তুগাল, কানাডা, আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডের মতো দেশের অসংখ্য ক্রেতা গ্রুপটির সদস্য হয়েছেন। তারা অল্পবয়সী মেয়েদের আপত্তিকর ওইসব কন্টেন্ট কিনে সংরক্ষণ করেন।পমপম গ্রুপের মার্ক ওরফে সায়েমের মোবাইল ফোন তল্লাশি করে আইডিটি লগইন করা অবস্থায় পায় গোয়েন্দারা। এরপর নিশ্চিত হন যে আবু সায়েমই মার্ক সাকারবার্গ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে পমপম গ্রুপের যতগুলো চ্যানেল এবং গ্রুপ আছে তার এডমিনদের আসল নাম-পরিচয় পায়। আর এডমিনদের মার্কের হয়ে নতুন নতুন কন্টেন্ট জোগাড় করা। নতুন কন্টেন্ট পেতে তারা ফেক এনআইডি দিয়ে টার্গেটের ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম আইডি হ্যাক করে।
এ বিষয়ে গত মে মাসে সিআইডি প্রধান বলেছেন, মার্ক বা সায়েম ও তার সহযোগি মশিউরকে সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, এই অ্যাডাল্ট গ্রুপগুলোর এডমিনদের অনেকেই ঢাকায় অবস্থান করে। তাদের বেইলি রোড এলাকার একটি রেস্তোরায় গেটটুগেদারের ফাঁদ পাতা হয়। আর ফাঁদে পা দিয়ে একে একে গ্রেফতার করা হয়। রুত্বপূর্ণ এডমিন ক্যাকটাস ওরফে কেতন চাকমা, এল ডোরাডো ওরফে শাহেদ, তুর্য ওরফে মারুফ এবং মিঞা ভাই ওরফে নাজমুল সম্রাট বলে জানিয়েছেন তিনি।
এমএসএম / এমএসএম

বিসিক মুদ্রণ শিল্পনগরী প্রকল্পের মাটি ভরাটের প্রিলেভেল সার্ভে কাজে প্রকল্প পরিচালকের অনিয়ম-দুর্নীতি

মাদারীপুরের আলোচিত মিথ্যা মুক্তিযোদ্ধার কোটায় একই পরিবারের চারজন করছেন সরকারি চাকরি

নিষিদ্ধ হলেও হিযবুত তাহরীরের প্রকাশ্যে কর্মসূচী ঘোষণা

মিরপুর ফায়ার সার্ভিসের ট্রেনিং কমপ্লেক্সের অফিসার তৌহিদুলের শাস্তি দাবি

বিসিকের প্রকল্প পরিচালক মোঃ রাকিবুল হাসানের ঘুস-দুর্নীতি সমাচার

জমি ক্রয়ের নামে ভাইয়ের বিরুদ্ধে প্রবাসি স্বামীর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

বিআইডব্লিউটিএ বন্দর শাখার সাবেক পরিচালক সাইফুলের টাকার উৎস কি?

নার্গিসকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি দেওয়া হোক

গাজীপুর গণপূর্তের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিমের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকের ঢাকায় ১৯ বছরের লুটপাটের রাজত্ব

মসজিদের নামে জমি দখলের চেষ্টা করছে মল্লিক বিল্ডার্স

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ডিজি আবু সুফিয়ান এর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে টেন্ডার বাতিল এর অভিযোগ
